Download WordPress Themes, Happy Birthday Wishes

ঐক্যের অভাব বিশ্বকাপে ডোবাবে পাকিস্তানকে !

ক্রীড়ালোক প্রতিবেদকঃ

২০২৩ সালের এশিয়া কাপ ভুলেই যেতে চাইবে পাকিস্তান । শুরুতে ১৬তম এশিয়া কাপের একক আয়োজক ছিল তারাই । কিন্তু ভারতের গোঁয়ার্তুমিতে তারা হারায় একক আয়োজকের মর্যাদা । শেষ পর্যন্ত শ্রীলংকাকে জুড়ে দেয়া হয় পাকিস্তানের সাথে । অথচ কাগজে-কলমে এশিয়া কাপের স্বাগতিক ছিল পাকিস্তানই । মজার ব্যাপার হচ্ছে , ছয় দলের এশিয়ার সেরা ক্রিকেট প্রতিযোগিতার ১৩ ম্যাচের মাত্র ৪টি আয়োজনের দায়িত্ব পায় পাকিস্তান ।

যাই হোক , এশিয়া কাপে নেপালকে ২৩৮ রানে উড়িয়ে দেয় পাকিস্তান । দ্বিতীয় গ্রুপ ম্যাচ ভেসে যায় বৃষ্টিতে । সুপার ফোরে বাংলাদেশকেও ৭ উইকেটে উড়িয়ে দেয় পাক বাহিনী । কিন্তু তারপরেই ছন্দপতন । ভারতের কাছে ২৮৮ রানের পরাজয় । আর শ্রীলংকার কাছেও জিততে জিততে ম্যাচ হেরে যাওয়া । তাতে ফাইনালে ওঠা হয় নি পাকিস্তানের ।

পাকিস্তান দুটি ম্যাচ জিতেছে মুলতান আর লাহোরে । হেরেছে কলম্বোতে । অর্থাৎ নিজেদের মাটিতে শতভাগ সফল পাকিস্তান ব্যর্থ হয়েছে শ্রীলংকার মাটিতে । এটাই সমস্যা । আসন্ন ওয়ানডে বিশ্বকাপ আয়োজিত হবে ভারতের মাটিতে । বর্তমান র‍্যাংকিংয়ের ১ নাম্বার দল হয়েও পাকিস্তানের বিশ্বকাপ জয় নিয়ে খুব বেশী আশাবাদী হওয়ার উপায় নেই ।

সমস্যা আছে অধিনায়ক বাবর আজমকে নিয়েও । বাবর এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান । কিন্তু বড় ম্যাচে তাঁকে প্রায়শই খুঁজে পাওয়া যায় না । নাসিম আফ্রিদি আর হ্যারিস রউফদের নিয়ে পাকিস্তানের পেস বোলিং দুর্দান্ত । এশিয়া কাপে শাহিন আফ্রিদি ১০টি আর রউফ ৯টি উইকেট পেয়েছেন । বাবর আজম ২০৭ আর মোহাম্মদ রিজওয়ান ১৯৫ রান করেছেন । কিন্তু প্রয়োজনের সময় দায়িত্ব নিতে পারেন নি তারা ।

শ্রীলংকার বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচে পাকিস্তান দারুণ লড়াই করে দুই উইকেটে হেরেছে । হতেই পারে । কিন্তু ভয়াবহ খবর হচ্ছে , শ্রীলংকা ম্যাচের সময় ড্রেসিং রুমে নাকি বিবাদে জড়িয়েছেন বাবর আজম আর শাহিন আফ্রিদি । শোনা যাচ্ছে , বাবরের অধিনায়কত্ব নিয়ে অনেকেই নাখোশ । টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই সমস্যা দেখা দিয়েছে পাক ড্রেসিংরুমে। পাকিস্তানের প্রাক্তন উইকেটরক্ষক মঈন খান একটি সাক্ষাৎকারে জানান, ‘আমরা পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে দেখেছি বাবরের দিকে কেউই কোনও সময় এগিয়ে যায়নি। সবাই যেন ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল।’

এশিয়া কাপ শেষ হলেই ভারতের মাটিতে বসবে একদিনের ক্রিকেট বিশ্বকাপের আসর। তার আগে পাকিস্তান দলের এই সমস্যা বিশ্বকাপে তাদের ক্ষেত্রে যে অসুবিধা তৈরি করতে পারে সেই বিষয়ে কারো সন্দেহ নেই। তবে অধিনায়ক এর সঙ্গে সমস্যার বিষয়টি পুরোপুরিভাবে জানা যায়নি। জিও টিভির সঙ্গে সাক্ষাৎকারের সময় পাকিস্তানের প্রাক্তন উইকেটরক্ষক মঈন খান এই বিষয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান দলের যদি কোনও সমস্যা থাকে তা বিশ্বকাপের আগে ঠিক করে নেওয়া দরকার। সমস্যা মিটে গেলে দল আরো বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠবে। ড্রেসিংরুমের কোন বিবাদ ইন মিডিয়ার সামনে প্রকাশ্যে চলে আসছে তা দলের জন্য মোটেই ভালো খবর নয়। ক্রিকেটারদের যদি বাবরের সঙ্গে সমস্যা থাকে, বাবর যদি প্রধান কোচ বা টিম ডিরেক্টরের অনুপস্থিতিতে কোনও সমস্যার ঠিকভাবে সমাধান না করতে পারে তাহলে সেটা খুব দুর্ভাগ্যজনক। কারণ এই ধরনের বিষয়গুলোতে হস্তক্ষেপ করা অধিনায়কেরই কাজ।’

পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক জানান , ‘সমস্যা কাটিয়ে উঠতে নিজেদের মধ্যে ড্রেসিংরুমে কথা বলতে হবে। যদি আমি অধিনায়ক হই, অন্য ক্রিকেটার যদি ভালো পারফরম্যান্স না করে তাহলে আমি তাকে বলবো হয়তো কিছুটা কড়া চোখে তাকাব। কিন্তু পরে শান্তভাবে তাকে বোঝাবো আরও ভালো পারফর্ম করতে হবে। দল তার কাছ থেকে কি প্রত্যাশা করছে সেটাও জানাতে হবে। কিন্তু অধিনায়ক যদি তাকে গুরুত্ব না দিয়ে কথা বলে তখন সেই ক্রিকেটার ভাববে তাকে নিয়ে মজা করা হচ্ছে। সবারই একটা ইগো আছে। বাবরকে এই ম্যানেজমেন্টের বিষয়কে আরও সতর্ক হতে হবে।’

মইনের মন্তব্য , ‘আমি আগেও এটা নিয়ে মন্তব্য করেছি। আমরা টুর্নামেন্ট জুড়ে দেখেছি, বিশেষ মুহূর্তে কোনও ক্রিকেটার বাবরের দিকে যায়নি। রিজওয়ানও এগিয়ে আসেনি, এমনকী সহ-অধিনায়কও তাঁর কাছে আসেনি। কেউ তার কাছে যাচ্ছিল না। মনে হচ্ছিল সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, দলের মধ্যে কোন ঐক্য নেই।’

এদিকে , পাকিস্তান দলে বিবাদ নিয়ে মুখ খুলেছেন নারী ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক সানা মীর। ড্রেসিংরুমের খবর বাইরে আসাটা দলের কেউ চোট পেয়ে ছিটকে যাওয়ার থেকেও মারাত্মক ক্ষতির বলেছেন সাবেক এই তারকা ক্রিকেটার।

বিষয়টি নিয়ে টুইট করেছেন সানা। তিনি লেখেছেন, ‘বিশ্বকাপের আগে এটা একটা হৃদয় বিদারক খবর। বর্তমানে বাবর আজম ড্রেসিংরুমে যা বলেছেন সেই কথোপকথন ভক্তরা শেয়ার করছেন, এটা খুবই হাতাশার। দলের কেউই এটিকে ড্রেসিংরুম থেকে বের করেছে এবং সেটি শেয়ার করেছে। এর ফলে দলে চাপ বেড়েছে। এটা দলের নীতি পরিপন্থী। বর্তমানে যা ঘটেছে সেটা দলের জন্য বিশাল ক্ষতি। দলে কোনও ইনজুরি হলে যে ক্ষতি হয় এটা তার থেকেও মারাত্মক।’

পাকিস্তান দলের ড্রেসিং রুমে ঝামেলা নতুন কিছু না । ২০১৫ সালে এডিলেডে ভারতের কাছে হারার পর খবর আসে , দলের কয়েকজন সিনিয়র ক্রিকেটার বিবাদে জড়িয়ে পড়েছেন ফিল্ডিং কোচ গ্রান্ট লুডেনের সঙ্গে। সেই ক্রিকেটারদের মধ্যে ছিলেন শহীদ আফ্রিদি, আহমেদ শেহজাদ ও উমর আকমল । এছাড়া পাকিস্তান ড্রেসিং রুমে সব সময়েই সক্রিয় কয়েকটি গ্রুপ । এমন ঘটনা হয়ে আসছে ইমরান খান আর ওয়াসিম আকরামদের আমল থেকেই । যা এখনও বিদ্যমান । মুলত ঐক্যের অভাবেই পাকিস্তান দুর্দান্ত দল নিয়েও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রত্যাশিত সাফল্য পায় না , এমন বলা হয় । এছাড়া পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডও যেন রাজনীতির মাঠ । সব মিলিয়ে পাকিস্তান খুব কম সময়েই ঐক্যবদ্ধ দল হিসেবে খেলতে পেরেছে ।

আহাস/ক্রী/০০৩