Download WordPress Themes, Happy Birthday Wishes

বিতর্ক সাথে নিয়ে বিশ্বকাপে ইকুয়েডর

আহসান হাবীব সুমন/ক্রীড়ালোকঃ

ল্যাটিন আমেরিকা থেকে তৃতীয়বারের মতো ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবলে প্রতিনিধিত্ব করতে চলেছে ইকুয়েডর । তবে তাদের এবারের অংশগ্রহণে আছে বেশ বিতর্ক । এমনকি , শংকা ছিল কাতার বিশ্বকাপ থেকে নিষিদ্ধও হতে পারে ইকুয়েডর । যদিও শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি সেদিকে গড়ায় নি । কাতার বিশ্বকাপে স্বস্তির সাথে খেলতে নামছে ইকুয়েডর ।

কাতারের পথে ইকুয়েডরঃ

ল্যাটিন আমেরিকা থেকে সরাসরি চারটি দেশ কাতার বিশ্বকাপের টিকেট কেটেছে । ১০ দলের বাছাই পর্ব বরাবরের মতো অনুষ্ঠিত হয় ডাবল লীগ পদ্ধতিতে । নিজেদের ১৮ ম্যাচ শেষে ইকুয়েডর পেয়েছে চতুর্থ স্থান। তাদের ঝুলিতে যোগ হয়েছে ২৬ পয়েন্ট । দলটি জয় পেয়েছে সাত ম্যাচে । হেরেছে ছয়টি আর ড্র পাঁচ ম্যাচে । বাছাই পর্বে ২৭ গোলের বিপরীতে ইকুয়েডর হজম করেছে ১৯ গোল ।

বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ইকুয়েডরের পক্ষে সর্বোচ্চ ছয়টি গোল করেছেন মিচেল এস্ত্রাদা । এছাড়া চারটি গোল এনার ভ্যালেন্সিয়া । তিনটি গোল আছে গঞ্জালো প্লাতার । দুইটি করে গোল মইসেস কেইসেডো , পার্ভিস এস্তুপিনান , এঞ্জেল মিনা আর ফেলিক্স টোরেস করেছেন । ইকুয়েডর আসলে একক কোন তারকা নির্ভর দল না ।   এই দলে তেমন কোন বিশ্বতারকা নেই । কিন্তু পেরু , কলম্বিয়া , প্যারাগুয়ে আর চিলির মতো দলকে টপকে তারা বিশ্বকাপে আসছে দলীয় পারফর্মেন্স দেখিয়ে । যা ইকুয়েডরের সবচেয়ে বড় শক্তি ।

ইকুয়েডরের সামনে ছিল নিষেধাজ্ঞার শঙ্কাঃ

বিশ্বকাপ বাছাই শেষ হবার পর ইকুয়েডরের বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগ আনে চিলি । তাদের অভিযোগ , অবৈধ ফুটবলার নিয়ে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে খেলেছে ইকুয়েডর । তাদের দাবী , ডিফেন্ডার বায়রন কাস্তিলোকে খেলাতে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে ইকুয়েডর । চিলিয়ান ফুটবল ফেডারেশন  দাবী  করে , ইকুয়েডরের ডিফেন্ডার কাস্তিলোর জন্ম ১৯৯৫ সালে, কলম্বিয়ার টুমাকোয়। তবে ইকুয়েডর তাদের নথিপত্রে কাস্তিলোর জন্ম ১৯৯৮ সালে ইকুয়েডরের প্লায়াস শহরে বলে জানায়। ইকুয়েডর কাস্তিলোকে খেলাতে ভুয়া পাসপোর্ট ও জন্মসনদ ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ চিলির।

যদিও চলতি বছরের জুনেই বিশ্ব ফুটবলের শাসক সংস্থা ‘ফিফা’ বিষয়টি তদন্ত করে চিলির অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছিল । তারা চিলির আনা অভিযোগের কোন সত্যতা খুঁজে পায় নি । ফিফা’র সেই সিদ্ধান্ত অবশ্য মেনে নেয় নি চিলি । চিলির পক্ষ থেকে রায়ের বিরুদ্ধে পুনরায় আপিল করা হয় ফিফার কোর্ট অব আরবিট্রেশন ফর স্পোর্টসে।

ফিফা যখন বিষয়টি শেষ করে দিতে চাইছিল , তখনই ‘ডেইলি মেইল’ সহ ইউরোপের কয়েকটি প্রভাবশালী গণমাধ্যম জানিয়েছে , কাস্তিলোর ভুয়া জন্মসনদের প্রমাণ পাওয়া গেছে । বলা হয় ,  চার বছর আগে তদন্তকারীদের নেওয়া সাক্ষাৎকারে জন্মসনদ জালিয়াতির কথা স্বীকার করেন কাস্তিলো । সেই সাক্ষাৎকারের অডিও প্রকাশ করেছে ‘ডেইলি মেইল’ অনলাইন।

জানা গেছে , কাস্তিলো তদন্তকারীদের কাছে স্বীকার করেছেন তার জন্ম ১৯৯৫ সালে । কিন্তু ইকুয়েডরের বানানো সনদে তার জন্মসাল ১৯৯৮ । কলম্বিয়ান জন্মসনদে নাম—বায়রন হাভিয়ের কাস্তিলো সেগুরা। ইকুয়েডরিয়ান জন্মসনদে ব্যবহার করেছেন অন্য নাম—বায়রন ডেভিড কাস্তিলো সেগুরা। ফুটবল ক্যারিয়ার গড়তে কলম্বিয়ার টুমাকো ছেড়ে ইকুয়েডরের সান লরেঞ্জোয় যাওয়ার বিষয়েও অনেক কথা বলেছেন কাস্তিলো।মার্কো জামব্রানো নামের এক ব্যবসায়ীর মাধ্যমে তিনি ইকুয়েডর আসেন । তিনিই নতুন নামে কাস্তিলো সনদ বানিয়ে দেয়ায় সহায়তা করেছেন । সেই ব্যবসায়ী সম্পর্কেও তথ্য দিয়েছেন বিতর্কিত কাস্তিলো ।

চিলির দাবী ছিল , ইকুয়েডরের বিপক্ষে দুইটি ম্যাচের পূর্ণ পয়েন্ট তাদের দেয়া হোক । তেমন হলে অবশ্য ঝামেলা হয়ে যেতো । কারণ , তখন ইকুয়েডরের পয়েন্ট নেমে আসতো ২০ এ । আর চিলির হত ২৫ । সেই ক্ষেত্রে ইকুয়েডরের বদলে চিলি বিশ্বকাপে খেলার আশা করেছিল । কিন্তু সমস্যা এখানেই শেষ হত না ।  কারণ  অন্যরাও ইকুয়েডরের বিরুদ্ধে দুই ম্যাচের পয়েন্ট দাবী করত । তাহলে গোটা ল্যাটিন বাছাই পর্ব পড়ে যেতো প্রশ্নের মুখে । তাছাড়া ফিফার ভাবমূর্তিও পড়ত সংকটে । কারণ কাস্তিলো পেয়েছিলেন ফিফা ক্লিন-চিট । তবে শেষ পর্যন্ত এসব কিছুই হয় নি । ফিফার আদালতের পর কোর্ট অব আরবিট্রেশন ফর স্পোর্টসেও আসে নি কোন ভিন্ন কোন রায় । তাই বেঁচে যায় ইকুয়েডর ।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে একই ঘটনার জন্ম দিয়েছিল বলিভিয়া। প্যারাগুয়ের হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করা ডিফেন্ডার নেলসনকে খেলিয়েছিল তারা। ফিফার নিয়মানুযায়ী নতুন দেশের হয়ে খেলার জন্য সেই দেশে কমপক্ষে পাঁচ বছর থাকতে হবে। কিন্তু চার বছর বসবাসের পরই মাঠে নেমে যাওয়ায় বলিভিয়াকে বাছাই থেকে সরিয়ে নিয়েছিল ফিফা।

ইকুয়েডরের বিশ্বকাপ ইতিহাসঃ

২০০২ সালে জাপান-দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বকাপে ইকুয়েডর সর্বপ্রথম অংশ নেয়ার সুযোগ পায় । প্রথম দুই ম্যাচেই তারা হেরে যায় ইটালি আর মেক্সিকোর কাছে । দ্বিতীয় ম্যাচে মেক্সিকোর বিপক্ষে শুরুতে এগিয়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত ১-২ গোলে হেরে যায় ল্যাটিনের প্রতিনিধিরা । তবে পাঁচ মিনিটে হাভিয়ের ডেলগাডো গোল করে নাম লেখান ইতিহাসের পাতায় । তিনি হয়ে যান ইকুয়েডরের পক্ষে বিশ্বকাপ ফুটবলে প্রথম গোলদাতা ।

শেষ ম্যাচে ইকুয়েডর তুলে নেয় বিশ্বকাপ ইতিহাসে নিজেদের প্রথম জয়টিও । সেটি আসে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে । এডিসন মেন্ডেজের একমাত্র গোলে জয় পায় ইকুয়েডর । যদিও শেষ পর্যন্ত গ্রুপের তলানিতে থেকেই বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেয় ইকুয়েডর ।

২০০৬ সালের বিশ্বকাপেও জায়গা করে নিয়েছিল ইকুয়েডর । গ্রুপ পর্বের প্রথম দুই ম্যাচে পোল্যান্ড আর কোস্টারিকার বিপক্ষে জয়ে উঠে যায় নক আউট পর্বে । গ্রুপের শেষ ম্যাচে স্বাগতিক জার্মানির কাছে হারার পর নক আউট পর্ব থেকে বিদায় নেয় । নক আউট পর্বে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দারুণ লড়াই করে ডেভিড বেকহ্যামের একমাত্র গোলে হারে তারা । হারলেও বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ সাফল্য আর সবার মন জয় করেই জার্মানি ছাড়ে ইকুয়েডর ।

২০১৪ সালের আসরে গ্রুপ পর্ব পেরুতে পারেনি ইকুয়েডর । হেরে যায় প্রথম ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের কাছে । পরের ম্যাচেই তারা হারায় হন্ডুরাসকে । ড্র করে শক্তিশালী ফ্রান্সের বিপক্ষে । ৪ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপে তৃতীয় হয়ে  মাথা উচু করেই বিশ্বকাপ মঞ্চ ছাড়ে ইকুয়েডর ।

ইতিহাস বলছে , মাত্র তিনবার বিশ্বকাপ ফুটবলে অংশ নিলেও বরাবর লড়াকু দল হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করেছে ইকুয়েডর । কোন আসরেই অন্তত একটি জয় না নিয়ে ফেরেনি । বিশ্বকাপে মোট ১০ ম্যাচের পাঁচটি হারলেও জয় আছে তাদের চারটি । ড্র একটি । কাতার বিশ্বকাপেও ল্যাটিনের দেশটি কাউকে ছেড়ে কথা বলবে না নিশ্চিত ।

ইকুয়েডরের সেরা তারকা ফুটবলারঃ

ইকুয়েডর দলের সেরা তারকা ফুটবলারের তকমা দেয়া যায় এনার ভ্যালেন্সিয়াকে । ৩২ বছর বয়সী এই ফুটবলার দেশের হয়ে খেলেছেন ৭৪ ম্যাচ । আছে ৩৫ গোল । যা ইকুয়েডরের ইতিহাসের সর্বোচ্চ । ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে তিনটি গোল আছে তার । সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে একটি আর হন্ডুরাসের বিপক্ষে জোড়া গোল ।

ভ্যালেন্সিয়া ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে খেলেছেন ওয়েস্ট হ্যাম আর এভারটনের হয়ে । বর্তমানে খেলছেন তুরস্কের সেরা ক্লাব ফেনারবাখে । ক্লাব ফুটবলে এখন পর্যন্ত ৪৮৩ ম্যাচে করেছেন ১৪১ গোল । ২০২২-২৩ মৌসুমে ইতোমধ্যে ১৫ ম্যাচে ১১ গোলের দেখা পেয়েছেন । তবে জাতীয় দলে ২০২২ সালে সাত ম্যাচে মাত্র একটি গোল করা ভ্যালেন্সিয়া অপেক্ষায় আছেন নিজের দ্বিতীয় বিশ্বকাপে সেরাটা দেয়ার ।

অন্যান্য তারকাঃ

২০ বছর বয়সী মোয়েসেস কেইসেডো হতে পারেন ইকুয়েডরের ‘তুরুপের তাস’ । মধ্যমাঠের কুশলী তারকা খেলে ফেলেছেন দেশের হয়ে ২৫ ম্যাচ । বিশ্বকাপ বাছাইয়ে উরুগুয়ে আর চিলির বিপক্ষে দুটি গোলও করেছেন । উরুগুয়ের বিপক্ষে জাতীয় দলের জার্সিতে প্রথম গোলটি করেন ২০২০ সালের ১৩ অক্টোবর । আগের ম্যাচেই তার অভিষেক হয়েছিল আর্জেন্টিনার বিপক্ষে । আর উরুগুয়ের বিপক্ষে নিজের প্রথম গোল করার সময়ে তার বয়স ছিল ১৮ বছর । একবিংশ শতাব্দীতে মোয়েসের চেয়ে কম বয়সে আর কোন ফুটবলের ‘কনমেবল’ অঞ্চলেরে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে গোল করতে পারেনি । মোয়েসেস ক্লাব ফুটবলে খেলছেন ইংল্যান্ডের ব্রাইটনে । চলতি মৌসুমে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের ৯টি ম্যাচেই মাঠে নেমেছেন । করেছেন ১টি গোল । ক্লাব ফুটবলে সব মিলিয়ে ৬২ ম্যাচে ৯ গোল আছে এই মিডফিল্ডারের ।

ইকুয়েডরের মিচেল এস্ত্রাদা দলের অন্যতম ভরসা । ২৬ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড দেশের হয়ে ৩১ ম্যাচে করেছেন ৮ গোল । বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ইকুয়েডরের হয়ে সবচেয়ে বেশী ৬টি গোল করেছেন । বর্তমানে খেলছেন মেক্সিকোর ক্লাব ক্রুজ আজুলে । ৬ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতার এই ফরোয়ার্ড বাতাসে ভেসে আসা বলে দারুণ বিপজ্জনক । বক্সের মধ্যে যে কোন মুহূর্তে কাজে লাগাতে পারেন সামনে চলে আসা সুযোগ । কাতার বিশ্বকাপে এস্ত্রাদা বনে যেতে পারেন বড় তারকা ।

উইঙ্গার পজিশনে এঞ্জেল মিনা ইকুয়েডরের আক্রমণের অন্যতম সারথি । ৩৪ বছরের এই তারকা ২০১৫ সাল থেকে খেলছেন জাতীয় দলে । এখন পর্যন্ত দেশের হয়ে ৪০ ম্যাচে করেছেন ৭ গোল । ২০২১ সালের কোপা আমেরিকায় ব্রাজিলের বিপক্ষে একটি গোল আছে তার । যে ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র হয়েছিল । সেটাও ব্রাজিলের মাঠে । ক্লাব ফুটবলেও ৪২১ ম্যাচে ১০১টি গোলের মালিক তিনি । ২০১৯ সাল থেকে আছেন মেক্সিকোর ক্লাব লিওনে ।

আরেক উইঙ্গার গঞ্জালো প্লাতা খেলেন স্পেনের ভায়াদোলিদে । মাত্র ২১ বছরেই দেশের হয়ে খেলে ফেলেছেন ২৮ ম্যাচ । করেছেন পাঁচ গোল । যার মধ্যে তিনটি আবার বিশ্বকাপ বাছাইয়ে । খেলেছেন পর্তুগালের সেরা ক্লাব স্পোর্টিং লিসবনে । ক্লাব ফুটবলে ৮৭ ম্যাচে ১৩ গোল আছে এই তরুণ উইঙ্গারের ।

মাত্র ২০ বছর বয়সেই জার্মানির বায়ার লেবারকুসেনে খেলছেন পিয়েরে হিনকাপি । ২০২১-২২ মৌসুমে বুন্দেস লিগায় নেমেছেন ২৭ ম্যাচে । আর সব মিলিয়ে খেলেছেন ৩৩ ম্যাচ । সেন্টারব্যাক পজিশনে খেলেও করেছেন দুইটি গোল । হিনকাপি ঠাণ্ডা মাথার ডিফেন্ডার । ভুল করেন কম । দেশের হয়েও ২১ ম্যাচে একটি গোল আছে তার ।

ইকুয়েডরের গোলরক্ষক অ্যালেক্সান্ডার ডোমিঙ্গেজ দলের অন্যতম অভিজ্ঞ তারকা । ৩৫ বছরের কিপার খেলেছেন ৬৩ আন্তর্জাতিক ম্যাচ । বর্তমানে খেলছেন কলম্বিয়ান লীগে । ২০১৪ সালে ইকুয়েডরের হয়ে বিশ্বকাপ খেলেছেন । ফ্রান্সের বিপক্ষে ছিলেন ম্যাচের সেরা । করিম বেঞ্জেমা , অলিভার জিরুদ আর পল পগবাদের বিপক্ষে ‘ক্লিন-শিট’ রাখা তার লড়াই এখনও অনেকের স্মৃতিতে আছে ।

ইকুয়েডরের কৌশলঃ

‘লা ট্রাই’ নামে পরিচিত ইকুয়েডরের কোচিং স্কোয়াডে আর্জেন্টিনার একক আধিপত্য । দলের মুল কোচ গুস্তাভো আলভারোর তিন সহকারী আর্জেন্টিনার । এমনকি তাদের কিপিং আর ফিটনেস কোচ একই দেশের । আলভারো উরুগুয়েকে খেলাচ্ছেন ৪-৩-৩   পদ্ধতিতে । সাবেক বোকা জুনিয়র্সের কোচের অধীনে ইকুয়েডরের খেলায় অনেক সময় আর্জেন্টিনার ছাপ পাওয়া যায় । যা লিওনেল স্কোলানির আগের সময়ে খেলতো আলবেসেলেস্তেরা । ইকুয়েডরের কোচ হিসেবে ৩১ ম্যাচে ডাগ আউটে দাঁড়িয়েছেন আলভারো । জিতেছেন ১১ ম্যাচ । ড্র ১২ আর হার ৮ ম্যাচে ।

ইকুয়েডরের কোচের পছন্দের একাদশ হচ্ছে – অ্যালেক্সান্ডার ডোমিঙ্গুয়েজ (গোলরক্ষক) , পারভিস এস্তুপিনান , পিয়েরো হিনিকাপে , ফেলিক্স তোরেস , এঞ্জেলপ প্রিসোডিও , মোয়েসেস কাইসেডো , সেবাস মেন্দেজ , কার্লোস গ্রুয়েজো , এনার ভ্যালেন্সিয়া , মিচেল এস্ত্রাদা , এঞ্জেল মিনা

কাতারে নিজের সেরা পছন্দের একাদশ দিয়েই বাজিমাৎ করতে চান আলভারো ।

বিশ্বকাপে লক্ষ্যঃ

ইকুয়েডর এখন পর্যন্ত ফুটবলে বড় কোন শিরোপা পায় নি । বিশ্বকাপ ফুটবলে নক আউট পর্ব আর মহাদেশীয় কোপা আমেরিকায় দুইবার চতুর্থ হওয়া তাদের সেরা সাফল্য । ইতিহাসে তারা একবারই শিরোপা জিতেছে । সেটাও ক্যানাডার মাটিতে আমন্ত্রণমুলক ট্রফি । ১৯৯৯ সালের  সেই আসরে ক্যানাডা , ইরান আর গুয়েতেমালা অংশ নিয়েছিল ।

আসন্ন কাতার বিশ্বকাপে ইকুয়েডর খেলবে ‘এ’ গ্রুপে । যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ স্বাগতিক কাতার , সেনেগাল আর হল্যান্ড । ফিফা র‍্যাংকিংয়ের ৪৪তম অবস্থানে থাকা ইকুয়েডর অনেক পিছিয়ে সেনেগাল আর হল্যান্ডের চেয়ে । সেনেগাল যেখানে ১৮ নাম্বারে , হল্যান্ড সেখানে শীর্ষদশে । আসন্ন বিশ্বকাপে ফেভারিটদের তালিকাতেও আছে হল্যান্ডের নাম । অন্যদিকে কাতার স্বাগতিক  হিসেবে পাচ্ছে বাড়তি সুবিধা । তাই ২০২২ সালে ইকুয়েডরের গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয়ার সম্ভাবনা বেশী । আর দলের কোচ আলভারো নিজেও টার্গেট করেছেন ‘নক আউট পর্ব’ । অর্থাৎ কোনমতে গ্রুপ পর্ব পেরুতে পারলেই ইকুয়েডরের জন্য হবে বড় সাফল্য ।

বিশ্বকাপের আগে অক্টোবর পর্যন্ত সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচে ইকুয়েডর হারেনি । জিতেছে নাইজেরিয়া আর আইভরি কোস্টের বিপক্ষে । ড্র করেছে সৌদি আরব , মেক্সিকো আর জাপানের বিপক্ষে । বলা যায় , বিশ্বকাপে বেশ ফুরফুরে মনোবল নিয়েই যাচ্ছে ইকুয়েডর ।

২০ নভেম্বর বিশ্বকাপ শুরুর দিনেই স্বাগতিক কাতারের বিপক্ষে মাঠে নামবে ইকুয়েডর ।

ইকুয়েডরের সম্ভাব্য স্কোয়াডঃ

বিশ্বকাপের চূড়ান্ত একদশ ঘোষণা করা হবে নভেম্বরে । কোভিড-১৯ মহামারীর পর বিশ্বকাপ স্কোয়াডে  ২৬ জন ফুটবলার রাখার নিয়ম করেছে ফিফা । সর্বশেষ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপেও এই নিয়ম ছিল । আর কোপা আমেরিকায় তো ২৮ খেলোয়াড় রাখা হয়েছিল প্রতিটা স্কোয়াডে । সেপ্টেম্বরে সর্বশেষ সৌদি আরব আর জাপানের বিপক্ষে দুইটি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে ২৯ জন ফুটবলারকে ডেকেছিলেন আলভারো । সেখান থেকেই ২৬ খেলোয়াড় নিয়ে তিনি উড়াল দেবেন কাতারে ।

গোলরক্ষকঃ অ্যালেক্সান্ডার ডোমিঙ্গুয়েজ , মোয়েসেস রেমিরেজ , হার্নান গালিন্দেজ , গঞ্জালো ভেল্লে

রক্ষণভাগঃ পারভিস এস্তুপিনান , এঞ্জেলো প্রেসিয়াডো , পিয়েরো হিনিকাপে , হাভিয়ের আরেগা , দিয়াগো পালাসিওস , বাইরন কাস্তিলো , ফার্নান্দো লিওন , জ্যাকসন প্রোজো , উইলিয়াম পাচো

মধ্যমাঠঃ কার্লোস গুয়েজো , এঞ্জেল মিনা , জেগসন মেন্দেজ , গঞ্জালো প্লাতা , রোমারিও ইব্রা , মোয়েসেস কেইসেডো , এলান ফ্রাংকো , হোসে কিফুয়েন্তেস , জেরেমি সারমিয়েন্তো , নেলসন আঙ্গেলো , প্যাট্রিক ডেলগাডো , এন্থনি ভ্যালেন্সিয়া

আক্রমণভাগঃ এনার ভ্যালেন্সিয়া , মিচেল এস্ত্রাদা , ডিওরকোয়েফ রিয়েস্কো ,

আহাস/বিশ্বকাপ-০২