Download WordPress Themes, Happy Birthday Wishes

যুব বিশ্বকাপ থেকে উঠে এসেছিলেন ফুটবলের অনেক মহাতারকা

ক্রীড়ালোক প্রতিবেদকঃ

আগামী ২০ মে থেকে মাঠে গড়াচ্ছে ফিফা অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ টুর্নামেন্ট । যুব ফুটবলারদের এই বিশ্বকাপ ভবিষ্যতের ‘সুপারস্টার’ তৈরি করে দেয়ার সূতিকাগার হিসেবে ব্যাপক পরিচিত । দিয়াগো ম্যারাডোনা , লিওনেল মেসি , রোনালদিনিও , ডেভর সুকার থেকে শুরু করে হালের আর্লিং হাল্যান্ড । সবাই কিন্তু প্রথম নজর কেড়েছিলেন যুব বিশ্বকাপ থেকেই ।

১৯৭৭ সাল থেকে প্রতি দুই বছর অন্তর আয়োজিত হয় যুব বিশ্বকাপ ফুটবল । চলতি বছর অনুষ্ঠিত হবে ২৩তম আসর । যার আয়োজক আর্জেন্টিনা । মজার ব্যাপার হচ্ছে , চলতি আসরে আর্জেন্টিনার খেলার কথাই ছিল না । তারা পেরুতে পারে নি যুব বিশ্বকাপের বাছাই পর্ব । কিন্তু ইসরায়েল ইস্যুতে ইন্দোনেশিয়ার স্বাগতিক মর্যাদা বাতিল হওয়ায় ভাগ্য খোলে আর্জেন্টিনার । বিকল্প স্বাগতিক হিসেবে তারা খেলবে টুর্নামেন্টে । আর্জেন্টিনা অবশ্য অনূর্ধ্ব-২০ ফিফা বিশ্বকাপে সর্বাধিক ছয়বার শিরোপা জিতেছে । দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পাঁচটি শিরোপা ব্রাজিলের । এছাড়া দুইবার করে শিরোপা আছে পর্তুগাল আর সার্বিয়ার । একবার করে শিরোপা জিতেছে ইংল্যান্ড , ফ্রান্স , স্পেন , জার্মানি , রাশিয়া , ঘানা আর ইউক্রেইন । ২০১৯ সালে সর্বশেষ যুব বিশ্বকাপে শিরোপা জিতেছিল ইউক্রেইন । করোনা মহামারীর কারণে ২০২১ সালে যুব বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় ।

১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় যুব বিশ্বকাপ থেকে উঠে আসেন ম্যারাডোনা । যিনি ১৯৮৬ সালে আর্জেন্টিনাকে শুধু মুল বিশ্বকাপ জেতান নি , পরিণত হন ফুটবল বিশ্বের কিংবদন্তীতে । তাঁর নেতৃত্বে আর্জেন্টিনা জিতে নেয় যুব বিশ্বকাপ । পাঁচ গোল করা ম্যারাডোনা জিতেছেন আসরের সেরা খেলোয়াড়ের গোল্ডেন বল ।

১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ শিরোপা জিতেছিল ব্রাজিল । সেই দলে খেলেছেন ১৯৯৪ সালের মুল বিশ্বকাপজয়ী দলের তারকা বেবেতো , ডুঙ্গা । ১৯৮৭ সালের যুব বিশ্বকাপ থেকে উঠে আসেন রবার্ট প্রসেনেস্কি । ১৯৯৮ সালের ফিফা বিশ্বকাপে খেলেছেন ক্রোয়েশিয়ার হয়ে । অর্জন করেন তৃতীয় স্থান । যুব বিশ্বকাপে সেরা খেলোয়াড় হিসেবে তিনি যুগোস্লোভিয়াকে জিতিয়েছেন ট্রফি । পরবর্তী সময়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন মাঝমাঠের অন্যতম বড় তারকা হিসেবে । একই আসরে ছয় গোল করেন ডেভর সুকার । যিনি ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপে ছয় গোল করে জিতেছিলেন গোল্ডেন বুট । বোবান , পেত্রাগ মিলাতোভিচদের উঠে আসাও ১৯৮৭ সালের যুব বিশ্বকাপ থেকে ।

১৯৮৯ সালের যুব বিশ্বকাপে সেরা গোলদাতা ছিলেন ওলেগ সালেংকো । ১৯৯৪ সালের মুল বিশ্বকাপে ছয় গোল করে হয়ে যান সেরা গোলদাতা । ক্যামেরুনের বিপক্ষে এক ম্যাচেই পাঁচ গোল করে ফেলে দেন হইচই ।

১৯৯১ সালের যুব বিশ্বকাপ জিতেছিল পর্তুগাল । সেই আসরেই পর্তুগালের গোল্ডেন জেনারেশনের উত্থান । লুইস ফিগো , রুই কস্তা , আবেল জাভিয়ের , হোয়াও পিন্টোরা উঠে আসেন । ব্রাজিলের হয়ে খেলেছিলেন রবার্টো কার্লোস ।

১৯৯৫ সালের যুব বিশ্বকাপ উপহার দেয় স্পেনের রাউল গঞ্জালেজ , পর্তুগালের নুনো গোমেজ , ব্রাজিলের ডেনিলসনের মতো তারকা ।

১৯৯৭ সালের যুব বিশ্বকাপে খেলেছিলেন আর্জেন্টিনার বর্তমান কোচ লিওনেল স্কালোনি । যদিও তিনি খেলোয়াড় হিসেবে খুব বেশী সুনাম কামাতে পারেন নি । বিখ্যাত হয়েছেন কোচ হিসেবে । সেই আসরে ফ্রান্স দলে খেলেছেন ডেভিড ত্রেজেগে , থিয়েরি হেনরি , উইলিয়াম গালাস , মিকায়েল সিলভাস্ত্রে আর নিকোলাস আনেলকা । আর্জেন্টিনার হয়ে আরও খেলেছেন পাবলো আইমার , রিকুয়েলমি আর ক্যাম্বিয়াসো ।

১৯৯৯ সালের অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ থেকে উঠে আসেন ব্রাজিলিয়ান ম্যাজিশিয়ান রোনালদিনিও গাউচা । ম্যাক্সিকো পায় রাফায়েল মার্কুয়েজের মতো মহাতারকা । চ্যাম্পিয়ন স্পেন দলে খেলেছেন শাভি হার্নান্দেজ আর ইকার ক্যাসিয়াস ।

২০০১ সালে আর্জেন্টিনাকে যুব বিশ্বকাপ জেতাতে বড় ভূমিকা রাখেন হাভিয়ের সাভিওলা । ১১ গোল করে জিতে নেন গোল্ডেন বুট । আসরের সেরা খেলোয়াড়ও নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি । সেই আসরে ব্রাজিলের আদ্রিয়ানো এবং কাকা , ফ্রান্সের জিব্রিল সিসে , ঘানার মাইকেল এসিয়েনের মতো তারকার জন্ম হয় ।

২০০৩ বিশ্বকাপে ব্রাজিলকে শিরোপা এনে দিয়েছেন ড্যানি আলাভেজ , জুনিনহোরা । স্পেন পেয়ে যায় ইতিহাসের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার আন্দ্রে ইনিয়েস্তাকে ।

২০০৫ সালের যুব বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার শিরোপা জয়ের নায়ক ছিলেন লিওনেল মেসি । ছয় গোল করে হয়েছিলেন সেরা গোলদাতা । পেয়েছিলেন সেরা খেলোয়াড়ের গোল্ডেন-বল । একই আসর থেকে উত্থান হয় ডেভিড সিলভা , রামাদেল ফ্যালকাওদের । ২০০৭ সালের যুব বিশ্বকাপ মাতিয়েছেন সার্জিও আগুয়েরো । ছয় গোল করে সেরা গোলদাতা আর সেরা গোলদাতা হয়ে তিনি মুল অবদান রাখেন আর্জেন্টিনার শিরোপা জয়ে । এছাড়া আনহেল ডি মারিয়াও ছিলেন সেই দলে । স্পেনে খেলেছেন জেরাড পিকে । উরুগুয়ে দলে ছিলেন লুইস সুয়ারেজ , এডিসন কাভানি । মেক্সিকোর হয়ে মাঠ মাতান জিওভান্নি ডস স্যান্তস আর হাভিয়ের হার্নান্দেজ ।

২০১১ সালের বিশ্বকাপে ফিলিপ্পে কুতিনিও নজর কাড়েন ব্রাজিলের হয়ে । ফ্রান্সের আতোয়া গ্রিজম্যান আর লেকাজাত্তে , কলম্বিয়ার হামেস রদ্রিগেজরা খেলেছেন সেই আসরে । ২০১৩ সালের যুব বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় ছিলেন পল পগবা । এছাড়া ইংল্যান্ডের হ্যারি কেইন খেলেছেন একই আসরে ।

২০১৭ সালের ফ্রেডরিকো ভেলভার্দে আর লাউতেরো মার্টিনেজরা এখন ইউরোপ কাঁপাচ্ছেন । ২০১৯ সালের আসরের সেরা গোলদাতা ছিলেন আর্লিং হাল্যান্ড । যিনি গড়ছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে নতুন নতুন রেকর্ড । হুলিয়ান আলভারেজকেও আর্জেন্টিনা পায় ২০১৯ সালের যুব আসর থেকে ।

২০২৩ সালের যুব বিশ্বকাপে বড় তারকা হবার সম্ভাবনা নিয়ে আসছেন আর্জেন্টিনার লুকা রোমেরো , ইটালির ড্যানিয়েল মন্টেভাগো , ব্রাজিলের আন্দ্রে স্যান্তস , ইংল্যান্ডের মাতিও জোসেফ , অ্যালেন ভার্জিসিয়াসরা । তবে ব্রাজিলের ভিটর রকি আর আর্জেন্টিনার গার্নাচোর মতো তারকা ক্লাবের অনুমতি না পাওয়ায় হতাশ ফুটবল ভক্তরা । কারণ অনূর্ধ্ব-২০ পর্যায়ে তারাই এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে প্রতিভাবান ফুটবলার ।

আহাস/ক্রী/০০৩