
ক্রীড়ালোক প্রতিবেদকঃ
২০১৪ সালের ফিফা বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন জার্মানি । ফুটবলের বিশ্ব আসরে তাদের শিরোপা সংখ্যা চারটি । মোট আটবার বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনালে খেলার রেকর্ড তাদের । এছাড়াও ১২টি সেমি ফাইনালে খেলেছে জার্মানরা । সব মিলিয়ে বিশ্বকাপের সবচেয়ে ধারাবাহিক দল জার্মানরা । তিনটি ইউরোপিয়ান শিরোপা , একটি কনফেডারেশন্স কাপ আর অলিম্পিক গোল্ড নিয়ে জার্মানীকে বিশ্বের সবচেয়ে সফল দল বললেও ভুল হবে না । কিন্তু সর্বশেষ দুটি বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়ে জার্মানীর ফুটবল ঐতিহ্যে এঁকে দিয়েছে কলংক-চিহ্ন ।
২০২৩ সালেও জার্মানী হাবুডুবু খাচ্ছে ব্যর্থতার আবর্তে । মার্চে পেরুকে হারিয়ে ২০২৩ সালের পথ চলা শুরু করে জার্মান ফুটবল দল । কিন্তু পরবর্তী পাঁচ ম্যাচে চারটি হার বেলজিয়াম , পোল্যান্ড , কলম্বিয়া আর জাপানের কাছে । যা জার্মানীর ইতিহাসে বিরল ঘটনা । ২০২৪ সালে জার্মানীর মাটিতে অনুষ্ঠিত হবে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ । তাই তাদের খেলতে হচ্ছে না বাছাইপর্বে । যদি খেলতে হত , ইতোমধ্যেই জার্মান দলকে ছিটকে যেতে হত বাছাই থেকে ।
জাপানের কাছে ৪-১ গোলে উড়ে যাবার পর বোধোদয় হয়েছে জার্মান ফুটবল ফেডারেশনের । বরখাস্ত করা হয়ত কোচ হ্যান্সি ফ্লিককে ।অধীনে ১৭ ম্যাচের মাত্র ৪টিতে জিততে পেরেছে দল। ফ্রান্সের বিপক্ষে অন্তর্বর্তী দায়িত্ব দেয়া হয় সাবেক ফুটবলার রুডি ভলারকে । ম্যাচটি জার্মানী জিতেছে ২-১ গোলে । ফ্রান্সের মত দলকে হারালেও ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপজয়ী রুডি ভলার স্থায়ী হন নি । জার্মানীর দায়িত্ব পেয়েছেন জুলিয়ান নাগেলসম্যান । নাগেলসমানের সঙ্গে জার্মান ফুটবল ফেডারেশনের চুক্তি আগামী বছরের জুলাই পর্যন্ত। ২০২৪ সালের ইউরো পর্যন্ত জার্মানদের সঙ্গে থাকবেন তিনি। এরপর তার অধীনে দলের সাফল্যের উপরই হয়তো নির্ভর করেছে ৩৬ বছর বয়সী এই কোচের ভাগ্য।
২০২১ সালে হ্যান্সি ফ্লিকের জায়গায় বায়ার্ন মিউনিখের কোচ হয়েছিলেন নাগেলসম্যান। এবার জার্মানির জাতীয় দলেও বরখাস্ত হওয়া ফ্লিকের জায়গা নিলেন তিনি। ব্যাপারটা বেশ কাকতালীয় বটে।
বায়ার্ন মিউনিখে নাগেলসম্যানের চাকুরীচ্যুত হওয়ার ঘটনা ছিল নাটকীয় । থচ তাঁর অধীনে বায়ার্ন ছিল সাফল্যের পথেই । চলতি মৌসুমে নাগেলসম্যান ডাগ আউটে থাকা অবধি বায়ার্নের সামনে ছিল ট্রেবল জয়ের সুযোগ । ২০২১ সালের জুলাইয়ে তিনি বায়ার্নের দায়িত্ব নেন । তাঁর অধীনে বাভারিয়ানরা ৮৪ ম্যাচের মধ্যে জিতেছে ৬০টি । ড্র ১৪টি আর পরাজয় ১০টি । বায়ার্ন মিউনিখকে তিনি জিতিয়েছেন একটি বুন্দেস লিগা আর দুইটি জার্মান সুপার কাপ । চলতি মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালেও উঠেছে বায়ার্ন । নক আউট পর্বের দুই লেগেই বায়ার্নের কাছে পরাজিত হয়েছে লিওনেল মেসি আর কিলিয়ান এমবাপ্পেদের পিএসজি । এছাড়া তারা হারিয়েছে বার্সেলোনা, ইন্টার মিলানকে । নাগলসমানের অধীনে সব মিলিয়ে এ মৌসুমে ৩৭ ম্যাচে মাত্র তিনটিতে হেরেছিল বায়ার্ন। গোল করেছে ১১২টি । মানে ম্যাচপ্রতি তিনটির বেশি। অথচ বলা নেই–কওয়া নেই, সাফল্যের চূড়ায় থাকা নাগলসমানকে হুট করে বরখাস্ত করে ক্লাব কর্তৃপক্ষ।
কেন চাকুরি হারালেন নাগেলসম্যান ? কারণটা অস্বাভাবিক । বেচারা চাকুরি হারিয়েছেন প্রেম বিষয়ক জটিলতায় ! মাঠের পারফর্মেন্সের চেয়ে বান্ধবী লিনা ভুরজেনবার্গারের সাথে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক আর স্ত্রী ভেরেনার সঙ্গে ১৫ বছরের সম্পর্কচ্ছেদের ঘটনা প্রভাব ফেলেছে বায়ার্নের সিদ্ধান্তে । জার্মানির বিখ্যাত সংবাদপত্র ‘বিল্ড’র বায়ার্ন মিউনিখ প্রতিনিধি ছিলেন লিনা।নাগলসমানের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ানোয় বায়ার্ন প্রতিনিধির দায়িত্বও ছাড়তে হয় লিনাকে।
যাই হোক , মার্চ থেকে বেকার নাগেলসম্যান জার্মান দলের দায়িত্ব নিয়ে বলেছেন , ‘ দেশের মাটিতে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ আছে আমাদের। এটা বিশেষ কিছু। এই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার ইচ্ছা আমার আছে।’
এদিকে জার্মানির ফুটবল ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট বার্নড নয়্যানডর্ফ নাগেলসম্যানকে কোচ হিসেবে পেয়ে দারুণ খুশি। জার্মান ফুটবলের সর্বোচ্চ কর্তা বলেন, ‘নাগলসমান অসাধারণ একজন কোচ।’
জার্মান দলকে সাফল্যে ফেরাবার কাজটা সহজ হবে না নাগেলসম্যানের জন্য । বর্তমান দলে থমাস মুলার , টনি ক্রুস , বাস্তেন সোয়ান্সটেঙ্গার , মেসুত ওজিলদের মত খেলোয়াড়ের বড় অভাব । কিংবা লিবেরো পজিশনে নেই একজন লোথার ম্যাথিউজ । ফিলিপ লামের মত কুশলী ডিফেন্ডার আর নেতাও নেই । ম্যানুয়েল নুইয়ারের জায়গায় মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগান কিংবা কেভিন ট্র্যাপরা আস্থা কুড়াতে পারছেন না । নেই একজন মাথাওয়ালা মিরোস্লাভ ক্লোজা । দলে নতুনদের মধ্যে জামাল মুসিয়ালাকে প্রতিভাবান হিসেবে বিবেচনা করা হয় । এন্টোনিও রুডিগার , জশুয়া কিমিশ আর কাই হাভার্তজরা ধারাবাহিক নন । সার্জ গিনাব্রি ক্লাব ফুটবলে যতটা কার্যকর , আন্তর্জাতিক ফুটবলে ততটা নন । লেরয় সানের ক্ষেত্রেও একই কথা বলা চলে । তাই এখনও জার্মানীকে তাকিয়ে থাকতে হয় বর্ষীয়ান মুলারের অভিজ্ঞতার দিকে ।
নাগেলসম্যানের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ । প্রথমত একটি কার্যকর একাদশ গড়ে তোলার দিকেই মনোযোগ দিতে হবে তাঁকে । এই কাজটি নাগেলসম্যান করতে পারবেন বলেই বিশ্বাস । দেখা যাক , জার্মানীকে পুরনো চেহারায় ফেরাতে পারেন কিনা নাগেলসম্যান ।
আহাস/ক্রী/০০৭