Download WordPress Themes, Happy Birthday Wishes

ম্যারাডোনার চেয়ে অনেক পিছিয়ে মেসি

ক্রীড়ালোক প্রতিবেদকঃ

২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপ জয়ের পর অনেকেই লিওনেল মেসিকে ‘সর্বকালের সেরা ফুটবলার’ বলার চেষ্টা করছেন । অথচ বাস্তবতা হচ্ছে , মেসি ফুটবল দুনিয়া দুরের কথা ; আর্জেন্টিনার সেরা ফুটবলারও নন । কারণ আর্জেন্টিনার আছে একজন দিয়াগো ম্যারাডোনা । ১৯৮৬ সালে একক কৃতিত্বে বিশ্বকাপ জিতিয়ে যিনি দখল করে নিয়েছেন আর্জেন্টাইন ফুটবল ইশ্বরের স্থান । অন্যদিকে , ফিফা’র বদৌলতে পাতানো বিশ্বকাপ জিতে মেসির নামের পাশে একটি ট্রফি যোগ হয়েছে শুধু ।

বিশ্ব ফুটবলে আর্জেন্টিনা বরাবর বিতর্কিত । যদিও ফুটবল প্রতিভায় কখনোই পিছিয়ে ছিল না ল্যাটিন আমেরিকার দেশটি । ১৯৩০ সালে প্রথমবারের মতো আয়োজিত বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনালে উঠে নিজেদের সামর্থ্যের জানান দিয়েছিল দেশটি । এমনকি , ইউরোপের ইংল্যান্ডসহ হাতে গোনা দু’য়েকটি দেশের বাইরে আর্জেন্টিনাই প্রথম দেশ , যারা ফুটবল খেলা প্রবর্তনের সূচনা-লগ্নের সাক্ষী । ল্যাটিন আমেরিকাতেও ফুটবলের প্রচলন হয়েছিল আর্জেন্টিনার হাত ধরে । আর্জেন্টাইন ফুটবল এসোসিয়েশন (এএফএ) সৃষ্টি করা হয় ১৮৯৩ সালে। গর্বের সঙ্গে ঘোষণা দেয়া হয় যে, এটা হচ্ছে দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে পুরনো ফুটবল এসোসিয়েশন এবং বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীনতার দিক দিয়ে অষ্টম।

ফুটবলে যাদের রয়েছে প্রাচীন ইতিহাস , যারা খেলেছিল ইতিহাসের প্রথম বিশ্বকাপ ফাইনালে , সেই আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জিততে নিতে হচ্ছে প্রতারণার আশ্রয় । ১৯৭৮ সালে নিজেদের মাঠে বিশ্বকাপ রেখে দেয়ার ইতিহাস এখনও আর্জেন্টিনার সামরিক-শসকদের প্রতি মানুষের ঘৃণা কুড়ায় । পেরুর বিপক্ষে রাজনৈতিক বন্দী বিনিময় আর মোটা অর্থের লেনদেনে ম্যাচ পাতিয়ে আর্জেন্টিনার ফাইনালে ওঠা , এখনও ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক অধ্যায় । সেই তুলনায় ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ জয় আর্জেন্টিনার জন্য অনেক বেশী গর্বের ।

১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপকে এখনও ইতিহাসের অন্যতম আয়োজন বলা হয় । সম্ভবত মেক্সিকোয় অনুষ্ঠিত সেই আসরেই অংশ নিয়েছিল সবচেয়ে বেশী সুপারস্টার । ব্রাজিলের জিকো-সক্রেটিস , ইংল্যান্ডের গ্যারি লিনেকার , ফ্রান্সের মিশেল প্লাতিনি-জ্যা টিগানা-পিয়েরে পাপিন , উরুগুয়ের এঞ্জো ফ্রান্সিসকোলি , বেলজিয়ামের এঞ্জো শিফো , পোল্যান্ডের জিগনিউ বনিয়েক , জার্মানির লোথার ম্যাথুজ-কার্ল হেইঞ্জ রুমেনিগে-রুডি ভলার , ডেনমার্কের মাইকেল লাউড্রপ , স্পেনের বুত্রুগুয়েনা , রাশিয়ার ওলেগ ব্লখিন , মেক্সিকোর হুগো সাঞ্জেজরা খেলেছিলেন সেই আসরে । যারা এখনও নিজ নিজ দেশের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়ের তালিকার উপরের দিকে জায়গা দখল করে আছেন । সেই তুলনায় আর্জেন্টিনা ছিল ম্যারাডোনা নির্ভর দল । গোলরক্ষক পম্পিডো , বুরুচাগা আর ভালডানোরা ছিলেন মাঝারীমানের ফুটবলার । যাদের চেয়ে অনেক ভাল ফুটবলার এখন যে কোন শীর্ষ জাতীয় দলে দেখা যায় । কিন্তু সেই দলকেই ম্যারাডোনা এনে দিয়েছেন বিশ্বকাপ ।

মেক্সিকোয় অনুষ্ঠিত পুরো আসরে ম্যারাডোনা ছিলেন অনবদ্য । মধ্যমাঠ দখল করে রাখতেন একাই । মাঝমাঠ থেকে তাঁর ডিফেন্স-চেরা পাসের কোন জবাব ছিল না প্রতিপক্ষের কাছে । জার্মানির বিপক্ষে আজটেক স্টেডিয়ামের ফাইনাল এক সময় ছিল ২-২ গোলে ড্র । কিন্তু ৮৪ মিনিটে একটি মাত্র পাসেই ম্যাচ বদলে দেন ম্যারাডোনা । মাঝমাঠ থেকে তাঁর ডেডলি পাস খুঁজে নেয় বুরুচাগাকে । তখন বিভ্রান্ত জার্মানির ডিফেন্স বুরুচাগার আশেপাশে নেই । বুরুচাগা বল নিয়ে আয়েশি ভঙ্গিতে গোল করেন । আর আর্জেন্টিনা জিতে যায় তাদের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ ।

ম্যারাডোনা বহুবার একটিমাত্র পাসে প্রতিপক্ষের সর্বনাশ করেছে । যার অন্যতম সাক্ষী ১৯৯০ সালের নক আউট পর্বে ব্রাজিল । পুরো ম্যাচে কোণঠাসা আর্জেন্টিনা ম্যাচটি জিতেছিল ১-০ গোলে । খেলার ৮১ মিনিটে ম্যারাডোনার মাঝমাঠ থেকে বাড়িয়ে দেয়া কিলিং-পাসে গোল করেছিলেন ক্লদিও ক্যানিজিয়া । যা এখনও ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা এসিস্ট হিসেবে বিবেচিত ।

১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে ম্যারাডোনা মহানায়ক । কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ‘হ্যান্ড অফ গড’ গোল নিয়ে বিতর্ক আছে । কিন্তু সেই ম্যাচেই ম্যারাডোনা করেছিলেন ইতিহাসের সেরা গোল । বর্তমান সময়ের মতো প্রযুক্তি থাকলে ম্যারাডোনা হয়ত হাত দিয়ে করা গোলটি পেতেন না । কিন্তু এটাও সত্যি , সেদিন ম্যারাডোনাকে রোখার ক্ষমতা ছিল না ইংলিশ ডিফেন্ডারদের ।

১৯৮৬ বিশ্বকাপে ম্যারাডোনা নিজে পাঁচটি গোল করেছেন । করিয়েছেন পাঁচটি । সেরা খেলোয়াড়ের ‘গোল্ডেন-বল’ জয়ের লড়াইয়ে তার ধারেকাছে ছিল না কেউ । ম্যারাডোনা পেয়েছিলেন ১২৮২ পয়েন্ট আর দ্বিতীয় স্থানে থাকা জার্মানির টনি সুমাখার পেয়েছিলেন ৩৪৪ পয়েন্ট । বিশ্বকাপের ইতিহাসে এতো বড় ব্যবধানে ‘গোল্ডেন-বল’ পাওয়ার রেকর্ড নেই । এতেই বোঝা যায় পুরো আসরে ম্যারাডোনা কতটা প্রভাব বিস্তার করেছেন ।

১৯৯০ সালের বিশ্বকাপে ম্যারাডোনা দলকে তুলেছিলেন ফাইনালে । সেই আসরে তার অন্যতম সঙ্গী গোলরক্ষক গয়কোচিয়া আর ক্যানিজিয়া । ম্যারাডোনা বুঝে গিয়েছিলেন ১৯৮৬ সালের মতো অপ্রতিরোধ্য অবস্থায় নেই তিনি । হয়ত মাদকাসক্তির প্রভাব পড়ছিল খেলায় । কিন্তু তাই বলে তার লড়াকু মানসিকতার কোন পরিবর্তন হয় নি । তাই ম্যারাডোনা ১৯৯০ সালের ইটালি বিশ্বকাপে নিয়েছিলেন ভিন্ন কৌশল । কাউন্টার এটাকে প্রতিপক্ষকে হারাবার কৌশলে সফলতাও পেয়েছেন ব্রাজিলের বিরুদ্ধে । আবার টাইব্রেকারে জয় নিয়ে এসেছেন ফাইনাল পর্যন্ত । এটা সম্ভব হয়েছে কেবল তার ক্ষুরধার ফুটবল মেধা আর নেতৃত্বগুণের কারণে ।

১৯৯০ সালের গোল্ডেন বুট আর গোল্ডেন বল পেয়েছিলেন ইটালির সালভেতরে স্কিলাচ্চি । ছয় গোল নিয়ে স্কিলাচ্চির সেরা গোলদাতা হওয়া নিয়ে কোন আপত্তি নেই । কিন্তু আসরের সেরা দুই খেলোয়াড় ছিলেন বিশ্বকাপজয়ী জার্মানির অধিনায়ক ম্যাথুজ আর রানার আপ দলের ম্যারাডোনা ।

মধ্যমাঠের কারিগর ম্যারাডোনা জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন ৯১ ম্যাচ , করেছেন ৩৪ গোল । একজন প্লে-মেকার হয়েও ক্লাব ফুটবলে তার গোলের সংখ্যা ৩১১টি । ইউরোপের ক্লাব ফুটবলেই করেছেন ১৫৯ গোল , ৮২ এসিস্ট । অথচ গোল বা এসিস্ট তার কাজ ছিল না । তিনি উইঙ্গার আর ফরোয়ার্ড নন । কিন্তু ছিলেন মাঝমাঠের রাজা । তিনি দলকে খেলিয়েছেন । গড়ে দিয়েছেন আক্রমণের প্রথম সুত্র ।

ক্লাব ফুটবলেও ম্যারাডোনা অনন্য । ন্যাপলিকে তো তিনি পরিনত করেছিলেন বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্লাবে । প্লাতিনি , গুলিত , জিকোদের সাথে লড়াই করে জিতেছেন দুইটি ইটালিয়ান লীগ , একটি করে ইটালিয়ান কাপ আর ইটালিয়ান সুপার কোপা । এমনকি ১৯৮৮-৮৯ মৌসুমে ন্যাপলিকে উয়েফা কাপ জিতিয়ে বিস্ময়ে হতবাক করেন সবাইকে ।

বার্সেলোনায় খেলেছেন মাত্র দুই মৌসুম । আশির দশকের শুরুতে বার্সেলোনা ছিল সাদামাটা দল । সেই বার্সাকে ১৯৮২-৮৩ মৌসুমে করেছেন লা লীগা , কোপা ডেল রে আর স্প্যানিশ সুপার কোপা চ্যাম্পিয়ন । ম্যারাডোনার দুই মৌসুম বার্সা রীতিমত রাজত্ব করেছে স্পেনে ।

১৯৭৯ সালে ম্যারাডোনা আর্জেন্টিনাকে জিতিয়েছেন যুব বিশ্বকাপ । ৬ গোল করে দ্বিতীয় সেরা গোলদাতা হওয়ার সাথে সাথে জিতেছিলেন আসরের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার । ম্যারাডোনার সময়ে দেয়া হত না ব্যালন ডি অর কিংবা ফিফা বর্ষসেরা । তাই তার নামের পাশে নেই আধুনিক যুগের তথাকথিত স্বীকৃতি । কিন্তু ম্যারাডোনা ঠিকই ফিফার শতাব্দী সেরা ফুটবলারের স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছেন ।

ম্যারাডোনা আর্জেন্টিনার ফুটবলের শেষ কথা । হালে বিশ্বকাপ জয়ের পর লিওনেল মেসিকে অনেকেই ম্যারাডোনার চেয়ে বড় করে দেখাতে চাইছে । এটা স্রেফ হাস্যকর প্রচেস্টা । কাতার বিশ্বকাপের পাতানো আসরে পেনাল্টি কেলেঙ্কারি এখন ইতিহাসের সেরা । পুরো আসরে মেসিদের অনৈতিক সুবিধা দিয়ে বিশ্বকাপ জয়ের পথ করে দিয়েছে খোদ ফিফা । ২০১৪ সালেও মেসির হাতে বিশ্বকাপ তুলে দেয়ার আয়োজন হয়েছিল । কিন্তু জার্মানদের সাথে ভাগ্য তাদের সহায় হয় নি । তাই তো মেসির হাতে তুলে দেয়া হয় গোল্ডেন-বল । যাকে ‘ভুল’ বলে কদিন আগেই বিবৃতি দিয়েছেন তৎকালীন ফিফা সভাপতি সেপ ব্লেটার ।

ব্রাজিলের মাটিতে ২০২১ সালে আর্জেন্টিনাকে জেতানো হয়েছে কোপা আমেরিকা । সেটাও ছিল পাতানো আসর । দিনের পর দিন স্প্যানিশ লা লীগায় গোল করেছেন মেসি । যার সিংহভাগ এসেছে পাতানো আর রেফারিদের সহায়তায় । বাঁ পায়ে এক পয়েন্টে খেলা মেসি ফ্রি কিকে দুর্দান্ত , কোন সন্দেহ নেই । দিনের পর দিন নির্দিষ্ট পজিশনে মেসিকে ফ্রি কিকের সুযোগ দিয়ে গোল করানো হয়েছে । লা লীগায় ২০১৬-১৭ মৌসুম থেকে প্রায় দুই বছর বার্সার বিপক্ষে কোন পেনাল্টি দেয়া হয় নি । ম্যাচের হিসেবে ৭৪ ম্যাচ। এ সময়ে রেফারিরা ৩২বার পেনাল্টির বাঁশি বাজিয়েছেন বার্সার পক্ষে। এই একটি পরিসংখ্যানে অনেক কিছু পরিস্কার হয়ে যায় । স্পেনে বার্সাকে অনৈতিক সুবিধা দেয়া হয় । যার সুফল টানা ১৭ মৌসুম পেয়েছেন মেসি । সুযোগে গোল বাড়িয়েছেন , পেয়েছেন ট্রফি ।

মেসিকে আর্জেন্টিনার সর্বকালের সেরা বলার কোন পথ নেই । তার সেরা হবার পথে চ্যালেঞ্জ জানাতে শুধু ম্যারাডোনা নয় , আছেন একজন আলফ্রেডো ডি স্টেফানো । এই আর্জেন্টাইনের দুর্ভাগ্য তিনি কোন বিশ্বকাপ খেলতে পারেন নি । তাই জাতীয় দলের হয়ে অর্জনের খাতাটা প্রায় শূন্যই বলা চলে। এর মাঝে ১৯৬২ সালে নিজের যোগ্যতায় স্পেনকে বিশ্বকাপে নিয়ে গেলেও ইনজুরির কারনে খেলতে পারেননি মূল আসরে। কিন্তু ক্লাব ফুটবল কে সম্পূর্ণভাবে নিজের করে নিয়েছিলেন তিনি। খেলোয়াড় এবং কোচ হিসেবে ঝুড়িতে পুরেছেন ট্রফির পর ট্রফি। নিজের সময়ে ফুটবল মাঠের সবচেয়ে ইনফ্লুয়েন্সিয়াল প্লেয়ার ছিলেন তিনি ।

ক্লাব ক্যারিয়ারে ৬৬৯ ম্যাচে ৪৮০ গোল করেছেন স্টেফানো । মাঠে ডি স্টেফানো নামতেন স্ট্রাইকার হিসেবে। কিন্তু খেলতেন কোন ভুমিকায় সেটি জিজ্ঞেস না করে বরং কোথায় খেলতে না সেটা জিজ্ঞেস করাই বোধহয় ভাল। স্টেফানো প্রায় সব সেন্ট্রাল পজিশনেই খেলতেন; সেন্টার ফরোয়ার্ড, সেকেন্ড স্ট্রাইকার কিংবা নাম্বার টেন তো বটেই সেন্ট্রাল হিসেবও দেখা যেত তাকে। অবাক হওয়ার কারন নেই, কেননা স্টেফানো-কে কখনো আবার সেন্টারব্যাকের দায়িত্ব সামলাতেও দেখা গিয়েছে। বলা যায় , ফুটবল ইতিহাসের প্রথম ভার্সেটাইল প্লেয়ার তিনি ।

ইংল্যান্ডের সর্বকালের সেরা ফুটবলার স্যার ববি চার্লটন ডি স্টেফানোকে খেলতে দেখার পর বলেছিলেন, ‘কে এই লোক? উপর থেকে নেমে গোলকিপারের কাছ থেকে বল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, সাথে আবার ডিফেন্ডারদের নির্দেশনা দিচ্ছে। একটা প্লেয়ার এত কমপ্লিট কিভাবে হয়, মাঠের সবখানে দেখা যাচ্ছে তাকে! মাঠের যেখানে গিয়ে দাঁড়ায় বল মনে হয় ঠিক ওখানে চলে আসে জাদু জানে নাকি সে?’

ক্যারিয়ারে মাত্র ৩৭টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন স্টেফানো । আর্জেন্টিনার হয়ে ৬ ম্যাচে ৬ গোল । বাকী সব স্পেনের জার্সিতে । রিয়েল মাদ্রিদকে ১৯৫৫-৫৬ থেকে টানা পাঁচটি উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জিতিয়ে যে ইতিহাস গড়েছেন , সেটা এখনও অম্লান । টানা চারবারসহ মোট পাঁচবার হয়েছেন স্পেনের সেরা গোলদাতা । টানা পাঁচ ইউরোপিয়ান কাপ ফাইনালে গোল করে রেকর্ড করেছেন। ইউরোপিয়ান কাপের ফাইনালে সবচেয়ে বেশী গোল করার রেকর্ড টাও তার ঝুলিতেই। ১৯৬০ এর ইউরোপিয়ান কাপের ফাইনালে ফ্রাঙ্কফুর্টের বিরুদ্ধে খেলা টি ক্লাব ফুটবলের অন্যতম সেরা খেলা হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যে ম্যাচে হ্যাট্রিক করে দল কে এনে দেন মহা গুরুত্বপূর্ণ শিরোপা।

সব মিলিয়ে ম্যারডোনার পর আর্জেন্টিনার কিংবদন্তী ফুটবলারের তালিকায় চলে আসবে ডি স্টেফানোর নাম । ম্যারাডোনার মতো একক কৃতিত্বের বিশ্বকাপ জয়ের কৃতিত্ব দেখাবার সাধ্য মেসির নেই । তাঁকে চুরি করেই বিশ্বকাপ জিততে হবে । আবার ডি স্টেফানোর মতো চ্যাম্পিয়ন্স লীগকে নিজের বানাতে পারেন নি মেসি । ইউরোপের সেরা আসরে ইতিহাসের সেরা দল নিয়ে ইনিয়েস্তা , নেইমার , জাভি আর সুয়ারেজদের সহায়তায় চারটি ট্রফি পেয়েছেন । কিন্তু দল যখন সহযোগী শুন্য , তখইন মেসিদের হজম করতে আট গোল । এওয়ে ম্যাচে মেসির দলের ভরাডুবি নতুন কিছু না । রোমা , জুভেন্টাস কিংবা লিভারপুল প্রমাণ করেছে , মেসি নিজ মাঠে ছিলেন বার্সার রাজা । কিন্তু আক্ষরিক অর্থে ডি স্টেফানোদের মতো সর্বজয়ী তিনি কখনোই হতে পারেন নি ।

আহাস/ক্রী/০০৪