আহসান হাবীব সুমন/ক্রীড়ালোকঃ
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের নারী ফুটবল দলের বিপরীতে চলছে পুরুষদের জাতীয় দল । মেয়েরা যেখানে মাঝেমাঝেই পাচ্ছে সাফল্য , ছেলেরা সেখানে খুঁজছে অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসার পথ । দিনদিন র্যাংকিংয়ের তলানির দিকে এগিয়ে চলা জামাল ভুঁইয়ারা কবে ঘুরে দাঁড়াবে , সেটা একমাত্র ভাগ্যবিধাতাই জানে !
চলতি সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশের জাতীয় দল দুইটি প্রীতি ম্যাচ খেলবে কম্বোডিয়া আর নেপালের বিপক্ষে । ম্যাচ দুইটি প্রতিপক্ষের মাঠে অনুষ্ঠিত হওয়ায় বাংলাদেশের চাপ একটু বেশী । তাছাড়া ফিফা র্যাংকিংয়েও এই মুহূর্তে বাংলাদশের চেয়ে এগিয়ে দেশ দুইটি । কম্বোডিয়া ফিফার বিবেচনায় ১৭৪ তম অবস্থানে । আর নেপাল ১৭৬ । সেখানে সর্বশেষ র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ রয়েছে ১৯২তম অবস্থানে ।
যদিও দুই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলছে পরিসংখ্যান । দুই দলের ২৩ মোকাবেলায় বাংলাদেশ ১৩ ম্যাচ জিতেছে, ৭টিতে হেরেছে, ড্র করেছে ৩টি ম্যাচ। অন্যদিকে কম্বোডিয়ার বিপক্ষে চারবারের দেখায় তিনটি ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ , ড্র একটি । সর্বশেষ ২০১৯ সালের ৯ মার্চ কম্বোডিয়ার বিপক্ষে মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। সেই ম্যাচও হয়েছিল কম্বোডিয়ার মাঠে। রবিউল হাসানের একমাত্র গোলে বাংলাদেশ জিতে ফিরেছিল।
অতীতের সুখস্মৃতি বাদ দিয়ে ২০২২ সালের আলোচনায় এলে বাংলাদেশ দল শুধু হতাশাই বাড়িয়ে যাচ্ছে । চলতি বছর এশিয়ান কাপ বাছাইসহ বাংলাদেশের জাতীয় দল খেলেছে ১০টি ম্যাচ । যার মধ্যে হার আটটি আর ড্র দুইটি । এই ১০ ম্যাচে বাংলাদেশের জালে বল গেছে ২১বার । আর বাংলাদেশ প্রতিপক্ষের জালে বল ফেলেছে ৩বার । চলতি বছরের পারফর্মেন্স বলে দিচ্ছে বাংলাদেশের জাতীয় দলের করুণ অবস্থা ।
অন্যদিকে , মেয়েরা কিন্তু খারাপ করছে না ফুটবলে । চলতি বছরের আগস্টে র্যাংকিংয়ে অনেক এগিয়ে থাকা মালয়েশিয়াকে দুই ম্যাচের সিরিজে হারিয়েছে বাঘিনীরা । এছাড়া নেপালে চলমান সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে দাপটের সাথে হারিয়েছে পাকিস্থান , মালদ্বীপ আর ভারতকে । বিশেষ করে নারী ফুটবলে এশিয়ান শক্তি ভারতকে প্রথমবারের মতো হারাবার আনন্দ কাঠমুন্ডুতেই পেয়েছে বাংলাদেশ । জামাল ভুঁইয়াদের দলে যেখানে গোল করার কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না । সেখানে সাবিনা খাতুন , কৃষ্ণা রাণী সরকার , সিরাত জাহান সপ্নারা করছেন ভুরিভুরি গোল । সব মিলিয়ে বাংলাদেশের নারীরা এখন লজ্জা দিচ্ছে পুরুষ ফুটবল দলকে ।
মেয়েদের ফুটবলে সাফল্য যে চাপে ফেলছে পুরুষ দলকে , সেটা অস্বীকার করেন নি অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া নিজেও । বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে (বাফুফে) অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে জামাল জানিয়েছেন , ‘ ‘ভারতের বিপক্ষে মেয়েরা দুর্দান্ত ফুটবল খেলেছে। তাদের এ জয়ে আমাদের ঘিরেও প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে, যা আমাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। নিজেদের সেরাটা দিয়ে আমরাও জয়ের বিষয়ে আশাবাদী।’
একই কথা বলেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিন , ‘মেয়েদের জয়ে জামালরা চাপে আছে। ওদের তো এখন জিতে দেখাতে হবে।’
আগামী ২২ সেপ্টেম্বর কম্বোডিয়ার বিপক্ষে ও ২৭ সেপ্টেম্বর নেপালের বিপক্ষে ম্যাচ দুটি খেলবে বাংলাদেশ । এই দুইটি ম্যাচ নিয়ে প্রধান কোচ হাভিয়ের ক্যাবরেরা ম্যাচ দুটি সম্পর্কে বলেন, ‘২০ দিনে ১৬ ট্রেনিং সেশনে আমরা কাজ করেছি। কিছু ইনজুরি দুর্ভাগ্য রয়েছে। তারপরও আমরা দুই ম্যাচে জয়ের বিষয়ে আশাবাদী।’
গত জানুয়ারিতে নিয়োগ পাওয়া ক্যাবেরার অধীনে এখনও জয়ের মুখ দেখে নি বাংলাদেশ । যদিও নেপাল আর কম্বোডিয়ার বিপক্ষে জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন তিনি । স্বপ্ন দেখাচ্ছেন জামাল ভুইয়াও । কিন্তু এমন স্বপ্ন তারা প্রতিবারই দেখান , যার সাথে পরে আর বাস্তবতা মেলে না !
প্রীতির আবহে হলেও বাংলাদেশের জন্য ম্যাচ দুইটি গুরুত্বপূর্ণ । ফিফা স্বীকৃত হওয়ায় এই ম্যাচের জয়-পরাজয় ভুমিকা রাখবে রাংকিংয়ে । তাই জামাল ম্যাচটি নিচ্ছেন গুরুত্বের সাথে , ‘ ম্যাচ দুটি জিতলে র্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি হবে। সেই লক্ষ্যেই আমরা খেলব । আমাদের কাছে যে কোন ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ ।সব ম্যাচেই চাপ থাকে। সব ম্যাচই একটা নতুন চ্যালেঞ্জ। আমরা মাঠে সেরাটা দেব। ‘
আসন্ন ম্যাচ দুইটির জন্য টানা ২০ দিনের অনুশীলন ক্যাম্প করেছে বাংলাদেশ । ক্যাম্পের শুরুতে ডাকা হয়েছিল ২৭ ফুটবলার । সেখান থেকে চোটের কারণে আগেই বাদ পড়েন মিডফিল্ডার সোহেল রানা ও ডিফেন্ডার রায়হান হাসান। বাকি ২৫ জনের মধ্যে বাদ পড়েছেন ক্যাম্পে প্রথম ডাক পাওয়া মোহামেডানের মিডফিল্ডার শাহরিয়ার ইমন ও শেখ জামালের অধিনায়ক মোহাম্মদ নাইম।
বাংলাদেশ দলঃ
গোলরক্ষক- আশরাফুল ইসলাম রানা, আনিসুর রহমান জিকো, মাহফুজ হাসান প্রিতম।
রক্ষণভাগ- ইয়াসিন আরাফাত, বিশ্বনাথ ঘোষ, রিমন হোসেন, তারিক কাজী, টুটুল হোসেন বাদশা, রিয়াদুল হাসান, ইসা ফয়সাল, রহমত মিয়া।
মাঝমাঠ- মাশুক মিয়া জনি, বিপলু আহমেদ, জামাল ভূঁইয়া, রাকিব হাসান, আতিকুল রহমান ফাহাদ, সোহেল রানা, হেমন্ত ভিনসেন্ট বিশ্বাস।
স্ট্রাইকার- সুমন রেজা, মোহাম্মদ ইব্রাহীম, মতিন মিয়া, ফয়সাল আহমেদ ফাহিম, সাজ্জাদ হোসেন।
আহাস/ক্রী/০০৪