
আহসান হাবীব সুমন/ক্রীড়ালোকঃ
পূর্ব ধারণা মোতাবেক বার্মিংহ্যামের ২২তম কমনওয়েলথ গেমস থেকে শুন্য হাতেই ফিরছে বাংলাদেশ দল । শুধু শুন্যহাতে না , বলতে গেলে ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ হয়েছে বাংলাদেশ দলের । ১৯৯৮ সালে কুয়ালামপুরের পর এবারেই প্রথম কমনওয়েলথ গেমস থেকে পদকশুন্য হয়ে ফিরল বাংলাদেশ দল ।
কমনওয়েলথ গেমসের ইতিহাসে আটটি পদক জয়ের রেকর্ড আছে বাংলাদেশের । আর সবকটি এসেছিল শ্যুটিং থেকে । কিন্তু বার্মিংহ্যামে সেই শুটিংয়েই অংশ নেয় নি বাংলাদেশ থেকে কোন প্রতিযোগী । এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশ সাফল্য পাচ্ছে আর্চারি বা তীরন্দাজিতে । কমনওয়েলথ গেমসে ছিল না বাংলাদেশের কোন তীরন্দাজ ! তাই শুরু থেকেই ছিল না কোন পদকের আশা । তবু টেবিল টেনিসের দলগত বিভাগের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে চমক দেখিয়েছে হৃদয় , রামহিমালিয়ান বম আর সাব্বির । অতীতে কখনই কমনওয়েলথ গেমসে টিটিতে শেষ আটে উঠতে পারেনি বাংলাদেশ দল। এছাড়া এককেও কিছুদূর গিয়েছেন বাংলাদেশের রিফাত সাব্বির, সোনম সুলতানা ও সাদিয়া রহমান।
কমনওয়েলথ গেমসে বাংলাদেশের শুরুটা হয়েছিল দুর্ভাগ্যের মধ্য দিয়ে । অসুতস্থতার কারণে রিংয়ে নামতে পারে নি বাংলাদেশী বক্সার সুরকৃষ্ণ চাকমা। হয়েছেন ডিসকোয়ালিফাইড ।বাংলাদেশের আরেক বক্সার সেলিম হোসেন ফেদারওয়েটে ভারতের মোহাম্মদ হুসাম উদ্দিনের সামনে দাঁড়াতেই পারেন নি ।
সাঁতারে মাহমুদুন নবী নাহিদ , আসিফ রেজা সুকুমার রাজবংশী , সোনিয়া আক্তার এবং মরিয়ম আক্তারদের কাছ থেকে কোন প্রত্যাশা ছিল না । তারা পেরুতে পারেন নি হিটের বাঁধাও । জিমন্যাস্টিকসে নিউজিল্যান্ড প্রবাসী আলী কাদের বাছাই পর্বে ১৩.৭ স্কোর তুলেছেন। তবে সেটা বাছাই পেরুতে যথেষ্ট ছিল না ।
ভারোত্তোলনে দেশের সেরা মাবিয়া আক্তার সীমান্ত ৬৪ কেজি ওজন শ্রেণিতে । ১২ জন প্রতিযোগীর মধ্যে ৮ম হয়েছেন তিনি ।এসএ গেমসে জোড়া স্বর্ণজয়ী মাবিয়ার কাছ থেকে এমন পারফর্মেন্স হতাশার । তবে আশিকুর রহমান তাজ ৫৫ কেজি ক্যাটাগরিতে পঞ্চম হয়ে চমক দেখিয়েছেন ।আর নারীদের ৪৯ কেজি বিভাগে বাংলাদেশের মার্জিয়া আক্তার ইকরা ১১ জনের প্রতিযোগিতায় দশম হয়েছেন । এছাড়া ৭৬ কেজি শ্রেণীতে নবম হয়েছেন কাজী মনিরা ।
ইংল্যান্ডে বেড়ে ওঠা বাংলাদেশের ‘দ্রুততম মানব’ ইমরানুর ১০০ মিটার দৌড় শেষ করেন ১০.৪৬ সেকেন্ড সময় নিয়ে । অথচ তার ক্যারিয়ারের সেরা টাইমিং ১০.২২ সেকেন্ড । প্রস্তুতিতে লন্ডনে ইমরান ১০.২২ সেকেন্ডে দৌঁড় শেষ করেছিলেন যা ছিল তার ক্যারিয়ার সেরা টাইমিং। কমনওয়েলথ গেমসে নিজের সেরা টাইমিং স্পর্শ করতে পারলেই তিনি জায়গা পেতেন সেমিফাইনালে। ১০.৩৯ সেকেন্ড টাইমিং নিয়ে সবশেষ প্রতিযোগী হিসেবে সেমিফাইনালে উঠেছেন অস্ট্রেলিয়ার জেইক ডোরান। নিজের সেরা সাফল্যের কাছাকাছি টাইমিং করতে পারলে ইমরানও থাকতে পারতেন সেমিফাইনালে। কিন্তু তিনি পেয়েছেন ৭০ জন প্রতিযোগীর মধ্যে ৩৩তম স্থান , বাদ পড়েছেন হিট থেকেই ।
২০০ মিটার স্প্রিন্টে ২২.৪৬ সেকেন্ডে দৌঁড় শেষ করে হিটে নিজ গ্রুপে আট জনের মধ্যে সপ্তম হন রকিবুল হাসান । সব মিলিয়ে তার স্থান ৪৯তম।
মেয়েদের ১০০ মিটার স্প্রিন্টে নিজের সেরা টাইমিং করেও হিটেই বাদ পড়েছেন বাংলাদেশের সুমাইয়া দেওয়ান। তিনি সময় নিয়েছেন ১২.৪২ সেকেন্ড। তিন নম্বর হিটে সাত জনের মধ্যে সপ্তম হয়েছেন সুমাইয়া। মোট ২১ জন প্রতিযোগীদের মধ্যে ১৯তম হয়ে শেষ করেন তিনি।
হাই জাম্পে উম্মে হাফসা রুমকী হিটে আটজনের মধ্যে অষ্টম হয়েছেন । অথচ বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন হাইজাম্পের জন্য ভারত থেকে কোচ জিভি গ্যাংকরকে এনেছে উচ্চতর ট্রেনিংয়ের জন্য। তার তত্ত্বাবধানে প্রস্তুতি নিয়েছে রুমকি আর মাহফুজুর রহমানরা । যদিও কমনওয়েলথ গেমসে তারা পদক পাবেন , এমন প্রত্যাশা কেউ করেনি । কিন্তু নিজেদের সেরাটা অন্তত দিতে পারবেন , রুমকিদের কাছে এমন আশা ছিল । কিন্তু সাবেক ফুটবলার রুমকি প্রতাশা পূরণে পুরো ব্যর্থ ।
যদিও কমনওয়েলথ গেমসের ব্যর্থতা নিয়ে খুব বেশী অখুশী নন কমনওয়েলথ গেমসে বাংলাদেশের ‘শেফ দা মিশন’র দায়িত্ব পালন করা আবদুর রকিব মিন্টু । তিনি বাংলাদেশ এথলেটিক্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন । তিনি নিজের এথলেটিক্স ইভেন্ট নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেছেন , বাংলাদেশের পাঁচ এথলেট নিজ নিজ জায়গা থেকে ভাল করেছেন !
অন্যান্য ইভেন্ট নিয়েও সন্তুষ্টি জানিয়ে আবদুর রাকিব বলেছেন , ‘ কমনওয়েলথ গেমস অনেক বড় আসর । এখান থেকে নতুন পুরাতন খেলোয়াড়রা অনেক কিছু শিখেছে । আগামীতে তাদের জন্য আরও উন্নত অনুশীলনের ব্যবস্থা করা হবে এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দেশকে বড় কিছু এনে দেবেন ।
কমনওয়েলথ গেমস ব্যর্থতার পর বাংলাদেশের সামনে মিশন ৫ম ইসলামিক সলিডারিটি গেমস। যা তুরস্কের কোনিয়া শহরে আগামী ০৯ থেকে ১৮ আগষ্ট পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে । ৫৫টি দেশের ছয় হাজার প্রতিযোগী গেমসে অংশ নেবেন। বাংলাদেশের ৫৮ জন প্রতিযোগী ১১টি ইভেন্টে অংশ নেবেন। ইভেন্টগুলো হচ্ছে- আর্চারি, আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিক্স, এ্যাথলেটিক্স, ফেন্সিং, হ্যান্ডবল, কারাতে, শ্যুটিং, সুইমিং, টেবিল টেনিস, ভারোত্তোলন ও কুস্তি।
আর্চারি আর শ্যুটিংয়ের মত ফেভারিট ইভেন্ট থাকায় বাংলাদেশ তুরস্কে পদকের স্বপ্ন দেখছে । আর্চারিতে রোমান সানা, দিয়া সিদ্দিকিরা বাংলাদেশের জন্য পদক আনবেন , এমনটা আশা । দেখা যাক , বাংলাদেশের স্বপ্ন শেষ পর্যন্ত পূরণ হয় কিনা !
আহাস/ক্রী/০০৪