
ক্রীড়ালোক প্রতিবেদকঃ
ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি । শুধু জাতীয় দল না , তিনি নিজেকে সেরা প্রমাণ করে চলেছেন আইপিএলেও । ভারতের জনপ্রিয় ফ্রেঞ্চাইজি লিগে ধোনি এখনও অপ্রতিরোধ্য । তাঁর দল চেন্নাই সুপার কিংস যেন আসরে অংশই নেয় নিদেন পক্ষে ফাইনাল খেলার জন্য ।
মঙ্গলবার (২৩ মে) চেন্নাই প্রথম কোয়ালিফাই ম্যাচে ১৫ রানে হারিয়েছে গুজরাট টাইটান্সকে । উঠে গেছে ষোড়শ আইপিএলের ফাইনালে । এই নিয়ে আইপিএলে দশম ফাইনাল নিশ্চিত করলো চেন্নাই । যার মধ্যে শিরোপা এসেছে চারবার । ২০২১ সালে সর্বশেষ শিরোপা জিতেছিল ধোনির চেন্নাই । ৪০ বছর বয়সে চেন্নাইকে শিরোপা জিতিয়ে গড়েন নতুন রেকর্ড । তিনিই আইপিএলের সবচেয়ে প্রবীণ ট্রফিজয়ী অধিনায়ক । ৩৯ বছর বয়সে শেন ওয়ার্ন রাজস্থান রয়্যালসের অধিনায়ক হিসেবে শিরোপা জিতেছিলেন । এছাড়া ২০০৯ সালে ডেকার্ন চার্জাসকে আইপিএল জেতান অ্যাডাম গিলক্রিস্ট। তখন তার বয়স ছিল ৩৭ বছর।
অধিনায়ক হিসেবে শিরোপা জয়ের সংখ্যায় মুম্বাই ইন্ডিয়ায়ন্সের রোহিত শর্মার চেয়ে পিছিয়ে আছেন ধোনি । রোহিতের শিরোপা সংখ্যা পাঁচটি । আর ধোনির চারটি । তবে ম্যাচ জয়ের সংখ্যায় রোহিতের চেয়ে অনেক এগিয়ে ধোনি । তিনি অধিনায়ক হিসেবে আইপিএলের ২২৫ ম্যাচে পেয়েছেন ১৩২ জয় । অন্যদিকে রোহিতের অবস্থান দ্বিতীয় । তাঁর ম্যাচ জয়ের সংখ্যা ৮৬ । নেতৃত্ব দিয়েছেন ১৫৬ ম্যাচে ।
আইপিএলে প্রথম ভারতীয় অধিনায়ক হিসেবে ২০১০ সালের শিরোপা জিতেছিলেন ধোনি । প্রথম দুই আসরে শিরোপা জিতেছিলেন রাজস্থানের শেন ওয়ার্ন আর ডেকান চার্জার্সের অ্যাডাম গিলক্রিস্ট ।
চলমান আইপিএলে ব্যাট হাতে খুব বেশী কার্যকর ভুমিকায় নেই ধোনি । আসলে কার্যকর ভূমিকা নেয়ার সুযোগ হচ্ছে না তাঁর । তিনি নামছেন ছয়/সাত নাম্বারে । সেখান থেকে করার খুব বেশী কিছু থাকে । নিজের অবস্থানে যা করার তা কিন্তু ঠিকই করছেন তিনি । ১৫ ম্যাচের ১১ ইনিংসে ব্যাট হাতে নেমে ৮বার থেকে গেছেন অপরাজিত । করেছেন ১০৪ রান । আর স্ট্রাইক রেট ? চলতি আইপিএলে সবচেয়ে বেশী ১৮৫.৭১ ! এখন হিসেব করুন ঠিক কতটা বল খেলার সুযোগ পেয়েছেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল ধোনি ।
ধোনির পর আইপিএলে ১৮৩ এর উপর স্ট্রাইক রেট রেখেছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল । সবচেয়ে বেশী ১৪ ম্যাচের ১৪ ইনিংসে ৭৩০ রান করেছেন ফাফ ডু প্লেসি । তাঁর স্ট্রাইক রেট ১৫৩.৬৮ । দুই সেঞ্চুরি করা বিরাট কোহলি রান করেছেন ১৪০ এর স্ট্রাইক রেটের কাছাকাছি । এছাড়া দুইটি সেঞ্চুরিসহ রান তালিকার দ্বিতীয় স্থানে আছে শুভমান গিল । ৭২২ রান সংগ্রহে তাঁর স্ট্রাইক রেট ১৫০ এর নীচে ।
চলতি মৌসুমের আইপিএল চলাকালে ধোনির অবসর নিয়ে অনেকেই কথা বলছেন । হয়ত শিরোপা জিতলে ধোনিও সরে যাবেন , যদিও নিশ্চিত না । কিন্তু তাঁর অবসরের আভাসে প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেট দর্শক মহলে । ২৪ এপ্রিল ইডেন গার্ডেন্সে কলকাতার ম্যাচে গ্যালারি ভরে গিয়েছিল ধোনির হলুদ জার্সিতে । ৬৭ হাজার দর্শকাসনের ইডেন প্রায় পুরোটাই হলুদ জার্সিতে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল।
চলতি আইপিএলই ধোনির শেষ আইপিএল—এমন সম্ভাবনা প্রবল। আর সেই সম্ভাব্যতার চিত্র এঁকেই ইডেনের মাটিতে ক্রিকেটার হিসেবে ধোনির শেষ পদচিহ্নের এক জমকালো আয়োজনের মঞ্চায়ন করেছিল কলকাতার দর্শকরা। স্টেডিয়াম জুড়ে ‘ধোনি ধোনি’ চিৎকার ম্যাচের শুরু থেকেই। ধোনি ব্যাট করতে নামার সঙ্গে সঙ্গে সেই চিৎকার রূপ নেয় জয়োধ্বনিতে। ইডেনের মাঠ। অথচ কলকাতার জন্য সমর্থনের ছিটেফোঁটাও পাওয়া গেল না স্টেডিয়ামে আসা দর্শকদের কাছ থেকে। গোটা গ্যালারিতে ধোনির জার্সি, চেন্নাইয়ের পতাকা ভর্তি। এক প্রকার ‘মাহি’ মোহেই কলকাতার রঙ পাল্টে যায় বেগুনি থেকে হলুদ আভায়।
একজন ক্রিকেটারের প্রতি কতটুকু ভালবাসা থাকলে ঘরের মাঠে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়ের জন্য পাগল হয় দর্শকরা , সেটা প্রমাণ হয়েছে কলকাতায় । আসলে ধোনি তো চেন্নাইয়ের না , তিনি ভারতের । তাই আইপিএলের দলীয় সমীকরণ বাদ দিয়ে তিনি ভারতের জন্য সার্বজনীন । যে কারণে আইপিএল শুরুর আগে আয়োজিত কনসার্টে আসা সুপারস্টার গায়ক অরিজিৎ সিং দ্বিধা করেন নি ধোনির পা ছুঁয়ে আশীর্বাদ নিতে । গান গেয়ে যত জনপ্রিয় তিনি হন না কেন , ধোনিকে ছাড়াতে পারবেন না – এটা জেনেই হয়ত অরিজিৎ এর শ্রদ্ধাঞ্জলি নিজের আইডলকে ।
ভারতের সাবেক অধিনায়ক সুনীল গাভাস্কার তো বলেই দিয়েছেন , ‘ ধোনির মতো অধিনায়ক আর আসেনি এবং ভবিষ্যতে আসবেও না।’
ভারতের অধিনায়ক হিসেবে ধোনির অর্জন ২০১১ সালের আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ । জিতেছেন ২০০৭ সালের টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ । ২০১৩ সালে জিতেছেন আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আর তিনটি এশিয়া কাপ । অর্থাৎ ক্রিকেটে অধিনায়ক হিসেবে ধোনির আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পাওয়ার কিছু বাকী নেই । তাই আন্তর্জাতিক কিংবা ঘরোয়া আসর – ধোনিকে চ্যালেঞ্জ করার মতো ভারতের ক্রিকেটে কেউ নেই । তিনিই সবার সেরা ।
আহাস/ক্রী/০০৩