
ক্রীড়ালোক প্রতিবেদকঃ
শেষ হয়ে আসছে ইউরোপের জমজমাট ২০২২-২৩ ফুটবল মৌসুম । ইতোমধ্যে ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের শিরোপা নিস্পত্তি হয়ে গেছে । তবে বাকী মুল দুই আকর্ষণ উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ আর ইউরোপা লিগের ট্রফি দখলের লড়াই । বুধবার (৩১ মে) উয়েফা ইউরোপা লিগের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে মুখোমুখি হবে সেভিয়া আর এএস রোমা । হাঙ্গেরির বুদাপেস্টের পুশকাস অ্যারেনায় ম্যাচ শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত একটায় ।
ইউরোপা লিগের সবচেয়ে সফল দল সেভিয়া । স্পেনের ক্লাবটিকে ইউরোপা লিগের রাজাও বলা যায় । সবচেয়ে বেশী সাতবার আসরের ফাইনাল খেলেছে সেভিয়া । আর ছয়বারের ফাইনালে কখনও হারে নি দলটি । ২০০৬-২০২০ সালের মধ্যেই ছয়টি ইউরোপা শিরোপা এসেছে সেভিয়ার । ২০১৪-১৬ আছে হ্যাট্রিক শিরোপা দখলের রেকর্ড ।
সেভিয়ার পর পাঁচবার ইউরোপা লিগের ফাইনাল খেলার রেকর্ড আছে ইটালির ইন্টার মিলানের । কিন্তু তারা শিরোপা জিতেছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তিনবার । এছাড়া তিনবার করে ইউরোপার শিরোপা আছে লিভারপুল , জুভেন্টাস আর এথলেটিকো মাদ্রিদের । অন্যদিকে , রোমা ১৯৯১ সালের পর দ্বিতীয়বারের মতো উঠেছে ইউরোপা ফাইনালে । সেই আসরে চূড়ান্ত ম্যাচে রোমা হেরেছিল নিজ দেশের ইন্টারের কাছে । তখন ফাইনাল হত ‘ হোম এন্ড এওয়ে’ ভিত্তিক ।
ইউরোপের যে কোন ক্লাব আসরের ফাইনালে ইটালিয়ান প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ফেভারিট স্পেন । ইতোপূর্বে ইউরোপিয়ান ক্লাব আসরের ১৪টি ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছে স্পেন আর ইটালির ক্লাব । যেখানে স্প্যানিশ ক্লাবের জয় এসেছে ১৩বার । সেই একটি ফাইনাল ছিল ১৯৯৪ সালর উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে । এসি মিলান ৪-০ গোলে হারিয়েছিল বার্সেলোনাকে ।
ইউরোপিয়ান আসরে স্পেন আর সেভিয়ার আধিপত্য অবিশ্বাস্য । অতীত পরিসংখ্যানে সেভিয়াকে স্পষ্ট ফেভারিট তকমা দেয়া যায় । দিল হিসেবেও রোমার চেয়ে সেভিয়া অনেকটাই গোছানো । দলে তারকার অভাব নেই । কাতার বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা মরক্কোর গোলরক্ষক বোনো আর ইউসেফ আল নাসেরে আছেন দলে । আছেন স্পেনের ইভান রাকিতিচ । ব্রাজিলিয়ান এলেক্স টেলেক্স , আর্জেন্টিনার মার্কাস আকুইনা , গঞ্জালো মন্টিয়েল , লুকাস ওকাম্পোস , এরিক লামেলা খেলেন সেভিয়ায় । সব মিলিয়ে তারকা খচিত দল বলা যায় সেভিয়াকে ।
রোমার বড় তারকা পাওলো দিবালা । সাথে পর্তুগাল জাতীয় দলের অভিজ্ঞ কিপার রুই প্যাট্রিসিও , সার্বিয়ার নেমাঞ্জা ম্যাটিচ , ইটালির লরেঞ্জো পেলিগ্রিনি আছেন । লরেঞ্জো আর দিবালা আসরে করেছেন চারটি করে গোল । ছয় গোল নিয়ে শীর্ষে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মার্কাস রাশফোর্ড । তিনি ফাইনালে নেই । তাই রোমার দুই খেলোয়াড়ের সামনে আছে সেরা গোলদাতা হওয়ার সুযোগ ।
তবে রোমার সবচেয়ে বড় তারকা দলের হোসে মারিনিও । তিনি ফুটবল দুনিয়ায় ক্ষুরধার মস্তিষ্কের জন্য ‘স্পেশাল ওয়ান’ নামে পরচিত । দল হিসেবে যদি সেভিয়ার ইউরোপা ফাইনালে হারার রেকর্ড না থাকে , তবে পর্তুগীজ কোচও অপরাজেয় । ইউরোপীয় পর্যায়ের ফাইনালে হারের অতীত নেই । দুটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগসহ পাঁচটি ফাইনাল খেলে পাঁচ জয় তার ।
নিজের অভিষেক মৌসুমেই ইতালিয়ান সিরি আ’র দলটিকে ইউরোপা কনফারেন্স লিগ জেতান পর্তুগিজ কোচ। দ্বিতীয় মৌসুমে রোমাকে ইউরোপা লিগ ফাইনালে ওঠালেন ‘স্পেশাল ওয়ান’। টানা সাফল্যে রোমা সমর্থকদের হৃদয়েও জায়গা করে নিয়েছেন তিনি।
লা লিগায় সেভিয়া ১১তম স্থানে আছে । অন্যদিকে, রোমা সিরি ‘এ’র ছয়ে । রোমা পেয়েছে আগামী ইউরোপা লিগে খেলার টিকেট । কিন্তু সেভিয়ার সামনে একটাই সুযোগ । ইউরোপা লিগ না জিতলে তাদের খেলা হবে না আগামী মৌসুমের ইউরোপিয়ান আসরে ।
সেভিয়ার কোচ হিসেবে আছেন হোসে লুই মেন্দিলবার । ৬২ বছরের কোচ অনেকটাই পোড় খাওয়া । ১৯৯৪ সাল থেকে কোচিং পেশায় । চলতি মৌসুমের শুরুতেই যোগ দিয়েছেন সেভিয়ায় । যদিও তিনি ক্যারিয়ারে বড় কোন শিরোপার স্বাদ পান নি । ২০০৬-০৭ মৌসুমে ভায়াদোলিদকে জিতিয়েছিলেন স্পেনের দ্বিতীয় বিভাগ লিগ ।
দুই দলের চারবারের দেখায় দুইবার জিতেছে সেভিয়া । একবার রোমা । একটি ম্যাচ ড্র । যদিও ২০২২-২৩ মৌসুমের ফাইনাল সম্পূর্ণ নতুন দিন । হাঙ্গেরির মাঠে সেভিয়ার দলীয় শক্তি নাকি মারিনিওর ম্যাজিক কাজ করবে , সেটাই দেখার বিষয় ।
আহাস/ক্রী/০০৩