
আহসান হাবীব সুমন/ক্রীড়ালোকঃ
নতুন নিয়মে ল্যাটিন আমেরিকার বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে অনেকটাই নিরাপদ ফেভারিটরা । ২০২৬ সালের ফিফা বিশ্বকাপে খেলবে ৪৮টি দেশ । তাতে ল্যাটিন থেকে সরাসরি সুযোগ পাবে ছয়টি দেশ । একটি দেশ পাবে মহাদেশীয় প্লে-অফে খেলার সুযোগ । অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র , ক্যানাডা আর মেক্সিকোর মাটিতে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপে ল্যাটিনের ১০ দেশের মধ্যে ৭টিকেই দেখা যেতে পারে ।
ল্যাটিন আমেরিকা থেকে সত্তর শতাংস দল খেলবে বিশ্বকাপে । এটা স্বস্তি দিয়েছে আর্জেন্টিনা , ব্রাজিল , উরুগুয়ের মত দেশকে । তাদের কোন অনিশ্চয়তায় থাকতে হচ্ছে না । ল্যাটিন অঞ্চল থেকে প্রতিটা বিশ্বকাপে খেলেছে ব্রাজিল । সেলেকাওরাই একমাত্র দেশ , যাদের ছাড়া আজ পর্যন্ত ফিফা বিশ্বকাপ হয় নি । অন্যদিকে আর্জেন্টিনাকে ছাড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে চারটি বিশ্বকাপ । ১৯৩৮ , ১৯৫০ আর ১৯৫৪ সালের বিশ্বকাপে তারা অংশ নেয় নি । ১৯৭০ সালে পেরুতে পারে নি বাছাই পর্ব । ২০১৮ সালের বিশ্বকাপেও অনেক অনিশ্চয়তার পর আর্জেন্টিনা শেষ ম্যাচে নিশ্চিত করেছিল বিশ্বকাপ ।
নতুন নিয়মে ২০২৬ সালের বিশ্বকাপে ল্যাটিন আমেরিকা বাছাই পর্ব ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে । কাতার বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা নিজেদের প্রথম ম্যাচে ১-০ গোলে জিতেছে ইকুয়েডরের বিপক্ষে । বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ সময় রাত দুইটায় বলিভিয়ার মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা । ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে বলিভিয়ার মাঠ লা-পাজ স্টেডিয়ামে ।
আর্জেন্টিনা বর্তমান বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন । ফিফা র্যাংকিংয়ের এক নাম্বারে । প্রতিপক্ষ বলিভিয়া ল্যাতিনের দুর্বলতম দল । মাত্র তিনবার অংশ নিয়েছে বিশ্বকাপে । ১৯৯৪ সালের পর বিশ্বকাপের দর্শক তারা । কোন আসরেই গ্রুপ পর্বের গণ্ডি পেরুতে পারেনি । বর্তমান ফিফা র্যাংকিং এ বলিভিয়ার অবস্থান ৮৩তম ।
সাধারণ হিসেব বলছে , বলিভিয়ার বিপক্ষে আর্জেন্টিনা স্পষ্ট ফেভারিট । কিন্তু খেলাটা লা-পাজ শহরের হার্নান্দো সাইলেস স্টেডিয়ামে , যাকে প্রতিপক্ষের মৃত্যুকুপ বলা হয় । বলিভিয়ার রাজধানী লা পাজ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সাড়ে তিন হাজার মিটার উঁচুতে অবস্থিত। সেখানে অবস্থিত বলিভিয়ার সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম হার্নান্দো সাইলেস অলিম্পিক স্টেডিয়াম। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সবচেয়ে উঁচুতে এই স্টেডিয়াম । তাতে ভিনদেশী খেলোয়াড়রা পড়ে যান অক্সিজেনের অভাবে । মাঠে নিজেদের স্বাভাবিক নৈপুণ্য প্রদর্শন অসম্ভব হয়ে পড়ে । কন্ডিশনের সুযোগ নিয়ে বিশ্বের যে দলকে হারাবার ক্ষমতা লা-পাজে রাখে বলিভিয়া ।
২০০৭ সালের মে’তে ফিফা ঘোষণা দিয়েছিল, ২৫০০ মিটারের উঁচুতে অবস্থিত স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন করা যাবে না। বলিভিয়ার সমর্থকরা ফিফার সিদ্ধান্তে ফুঁসে ওঠে।প্রতিবাদের মুখে ফিফা প্রত্যাহার করে নেয় সিদ্ধান্ত । বলিভিয়ার মাঠে বিদেশী খেলোয়াড়রা খেলার মাঝেই অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করেন । ২০১৮ সালে বলিভিয়ার বিপক্ষে খেলতে নেমে ব্রাজিলের খেলোয়াড়দের খেলার মাঝে অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করতে হয়েছিল ।
বলিভিয়ার লা-পাজে আর্জেন্টিনার রয়েছে দুঃসহ স্মৃতি । ২০১০ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে আর্জেন্টিনা ১-৬ গোলে উড়ে গিয়েছিল বলিভিয়ার কাছে । সেই ম্যাচে মাঠে ছিলেন আর্জেন্টিনার বর্তমান অধিনায়ক লিওনেল মেসি ।আর কোচ প্রয়াত আর্জেন্টিনার ফুটবল ইশ্বর দিয়াগো ম্যারাডোনা । তবে ২০২০ সালের অক্টোবরে লা পাজে শেষ দেখায় আর্জেন্টিনা ৩-০ গোলে হারিয়েছিল বলিভিয়াকে ।
বলিভিয়ার নিজেদের মাঠে পরাক্রমশালী হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যায় কোপা আমেরিকার ইতিহাস দেখলে । ল্যাটিনের দুর্বলতম দল হয়েও তারা কোপা আমেরিকা শিরোপা জিতেছে ১৯৬৩ সালে । ফাইনালে খেলেছে ১৯৯৭ সালে । মাত্র দুবারই ল্যাটিন আমেরিকার ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের আসর অনুষ্ঠিত হয় বলিভিয়ায় ।
বলিভিয়ায় ম্যাচ খেলতে যাওয়া আর্জেন্টিনা দল অনুশীলনে পড়েছে বিরুপ পরিস্থিতিতে । শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে আর্জেন্টিনার প্রতিটি খেলোয়াড়কে দেওয়া হয়েছে একটি করে অক্সিজেন টিউব।লাপাজ পৌঁছার পর অনুশীলন করতে গিয়েই মূলত অক্সিজেন শূন্যতায় ভুগতে শুরু করেন আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা। পরিবেশ-পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে দ্রুত তাদের অক্সিজেন টিউব সরবরাহ করা হয়।তবে কন্ডিশনের বাইরেও আর্জেন্টিনার জন্য আছে আরেক দুশ্চিন্তা।ইনজুরির কারণে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটি মিস করতে পারেন দলের সব থেকে বড় তারকা লিওনেল মেসি। চোটের কারণে ইকুয়েডরের বিপক্ষে ম্যাচের শেষ মুহূর্তে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন মেসি। বুয়েন্স আয়ার্সের একটি হাসপাতালে মেসির শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হয়। তবে সেখানে কোনো জটিলতা পাওয়া যায়নি। গুরুতর কোন চোটেও পড়েননি তিনি । দলের আরেক তারকা রোমেরোও ইনজুরির সমস্যায় ভুগছেন।
তবে ম্যাচের শুরু থেকে তাদের দুজনকে পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি। তিনি বলেন, ‘মেসি ও রোমেরো দুজনই যথেষ্ট ফিট আছে। দেখা যাক, তারা শুরুর একাদশে খেলে, নাকি খেলবেই না। সতর্কতার জন্য তারা দুজনই আলাদা অনুশীলন করেছে। সে (মেসি) যদি ভালো থাকে, তাহলে খেলবে।’
আহাস/ক্রী/০০৪