
ক্রীড়ালোক প্রতিবেদকঃ
উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে আর্লিং হাল্যান্ডের সামনে ছিল এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশী গোলের রেকর্ড গড়ার সুযোগ । কিন্তু ম্যানচেস্টার সিটির স্ট্রাইকারকে সেই সুযোগ দেন নি পেপ গার্দিওলা । পর্যাপ্ত সময় থাকতেও উঠিয়ে নেন হাল্যান্ডকে । ফলে ইতিহাস গড়া হয় নি নরওয়ের তারকা ফরোয়ার্ডের ।
মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নক আউট পর্বের দ্বিতীয় লেগে জার্মানির লেইপজিগের মুখোমুখি হয় ম্যান সিটি । ইত্তিহাদ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচটি ম্যান সিটি জিতে নিয়েছে ৭-০ গোলে । দুই দলের প্রথম লড়াই ১-১ গোল ড্র ছিল । তাতে দুই লেগ মিলিয়ে ৮-১ গোলের অগ্রগামিতায় ইউরোপের সেরা ক্লাব ফুটবল আসরের কোয়ার্টার ফাইনালে নাম লিখিয়েছে ম্যান সিটি ।
ম্যাচে একাই পাঁচ গোল করেন হাল্যান্ড । চলতি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তাঁর গোলের সংখ্যা সর্বোচ্চ ১০টি । ৮টি গোল চলতি আসরে করেছেন মোহাম্মদ সালাহ । আর সব মিলিয়ে ম্যান সিটি জার্সিতে তিনি করেছেন ৩৬ ম্যাচে ৩৯ গোল । ২০২২-২৩ মৌসুমে সিটিজেন শিবিরে যোগ দিয়েই করে ফেলেছেন পাঁচটি হ্যাট্রিক । এক মৌসুমে ম্যান সিটির হয়ে সবচেয়ে বেশী গোলের রেকর্ডও গড়ে ফেলেছেন । এক মৌসুমে সিটির হয়ে সব মিলিয়ে ৩৮ গোল করেছিলেন টমি জনসন। সেটাও প্রায় শতবছর আগে ১৯২৮-২৯ মৌসুমে ।
আরবি লেইপজিগের বিরুদ্ধে ৫৭ মিনিটের মধ্যেই পাঁচ গোল করে বসেন হাল্যান্ড । চ্যাম্পিয়ন্স লিগে মাত্র ২৫ ম্যাচ খেলেই ৩৩ গোল করেছেন হাল্যান্ড । গড়েছেন সবচেয়ে কম ম্যাচে ৩০ গোলের মাইলফলক । ভেঙেছেন সাবেক ডাচ ফরোয়ার্ড রুড ফন নিস্টলরয়ের ৩৪ ম্যাচে ৩০ গোলের রেকর্ড।
চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ইতিহাসে তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে এক ম্যাচে পাঁচ গোলের কীর্তি গড়েছেন হাল্যান্ড । ইতোপূর্বে ২০১৪ সালে শাক্তার দনেস্কের হয়ে ব্রাজিলিয়ান লুইস আদ্রিয়ানো আর ২০১২ সালে লিওনেল মেসি করেছিলেন এক ম্যাচে পাঁচ গোল ।
হাল্যান্ডের সামনে ছিল প্রথম ফুটবলার হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ডাবল হ্যাট্রিক করার সুবর্ণ সুযোগ । ম্যাচের বাকী তখনো এক তৃতীয়াংশ । ফুটবল ভক্তরা নিশ্চিত ছিলেন , হাল্যান্ড যে ফর্মে আছেন তাতে বাকী আধা ঘণ্টায় একটি গোল হলেও করবেন । কিন্তু কোথায় কি ! তাঁকে সেই সুযোগই দেন নি ম্যান সিটি কোচ গার্দিওলা । সবাইকে হতবাক করে নরওয়েজিয়ান তারকাকে উঠিয়ে নেন ৬৩ মিনিটে ।
ম্যাচের পর হাল্যান্ড নিজের হতাশা গোপন করেন নি । মিডিয়ায় জানিয়েছেন , ‘ আমি ডাবল হ্যাট্রিক করতে চেয়েছিলাম । কিন্তু সে সুযোগ পেলাম না ! ‘
ফুটবলে এক ম্যাচে ডাবল হ্যাট্রিক সহজ কাজ না । সবার কপালে জোটে না এই সৌভাগ্য । কালে-ভদ্রে পুরো ক্যারিয়ারে কেউ কেউ এক আধবার পেয়ে যান এই সৌভাগ্য ছোঁয়ার সুযোগ । আর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের মতো আসরে তো এমন কীর্তি নেই কারোরই । কিন্তু হাল্যান্ড পেয়েছিলেন ইতিহাস গড়ার সুযোগ । কোচের অদ্ভুত সিদ্ধান্তে তিনি বঞ্চিত হয়েছেন ।
কেন এমন করলেন গার্দিওলা ? এই প্রশ্ন এখন সবার মনে । উত্তর একটাই । পুরনো শিষ্য লিওনেল মেসির রেকর্ড অক্ষত রাখতেই হাল্যান্ডকে বঞ্চিত করেছেন গার্দিওলা । বার্সেলোনায় ২০০৮-১২ পর্যন্ত কোচ ছিলেন গার্দিওলা । বার্সাকে এনে দিয়েছেন দুইটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগসহ ১৪টি ট্রফি । বার্সেলোনার ইতিহাসের সেরা কোচ তিনি ।
বার্সেলোনায় মেসির সাফল্যের শুরু গার্দিওলার হাত ধরেই । মেসিকে সব সময়েই নিজের সবচেয়ে পছন্দের খেলোয়াড় বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন সাবেক স্প্যানিশ ফুটবলার । বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে এই তারকা খেলোয়াড়্কে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন সাবেক কোচ। তবে হাল্যান্ডকে রেকর্ড গড়তে না দিয়ে মেসির জন্য যা করলেন গার্দিওলা , সেটা ইতিহাসে বিরল কলংকের অধ্যায় ।
ম্যাচের ৬৩ মিনিটে হাল্যান্ডকে উঠিয়ে নেয়ার সমালোচনায় এখন বিদ্ধ হচ্ছেন গার্দিওলা । সবার কাছে পরিস্কার , মেসির রেকর্ড অক্ষত রাখতেই এমন কাজ করেছেন তিনি । এমনকি গার্দিওলাও ভাবছেন , হাল্যান্ড রেকর্ডটি গড়তে পারতেন মাঠে থাকলে । যদিও তরুণ ফরোয়ার্ডকে উঠিয়ে নেয়ার বিষয়ে গণমাধ্যমে দিয়েছেন ভিন্ন ব্যাখ্যা । তার দাবি, এতো অল্প বয়সে এই রেকর্ড হালান্ডের জীবনকে পানসে করে তুলতো। তাই এই স্ট্রাইকারকে তুলে নিয়েছিলেন তিনি। ম্যাচ শেষে প্রেস কনফারেন্সে এসব কথা জানান গার্দিওলা।
গার্দিওলা জানান , ‘ ‘যদি সে এই মাইলফলক স্পর্শ করত, মাত্র ২২ বছর বয়সে এই রেকর্ড গড়ত, তাহলে সেটা তার জীবনকে পানসে করে তুলত। এখন তার সামনে সিটির হয়ে এবং অন্য সবখানেই এটি গড়ার লক্ষ্য থাকবে। এ কারণেই তাকে তুলে নিয়েছিলাম।’
কি অদ্ভুত যুক্তি । ২০১১ সালে মেসি যখন লেভারকুসেনের বিপক্ষে পাঁচ গোল করেন , তখন আর্জেন্টিনার ফুটবলারের বয়স ছিল ২৪ । কিন্তু তাতে মেসির ফুটবল ক্যারিয়ার পানসে হয়ে যায় নি । তাহলে হাল্যান্ডের কেন হত ? আসলে এসব কিছুই না । প্রিয় খেলোয়াড়ের প্রতি পক্ষপাতিত্ব থেকেই গার্দিওলা বঞ্চিত করেছেন হাল্যান্ডকে । এটাই একমাত্র কারণ ।
আহাস/ক্রী/০০৪