
ক্রীড়ালোক প্রতিবেদকঃ
১৬তম এশিয়া কাপের ফাইনালে শ্রীলংকাকে নিয়ে ছেলেখেলা করল ভারত । প্রথমে ব্যাট করা শ্রীলংকা গুঁড়িয়ে যায় ৫০ রানে ।লঙ্কানরা খেলতে পেরেছে কেবল ৯২ বল। জবাবে ভারত ৩৭ বলে কোন উইকেট না হারিয়ে পৌঁছে যায় জয়ের লক্ষ্যে । সব মিলিয়ে দুই দল মিলিয়ে ১০০ ওভারের খেলা নিস্পত্তি হয়েছে ২১.৩ ওভারে ।
কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে শ্রীলংকাকে পাড়ার নবীশ দলে নামিয়ে এনেছিল ভারত । প্রেমাদাসা স্টেডিয়াম বরাবর স্পিন সহায়ক । কিন্তু ফাইনালে উড়েছেন ভারতের পেসাররা । মোহাম্মদ সিরাজ একাই নিয়েছেন ৭ ওভারে ২১ রান দিয়ে ৬ উইকেট । যা ভারতের দ্বিতীয় বোলার হিসেবে সেরা পরিসংখ্যান। ১৯৯৩ সালে হিরো কাপের ফাইনালে কিংবদন্তি স্পিনার অনিল কুম্বলে ১২ রান দিয়ে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ভারতীয় হিসেবে এক ওভারে চার উইকেটের রেকর্ড সিরাজের। আশিস নেহরার পর ভারতের দ্বিতীয় বোলার হিসেবে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ওডিআই-তে ৬ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব সিরাজের।
ওয়ানডে ক্রিকেটের ফাইনালে রান আর বলের হিসেবে সবচেয়ে বড় জয়ের রেকর্ড গড়ে নিয়েছে ভারত । সেই সাথে গড়েছে সর্বোচ্চ আটটি এশিয়া কাপ জয়ের রেকর্ড । এছাড়া , যে কোন ওয়ানডে ফাইনালে সবচেয়ে কম ওভারে অলআউট হওয়ার রেকর্ড গড়ল শ্রীলঙ্কা। আগের রেকর্ডটি ছিল তাদের। ২০০২ শারজাহ কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৬.৫ ওভারে গুটিয়ে গিয়েছিল লঙ্কানরা।
ওয়ানডে ক্রিকেটের যে কোন ফাইনালে এক ইনিংসের ১০ উইকেট নেয়ার রেকর্ড গড়েছে ভারতীয় পেসাররা । সিরাজ ছাড়া তিন উইকেট হার্দিক পাণ্ডেয়া আর একটি পেয়েছেন জাশপ্রিত বুমরাহ ।
এশিয়া কাপ জয়ের পর স্বাভাবিকভাবেই উল্লাসে মেতেছে ভারতীয় সমর্থকরা । ২০১৮ সালের পর প্রথম শিরোপা জয়ের উল্লাসে আতশবাজি ফুটেছে । কিন্তু ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা ছিলেন শান্ত । তিনি অনেকটা মজা করেই বলেন , ‘ এখন আতশবাজি ফোটাবার দরকার নেই । বিশ্বকাপের পর ফোটাও ! ‘
অর্থাৎ রোহিত শর্মার ভারতের মুল লক্ষ্য বিশ্বকাপ । সেটাই স্বাভাবিক । এই মুহূর্তে বিরাট কোহলি , শুভমান গিলরা দারুণ ছন্দে । ইতোমধ্যে বিশ্বকাপের ১৫ সদস্যের স্কোয়াড ঘোষণা করেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড ‘বিসিসিআই’ , যাদের সবাই ছিলেন এশিয়া কাপে । ভারতের মাটিতে স্পিন সহায়ক উইকেটের কথাই ভাবছেন সবাই । কিন্তু দলে আছে চার পেসার মোহাম্মদ সিরাজ, মোহাম্মদ শামি, শার্দুল ঠাকুর ও জাসপ্রিট বুমরাহ। তাদের সঙ্গে রয়েছেন দুজন পেস অলরাউন্ডার – হার্দিক পান্ডিয়া ও শার্দুল ঠাকুর। স্পিন আক্রমণে রবীন্দ্র জাদেজার সঙ্গী হচ্ছে বাঁহাতি রিষ্ট স্পিনার কুলদীপ যাদব।
ব্যাটসম্যান রোহিত রোহিত , কোহলি , শুভমান আর শ্রেয়াস আইয়ার । এছাড়া উইকেট-কিপার ব্যাটার ঈশান কিষাণ আর লোকেশ রাহুল । সদ্য-সমাপ্ত আসরে সবচেয়ে বেশী ৩০২ রান এসেছে গিলের ব্যাট থেকে । মোহাম্মদ সিরাজ ১০টি আর কুলদ্বীপ যাদব পেয়েছেন ৯টি উইকেট । যাদব তো আসরের সেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত হয়েছেন । রোহিত শর্মা , লোকেশ রাহুলরা রান পেয়েছেন । বিরাট কোহলি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন পাকিস্তানের বিপক্ষে । বলা যায় , বিশ্বকাপের জন্য পুরো প্রস্তুত ভারত ।
বিশ্বকাপে ভারতকে আটকানো কঠিন । কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের পরিচর্যায় ২০১১ সালের পর ভারত তৃতীয়বারের মত ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ে প্রস্তুত । ২০১১ সালে মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত ফাইনালে লংকাানদের হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতেছিল ভারত । তবে এবারেই তারা প্রথম একক দায়িত্বে আয়োজন করতে চলেছে ওয়ানডে বিশ্বকাপ । বিরাট কোহলিদের যা ফর্ম , তাতে ভারতের সেরা চারে খেলা নিয়ে কোন প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই । তবে সেমিফাইনাল কিংবা ফাইনালে ভারতের পা হড়কালে ভিন্ন বিষয় ।এশিয়া কাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচে হেরেছে ভারত । নিজেদের খারাপ দিনে যে কেউ হারতেই পারে । কিন্তু তা স্বত্বেও আসন্ন বিশ্বকাপ ভারতকে নিয়ে বাজি ধরাই যায় ।
ভারতের দল : রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), শুভমান গিল, বিরাট কোহলি, শ্রেয়াস আয়ার, লোকেশ রাহুল, ঈশান কিশান, সূর্যকুমার যাদব, হার্দিক পান্ডিয়া (সহ-অধিনায়ক), রবীন্দ্র জাদেজা, কুলদীপ যাদব, অক্ষর প্যাটেল, মোহাম্মদ সিরাজ, মোহাম্মদ শামি, শার্দুল ঠাকুর ও জাসপ্রিত বুমরাহ।
আহাস/ক্রী/০০২