Download WordPress Themes, Happy Birthday Wishes

ফার্নান্দো দিনিজ হচ্ছেন ব্রাজিলের কোচ!

ক্রীড়ালোক প্রতিবেদকঃ

২০২২ সালে কাতারে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে শিরোপা জয়ের স্বপ্ন নিয়ে মাঠে নেমেছিলো ব্রাজিল । যদিও কোয়ার্টার ফাইনালের বেশী এগুতে পারে নি পাঁচবারের ফিফা বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নরা । বিশ্বকাপের পর ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগ করেন কোচ তিতে । সেই থেকে ব্রাজিল এখনও কোন স্থায়ী কোচ পায় নি । তবে নতুন কোচ হিসেবে ব্রাজিল নিয়োগ দিতে পারে ফার্নান্দো দিনিজকে ।

কাতার বিশ্বকাপের পর ব্রাজিলিয়ান ফুটবল ফেডারেশন (সিবিএফ) ঝুঁকেছিল ইউরোপিয়ান কোচের প্রতি । ২০০২ সালে ব্রাজিল শেষবার বিশ্বকাপ জয়ের উল্লাস করেছিল । কিন্তু পরবর্তী পাঁচটি আসরে ফাইনালেও ওঠা হয় নি সেলেকাওদের । একবারই খেলেছে সেমিতে । কিন্তু ২০১৪ সালে নিজ দেশের মাটিতে সেই সেমি ফাইনাল ব্রাজিলের জন্য হয়ে আছে দুঃস্বপ্ন । জার্মানির কাছে মারাকানা স্টেডিয়ামে ১-৭ গোলের লজ্জায় মুখ ঢাকে লুইস ফিলিপ্পে সোলারির ব্রাজিল । বাকী চারবার বিদায় নেয় কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে । প্রতিবার তাদের বিদায় করেছে কোন না কোন ইউরোপিয়ান দল । কখনও হল্যান্ড কিংবা বেলজিয়াম , কখনও ফ্রান্স , জার্মানি কিংবা ক্রোয়েশিয়া ।

ইউরোপিয়ান দলগুলোর রক্ষণের সাথে আক্রমণের যে সমন্বয় – সেটাই ব্রাজিল ধরতে পারছে না । মুলত সেই কারণে ইউরোপের গতিশীল ট্যাক্টিক্যাল ফুটবলের সাথে পেরে উঠতে না পারার হতাশায় ভুগছে ব্রাজিলের ফুটবল । যে কারণে ২০২৬ সালের বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ব্রাজিলের ফেডারেশন নামে ইউরোপিয়ান কোচের সন্ধানে । জিনেদিন জিদান , হোসে মারিনিও , পেপে গার্দিওলাদের নাম আসে ব্রাজিলের সম্ভাব্য কোচ হিসেবে । শোনা যায় , কার্লো আঞ্চেলত্তির নাম । কিন্তু গার্দিওলা আর মারিনিও ম্যানচেস্টার সিটি আর রোমা ছেড়ে আসতে রাজী না । জিদান আপাতত ইউরোপ ছাড়ছেন না । আগামী মৌসুমে সম্ভবত পিএসজির দায়িত্ব নিচ্ছেন তিনি ।

কার্লো আঞ্চেলত্তির সাথেও চুক্তি আছে রিয়েল মাদ্রিদের । ইটালিয়ান কোচ জানিয়ে দিয়েছেন , আগামী মৌসুমেও স্পেনে থাকছেন তিনি ।

এদিকে , ব্রাজিল মার্চে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ খেলেছে মরক্কোর বিপক্ষে । অন্তর্বর্তী কোচ হিসেবে সেই ম্যাচে দায়িত্ব পালন করেছেন র‍্যামন মেঞ্জেস । এই কোচের অধীনে ব্রাজিলের অনূর্ধ্ব-২০ দল খেলছে বিশ্বকাপে । চলতি বছরের শুরুতেই তিনি যুব দলকে জিতিয়েছেন অনূর্ধ্ব-২০ কোপা । কিন্তু যুব দল আর জাতীয় দল যে এক না , সেটা হয়ত তিনি নিজেই বুঝেছেন মরক্কোর বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে হেরে ।

মেঞ্জেসের অধীনে মরক্কোর বিপক্ষে তাঞ্জায়ারে ব্রাজিলের খেলা রীতিমত হতাশ করেছে । ছন্দময় ফুটবলের দেশ ব্রাজিলের জার্সিতে নামিয়ে দেয়া হয়েছে এমন কিছু ফুটবলার , যাদের ব্রাজিলের জার্সির ভার বইবার ক্ষমতা নেই । রদ্রিগোকে দেয়া হয়েছে ১০ নাম্বার জার্সি । পেলে থেকে শুরু জিকো , রিভালদো , রোনালদিনিও , কাকাদের জার্সির প্রতি সম্মান জানাতে পারেন নি রদ্রিগো । যদিও বর্তমানে ১০ নাম্বার জার্সি ব্রাজিল দলে নেইমার গায়ে চড়ান । কিন্তু নেইমারের পরবর্তী প্লে-মেকার ভুমিকায় কিছুদিন যাবত রদ্রিগোর নাম শোনা যাচ্ছিলো । মরক্কোর বিপক্ষে সব আশায় পানি ঢেলেছেন রদ্রিগো ।

মরক্কোর বিপক্ষে ইনজুরির কারণে ছিলেন না নেইমার জুনিয়র , থিয়াগো সিলভা , মার্কুইনহোস আর রিচার্লিশনের মতো পরীক্ষিতরা । কিন্তু ব্রাজিলের অন্তর্বর্তী কোচ কাজে লাগান নি অ্যালিসন বেকার , ড্যানিলো , ব্রুনো গুইমারেস , গ্যাব্রিয়েল হেসুস , রাফিনিয়া , গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেল্লি আর রবার্টো ফিরমিনিওর মতো তারকাদের । তাদের রেখে আসেন দেশেই ।

মেঞ্জেসের অধীনে ব্রাজিলের অনূর্ধ্ব-২০ দল ফেব্রুয়ারিতে কোপা আমেরিকা জিতেছে । সেই আত্মবিশ্বাস থেকেই অলিম্পিক দলের (অনূর্ধ্ব-২৩) মোট আটজন খেলোয়াড় দলে নিয়েছিলেন তিনি । ম্যাচে খেলান ১৮ বছরের ভিটর রকি ও আন্দ্রে সান্তোসকে । ১৯ বছর বয়সী আর্থার, ২২ বছর বয়সী ইউরি আলবার্তোর মতো খেলোয়াড়দের মাঠে নামান। রনি ও রাফায়েল ভেইগাও প্রথমবার জাতীয় দলের জার্সি পরেন।

অভিজ্ঞদের ফেলে তরুণদের উপর অতিরিক্ত ভরসা করে যে জুয়া খেলেছিলেন মেঞ্জেস , সেটা কাজে লাগে নি । টাঙ্গিয়েরের ইবনে বতুতা স্টেডিয়ামে অনভিজ্ঞ একটি দল নিয়ে মাঠে নেমে যা হওয়ার তাই হলো। বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলে চাঙ্গা মনোবল নিয়ে মরক্কো তাদের হারিয়ে দিলো।

যদিও এই হারের পর অনুতাপ জানিয়েছেন মেঞ্জেস । কিন্তু তরুণ খেলোয়াড়দের সুযোগ দিতে পেরে সন্তুষ্ট তিনি, ‘দারুণ একটি সপ্তাহ ছিল, আমি খেলোয়াড়দের সঙ্গে সেটা বলেছিলাম। অবশ্যই এই ফল আমরা প্রত্যাশা করিনি, বিশেষ করে ব্রাজিলিয়ান দল বলে কথা। কিন্তু আমরা একটি দারুণ দলের বিপক্ষে খেললাম এবং কিছু তরুণ খেলোয়াড়কে সুযোগ দিয়েছি, এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’

মেঞ্জেস সন্তুষ্ট হলেও ব্রাজিলের ফুটবল ফেডারেশন যে সন্তুষ্ট না । তাই ব্রাজিলিয়ান ফেডারেশন খুঁজছে মেঞ্জেসের বিকল্প । আগামী জুনে ব্রাজিল দুটো প্রীতি ম্যাচ খেলবে গিনি আর সেনেগালের বিপক্ষে । পরবর্তীতে শুরু হচ্ছে ল্যাটিন আমেরিকার বিশ্বকাপ বাছাই । তাই ব্রাজিলের জন্য একজন স্থায়ী কোচ জরুরী । সেই লক্ষ্যে ব্রাজিল নিয়োগ দিতে পারে ফার্নান্দো দিনিজকে ।

২০০৯-১০ মৌসুম থেকে কোচ হিসেবে কাজ করছেন দিনিজ । কাজ করেছেন সাও পাওলো , ভাস্কো দা গামা আর স্যান্তসের মতো বড় ক্লাবে । বর্তমানে ফ্লুমিনেন্সের কোচ ৪৯ বছরের দিনিজ । সম্প্রতি ফ্লুমিনেন্সে ৪-১ গোলে ফ্লেমিংগোকে হারিয়ে জিতেছে ক্যারিওকা কাপ । দিনিজের দলে খেলছেন ব্রাজিলিয়ান মার্সেলো । চলমান কোপা লিবারেটস কাপেও দারুণ ছন্দে আছে দিনিজের দল । গ্রুপ পর্বে জিতেছে টানা তিন ম্যাচ । বুয়েন্স আইরেসে হারিয়েছে ৫-১ গোলে হারিয়েছে আর্জেন্টিনার অন্যতম সেরা রিভার প্লেটকে ।

দিনিজের ক্যারিয়ারে ব্যর্থতাও রয়েছে । ব্যর্থতার সায়ে তিনি বরখাস্ত হয়েছেন সাও পাওলো আর ভাস্কো দা গামা থেকে । তবে সেখানে দিনিজের যে দুর্বল দলের ব্যর্থতা ছিল বেশী , নইলে দিনিজের ম্যাচ পরিকল্পনা নিয়ে খুব বেশী সমালোচনা হয় নি । দিনিজ্র বর্তমান দলেও খুব বেশী তারকা নেই । অলিম্পিকজয়ী ডিফেন্ডার নিনো , মার্সেলো , আর্জেন্টিনার ফরোয়ার্ড গেরম্যান কানো আর কলম্বিয়ার উইঙ্গার জন অ্যারিয়াসদের নিয়ে লড়ছেন তিনি । আকর্ষণ করেছেন গণমাধ্যমের মনোযোগ ।

ব্রাজিলিয়ান মিডিয়া ইতোমধ্যে দিনিজের জাতীয় দলের কোচ হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছে । দিনিজ ছাড়াও ব্রাজিলিয়ান কোচদের মধ্যে গ্রেমিও রেনাতো গুনাচ্চো , সাও পাওলোর ডরিভাল জুনিয়রদের নাম আসছে ।

ব্রাজিলিয়ান গ্রেট রোনাল্ডো নাজারিও জানিয়েছেন , ব্রাজিল দলে ইউরোপিয়ান কোচ প্রয়োজন নেই । ব্রাজিল অতীতে সাফল্য পেয়েছে নিজেদের কোচ দিয়েই । ব্রাজিলের খেলার নিজস্বতা আছে । সেখানে ইউরোপের কোচ নিয়ে সন্দেহ থাকতেই পারে । ব্রাজিল ফেডারেশনের উচিত নিজের দেশ থেকেই যোগ্য মানুষ খুঁজে নিয়ে জাতীয় দলের দায়িত্ব দেয়া । ‘

আহাস/ক্রী/০০৭