ক্রীড়ালোক প্রতিবেদকঃ
রাফায়েল ভারানে । ফ্রান্সের রক্ষণ দুর্গের অতন্ত্র প্রহরী । জিতেছেন ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ । খেলেছেন ২০২২ সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল । বয়স মাত্র ২৯ বছর । ইচ্ছে করলেই ২০২৬ সালের বিশ্বকাপ খেলতে পারতেন । কিন্তু না , তিনি আর মাঠেই নামবেন না ফ্রান্সের জার্সিতে । ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক ফুটবলকে আনুষ্ঠানিক বিদায় জানিয়ে দিয়েছেন ।
বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) আচমকা আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে বিদায়ের ঘোষণা দেন ভারানে । সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে নিজেই জানিয়েছেন একথা । তাঁর সিদ্ধান্তে শুধু ফুটবল ভক্তরা নয় , অবাক হয়েছে ফ্রেঞ্চ ফুটবল ফেডারেশন (এফএফএফ) । কাতার বিশ্বকাপ ফাইনালের পর অবসর নিয়েছেন ফ্রান্সের গোলরক্ষক এবং অধিনায়ক হুগো লরিস । আগামীতে ভারানের হাতেই পরিয়ে দেয়ার কথা ছিল ফ্রান্স দলের অধিনায়কের আর্ম-ব্যান্ড । কিন্তু সেটা তিনি হতে দিলেন কই !
ফুটবলে ২৯ বছর কোন ব্যাপার না । বরং ত্রিশের কোঠায় ফুটবলাররা থাকেন জীবনের সেরা ফর্মে । ভারানেও ছিলেন ছন্দেই । তবু কেন অবসর ? নিজের সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্টে ভারানে লিখেছেন , ‘ ‘এক দশক ধরে ফ্রান্সের প্রতিনিধিত্ব করা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সম্মান। আমি যখনই নীল জার্সি পরেছি, প্রচণ্ড গর্ব হয়েছে। আমি যখনই মাঠে নেমেছি নিজের সর্বস্ব দিয়েছি, হৃদয় দিয়ে খেলেছি এবং সবসময় জিততে চেয়েছি। এটাই আমার কর্তব্য ছিল। আমি গত কয়েক মাস ধরেই অবসরের কথা ভাবছিলাম। আমার মনে হয়েছে, আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নেওয়ার এটাই উপযুক্ত সময়।’
২০১৮ সালে রাশিয়া বিশ্বকাপে ভারানে ছিলেন অসাধারণ । কাতার বিশ্বকাপেও খারাপ পারফরম্যান্স ছিল না এই ডিফেন্ডারের। তাঁর দল ফাইনালে আর্জেন্টিনার কাছে টাইব্রেকারে হেরে রানার্স হয়। পরপর ২ বার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছেন ভারানে। এই বিরল নজির গড়ে তিনি আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানালেন।
ফ্রান্সের সিনিয়র দলের হয়ে ৯৩ ম্যাচ খেলেছেন ভারানে। তিনি বিপক্ষের আক্রমণ সামাল দেওয়ার পাশাপাশি ৫ গোলও করেছেন। ফ্রান্সের অনূর্ধ্ব-১৮, অনূর্ধ্ব-২০ ও অনূর্ধ্ব-২১ দলের হয়েও খেলেছেন এই ডিফেন্ডার।
২০১০-১১ মৌসুমে লেন্সের হয়ে পেশাদার ফুটবলে অভিষেক । পরের মৌসুমেই চলে আসেন রিয়েল মাদ্রিদে । টানা ১০ মৌসুম খেলেছেন লস ব্লাংকোসদের হয়ে । নেমেছেন ৩৬০ ম্যাচে , করেছেন ১৭ গোল । ২০২১-২২ মৌসুম থেকে ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তাঁর ঠিকানা । চলতি মৌসুমেও মাঠে নেমেছেন ১৫ লীগ ম্যাচে । ক্লাব ফুটবলে এখন পর্যন্ত ৪৩১ ম্যাচে তাঁর গোলের সংখ্যা ২০টি ।
ফ্রান্সের হয়ে বিশ্বকাপ ছাড়াও জিতেছেন উয়েফা নেশন্স লীগের ট্রফি । ক্লাব ফুটবলে চারটি উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগসহ শিরোপা সংখ্যা ১৮টি । সব কয়টি রিয়েলের হয়ে ।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে খেলার সময়েই বিশ্বকাপের আগে ইনজুরিতে পড়েছিলেন ভারানে । খেলনে নি ফ্রান্সের প্রথম গ্রুপ ম্যাচে । তবে ছিলেন বাকী ছয় ম্যাচে । যার মানে ফ্রান্স দলে তিনি এখনও সেরা পছন্দ । যে কারণে তাঁকে আগামীতে অধিনায়ক করার কথা ভেবেছিল ফ্রেঞ্চ ফেডারেশন । কিন্তু সেই সম্ভাবনা নিজেই শেষ করে দিলেন ভারানে । ভারানে না থাকায় আগামীতে কিলিয়ান এমবাপ্পেকেই দেখা যেতে পারে অধিনায়কের ভুমিকায় । কারণ করিম বেঞ্জেমা , অলিভার জিরুদদের বয়স হয়েছে । চুয়ামেনীরা এখনও তরুণ । যদিও দলে আছেন পিএসজি সহদহিনায়ক প্রেসনেল কিম্বাপ্পে । কিন্তু আগামীতে ফ্রান্সের অধিনায়ক হিসেবে এমবাপ্পেকেই ভাবতে শুরু করেছে সবাই ।
১৯৯৮ সালে ফ্রান্স যখন প্রথমবার বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয় তখন ভারানের বয়স ছিল ৫ বছর। সে কথা স্মরণ করে তিনি লিখেছেন, ‘ছোটবেলায় ১৯৯৮ সালে ফ্রান্সের খেলা দেখার কথা মনে আছে। সেই দল, সেই খেলোয়াড়রা আমার কাছে প্রচণ্ড আবেগের। আমাদের নায়কদের মতোই বিশ্বকাপ জেতা স্বপ্ন ছিল। ২০ বছর পর আমার জীবনের অন্যতম সেরা মুহূর্ত আসে। আমি সেটা কোনওদিন ভুলব না।’
আহাস/ক্রী/০০২