
ক্রীড়ালোক প্রতিবেদকঃ
শেষ হয়ে গেছে স্প্যানিশ লা লিগার শিরোপা লড়াই । চার ম্যাচ হাতে রেখেই লিগ শিরোপা জয় করেছে বার্সেলোনা । তবে বার্সার শিরোপা জয়ে শেষ হয় লা লিগার সব সমীকরণ । এখনও চলছে লিগে দ্বিতীয় আর তৃতীয় হওয়ার লড়াই । আছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জায়গা পাওয়ার প্রশ্নটাও ।
রিয়েল মাদ্রিদ আর এথলেটিকো মাদ্রিদের মধ্যে চলছে দ্বিতীয় স্থানের লড়াই । রবিবার (২১ মে) ভ্যালেন্সিয়ার কাছে হেরে তিনে নেমে গেছে রিয়েল । তারা পেয়েছে ৩৫ ম্যাচে ৭১ পয়েন্ট । সমান ম্যাচে ৭২ পয়েন্ট পাওয়া এথলেটিকো দুইয়ে । শেষ তিন ম্যাচে রিয়েলের হোঁচট হতে পারে ভয়ংকর । তাতে ৬৫ পয়েন্ট নিয়ে চারে থাকা রিয়েল সোসিদাদ পেয়ে যেতে পারে বাড়তি সুযোগ । সর্বশেষ তিনটি অ্যাওয়ে ম্যাচে হেরেছে রিয়েল । তাই লিগের শেষ তিন ম্যাচ তাদের জন্য কঠিন পরীক্ষা হয়ে দেখা দিতে পারে ।
ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে লাল কার্ড পেয়েছেন ভিনিসিয়াস জুনিয়র । দুই মৌসুম ধরে ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার রিয়েলের অন্যতম সেরা তারকা । কিন্তু মাঠে মেজাজ ধরে রাখার প্রশ্নে তিনি নিজেকে সামাল দিতে পারছেন না । চলতি মৌসুমে রিয়েলের জার্সিতে ৫৪ ম্যাচে ২৩ গোল আর ২১ এসিস্ট করেছেন ভিনি । নিঃসন্দেহে ইউরোপিয়ান লিগগুলোর মধ্যে অন্যতম সেরা পারফর্মেন্স । কিন্তু মাঠে মেজাজ হারাবার ক্ষেত্রে দিন দিন যেন উদগ্র হয়ে উঠছেন । চলতি মৌসুমেই সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ১৬ হলুদ কার্ড যার প্রমাণ । আর ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে তো দেখলেন সরাসরি লাল কার্ড ।
কিন্তু কি করছিলেন ভিনি , যে কারণে তাঁকে লাল কার্ড পেতে হয়েছে ? মূলত বর্ণবাদের শিকার হয়ে হাতাহাতিতে জড়ানোর কারণে লাল কার্ড খেয়ে মাঠ ছাড়েন ব্রাজিলের তরুণ এ ফুটবলার। সাম্প্রতিক সময়ে খেলার মাঠে বারবার বর্ণবাদী আচরণের শিকার হচ্ছেন ভিনি । রবিবারেও স্বাগতিক ভ্যালেন্সিয়া দর্শকরা ভিনিসিয়ুসকে বর্ণ পরিচয় তুলে গালি দিতে থাকে। বেশ কিছু বর্ণবাদী দর্শককে লক্ষ্যে করেন তরুণ ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। আঙুল নির্দেশ করে তাদের প্রতি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি। ম্যাচ কিছুক্ষণ বন্ধও থাকে।
ম্যাচ ছিল ঘটনাবহুল । দুই দলের খেলোয়াড়দের ঝামেলায় ম্যাচ বন্ধ হয়েছে বারবার । যে কারণে ৯০ মিনিটের খেলা শেষ হয় ১০৭ মিনিটে !
শেষ বাঁশির মিনিট তিন আগে ভ্যালেন্সিয়া খেলোয়াড়দের সঙ্গে তর্কে জড়ান ভিনি। দলটির জর্জিয়ান গোলরক্ষক মার্দাসভেলি তেড়ে এসে ভিনির সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু করেন। ভ্যালেন্সিয়ার টনি লাতো পিছন থেকে তার গলা চেপে ধরেন।
দুই দলের ফুটবলাররা ভিনি ও মার্দাসভেলিকে আলাদ করে ফেলেন। এমন সময় ভিনির চড় লেগে যায় ভ্যালেন্সিয়ার হুগো দুরোর মুখে। রেফারি সরাসরি লাল কার্ড দেখিয়ে মাঠ ছাড়া করেন ব্লাঙ্কোস ফরোয়ার্ডকে। ক্যারিয়ারে এটাই ভিনির সরাসরি লাল কার্ডের ঘটনা। তবে তিনি মাঠ ছাড়ার সময় বোঝা যায় যে, মাঠেই বর্ণবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারায় লাল কার্ড নিয়ে তার আক্ষেপ নেই।
ক্যারিয়ারে প্রথম লাল কার্ড পেলেও বর্ণবাদী আচরণ ভিনির পিছু যাওয়া করছে অনেকদিন । গত ৫ ফেব্রুয়ারি মায়োর্কার বিপক্ষে লা লিগার এক ম্যাচে বর্ণবাদের শিকার হন তিনি । গ্যালারি থেকে দর্শকরা ভিনিকে লক্ষ্য করে বারবার বাজে মন্তব্য করে যান । এই ঘটনায় স্পেনের সহিংসতাবিরোধী কমিশন তদন্ত করে এক দর্শককে ৪ হাজার ইউরো জরিমানা করে । এক বছরের জন্য সেই দর্শকের স্টেডিয়ামে প্রবেশের উপর দেয়া হয় নিষেধাজ্ঞা ।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে মাদ্রিদ ডার্বির আগে ক্লাবের ট্রেনিং সেন্টারের সামনে ব্রিজ থেকে একটি পুতুল ঝুলানো হয়, যেটার গায়ে ছিল ২০ নম্বর জার্সি। ভিনির জার্সি নম্বরও ২০। পরে এটি নিয়ে তদন্ত করে স্প্যানিশ পুলিশ।ভিনি পুরো বিষয়কে দেখছেন বর্ণবাদী আচরণ হিসেবে । তাঁর বিরুদ্ধে বৈষম্যমুলক আচরণের প্রতিবাদ রিয়েল মাদ্রিদ করেছে উয়েফার কাছে ।
২০২১ সালে বার্সেলোনা আর ২০২২ সালে ভায়াদোলিদের মাঠে দর্শকদের বিরুপ আচরণের শিকার হন ভিনিসিয়াস । তাঁকে তুলনা দেয়া হয় বাঁদরের সাথে । যা অবশ্যই আপত্তিকর ।
চলতি মৌসুমেই এথলেটিকো মাদ্রিদের দর্শকরা তাঁকে লাঞ্ছিত করেছেন বর্ণবাদী আচরণে । অনেকেই মনে করেন , শুধু গাত্রবর্ণের কারণে ভিনি দর্শকদের বিরুপ আচরণের শিকার হচ্ছেন – এমন না । বরণ গোল করার পর তাঁর উদযাপন ভঙ্গি পছন্দ না দর্শকদের । যে কারণে তাঁকে ব্যাঙ্গ করা হচ্ছে ।ভিনির নাচের কারণে তার সমালোচনাও করেছেন স্প্যানিশ ফুটবল এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পেদ্রো ব্রাভো। আর ফুটবল মাঠে খেলোয়াড়দের উত্যক্ত করা নতুন কিছু না । দর্শকরা সব সময়েই প্রতিপক্ষের সেরা খেলোয়াড়দের মনোযোগ নষ্ট করতে নানা কারসাজি করেন । ভিনিও তাদের টার্গেট । আর ভিনি সহজে রেগে যান বলে তাদের কাজ হয়ে যায় সহজ ।
আহাস/ক্রী/০০৬