Download WordPress Themes, Happy Birthday Wishes

রিয়াদের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ ?

ক্রীড়ালোক প্রতিবেদকঃ

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ শেষে বাংলাদেশের লড়াই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে । প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের মাটিতে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেল্বে আইরিশরা । দুই দলের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে তিনটি করে ওয়ানডে আর টি-টুয়েন্টি । টেস্ট লড়াই একটি । ১৮ মার্চ একদিনের ম্যাচ দিয়ে হচ্ছে বাংলাদেশ বনাম আয়ারল্যান্ড সিরিজের সূচনা ।

ইতোমধ্যে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একদিনের স্কোয়াড ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) । যেখানে জায়গা হয় নি মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের । টেস্ট ক্রিকেট থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন রিয়াদ । টি-টুয়েন্টি দলেও জায়গা হারিয়েছেন । ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে ছিলেন । তিন ম্যাচে রান করেছেন ৭১ (মিরপুরের প্রথম দুই ওয়ানডেতে ৩১ ও ৩২, চট্টগ্রামের তৃতীয় ম্যাচে ৮)। ফিল্ডিংয়ে নিজের সেরাটা দিতে পারেননি। যার মাশুল গুনেছেন আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে বাদ পড়ে ।

যদিও বিসিবি’র প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু জানিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহকে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অনেকেই মনে কোচ চণ্ডিকা হাথুরুসিংহের ‘ফেভারিট’ তালিকায় না থাকার কারণে মাহমুদুল্লাহর বাংলাদেশ স্কোয়াডে ফেরা কঠিন হবে । রিয়াদকে প্রথম মেয়াদে একাদশ থেকে সরিয়েছিলেন বাংলাদেশের বর্তমান কোচ হাথুরুসিংহে। শ্রীলঙ্কার মাটিতে ২০১৭ সালে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের ১০০তম টেস্ট ম্যাচে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ একাদশ থেকে বাদ পড়েছিলেন। ঠিক ছয় বছর পর আবারো মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের নাম নেই ওয়ানডে স্কোয়াডে, এবারো কোচ চান্ডিকা হাথুরুসিংহে।

অবশ্য মাহমুদুল্লাহর খারাপ সময় চলছে বেশ অনেকদিন ধরেই । ক্যারিয়ার গ্রাফ গত পাঁচ বছর ধরেই পড়তির দিকে। এটা পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট। ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাস থেকে রিয়াদ ৭০টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন, এই সময়ে তিনি রান তুলেছেন ১৭৩২। তাঁর স্ট্রাইক রেট ওয়ানডে ক্রিকেটে আশিরও নিচে। এক সময় ম্যাচ উইনার হিসেবে খ্যাতি পাওয়া মাহমুদুল্লাহ ধীরে ধীরে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপের সবচেয়ে ধীরগতির ক্রিকেটার বনে যাচ্ছিলেন।আধুনিক ক্রিকেটে লোয়ার মিডল অর্ডারে ব্যাট করেন এমন ব্যাটসম্যানদের স্ট্রাইক রেট ৭৬ প্রায় অকল্পনীয়। শেষ দুই সিরিজে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের স্ট্রাইক রেট আরো কম, মাত্র ৬৯। যদিও বাংলাদেশের টপ অর্ডারের ব্যর্থতার কথা বলা হয়ে থাকে নিচের দিকের ব্যাটসম্যানদের ধীরগতির বোলিংয়ের জন্য, কিন্তু এখানে স্ট্রাইক রোটেটের দিকে মনযোগী হওয়ার কথা বলেন বিশ্লেষকরা।

মাহমুদুল্লাহ হার্ড হিটার নন । তিনি মুলত দৌড়ে রান নিতে অভ্যস্ত । কিন্তু সম্প্রতি বয়সের কারণে দৌড়ে নিয়মিত রান নিতে সংগ্রাম করছেন । মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ শেষ ওয়ানডে সেঞ্চুরি করেছেন ২০১৭ সালে। শেষ সাতটি ওয়ানডে সিরিজে মাত্র দুটি ফিফটি তুলেছেন তিনি।

সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে, এখন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের জায়গায় খেলতে পারে এমন ব্যাটসম্যানরা নিজেদের প্রমাণ করেছেন শীর্ষ পর্যায়ের ক্রিকেটে। যেমন তৌহীদ হৃদয় সম্প্রতি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক অভিষেকেই নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছেন। আদিল রাশিদের মতো অভিজ্ঞ বোলারকে সামলেছেন এবং দলের জয়ে ভূমিকা রেখেছেন। আফিফ হোসেন আগে থেকেই রিয়াদের জায়গায় খেলার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। আফিফ হোসেন ওয়ানডে ক্রিকেটে ছয় বা সাত নম্বরে নেমে ম্যাচ জিতিয়েছেন।

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বাংলাদেশের ‘ক্রাইসিস ম্যান’ হিসেবে পরিচিত । দলের বিপদে ইনিংস মেরামত করায় মাহমুদউল্লাহর জুড়ি ছিলো না।২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে সেঞ্চুরি করে নিজের নামটা রেকর্ড বুকে নাম লিখিয়েছেন । এছাড়া আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সাকিবের সঙ্গে দারুণ এক জুটি গড়ে বাংলাদেশকে সেমিফাইনালে তোলেন এই ডানহাতি ব্যাটার। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ফিনিশার মাহমুদুল্লাহকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ।

২১৮ ওয়ানডে খেলে মাহমুদউল্লাহ ৩ সেঞ্চুরি ও ২৭ হাফ সেঞ্চুরিতে ৪ হাজার ৯৫০ রান করেছেন। গড় ৩৫ এর বেশি হলেও স্ট্রাইকরেটের কারণে ক্রমশ প্রশ্নবিদ্ধ মাহমুদুল্লাহর পারফর্মেন্স ।

সাবেক অধিনায়ক এবং নির্বাচক হাবিবুল বাশার জানিয়েছেন , ‘ মাহমুদউল্লাহর জায়গায় যদি কাউকে নিতে হয়, তাঁকে পরীক্ষা দিতে হবে। এই চিন্তাভাবনা থেকেই তাঁকে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে।’

বাশার বলেছেন , ‘ মাহমুদউল্লাহ এমন একজন ক্রিকেটার, যে অনেক বছর ধরে বাংলাদেশের হয়ে খেলেছে, সম্ভবত তিনটি বিশ্বকাপ খেলে ফেলেছে সে। তাঁর জন্য তো বিশ্বকাপ নতুন কিছু নয়। তবে কেউ যদি চোটে পড়ে, সে যেন প্রস্তুত থাকে, সেটিই চেষ্টা করছি।’

বর্তমানে ডেথ ওভারে বাংলাদেশের সমস্যা প্রকট হচ্ছে । শেষ দশ ওভারে বাংলাদেশের যতটা রান তোলার কথা সেটা আসলে হচ্ছে না। এখানেই বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট এমন কাউকে খুঁজছে যিনি নিয়মিত বিরতিতে বাউন্ডারির পাশাপাশি স্ট্রাইক রোটেট করতে পারেন।

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ শেষ টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন ২০২১ সালে। গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিম টি-টোয়েন্টি স্কোয়াড থেকেও বাদ পড়েন।আর ছমাস পরেই ভারতের মাটিতে যখন বিশ্বকাপ ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, তার আগে স্কোয়াড থেকে বাদ পড়লেন তিনি। আগামী ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলকে নিয়ে প্রত্যাশা অনেক। প্রত্যাশার সাথে প্রাপ্তির যোগসূত্র স্থাপন করতেই নানারকম পরীক্ষায়-নিরীক্ষায় টিম ম্যানেজমেন্ট। এরই অংশ হিসেবে মাহমুদউল্লাহকে বাদ দেওয়া। অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটারের জায়গাতে সুযোগ পাওয়া জাকির হোসেন পাশ মার্ক পেয়ে গেলে নির্বাচকদের পেছনে ফিরে তাকানোর সুযোগ নেই। তাই বলা যায় , মাহমুদুল্লাহর জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে আসাটা এখন ভীষণ কঠিন ।

আহাস/ক্রী/০০৫