Download WordPress Themes, Happy Birthday Wishes

ফিফার সহায়তায় মেসিদের বিশ্বকাপ জয় ফুটবলের জন্য লজ্জার

ক্রীড়ালোক প্রতিবেদকঃ

একটা সময় লিওনেল মেসির বড় ভক্ত ছিলেন দিয়াগো লুগানো । উরুগুইয়ান সাবেক অধিনায়ক মেসি সম্পর্কে নিজের মুগ্ধতার কথা খোলাখুলি জানিয়েছেনও । ২০১০ সালের বিশ্বকাপ সেমি ফাইনাল থেকে বিদায় নেয় উরুগুয়ে । পরবর্তীতে লুগানো জানিয়েছিলেন , উরুগুয়ে দলে মেসি থাকলে কাপটা তারাই জিততেন !

কিন্তু সেই লুগানো এখন ত্যাক্তবিরক্ত । কাতারে ফিফা’র প্রত্যক্ষ মদদে বিশ্বকাপ জয়ের পর মেসি এখন তাঁর কাছে একজন ফুটবল প্রতারক । যাকে অনৈতিক পন্থায় সাফল্য পাইয়ে  দিয়ে বিশ্ব ফুটবলের অভিভাবক সংস্থা ‘ফিফা’ নেমেছে মহানায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টায় । লুগানো কাতারে  বিশ্বকাপ জয়কে আর্জেন্টিনার জন্য লজ্জাজনক অধ্যায় হিসেবেই দেখছেন ।

১৯৮৬ থেকে ২০২২ সাল । অপেক্ষা দীর্ঘ ৩৬ বছরের । একজন দিয়াগো ম্যারাডোনার অতিমানবিক পারফর্মেন্সে ১৯৮৬ সালে নিজেদের ইতিহাসের দ্বিতীয় ফুটবল বিশ্বকাপ জিতেছিল আর্জেন্টিনা । ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে ‘হ্যান্ড অফ গড’ কাণ্ড ছাড়া ম্যারাডোনার বিশ্বকাপ জয়ে কোন কালিমা নেই । পরবর্তী আসরেও ম্যারাডোনার নেতৃত্বে আর্জেন্টিনা খেলে ফাইনালে । ম্যারাডোনা পরিণত হন ফুটবল ইতিহাসের মহানায়কে ।

আর্জেন্টিনা ১৯৭৮ সালেও বিশ্বকাপ জিতেছিল । কিন্তু নিজ দেশের মাটিতে পেরুসহ একাধিক পাতানো ম্যাচের আশ্রয় নিয়ে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জেতা হয়ে আছে ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম বড় কালিমা ।চ্যাম্পিয়ন ট্রফির সাথে ১৯৭৮ সালের টুর্নামেন্ট সেরার গোল্ডেন বল আর গোল্ডেন বুট জিতেও নায়ক হয়ে উঠতে পারেন নি মারিও কেম্পেস এবং অন্যরা । তেমনি ২০২২ সালের বিশ্বকাপ জয়ের পরেও লিওনেল মেসি হয়ে উঠেছেন উপহাসের পাত্র । অথচ দেশকে ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপ জিতিয়ে মেসি হয়ে উঠতে পারতেন মহানায়ক । যদি সেই বিশ্বকাপ আসতো সরল পথে ।

উরুগুয়ের হয়ে ৯৫ ম্যাচে ৯ গোল করা লুগানো তুলে এনেছেন কাতার বিশ্বকাপে মেসিদের ট্রফি জয়ের নেপথ্য গল্প । বলেছেন , ‘ কাতারে যেভাবে মেসিদের হাতে বিশ্বকাপ তুলে দেয়া হয়েছে , সেটা হাস্যকর । পুরো আসরে রেকর্ড পাঁচটি পেনাল্টি দেয়া হয়েছে আর্জেন্টিনার পক্ষে । যার মধ্যে চারটি সন্দেহাতীতভাবেই ছিল অন্যায্য । ‘

৪২ বছরের লুগানো জানান , ‘ আর্জেন্টিনার পক্ষে কাজ করেছে ফিফা । ভিডিও এসিসটেন্ট রেফারি (var) কে প্রচুর ক্ষমতা দেয়া হয়েছে । তারা ইচ্ছে করলে একটি ম্যাচে ২০টি পেনাল্টি দিতে পারেন । আবার বঞ্চিত করতে পারে যে কোন দলকে । প্রযুক্তির দোহাই দিয়ে ইচ্ছেমত সুবিধা দেয়া যায় বিশেষ কোন দলকে । যা হয়েছে কাতার বিশ্বকাপে । আর্জেন্টিনাকে পেনাল্টিসহ নানা সুবিধা দিয়ে শিরোপা জেতানো হয়েছে । আসলে ফিফা ফুটবলের পরিবেশটাকেই বিষিয়ে তুলেছে । ‘

লুগানো  জানান , ‘ ফিফা দৃঢ় প্রতিজ্ঞায় ছিল , আর্জেন্টিনাকে শিরোপা দেয়া হবে । তাই নির্লজ্জভাবে var , মাঠের রেফারিসহ সমস্ত উপাদান মেসিদের পক্ষে কাজ করেছে । একটি পেনাল্টি পুরো ম্যাচের গতিপ্রকৃতি বদলে দেয় । একজন খেলোয়াড়কে ফাউল করা হয়েছে বক্সের কোনায় , যেখান থেকে গোলের সম্ভাবনা নেই । এমনকি সেখানে বলের উপস্থিতিও নেই । কিংবা অনিচ্ছাকৃত বল হাতে লেগেছে বক্সের কোনায় – এমন ঘটনায় পেনাল্টি দেয়ার অর্থই একটি দলকে বিশেষ সুবিধা দেয়া । কাতারে সেটাই করেছে ফিফা । ‘

লুগানোর কথার সত্যতা প্রথম ম্যাচ বিশ্লেষণ করলেই পাওয়া যায় । সৌদি আরবের বিপক্ষে খেলার আট মিনিটে আর্জেন্টিনার পক্ষে যে পেনাল্টি দেয়া হয় , সেটা ছিল রীতিমত হাস্যকর । কর্নারের কাছে মেসির ফ্রি কিক থেকে উড়ে আসা বলে লিয়েন্দ্রো পেরাদেস সৌদির আল ফারাজের সাথে শারীরিক শক্তিতে না পেরে পড়ে যান । যা ভিডিও রিভিউ করে পেনাল্টি দেন রেফারি । অথচ এই ঘটনায় কোনভাবেই পেনাল্টি দেয়া ‘হাস্যকর’ সিদ্ধান্ত ছাড়া আর কিছু না । বক্সের মধ্যে দুই দলের খেলোয়াড়রা একে অন্যকে ধরার বা আটকে রাখার চেষ্টা খুব সাধারণ বিষয় । পড়ে যাওয়াও কোন রকম ফাউলের আওতায় পড়ে না , যদি না মারাত্মক ফাউল না হয় । আবার পেরাদেসকে ফাউল করার অপরাধে পেনাল্টি দেয়ার সময় বল ধারেকাছেও ছিল না । বরং সৌদি গোলরক্ষক নিরাপদ দূরত্ব থেকে বল বিপদমুক্ত করেছিলেন । অর্থাৎ পেরেদেসের কাছ থেকে গোল আসার বা এসিস্ট করার কোন সম্ভাবনা ছিল না । কিন্তু সেই ঘটনাকেই পেনাল্টি দিয়ে ‘নজিরবিহীন’ ঘটনার জন্ম দেন স্লোভেনিয়ান রেফারি স্লাভকো ভিঞ্চিচ । যা থেকে গোল করেন লিওনেল মেসি ।

একইভাবে পোল্যান্ডের গোলরক্ষক সেজনির সাথে মেসির সামান্য আঘাত , যেখানে মেসির বল পাওয়ার কোন সম্ভাবনা ছিল না – সেখানে দেয়া হয়েছে পেনাল্টি । সেটাও var নাটক করে । হল্যান্ড আর ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে একই কায়দায় পেনাল্টি পেয়েছে আর্জেন্টিনা । হল্যান্ডের বিপক্ষে ৭৩ মিনিটে আর্জেন্টিনার পেনাল্টি ছিল অবিশ্বাস্য হাস্যকর । প্রথমত ডেনজেল ডামফ্রিসের ট্যাকল ফাউল হয়েছে কিনা কিংবা ফাউল হলেও পেনাল্টির মতো কিনা , সেটা নিয়ে তর্কে মেতেছেন বিশেষজ্ঞরা । আর তাছাড়া মার্কাস আকুইনা ছিলেন ডি বক্স লাইনের কিছুটা পেছনে । কিন্তু রেফারি ঠিক বাজিয়ে দেন ফাউলের বাঁশি । আর নির্দেশ দেন পেনাল্টির । যা থেকে ফিফাপুত্র মেসি গোল করেন । হল্যান্ডের বিপক্ষে প্রতিপক্ষের শেষ সীমানায় হ্যান্ডবল করেও লাল কার্ড দেখতে হয় নি মেসিকে ।

ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ৩৪ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে হাওয়ায় বল ভাসিয়ে দেন এনজো ফার্নান্দেজ। হুলিও আলভারেজ সেই বল ধরতে ছোটেন। ক্রোয়েশিয়ার গোলকিপার ডমিনিক লিভাকোভিচের ডান পাশ দিয়ে লব করতে চেয়েছিলেন তিনি। ক্রোয়েশিয়ার সেন্টার ব্যাক দিহান লভরেন বল ক্লিয়ার করে দেন। তবে তার আগে ক্রোট গোলকিপার এগিয়ে আসায় বাঁধার মুখে পড়েন আলভারেজ । কিপারের শরীরে লাগতেই তিনি পড়ে যান । পড়ে যান ক্রোট কিপার । এই ঘটনাতেই রেফারি দিয়ে বসেন পেনাল্টি !

রেফারির পেনাল্টি সিদ্ধান্তে হতবাক সবাই । গ্যারি নেভিল, রয় কিন ও ইয়ান রাইট- তিন বিশেষজ্ঞা জানিয়েছেন, ওঠা পেনাল্টি ছিল না। কারণ , এমন ঘটনায় কিপারদের এগিয়ে আসা স্বাভাবিক । আর ধাক্কা যদি লেগেও থাকে , সেটা দিয়েছেন আলভারেজ । তাই ফাউল এখানে হবে আলভারেজের বিপক্ষে ।আর তাছাড়া দুই খেলোয়াড়ের মুখোমুখি হবার আগেই বল চলে গিয়েছিল আরেকদিকে । আলভারেজ বাঁধা না পেলেও গোল হবার কোন সম্ভাবনা ছিল না । কিন্তু রেফারি কোন কিছু না ভেবে নির্দেশমতো দিয়ে দেন পেনাল্টি । সেই ম্যাচের পর লুকা মদ্রিচসহ ইউরোপের বেশীরভাগ গণমাধ্যমে লেখা হয় , ‘ফিফা এবার আর্জেন্টিনার হাতে কাপ তুলে দিতে মরিয়া। আর তাই রেফারি ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে আর্জেন্টিনাকে পেনাল্টি পাইয়ে দিলেন।’

সবার আশংকা সত্যি করে ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার জয়ের পথ তৈরি করে দেয়া শুরুতেই হাস্যকর পেনাল্টি দিয়ে । প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারের কোন ছোঁয়া না লাগলেও ডাইভ দিয়ে পেনাল্টি আদায় কর নেন আনহেল ডি মারিয়া ।

উরুগুয়ের সাবেক অধিনায়ক মুলত রেফারিদের কুকীর্তি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন , যা মেসিদের পক্ষে গেছে ।

লুগানো জানিয়েছেন , ‘ আমাদের এখন আর কাতার বিশ্বকাপ নিয়ে কথা বলতেই ঘেন্না লাগে । সেখানে যা হয়েছে , তা লজ্জার। ‘

শুধু বিশ্বকাপ নয় , লুগানো মনে করেন মেসিদের একটি আন্তর্জাতিক ট্রফি উপহার দেয়ার জন্য ২০১৫ সাল থেকে ছয় বছরে চারটি কোপা আমেরিকা আয়োজন করেছে । সেই পরিকল্পনা সফল করার পর টার্গেট করা হয় বিশ্বকাপ । 

লুগানো ইঙ্গিত দিয়েছেন , ‘ মেসির মাধ্যমে আর্জেন্টিনা পাতানো বিশ্বকাপ জিতেছে । কোপা আমেরিকাও পেয়েছে । আর্জেন্টিনার যোগ্যতা , তারা সমস্ত অনৈতিক সুবিধা কাজে লাগাতে পেরেছে । মেসির সৌভাগ্য , তিনি আন্তর্জাতিক শিরোপা নিয়ে অবসরে যেতে পারছেন । ‘

লুগানোর অধীনে উরুগুয়ে ২০১১ সালের কোপা আমেরিকা জিতেছে । খেলেছে দুইটি বিশ্বকাপ । ২০১০ সালের বিশ্বকাপে সেরা অধিনায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন লুগানো ।

আহাস/ক্রী/০০৩