Download WordPress Themes, Happy Birthday Wishes

ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া মোহামেডানের চমক

আহসান হাবীব সুমন/ক্রীড়ালোকঃ

ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব । দেশের ক্রীড়াঙ্গনে অন্যতম সফল আর জনপ্রিয় দল । একটা সময় ফুটবল , ক্রিকেট কিংবা হকিসহ যে কোন খেলায় চ্যাম্পিয়ন হওয়া ছাড়া অন্য কোন লক্ষ্য মাঠে নামত না দলটি । কিন্তু সেই মোহামেডান অনেক বছর ধরেই ফুটবলে ক্ষয়িষ্ণু শক্তি । বাংলাদেশের পেশাদার ফুটবল লীগে সাদাকালো শিবিরের নেই কোন শিরোপা । চিরপ্রতিপক্ষ আবাহনী , নতুন শক্তি বসুন্ধরা কিংস কিংবা শেখ জামাল ধানমণ্ডি আর শেখ রাসেলদের দাপটে মোহামেডান অনেকটাই কোণঠাসা ।

২০০২ সালে মোহামেডান সর্বশেষ লীগ শিরোপা জিতেছে । অথচ এই দলটির নামের সাথে আছে ১৯টি লীগ জয়ের কৃতিত্ব । আছে ১০টি ফেডারেশন কাপ । দেশের প্রথম ক্লাব হিসেবে বিদেশ থেকে ট্রফি জয়ের কৃতিত্ব মোহামেডানের । ভারত থেকে ১৯৮২ সালে আশিষ-জব্বার ট্রফি নিয়ে দেশে ফিরেছিল মোহামেডান । আছে দেশের মাটিতে তিনটি আগা খান গোল্ড কাপ আন্তর্জাতিক ট্রফি জয়ের রেকর্ড ।

অথচ এসবই এখন ধুসর স্মৃতি । ২০১৪ সালে স্বাধীনতা কাপের পর আর কিছু যোগ হয় নি মোহামেডান ক্লাবের ট্রফি কেবিনেটে । যা নিয়ে আক্ষেপে পোড়েন সাদাকালো শিবিরের সমর্থকরা । সর্বশেষ মৌসুমের শুরুতেও স্বাধীনতা কাপের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়ে সেই আক্ষেপ যেন লজ্জায় পরিনত করে মোহামেডান । ফেডারেশন কাপে তবু সেমিফাইনাল পর্যন্ত যেতে পেরেছিল । কিন্তু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে পঞ্চম হয়ে আরও একবার নিজেদের টিমটিমে অস্তিত্ব বাঁচিয়ে রাখে মোহামেডান ।

বছরের পর বছর শিরোপা ক্ষরায় মোহামেডানের সমর্থকদের হৃদয়ে চলছে রক্তক্ষরণ । দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকা মোহামেডান সমর্থকদের একটাই দাবী , শিরোপা লড়াই করার মতো একটি স্কোয়াড উপহার দিক কর্মকর্তারা । যা দিয়ে বসুন্ধরা কিংস , আবাহনী ক্রীড়া চক্র আর শেখ জামালদের সাথে মাথা উঁচু করে লড়াই করা যায় । মোহামেডান সমর্থকদের এই দাবী ছিল ২০২১ সালে গঠিত নতুন কমিটির কাছে । ক্যাসিনো-কাণ্ডের পর মোহামেডানের নেতৃত্বে যে পরিবর্তনের সূচনা হয় , তাতে আশা জাগে সমর্থকদের মনে । নতুন ফুটবল কমিটির সভাপতি প্রকৌশলী গোলাম মো. আলমগীর এবং সেক্রেটারি আবু হাসান চৌধুরী প্রিন্স কথা দিয়েছিলেন , আগামীতে মোহামেডান অতীত গৌরব ধরে রাখার লক্ষ্যে সম্ভাব্য শক্তিশালী দল গড়বে । তাদের সাথে যোগ হয়েছে মোহামেডানের টেকনিক্যাল কমিটিতে জাকারিয়া পিন্টু, রুম্মন বিন ওয়ালি সাব্বির , সাইদ হাসান কানন , ইমতিয়াজ সুলতান জনি , ইমতিয়াজ আহমেদ নকিবদের মতো সাবেক খেলোয়াড় যারা মোহামেডানের সোনালী অতীতের বহু সাফল্যের রুপকার । যারা এখন কাজ করছেন মোহামেডানের হৃত-গৌরব ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় ।

ইতোমধ্যে ২০২২-২৩ মৌসুমের জন্য মোহামেডান নিজেদের গুছিয়ে নিতে শুরু করেছে । যা বিগত বছরগুলোতে দেখা যায় নি ।মোহামেডান তাদের পূর্ববর্তী মৌসুমের অধিনায়ক সোলেমান দিয়াবাতের সাথে চুক্তি করেছে নতুন করে । সর্বশেষ পেশাদার লিগে মালির ফরোয়ার্ড দিয়াবাতে ২১ গোল করে ছিলেন সবার সেরা । সাথে যোগ হচ্ছে ব্রাজিলিয়ান স্টপার আর ইরানি ফরোয়ার্ড । মোহামেডানের সাথে ইরানি ফুটবলারদের যোগসূত্র অনেক পুরনো । এই ক্লাবে খেলে গেছেন নালজেগার , বোরহানজাদেহ , গোলাম মুর্তজা , ভিজেন তাহিরিদের মতো চৌকস ইরানিরা । কোচ কাম খেলোয়াড় হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন প্রয়াত নাসির হেজাজি । যারা মোহামেডানকে এনে দিয়েছিলেন সোনালি সাফল্য । সাথে যোগ হচ্ছে উজবেকিস্তানের এটাকিং মিডফিল্ডার মুজাফফর ফরায়েভ এবং ভেনেজুয়েলার উইঙ্গার ড্যানিয়েল ফেভিলেজ । ইতোমধ্যে তারা পৌঁছে গেছেন ঢাকায় । ফিটনেস ট্রেনার হিসেবে এসেছেন জার্মানির সেনডি শামেন ।

ব্রাজিলিয়ান সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার রজার দুয়ার্তে অলিভেরা আর ইরানের ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার মেইশাম শামাকভান্দেভ যোগ দেয়ায় মোহামেডানের শক্তি বাড়ছে । সাথে দেশীদের মধ্যে জাফর ইকবাল , মোহাম্মদ রাজীবদের সাথে চুক্তি নবায়ন করেছে মোহামেডান । এছাড়া ইমন খান , শাহরিয়ার ইমন , মিরাজুল ইসলামদের রেখে দিচ্ছে মোহামেডান । সেইসাথে বসুন্ধরা কিংস থেকে গত  মৌসুমের মাঝামাঝি সময় মোহামেডানে যোগ দিয়ে চমক দেখানো মোরসালিন থাকছে । 

এদিকে , মোহামেডান বেশকিছু হাই প্রোফাইল দেশীয় ফুটবলারের সাথে চুক্তি অনেকটা পাকা করে ফেলেছে ।সাথে  মুক্তিযোদ্ধা সংসদ থেকে ডিফেন্ডার মেহেদী হাসান মিঠু , রহমতগঞ্জের সানোয়ার হোসেন  , সাইফ স্পোর্টিংয়ের তরুণ ফরোয়ার্ড সাজ্জাদ হোসেন এবং ডিফেন্ডা ররিয়াদুল হাসান রাফি  মোহামেডানে খেলবেন । সব মিলিয়ে আসন্ন ২০২২-২৩ মৌসুমে মোহামেডানকে শক্তিশালী হয়ে মাঠে নামতে দেখা যাবে । যাদের লক্ষ্য থাকবে   অতীতের গৌরব ফিরিয়ে আনা । 

 

বাংলাদেশের ফুটবলে মোহামেডানের অবদান   অনস্বীকার্য । এক সময় এশিয়ান  ক্লাব কাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলা বাংলাদেশের একমাত্র  ক্লাব মোহামেডান । প্রথম বিদেশ থেকে ট্রফি আনা দলটির নামও মোহামেডান । এই সময়ে বসুন্ধরা কিংস ,  শেখ জামাল কিংবা শেখ রাসেলের মতো ক্লাব যত সাফল্য পাক না কেন – মোহামেডান আর আবাহনীর যে ঐতিহ্য সেটা কোনকিছুর সাথে তুলনীয় না । এখনও সারা দেশে মোহামেডান আবাহনীর রয়েছে  কোটি কোটি সমর্থক । মোহামেডানের তুলনায় আবাহনী এখনও  দাপট বজায় রেখেছে । পিছিয়ে গেছে মোহামেডান । বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবল ঝিমিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ মোহামেডানের ব্যর্থতা । তাই আগামীতে আড়মোড়া ভেঙে মোহামেডান জেগে উঠলে আবারও স্টেডিয়ামের গ্যালারি উত্তাল হবে না – কে বলতে পারে । 

দেশের ফুটবল জাগিয়ে তোলার  স্বার্থেই মোহামেডানের জেগে ওঠা বড্ড প্রয়োজন । 

আহাস/ক্রী/০০১