Download WordPress Themes, Happy Birthday Wishes

মেসিকে দলে ভেড়াতে সৌদি সরকারের সহায়তা !

আহসান হাবীব সুমন/ক্রীড়ালোকঃ

ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর । বিশ্ব ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় । ক্যারিয়ার জুড়ে খেলেছেন ইউরোপের সেরা সব ক্লাবে । জয় করেছেন তাবৎ শ্রেষ্ঠত্ব । সেই রোনালদো ৩৭ বছর বয়সে চলে এসেছেন এশিয়ার মধ্যপ্রাচ্যে । খেলবেন সৌদি আরবের ক্লাব আল নাসেরে । যা হয়ত মাস খানেক আগেও কেউ বিশ্বাস করেনি । কিন্তু সেই অবিশ্বাস্য ঘটনাই ঘটিয়েছে আল নাসের । বছরে ২০০ মিলিয়ন ইউরো চুক্তিতে তারা দলে ভিড়িয়েছে ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফুটবলারকে । যে চুক্তিতে রোনালদো এখন বিশ্বের সবচেয়ে দামী ক্রীড়াবিদ ।

শুধু রোনালদো না , সৌদির দৃষ্টি এখন লিওনেল মেসির দিকেও । রোনালদোর ক্লাব আল নাসেরের প্রধান প্রতিপক্ষ আল হিলাল দলে ভেড়াতে চায় আর্জেন্টিনার মহাতারকাকে । আল হিলালের সাথে মেসিকে দলে টানার লড়াইয়ে নেমেছে আল ইত্তিহাদ । স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘মার্কা’ জানিয়েছে, মেসির জন্য ৩৫০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করতে রাজী সৌদির দুই ক্লাব । এমনকি ,  যেন ৩৫০ মিলিয়ন ইউরোতে মেসিকে দলে ভেড়াতে পারে  সে জন্য সৌদি  সরকারের সহায়তা চেয়েছে আল হিলাল আর আল ইত্তিহাদ ।

চলতি মৌসুমে অবশ্য আল হিলাল কিংবা ইত্তিহাদ মেসিকে দলে নিতে পারছে না । প্রথমত , মেসির সাথে পিএসজির চুক্তি আছে জুন পর্যন্ত । এছাড়া আল হিলাল আর আল ইত্তিহাদ , দুই ক্লাবই আছে ফিফা’র শাস্তির আওতায় । খেলোয়াড় কেনা-বেচাসহ বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মের কারণে সৌদির ক্লাব দুটির উপর আছে ফিফা’র সাময়িক নিষেধাজ্ঞা । যা উঠে যাবে জুনের পর । তখন তারা শুধু মেসি কেন , যে কোন নতুন খেলোয়াড় দলে ভেড়াতে পারবে ।

প্রসঙ্গত , রোনালদোকে প্রথমে দলে ভেড়াতে চেয়েছিল আল হিলাল ক্লাব । কিন্তু ফিফা নিষেধাজ্ঞায় তারা পর্তুগীজ মেগাস্টারকে দলে নিতে ব্যর্থ হয় । তবে তারা বসে নেই । হাত বাড়িয়েছে রোনালদোর সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী মেসির দিকে । দুই পক্ষের যে কারো সাথে চুক্তি হলে মেসিই হবেন বিশ্বের সবচেয়ে দামী ক্রীড়াবিদ ।

মার্কা জানিয়েছে , সৌদি আরব নিজেদের লীগকে বিশ্ব পর্যায়ে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে । তারা আগামীতে বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজক হতে চায় । সেই কারণেই তারা ঢেলে সাজাতে চাইছে নিজেদের ঘরোয়া ফুটবল । নিজেদের লীগে খেলাতে চাইছে বিশ্বসেরাদের । শুধু রোনালদো কিংবা মেসি না , তারা প্রস্তাব দিয়েছে লুকা মদ্রিচ , আনহেল ডি মারিয়া , সার্জিও রামোস , মেসুত ওজিলের মতো বিশ্বতারকাদের । হয়ত তাদের কেউ কেউ চলেও আসবেন । কারণ পেশাদার ক্যারিয়ারে ‘আর্থিক নিরাপত্তা’ অনেন বড় জিনিস । আর যাদের প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে , তারা প্রায় সবাই ক্যারিয়ারের শেষপ্রান্তে । শেষ জীবনে মোটা আর্থিক প্রলোভন এড়াবার সুযোগ কম ।

নিজেদের ফুটবল কাঠামো গঠনে সৌদি সরকার এখন টাকা খরচ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তাদের টার্গেট ২০৩০ বা ২০৩৪ সালের বিশ্বকাপ আয়োজন । এই লক্ষ্য পূরণে যে কোন বিশেষ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রস্তুত সৌদি-রাজ । আসলে সৌদি আরব সম্ভবত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর জাপানের উদাহরণে অনুপ্রাণিত । এই দুই দেশ তাদের ঘরোয়া ফুটবলে উন্নতি করেই বিশ্ব আসরে জায়গা করে নিয়েছে । মার্কিন মুল্লুকের লীগে পেলে থেকে শুরু করে  ডেভিড বেকহ্যাম  কিংবা হালের   জাতান ইব্রাহিমোভিচ আর ওয়েন রুনিরা খেলছেন । অথচ এক সময় মার্কিন লীগের কোন   পরিচয় ছিল না । কিন্তু মেজর লীগ সকার দিয়ে পেশাদার ফুটবল চালুর পর  বিশ্বতারকাদের এনে তারাও এখন ফুটবলের প্রতিষ্ঠিত শক্তি । 

এশিয়ার দেশ জাপানের ঘরোয়া জে-লীগে খেলেছেন জিকো , জে রবার্টো , স্পেনের আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা , বুলগেরিয়ার রিস্টো স্টয়েচকভ , ক্যামেরুনের প্যাট্রিক এমবোমা , ডেনমার্কের মাইকেল লাউড্রপ , ইংল্যান্ডের গ্যারি লিনেকারের মতো তারকারা খেলেছেন । তারা এসেছিলেন ক্যারিয়ারের শেষ পর্যায়ে । সেই সময়ে জাপান এশিয়ার ফুটবলেও প্রতিষ্ঠিত শক্তি হিসেবে বিবেচিত ছিল না । নব্বই দশকের শুরু থেকে জে-লীগে বড় তারকাদের এনে জাপান সূচনা করেছিল ফুটবল বিপ্লবের । ঘরোয়া ফুটবল ঢেলে সাজিয়ে জাপান এখন বিশ্বশক্তিদের চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে । বিশ্বকাপ ফুটবলে তাদের অংশগ্রহণ এখন নিয়মিত । ২০২২ সালের বিশ্বকাপে তারা হারিয়েছে জার্মানি আর স্পেনের মতো পরাশক্তিকে ।

ইউরোপের ক্লাবের সাথে পেরে ওঠে নি ল্যাটিন কিংবা অন্যান্য মহাদেশের ক্লাব । মুল কারণ অবশ্যই আর্থিক । তবে  সৌদিসহ এশিয়ার  কয়েকটা দেশের টাকার অভাব নেই । ইচ্ছে করলেই তারা ইউরোপকে টেক্কা  দিতে পারে । ইতোমধ্যে এসি মিলান , পিএসজি , ম্যানচেস্টার সিটি , নিউ ক্যাসেল ইউনাইটেডের মতো ক্লাবের  মালিকানা চলে গেছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের হাতে । যারা পুরো ক্লাব কিনতে পারে , তাদের জন্য খেলোয়াড় কেনা কোন বিষয় না । হয়ত এখন সেইদিকেই এগুচ্ছে সৌদি ।

আহাস/ক্রী/০০৩