Download WordPress Themes, Happy Birthday Wishes

দেশাম্পের নির্বুদ্ধিতা বিশ্বকাপ ফাইনালে ডুবিয়েছে ফ্রান্সকে!

ক্রীড়ালোক প্রতিবেদকঃ

কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে ফ্রান্সকে টাইব্রেকারে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল আর্জেন্টিনা । পুরো আসরে আর্জেন্টিনার প্রতি রেফারিদের ছিল স্পষ্ট পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ । ম্যাচের পর ম্যাচ পেনাল্টির রেকর্ড গড়ে আর্জেন্টিনা জিতে নেয় শিরোপা । এমনকি , ফাইনালেও শুরুতেই রেফারির ‘হাস্যকর’ সিদ্ধান্তে পেনাল্টি পেয়ে আর্জেন্টিনা নিয়েছিল ম্যাচের কর্তৃত্ব ।

কিন্তু আর্জেন্টিনার শিরোপা জয়ে শুধু কি রেফারির অবদান ছিল ? না , ফাইনালের প্রতিপক্ষ ফ্রান্সের কোচ দিদিয়ের দেশাম্পের বোকামির মূল্যটাও ভালভাবে চুকিয়েছে ফ্রান্স । দেশাম্প করিম বেঞ্জেমাকে উপেক্ষা করে যে ভুল করেছিলেন , ফাইনালে তাঁর মাশুল দিয়েছে লে ব্লুজরা ।

ফ্রান্সের বর্তমান যুগের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় বেঞ্জেমা । ২০০৭ সালে অভিষেকের পর জাতীয় দলে খেলেছেন ৯৭ ম্যাচ । করেছেন ৩৭ গোল । যদিও আন্তর্জাতিক ম্যাচ আর গোলের সংখ্যা আরও বেশী হতে পারত । কিন্তু ২০১৫ সালে জাতীয় দল সতীর্থ ম্যাথু ভালবুয়েনার স্পর্শকাতর ভিডিও প্রকাশের ঘটনায় বেঞ্জেমার বিরুদ্ধে ওঠে প্রতারণার অভিযোগ । ফলে প্রায় ছয় বছর ছিলেন জাতীয় দলের বাইরে । ফেরেন ২০২১ সালের মে মাসে ।

আন্তর্জাতিক ফুটবলে মুল্যবান সময় নষ্ট হলেও বেঞ্জেমা ঠিকই রিয়েল মাদ্রিদের হয়ে জাদু দেখিয়ে গেছেন । ২০১৫-১৬ মৌসুমে থেকে জাতীয় দলে ফেরা পর্যন্ত রিয়েলের জার্সিতে করেছেন ১৪৬ গোল । ২০২১ সালে ফ্রান্সের বর্ষসেরা ফুটবলার ও নির্বাচিত হয়েছেন । যে কারণে ২০২১ সালের ইউরো স্কোয়াডে বেঞ্জেমাকে দলে ডাকতে বাধ্য হয়েছিলেন দেশাম্প । আসরের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিলেও ফ্রান্সের হয়ে চারটি গোল করেন বেঞ্জেমা । গোল করেন উয়েফা নেশন্স লিগের সেমি ফাইনাল আর ফাইনালে । জেতান নিজের দেশকে নেশন্স লীগ ট্রফি ।

বেঞ্জেমা বড় আসরের বড় খেলোয়াড় । এটা ধ্রুব সত্য । ক্যারিয়ারে রিয়েলের হয়ে জিতেছেন পাঁচটি উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগসহ ৩০টি ট্রফি । কাতার বিশ্বকাপের আগে ২০২২ সালেই জিতেছেন ব্যালন ডি অর’ , পিচিচি আর উয়েফার বর্ষসেরা ফুটবলারের সম্মান । কিন্তু বিশ্বকাপের আগে পড়েন ইনজুরিতে । ফলে যেতে পারেন নি কাতার । কিন্তু তাঁকে রাখা হয় স্কোয়াডে । বিশ্বকাপ ফাইনালের আগে সেরেও উঠেছিলেন । সবাই প্রত্যাশা করেছিলেন , বিশ্বকাপ ফাইনালের জন্য বেঞ্জেমাকে ডেকে পাঠাবেন দেশাম্প । কারণ বিশ্বকাপ ফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে অভিজ্ঞ বেঞ্জেমা রাখতে পারেন বড় ভুমিকা । দলে ইনজুরির কারণে পল পগবা আর এনগোলো কান্তের মতো অভিজ্ঞরা ছিলেন না । বেঞ্জেমা হতে পারতেন কিলিয়ান এমবাপ্পে , এন্থইন গ্রিজম্যান আর অলিভার জিরুদদের যোগ্য সহচর ।

এটা ঠিক বিশ্বকাপে বেঞ্জেমার জায়গায় দারুণ খেলেছেন জিরুদ । ৫ ম্যাচ খেলে গোল করেছেন ৪টি। সেই সাথে বনে গেছেন ফরাসিদের হয়ে জাতীয় দলের সর্বোচ্চ গোল সংগ্রাহক। ফ্রান্স জার্সিতে ১১৯ ম্যাচে তার গোল সংখ্যা ৫৩টি। কোয়ার্টার ফাইনাল আর সেমিতে কোন গোল পান নি জিরুদ । ফাইনালেও ছিলেন নিস্প্রভ ।বিশ্বকাপে বেঞ্জেমার জায়গায় স্কোয়াডে কেউ ছিলেন না । বেঞ্জেমা থাকলে দেশাম্প নিশ্চিত তাঁকে ব্যবহার করতে পারতেন । কিন্তু দেশাম্প সুস্থ জেনেও বেঞ্জেমাকে ফাইনালের জন্য ডাকেন নি ।

অনেকেই মনে করছেন , ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের কারণেই বেঞ্জেমাকে অপছন্দ দেশাম্পের । যে কারণে দীর্ঘদিন বাইরে রেখেছিলেন জাতীয় দলের । প্রখর পারফর্মেন্স দিয়ে বেঞ্জেমা বাধ্য করেছিলেন দেশাম্পকে তাঁকে দলে নিতে । কিন্তু বিশ্বকাপের সময় সুযোগ পেয়েই তাএক ছুঁড়ে ফেলেছেন দেশাম্প ।

বিশ্বকাপের পর আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসরের ঘোষণা দেন বেঞ্জেমা । সে সময় তার এজেন্ট করিম যাজিরি অভিযোগ করেছিলেন চোট কতটা গুরুতর, তা ভালোভাবে না বুঝেই বেঞ্জুকে বিশ্বকাপ থেকে আগেভাগে পাঠিয়ে দিয়েছেন ফ্রান্সের কোচ।

এদিকে , বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) ফরাসি দৈনিক ‘লা প্যারিসিয়ানে’ দেশাম্পের এক সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। ফ্রান্স ফুটবল দলের নানা প্রসঙ্গের মধ্যে বিশ্বকাপ থেকে বেঞ্জেমার বাদ পড়ার ব্যাপারটিও আলোচনায় আসে। ফ্রান্স দলের সঙ্গে কাতারেও গিয়েছিলেন বেঞ্জেমা । তবে ফ্রান্সের প্রথম ম্যাচের আগে (২০ নভেম্বর) চোটে পড়ায় বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন তিনি। সতীর্থদের ছেড়ে চলেও গিয়েছিলেন ফরাসি এই ফরোয়ার্ড। পরে ফ্রান্স কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার আগেই সুস্থ হয়ে ওঠেন বেঞ্জেমা ।

দেশাম্পের দাবী , চোটে জর্জর বেঞ্জেমা যথাসময়ে অনুশীলনে ফিরতে পারতেন না। ফ্রান্সের কোচ বলেন , ‘ ‘১০ ডিসেম্বরের আগে ও (বেনজেমা) অনুশীলনে ফিরতে পারত না। চলে যাওয়ার দিন ওর সঙ্গে আমি প্রায় ২০ মিনিট ছিলাম। এরপর চলে আসার সময় আমি বলেছি, ‘করিম, তাড়াহুড়োর কিছু নেই। চলে যাওয়ার বিষয়টি দলের ব্যবস্থাপকের সঙ্গে আলাপ করে নাও।’ এরপর আমি ঘুম থেকে জেগে শুনি, সে চলে গেছে। এই যাওয়াটা ওর সিদ্ধান্ত।’

দেশমের কথায় বেজায় চটেছেন বেঞ্জেমা । ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে সাক্ষাৎকারের একটি স্ক্রিনশট প্রকাশ করে ফরাসি এই ফরোয়ার্ড লিখেছেন, ‘কী লজ্জা’!। এরপর বেঞ্জেমা ইনস্টাগ্রাম স্টোরির স্ক্রিনশট এক ব্যক্তি তাঁর প্রোফাইলে দিয়ে লিখেছেন, ‘মিথ্যাবাদী, আপনি মিথ্যাবাদী।’ ক্যাপশনে বেঞ্জেমা লিখেছেন, ‘সাধু দিদিয়ের। শুভ রাত্রি।’

বেঞ্জেমা সরাসরি দেশাম্পকে মিথ্যাবাদী বলেছেন । স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে , বেঞ্জেমার প্রতি পুরাতন মনোভাব থেকেই তিনি ফাইনালের আগে তাঁকে উপেক্ষা করেছেন । যার মাশুল ফ্রান্স দিয়েছে ফাইনালে হেরে ।

আহাস/ক্রী/০০৮