
ক্রীড়ালোক প্রতিবেদকঃ
ছন্দ হারিয়ে বা চোটের কারণে জাতীয় দলের অনেক ক্রিকেটারই নানা সময়ে ছিটকে গেছেন। প্রতিভা থাকার পরও যত্নের অভাবে কিংবা আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে জাতীয় দলে ফেরার তাগিদ আর অনুভব করেননি এমন ক্রিকেটারেরও অভাব নেই। প্রতিভাবান ক্রিকেটাররা যাতে হারিয়ে না যায়- সেই লক্ষ্যেই গঠন করা হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) হাই পারফর্মেন্স ইউনিট ।
২০০৪ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত প্রথমবারের মতো দেশের ক্রিকেটে হাই পারফর্মেন্স (এইচপি) ইউনিটের কার্যক্রম চালিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। সাবেক অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার রিচার্ড ম্যাকিন্সের তত্ত্বাবধানে ওই ক্যাম্প থেকে উঠে এসেছিলেন সাকিব, তামিম এবং মুশফিকদের মতো তারকারা। পরবর্তীতে বেশ কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর ২০১১ সাল থেকে হাই পারফর্মেন্স ইউনিট পুনরায় কাজ শুরু করে । ২০১৫ সাল থেকে যা বেগবান হয় । এই ইউনিট থেকে বাংলাদেশ জাতীয় দল পেয়েছে মোস্তাফিজুর রহমান , মেহেদী হাসান মিরাজের মতো তারকা ক্রিকেটার । বর্তমান সময়ের আলোচিত ক্রিকেটার তাওহিদ হৃদয় এইচপি ইউনিট থেকে উঠে এসেছেন ।
আগামীতে জাতীয় দলের জন্য ক্রিকেটার সরবরাহ অব্যাহত রাখতে হাই পারফর্মেন্স ইউনিট কাজ করছে । বুধবার (২৪ মে) থেকে শুরু হয়েছে এইচপি ইউনিটের মাসব্যাপী ক্যাম্প । এই ক্যাম্প দিয়েই এইচপির প্রধান কোচ হিসেবে যাত্রা শুরু করেছেন ডেভিড হেম্প। ২০২৫ সাল পর্যন্ত সাবেক ক্রিকেটার হেম্পের সাথে চুক্তি করেছে বিসিবি । এই প্রথম এইচপি ইউনিটের জন্য দীর্ঘমেয়াদী কোচের নিয়োগ দিলো বিসিবি ।
ডেভিড হেম্প বারমুডার ক্রিকেটার হিসেবে ২৪টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন । কিন্তু তাঁর ক্যারিয়ার সমৃদ্ধ হয়েছে মুলত ইংলিশ কাউন্টি ক্রিকেটে । ওয়ারউইকশায়ারের হয়ে ২৭১ প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ম্যাচে ১৫ হাজারেরও বেশি রান এবং ৩০৯ লিস্ট ‘এ’ ম্যাচে প্রায় সাত হাজার রান করেছেন তিনি । ২০২০ সাল থেকে পাকিস্তানের জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের হেড কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ।
এইচপি’র কার্যক্রম মাঝেমাঝেই গতি হারায় । এই নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন এইচপি চেয়ারম্যান নাইমুর রহমান দুর্জয়। বর্ষা মৌসুমে এইচপি কার্যক্রম নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাওয়া নিয়েই সাবেক বাংলাদেশ অধিনায়কের শংকা । যদিও বাস্তবতা হচ্ছে , সারা বছরব্যাপী ক্রিকেটারদের ব্যস্ততার কারণে এইচপি ইউনিটের জন্য সময় বের করা মুশকিল । এটা মেনে নিয়ে দুর্জয় জানিয়েছেন , ‘ এইচপির প্রোগ্রামটা আমাদের বৃষ্টির মৌসুমে করতে হয়। খেলোয়াড়েরা ব্যস্ত থাকে জাতীয় লিগ, আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেট, বিপিএল, ডিপিএল অনেক কিছু খেলতে হয়। ওই সময় কিন্তু আমরা প্রোগ্রামগুলো করতে পারি না। বিশেষ করে স্কিল ট্রেনিং করা যায় না। বৃষ্টির মৌসুমে করতে হয়। এ কারণে আমাদের আরও কিছু অবকাঠামো উন্নতি করতে হবে। বিশেষ করে ইনডোর, জিম।’
এদিকে , এইচপি ইউনিটের নতুন কোচ হেম্প জানিয়েছেন , ‘ এইচপি ইউনিট খুব গুরুত্বপূর্ণ । এটাই ক্রিকেটারদের বিকাশের সহায়তা আর পরিচর্যার কেন্দ্র । আমরা জাতীয় দলের জন্য খেলোয়াড় তৈরির জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করব । ‘
হেম্প জানান , ‘ বড় মঞ্চে পারফর্মেন্সের জন্য মানসিকতার কাঠিন্য জরুরী । বড় মঞ্চে পারফর্ম করতে পারবে , এমন ক্রিকেটার প্রয়োজন । এটাও ঠিক সব দিন, সব সময় জয় পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু প্রতিটি দিন রাঙানোর সুযোগ প্রত্যেকের থাকে। সেই সুযোগ যেন কেউ হাতছাড়া না করে সেই মানসিকতা থাকতে হবে । আমরা কিভাবে কাজ করবো সেই পরিকল্পনা তৈরি করেছি। আমাদেরকে প্রতিটি কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। প্রতিটি পর্যায়ে পারফর্ম করতে হবে। আমরা তাদেরকে অনুপ্রাণিত করছি প্রতিদিন সেরা হতে। কাজটা কঠিন। কিন্তু সুযোগ রয়েছে প্রতিদিনই। সেটাই তাদের কাজে লাগাতে হবে।’
মিরপুর স্টেডিয়ামে হেম্পের অধীনে শুরু হয়েছে এইচপি ইউনিটের কার্যক্রম । কোচ ও সহকারী কোচদের পাশাপাশি ক্যাম্পে থাকছেন ক্রীড়া মনোবিদ ড. ডেভিড স্কট। ক্যাম্পে রাখা হয়েছে ২৫ ক্রিকেটার।
আয়ারল্যান্ড সফরে আন্তর্জাতিক অভিষেক হওয়া মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী আছেন এইচপি ইউনিটের ক্যাম্পে । ইতোমধ্যে বাংলাদেশের হয়ে খেলেছেন শামিম হোসেন, পারভেজ হোসেন, রিশাদ হোসেনও। নিজেদের স্কিল ঝালাই ও ঘাটতির জায়গা নিয়ে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন তারা এইচপি ইউনিটের ক্যাম্পে।
তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে ক্যাম্পের প্রথম ধাপ। মিরপুরে ফিজিক্যাল স্ক্রিনিং ও ফিটনেস পরীক্ষা ২৪ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত। এরপর স্কিল ট্রেনিংয়ের জন্য রাজশাহী চলে যাবেন ক্রিকেটাররা। ওই পর্ব হবে ১ থেকে ৮ জুন পর্যন্ত। বগুড়ায় প্রথম ধাপের শেষ পর্বের স্থায়িত্ব ৯ থেকে ২৬ জুন পর্যন্ত। শ্রীলঙ্কায় আগামী জুলাইয়ে অনুষ্ঠেয় এসিসি ইমার্জিং টিমস এশিয়া কাপে এইচপি স্কোয়াডের ক্রিকেটাররা অংশ নেবেন।
আহাস/ক্রী/০০৩