Download WordPress Themes, Happy Birthday Wishes

ববি মুরের পর ইতিহাসের পাতায় লিয়াহ উলিয়ামসন

আহসান হাবীব সুমন/ক্রীড়ালোকঃ

১৯৬৬ সালের নিজেদের মাটিতে বিশ্বকাপ জিতেছিল ইংল্যান্ড । ববি মুরের নেতৃত্বে পাওয়া বিশ্বকাপটি ইংল্যান্ডের ট্রফি শো-কেসের শোভা বর্ধন করছিল ‘সবেধন নীলমণি’ হয়ে । কারণ ১৯৬৬ সালের আগে বা পরে ইংল্যান্ডের কোন ফুটবল দল পায় নি বৈশ্বিক কিংবা মহাদেশীয় আসরে সাফল্য । যদিও ২০২১ সালে প্রথমবারের মত উয়েফা ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠেছিল ইংলিশরা । কিন্তু নিজেদের বিখ্যাত ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামের ফাইনালে হ্যারি কেইনরা টাইব্রেকারে হেরে যায় ইটালির কাছে । সেই সাথে ধূলিসাৎ হয় প্রথম ইউরো জয়ের স্বপ্ন ।

২০২১ সালে হ্যারি কেইনরা যা পারে নি , সেটাই করে দেখিয়েছে ইংল্যান্ডের মেয়েরা । নিজেদের মাটিতে জিতে নিয়েছে ‘উয়েফা ইউরো ওমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপে-২০২২’ আসরের শিরোপা । আর সেটাও সেই ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে । রবিবার (৩১ জুলাই) লন্ডনের স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের মেয়েরা ২-১ গোলে হারিয়েছে জার্মানির মেয়েদের ।

মজার ব্যাপার হচ্ছে , ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ববি মুরের ইংল্যান্ড হারিয়েছিল জার্মানিকেই (পশ্চিম) । এবারেও সেই একই স্টেডিয়ামে একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের ফুটবল পেলো দ্বিতীয় সেরা সাফল্য ।

সেরা গোলদাতা বেথ মেইড

সেরা গোলদাতা বেথ মেইড

জার্মানির বিপক্ষে ইংল্যান্ডের মেয়েদের ফাইনাল লড়াইটি হয়েছে হাড্ডাহাড্ডি । যার নিস্পত্তি হয় ১২০ মিনিটে । নির্ধারিত সময়ের খেলা ছিল ১-১ গোলে ড্র । খেলার ৬৭ মিনিটে ইংলিশদের এগিয়ে দিয়েছিলেন এলা টুনি । তবে জার্মানি ৭৯ মিনিটে সমতায় ফেরে লিনা ম্যাগগালের গোলে। অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ম্যাচে ১১০ মিনিটে গোল করে ইংলিশদের আনন্দে ভাসান ক্লোয়ে কেলি।

এই জয়ে ১৯৬৬ সালে পুরুষ দলের বিশ্বকাপের সাথে নারীদের ইউরো ট্রফি যোগ হল , যা এসেছে নিজেদের মাটিতে আয়োজিত আসর থেকে । তাই ইংল্যান্ডের মাটি স্বাগতিকদের ট্রফি জয়ের জন্য পয়মন্ত বলা যেতেই পারে । অবশ্য ১৯৯৬ সালে নিজেদের মাটিতে প্রথমবারের মত ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজন করেছিল ইংল্যান্ড । কিন্তু পুরুষদের সেই আসরে সেমি ফাইনাল গণ্ডি পেরুতে পারে নি ইংলিশরা । সেবারেও তারা সেমিতে হেরেছিল জার্মানির কাছে ।

সদ্য শেষ হওয়া নারী ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়েছিল ১৬ দেশ । ফাইনালসহ ৩১ ম্যাচ আয়োজিত হয় ইংল্যান্ডের আটটি শহরে । পুরো আসরে গোল হয়েছে ৯৫টি । গড় ৩.০৬ ম্যাচ প্রতি । প্রতি চার দল নিয়ে চার গ্রুপের খেলা শেষে অনুষ্ঠিত হয় কোয়ার্টার ফাইনাল , সেমি ফাইনাল আর ফাইনাল । ‘এ’ গ্রুপ থেকে ইংল্যান্ড আর ‘বি’ গ্রুপ থেকে জার্মানির মেয়েরা সব ম্যাচ জিতে উঠে আসে কোয়ার্টারে । পরবর্তীতে ফাইনালে ওঠার পথে ইংল্যান্ড হারিয়েছে স্পেন আর সুইডেনকে । অন্যদিকে জার্মানি জিতেছে অস্ট্রেলিয়া আর ফ্রান্সের বিপক্ষে । ফাইনালের আগে ইংল্যান্ড আর জার্মানি , দুই দলই পেয়েছে সব ম্যাচে জয় । যদিও শিরোপা লড়াইয়ে ইংল্যান্ডের কাছে হারতে হয়ে জার্মানির মেয়েদের ।

ইংল্যান্ডের হয়ে শিরোপা জয়ে ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিয়েছেন  লিয়াহ উইলিয়ামস । ববি মুর যেমন ইংল্যান্ডকে এনে দিয়েছিলেন প্রথম বিশ্বকাপ । তেমনি   নেতৃত্বেই  এসেছে ইংল্যান্ডের ইতিহাসের প্রথম ইউরোপিয়ান ট্রফি । ২৫  বছরের লিয়াহ  ইংল্যান্ডের  হয়ে খেলেছেন ৩৭ আন্তর্জাতিক ম্যাচ । গ্রেট ব্রিটেনের  হয়েও অলিম্পিক ফুটবলে তিন ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা আছে এই সেন্ট্রাল ডিফেন্ডারের । মাত্র নয় বছর বয়সে ইংলিশ জায়ান্ট আর্সেনালের নারীদের বয়সভিত্তিক দলের হয়ে ফুটবলে হাতেখড়ি তাঁর । খেলেছেন ইংল্যান্ডের বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দলেও । গানারদের হয়ে পেশাদার ক্যারিয়ারে ১৮৪ ম্যাচে ১২ গোল আছে তাঁর । আন্তর্জাতিক ফুটবলেও ইংল্যান্ডের জার্সিতে গোল আছে দুইটি । 

আসরে সেরা গোলদাতা হয়েছেন ইংল্যান্ড ফরোয়ার্ড বেথ মেইড । জার্মানির অধিনায়ক আলেক্সান্দ্রা পপ্পের সাথে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে তার । দুইজনেই আসরে গোল করেছেন ছয়টি করে । কিন্তু পাঁচটি এসিস্ট থাকায় ‘গোল্ডেন বুট’ জিতেছেন ইংল্যান্ডের ফরোয়ার্ড । অবশ্য ইনজুরির কারণে আলেক্সান্দ্রা ফাইনালে খেলতে না পারায় বাড়তি সুবিধা তো পেয়েছেন বেথ মেইড । দুর্ভাগ্য আলেক্সান্দ্রার , সেমি ফাইনালে জোড়া গোল করে দলকে ফাইনালে উঠিয়ে থাকতে পারলেন না শিরোপা লড়াইয়ে । তিনি থাকলে ম্যাচের ফলাফল কি হত , বলা মুশকিল ।

অবশ্য শুরু সেরা গোলদাতা নয় , আসরের সেরা খেলোয়াড়ের ‘গোল্ডেন বল’টাও জিতেছে আর্সেনালে খেলা বেথ মেইড । এছাড়া টুর্নামেন্টের সেরা উদীয়মান খেলোয়াড় হয়েছেন জার্মানির লিনা সোফি ।

নারী ইউরোর ইতিহাসে অবশ্য জার্মানির চেয়ে সফল কোন দল নেই । এখন পর্যন্ত ১৩ আসরের ৮টি শিরোপা গেছে জার্মানির ঘরে । এছাড়া দুবার নারীদের ইউরো জিতেছে নরওয়ে । একবার করে সুইডেন , হল্যান্ড আর ইংল্যান্ড ।

আহাস/ক্রী/০০৬