Download WordPress Themes, Happy Birthday Wishes

বেদখল হবার পথে বায়ার্ন সাম্রাজ্য

ক্রীড়ালোক প্রতিবেদকঃ

নিদারুণ দুঃসময় যাচ্ছে ইউরোপিয়ান জায়ান্ট বায়ার্ন মিউনিখের । ইউরোপ তো বটেই , ঘরোয়া আসরেও জার্মানির একচ্ছত্র অধিপতিরা সব হারাবার শংকায় কাঁপছে ।

শনিবার (২০ মে) নিজেদের মাঠে বায়ার্ন মিউনিখ হেরেছে লেইপজিগের কাছে । ফলাফল ১-৩ । যা বায়ার্নের বুন্দেস লিগা শিরোপা জয়ের সম্ভাবনাকে নিঃশেষ করে দিয়েছে প্রায় ।

অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারেনায় ২৭ মিনিটে সার্জ জিনাব্রির গোলে এগিয়ে যায় বায়ার্ন । কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে হজম করে তিন গোল । লেইপজিগের পক্ষে গোল তিনটি করেছেন কনরাড লেইমার, ক্রিস্টোফার এন’কুকু আর ডমিনিক সবোসজাই । খেলার শেষ দুইটি গোল লেইপজিগ পেয়েছে পেনাল্টি উৎস থেকে ।

লেইপজিগের কাছে পরাজয় বায়ার্নকে ঠেলে দিয়েছে খাঁদের কিনারায় । ৩৩ ম্যাচে তাদের সংগৃহীত পয়েন্ট ৬৮ । ৩২ ম্যাচে ৬৭ পয়েন্ট পেয়েছে বুরুশিয়া ডর্টমুণ্ড ।

১৮ দলের বুন্দেস লিগায় বায়ার্নের শেষ ম্যাচ ২৭ মে কোলনের বিপক্ষে । সেই ম্যাচ জিতলে বাভারিয়ানদের পয়েন্ট দাঁড়াবে ৭১ । আর দ্বিতীয় স্থানে থাকা লেইপজিগের শেষ দুই ম্যাচ অসবার্গ আর মেইঞ্জের বিপক্ষে । দুই ম্যাচে জয় পেলে বুরুশিয়ার ঘরেই যাবে লিগ শিরোপা । বুন্দেস লিগায় সর্বশেষ ২০১১-১২ মৌসুমে শিরোপা জিতেছিল বুরুশিয়া । পরবর্তী ১০ আসরে শিরোপা টানা জিতেছে বায়ার্ন ।

বুন্দেস লিগাকে নিজেদের একক ‘রাজত্ব’ হিসেবে শাসন করা বায়ার্নের জন্য নতুন না । ইতিহাস বলছে , সর্বাধিক ৩১বার জার্মান লিগ জিতেছে বায়ার্ন । সেখানে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পাঁচ শিরোপা বুরুশিয়া আর মঞ্চেনগ্লাডবাখের । ইউরোপের আর কোন লিগে বায়ার্নের মতো যুগ যুগ ধরে আধিপত্য বিস্তার করতে পারে নি কোন দল ।

এখনও বায়ার্নের সামনে লিগ শিরোপা জয়ের সুযোগ আছে । শর্ত দুইটা । প্রথমত নিজেদের জিততে হবে পরবর্তী ম্যাচ । আর পয়েন্ট হারাতে হবে ডর্টমূণ্ডকে । নইলে শিরোপা যাবে ডর্টমূণ্ডের কাছে । চলতি মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছে বায়ার্ন । একই পরিনতি ঘটেছে জার্মান কাপেও । লিগ শিরোপা হারালে ট্রফিহীন বিরল একটি মৌসুম কাটাবে জার্মান জায়ান্টরা ।

অনেকেই মনে করছে , বায়ার্ন আসলে নিজের সর্বনাশ নিজেরাই করেছে । মার্চের শেষ সপ্তাহে হঠাৎ করেই বায়ার্ন ছাটাই করে কোচ হুলিয়ান নাগেলসম্যানকে । অথচ তাঁর অধীনে বায়ার্ন ছিল সাফল্যের পথেই । চলতি মৌসুমে নাগেলসম্যান ডাগ আউটে থাকা অবধি বায়ার্নের সামনে ছিল ট্রেবল জয়ের সুযোগ । ২০২১ সালের জুলাইয়ে তিনি বায়ার্নের দায়িত্ব নেন । তাঁর অধীনে বাভারিয়ানরা ৮৪ ম্যাচের মধ্যে জিতেছে ৬০টি । ড্র ১৪টি আর পরাজয় ১০টি । বায়ার্ন মিউনিখকে তিনি জিতিয়েছেন একটি বুন্দেস লিগা আর দুইটি জার্মান সুপার কাপ । চলতি মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালেও উঠেছে বায়ার্ন । নক আউট পর্বের দুই লেগেই বায়ার্নের কাছে পরাজিত হয়েছে লিওনেল মেসি আর কিলিয়ান এমবাপ্পেদের পিএসজি । এছাড়া তারা হারিয়েছে বার্সেলোনা, ইন্টার মিলানকে । নাগলসমানের অধীনে সব মিলিয়ে এ মৌসুমে ৩৭ ম্যাচে মাত্র তিনটিতে হেরেছিল বায়ার্ন। গোল করেছে ১১২টি । মানে ম্যাচপ্রতি তিনটির বেশি। অথচ বলা নেই–কওয়া নেই, সাফল্যের চূড়ায় থাকা নাগলসমানকে হুট করে বরখাস্ত করে ক্লাব কর্তৃপক্ষ।

কেন চাকুরি হারালেন নাগেলসম্যান ? কারণটা অস্বাভাবিক । বেচারা চাকুরি হারিয়েছেন প্রেম বিষয়ক জটিলতায় ! মাঠের পারফর্মেন্সের চেয়ে বান্ধবী লিনা ভুরজেনবার্গারের সাথে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক আর স্ত্রী ভেরেনার সঙ্গে ১৫ বছরের সম্পর্কচ্ছেদের ঘটনা প্রভাব ফেলেছে বায়ার্নের সিদ্ধান্তে । জার্মানির বিখ্যাত সংবাদপত্র ‘বিল্ড’র বায়ার্ন মিউনিখ প্রতিনিধি ছিলেন লিনা।নাগলসমানের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ানোয় বায়ার্ন প্রতিনিধির দায়িত্বও ছাড়তে হয় লিনাকে।

নাগেলসম্যানের পর থমাস টুশেলকে কোচের দায়িত্ব দিয়েছে বায়ার্ন । ইতোমধ্যে তাঁর অধীনে ১১ ম্যাচের চারটি হেরে বসেছে বায়ার্ন । ম্যাচপ্রতি গোল মাত্র ১.২৮! নাগেলসম্যানের বিদায় আর টুশেলকে দলে আনার পেছনে ছিলেন বায়ার্ন স্পোর্টস ডিরেক্টর কার্ল হেইঞ্জ রুমেনিগে । তাঁর হঠকারী সিদ্ধান্তে বিরক্ত বায়ার্ন কর্তৃপক্ষ রুমেনিগেকেই ছাটাইয়ের সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে ।

২০১২-১৩ মৌসুমের পর বায়ার্ন কখনো শিরোপাহীন থাকে নি । চলতি মৌসুমের শুরুতে তারা জিতেছে জার্মান সুপার  কাপ ।  যা তাদের মুখরক্ষা করবে । কিন্তু একাধারে দশ মৌসুম পর বুন্দেস লিগা , জার্মান কাপ আর উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ব্যর্থতা দলটির জন্য হবে নতুন অভিজ্ঞতা । 

আহাস/ক্রী/০০৭