Download WordPress Themes, Happy Birthday Wishes

সমালোচকদের জবাব দেয়ার মোক্ষম সুযোগ রোনালদোর সামনে

ক্রীড়ালোক প্রতিবেদকঃ

কাতারে অনুষ্ঠিত ফিফা বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছিল পর্তুগাল । আসরের অন্যতম ফেভারিট হয়েও আফ্রিকার দেশ মরক্কোর কাছে হেরে পর্তুগীজদের বিদায় ছিল বড় একটি অঘটন । বিশ্বকাপের পর পর্তুগালর কোচ ফার্নান্দো স্যান্তস চাকুরী হারিয়েছেন । তাঁর জায়গায় পর্তুগালের কোচ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন রবার্টো মার্টিনেজ ।

মার্টিনেজের অধীনে পর্তুগালের প্রথম মিশন ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে বাছাই পর্ব । ২০২৪ সালের ইউরো আসরে জায়গা পাওয়ার লক্ষ্যে চলতি মার্চে দুটি ম্যাচ খেলবে পর্তুগাল । ২৩ মার্চ পর্তুগালের প্রথম ম্যাচ লিচেনস্টাইনের বিপক্ষে । আর ২৭ মার্চ দ্বিতীয় ম্যাচে পর্তুগালের প্রতিপক্ষ লুক্সেমবার্গ ।

২০১৬ সালের ইউরো চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল খেলছে বাছাইয়ের ‘জে’ গ্রুপে । যেখানে লিচেনস্টাইন আর লুক্সেমবার্গ ছাড়াও আছে বসনিয়া-হার্জেগোভেনিয়া , স্লোভাকিয়া আর আইসল্যান্ড । গ্রুপের অন্য তিন প্রতিপক্ষের তুলনায় লিচেনস্টাইন আর লুক্সেমবার্গ কিছুটা হলেও সহজ প্রতিপক্ষ ।

ইতোমধ্যে লিচেনস্টাইন আর লুক্সেমবার্গ ম্যাচের জন্য স্কোয়াড ঘোষণা করেছেন মার্টিনেজ । যেখানে অবধারিতভাবেই আছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো । তাঁকে পর্তুগালের নতুন কোচ ঘোষণা দিয়েছেন অধিনায়ক হিসবেও । এছাড়া দলে জায়গা পেয়েছেন সময়ের আলোচিত পর্তুগীজ ফরোয়ার্ড গঞ্চালো র‍্যামোস ।

কাতার বিশ্বকাপে র‍্যামোসের কাছে জায়গা হারিয়েছিলেন রোনালদো । নক আউট পর্বে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে রোনালদোকে বেঞ্চে রেখে র‍্যামোসকে খেলান তৎকালীন কোচ সান্তস । ম্যাচে র‍্যামোসের দারুণ হ্যাট্রিকে বড় জয় পায় ইউরোপের সেলেকাওরা । তাতে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় স্যান্তসের । কোয়ার্টার ফাইনালেও তিনি রোনালদোকে বেঞ্চে রেখে র‍্যামোসকে প্রথম একাদশে খেলান । কিন্তু মরক্কোর বিপক্ষে সুবিধা করতে পারেন নি র‍্যামোস । ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে । অবস্থা বেগতিক দেখে দ্বিতীয়ার্ধে স্যান্তস মাঠে নামান রোনালদোকে । কিন্তু ততক্ষণে দেরী হয়ে গেছে । শেষ পর্যন্ত ম্যাচ হারের সাথে সাথে পর্তুগাল বিদায় নেয় বিশ্বকাপ থেকে ।

মরক্কোর বিপক্ষে হারের পর পর্তুগালের প্রাক্তন ফুটবলার আর সমর্থকদের রোষানলে পড়েন স্যান্তস । রোনালদোর মতো বিশ্বসেরা ফুটবলারকে বসিয়ে র‍্যামোসের মতো আনকোরা তরুণকে বিশ্বকাপ মঞ্চের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মাঠে নামাবার দায়ভার চাপে তাঁর কাঁধে । শেষ পর্যন্ত নিজের ভুলের মাশুল দেন তিনি চাকুরী হারিয়ে ।

স্যান্তসের বিদায় আর মার্টিনেজের শুরুতে নতুন করে এসেছে র‍্যামোস আর রোনালদোর বিষয়টি । উৎসুক মনে প্রশ্ন , মার্টিনেজ কি র‍্যামোসকে এগিয়ে রাখবেন রোনালদোর চেয়ে ? এই মুহূর্তে গঞ্চালো র‍্যামোস দারুণ ফর্মে আছেন । বেনফিকার হয়ে ২০২২-২৩ মৌসুমে করেছেন ৩৬ ম্যাচে ২৪ গোল । লিগে ১৬ গোল নিয়ে আছেন সর্বোচ্চ গোলদাতা তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে । ১৭ গোল নিয়ে পর্তুগীজ প্রিমিয়ার লিগার সেরা গোলদাতা বেনফিকারই হোয়াও মারিও ।

চলতি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে র‍্যামোসের বেনফিকা উঠে গেছে কোয়ার্টার ফাইনালে । নক আউট পর্বে ক্লাব ব্রুগের বিপক্ষে দ্বিতীয় লেগের ম্যাচেও জোড়া গোল করেছেন র‍্যামোস । সব মিলিয়ে দুর্দান্ত ছন্দে র‍্যামোস । অন্যদিকে , রোনালদো বর্তমানে ৩৮ বছরে পা রেখেছেন । খেলছেন না না ইউরোপে । সৌদি পেশাদার লিগে আট ম্যাচে নয় গোলের দেখা পেয়েছেন আধুনিক ফুটবলের সম্রাট । তিনিও ছন্দে আছেন সন্দেহ নেই ।

রোনালদো শুধু ১১৮ গোল করে আন্তর্জাতিক ফুটবলের সেরা গোলদাতা নন । তিনি ১৯৬টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার রেকর্ডের অধিকারী । যা ইতিহাসে যৌথ সর্বোচ্চ । এছাড়া , বহু যুদ্ধে পোড় খাওয়া রোনালদোর রয়েছে অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার । তাই ইউরো বাছাইয়ের শুরুতে মার্টিনেজ শুরুর একাদশে রোনালদোকে বেছে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন । লিচেনস্টাইন আর লুক্সেমবার্গ শক্তির বিচারে পর্তুগালের জন্য সহজ প্রতিপক্ষ । লুক্সেমবার্গের বিপক্ষে রোনালদোর আছে সবচেয়ে বেশী ৯ গোল ।

ইউরো বাছাইয়ের ৩৫ ম্যাচে সবচেয়ে বেশী ৩১ গোলের মালিক রোনালদো । উয়েফা আয়োজিত ম্যাচে রোনালদোর গোলের সংখ্যাও সবচেয়ে বেশী ১০২টি । সব মিলিয়ে রোনালদোর উপরে ভরসা করতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন মার্টিনেজ । অন্তত লিচেনস্টাইন আর লুক্সেমবার্গের বিপক্ষে রোনালদোর শুরু থেকেই মাঠে নামছেন , এটা অনেকটা নিশ্চিত । কিন্তু পরবর্তী পথ তৈরি করে নিতে হবে তাঁর নিজেকেই । এই দুই ম্যাচে পর্তুগালের প্রত্যাশিত জয় আর ব্যক্তিগত গোলের সংখ্যাই আন্তর্জাতিক ফুটবলে রোনালদোর ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞরা । তাই ইউরো বাছাইয়ের প্রথম দুই ম্যাচ সমালোচকদের জবাব দেয়ার ‘মোক্ষম সুযোগ’ ।

আহাস/ক্রী/০০২