Download WordPress Themes, Happy Birthday Wishes

মেসি, মাফিয়াদের কেহ ?

ফুটবল মাঠে সেরার সেরা হয়ে তাঁর বিচরণ। ধারাবাহিকতার প্রশ্ন যদি রাখতে পারো ! পেলে কিংবা ম্যারাডোনাও হয়তো এত সময় ধরে তা করে দেখাতে পারেন নি। নিজের প্রবল প্রতিপক্ষ ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো হয়তো তাঁর চেয়েও অতি ধারাবাহিক। টানা দেড় যুগ ধরে একই মান ধরে রেখে খেলা চালিয়ে যাওয়া কম বড় বিষয় নয়। রোনালদো তাঁর চেয়ে বয়সে বড়। তিনি তাই আরো দুই বছর বাড়িয়ে, বিশ বছর ধরে পারফর্ম করেই যাচ্ছেন। কিন্তু, লিওনেল মেসিও কি কম যান ?

এই তো সেদিন লিও বললেন, ২০২৬ সালের বিশ্বকাপেও আমাকে দেখা যেতে পারে । লিওর সাফল্য নিয়ে তাবৎ বিশ্বের তাঁর ভক্তকুল বলেই থাকে, তিনি ভিন্ন গ্রহ থেকে আগত ! তবে এলিয়েন এর তকমা নিয়েও লিওর পথচলা রহস্যময় , সেই দলে কেহ কি আছে ? লিওকে গ্রেটেস্ট করার নেপথ্যে ফুটবল মাফিয়াদের হাত নেই, তা বলা যাচ্ছে কিনা ? বিশ্লেষণ, প্রেক্ষাপট ও অন্ধকার জানান দিচ্ছে, লিওনেল মেসির সাফল্যের পেছনে শক্ত কালো হাতের অংশগ্রহণ রয়েছে।

বৈশ্বিক ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের প্রশ্ন ! ইউরোপের জার্মানি ও ইটালির সাথে ল্যাটিন আমেরিকার ব্রাজিলের লড়াই ছিল ও আছে। বিশ্বকাপে পাঁচ বার কাপ জেতার মধ্যে ব্রাজিলের একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয় না। কারণ, জার্মানি ও ইটালি শুধু চারবার বিশ্বকাপ জেতেনি, বিশ্বকাপে রানার্স আপ, তৃতীয় ও চতুর্থ হওয়ার পাশাপাশি ইউরো জয়ের মধ্য দিয়ে তাঁরা নিজেদেরকে প্রমাণ করতে সচেষ্ট হয়েছে।

বলাবাহুল্য, বিশ্ব ফুটবলের পরাক্রম দেশ হিসাবে সাফল্যের বিচারে জার্মানিই হল এখনো পর্যন্ত সেরা। দ্বিতীয় অবস্থানে পেলে গারিঞ্চা হয়ে রোমারিও-রোনাল্ডোর সেই ব্রাজিল। তৃতীয় হিসাবে ইটালি থাকলেও গেল আট বছরে বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই না করতে পেরে ইটালির অবস্থা নড়ে গেছে। যদিও তাঁরা এর মধ্যে একবার ইউরো জিতে বলতে চেয়েছে, অচিরেই ফিরে আসব আমরা !

এদিকে ল্যাটিনের আরেক দেশ উরুগুয়ে বিশেষত দুই বার বিশ্বকাপ জিতে তাঁরা বলতে চেয়েছিল যে, আমরা দুর্দান্ত— কিন্তু, ধারাবাহিকতার অভাবে সত্তরের দশকে স্পষ্ট হয়, তাঁরা সেরা হয়ে আর সহসায় ফিরতে পারবে না। যেমনটি, একসময় গোল মেশিন পুস্কাস সিংহ হয়ে বলেছিল, হাঙ্গেরি কে কাউন্ট কর। সময় পার হয়ে গেছে, পুস্কাসের উত্তরসূরী হয়ে দেশটির পক্ষ হয়ে কেহ আর হাল ধরতে পারেনি। এমন কি তাঁরা বহুযুগ ধরে বিশ্বকাপের মত আসরেও প্রতিনিধিত্ব করতে পারছে না।

ফুটবলের রাজকুমার আলফ্রেডো স্টেফানো দুই দেশের প্রেমিক হতে যেয়ে ক্লাব ফুটবলের শ্রেষ্ঠ সত্তা হয়ে থেকে গেলেন। কিন্তু, আর্জেন্টিনা, না স্পেন— কার হয়ে খেলবেন, তা তিনি নির্ধারণ না করতে পারায় আর্জেন্টিনাকে সেরাদের সেরা হতে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। যদিও আর্জেন্টিনার আসল রুপ বা চেহারা ফুটবলের লুসিফার দিয়েগো ম্যারাডোনার হাত ধরেই প্রতিষ্ঠিত। এবং, তা ১৯৮২ সাল থেকে। ১৯৮৬ সালে বিশ্বকাপ জয়ের মাধ্যমে আর্জেন্টিনা সারা বিশ্বকে জানিয়ে দেয়, আমাদেরকে পরাক্রম হিসাবে ধর।

পরাক্রম হওয়ার লড়াইয়ে ববি চারল্টন এর ইংল্যান্ড, জোহান ক্রুয়েফের হল্যান্ড এবং ইউসেবিওর পর্তুগাল চেষ্টা করে গেলেও তাঁরা ধারাবাহিকতার প্রমাণ রাখতে পারেনি। বরং, জেন্টেলম্যান বেকেনবাওয়ারের দেখানো পথে পশ্চিম জার্মানি যখন জার্মানি হয়ে ফুটবল বিশ্বে নতুন করে নাম লেখাল, তখন থেকেই আজ অব্দি তাঁরা ধারাবাহিকভাবে উঁচু স্তরের ফুটবল উপহার দিয়েছে। এর মধ্যে জর্জি বেস্ট এর মত খেলোয়াড়রা এলেও নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড উত্তর পাড়ার বাতাসের সাথেই মিলিয়ে গেছে। দক্ষিণা হাওয়া হয়ে মুলধারার ফুটবলে ফিরতে পারেনি।

ফুটবলের জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বের বিশ্লেষণ কিংবা খেলোয়াড় হিসাবে সর্বকালের সেরা হিসাবে নাম উচ্চারণ করতে গেলে এক ব্যক্তির নাম ও একটি বিশ্বকাপ নিয়ে আলাপচারিতায় যেতেই হবে। অতঃপর পুনরায় লেখাটিকে সামনের দিকে নিয়ে যেতে হবে।

হ্যাঁ, ফিফার সাবেক সভাপতি জোয়াও হ্যাভেলাঞ্জ ও ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপ। হ্যভেলাঞ্জ ফিফার আরেক সাবেক সভাপতি স্রেফ ব্ল্যাটারের মত নিন্দিত হন নি অবশ্য জীবদ্দশায়।তবে, তিনিই ফুটবলের অন্ধকার রাস্তার সড়কের উদ্বোধন করেন। ব্রাজিলিয় নাগরিক হ্যাভেলাঞ্জ ক্রীড়া সংগঠক হিসাবে ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপে ব্রাজিলের হয়ে কাপ জেতানোর নগ্ন চেষ্টায় সামিল হন। ১৯৬৯ সাল থেকে বলা হচ্ছিল, ব্রাজিলের এই দলটি দারুণ ! কিন্তু আসলে তেমন দল ছিল না মানের বিচারে।

এদিকে হ্যাভেলাঞ্জ ১৯৭৪ সালে ফিফার দায়িত্ব নিতে যেয়ে দেখে ফেললেন, জোহান ক্রুয়েফ আর বেকেনবাওয়ারদের টোটাল আর পাওয়ার ফুটবল। অন্যদিকে ততক্ষণে তাঁর বন্ধু পেলে খেলা ছেড়েছেন। ১৯৭৮ সালের বিশ্বকাপ আসরটি ল্যাটিনের দেশ আর্জেন্টিনায় নিয়ে যেতে সব কিছুই করলেন এই হ্যাভেলাঞ্জ। বাকিটা দুষ্টু ইতিহাসের পাণ্ডুলিপি !

সামরিক শাসক, হ্যাভেলাঞ্জ এর অর্থনৈতিক সমঝোতায় বিশ্বকাপ আর্জেন্টিনার ঘরে চলে গেল। হ্যাভেলাঞ্জ চেয়েছিল, ইউরোপ নয়, ল্যাটিনের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে ব্রাজিলের পাশাপাশি আরেকটি দেশের আগমন হোক। উরুগুয়ে তো নিজ মহাদেশের হয়ে খেলছেই। তাঁরা কোপা আমেরিকার আসরে সফলও ছিল বরাবরই।

এদিকে তখন ইউরোপ থেকে মিশেল প্লাটিনি বড় তারকা বনে গেলেও হ্যাভেলাঞ্জ বড়াই করত জিকো কে সামনে রেখে। যদিও জিকোকে আগভাগেই ছোট করে ব্র্যান্ডিং করা হল। বলা হল, নতুন সাদা পেলে, পেলের মত করে ! অর্থাৎ হ্যাভেলাঞ্জ সেরা হিসাবে পেলেকে ধরেন, মানেন এবং এর জন্য যা যা করার দরকার করবেন। কিন্তু, ভাগ্য খারাপ ছিল তাঁর। আর্জেন্টিনাকে সামনে আনতে যেয়ে তিনি দেখলেন, পেলের চেয়েও অতি প্রতিভা নিয়ে এক সূর্য সন্তানের আগমন হয়েছে। তিনি আর কেহ নন। দিয়েগো ম্যারাডোনা ! এতেই বিপত্তি !

পাওলো রসির ইটালি ১৯৮২ সালে বিশ্বকাপ জিতে নিয়ে গিয়েছে। কিন্তু ল্যাটিনে চলছে ম্যারাডোনা বনাম জিকোর লড়াই– ইউরোপে প্লাটিনি বলছে, আমিই সেরা ! ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে বহুজাতিক সংস্থা এডিডাসের চাপে তিনি শুধু বললেন, ঠিক আছে, পশ্চিম জার্মানি ফাইনাল খেলবে। প্রতিপক্ষ হিসাবে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা থেকে একটি দল এলেই চলুক। কিন্তু ইউরোপের নতুন শক্তি প্লাটিনির ফ্রান্স ? হ্যাভেলাঞ্জ বললেন, তাঁদেরকে হারানো হবে, হারতে হবে।

ঠিক তাই হয়েছিল। যে ফ্রান্স জা টিগানা ও প্লাটিনি আর র‍্যাটসদের নিয়ে পুরো আসর মাতাচ্ছিল, সে সময়ের ইউরো জয়ী দেশ হিসাবেও, সেই ফ্রান্সকে আসরের সেমি ফাইনালে বিড়ালের মত করে খেলতে দেখা যায়। হ্যাভেলাঞ্জ হয়তো প্ল্যাটিনিকে উৎসাহিত করেছিলেন, বলেছিলেন, তোমার খেলোয়াড়ি জীবন তো প্রায় শেষ, এবার সংগঠক হওয়ার প্রস্তুতি নাও ! ম্যাচ রুমেনিগেদের কে দিয়ে দাও— আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ! হ্যাভেলাঞ্জ ভেবেছিল, আর যাই হোক ম্যারাডোনা বিশ্বকাপ নিতে পারবে না । কিন্তু এক সাধারন মানের দল নিয়েও ফুটবলের লুসিফার ম্যারাডোনা বাজিমাত করে বসলে হ্যাভেলাঞ্জ অবাক হয়ে যান এবং ভীত হয়ে পড়েন।

ফুটবলের প্রথম মাফিয়া হয়ে হ্যাভেলাঞ্জ যখন ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপ আসর নিয়ে মাতলেন, তিনি দেখতে পেলেন তাঁর দেশ ব্রাজিল কাপ নেয়ার মত অবস্থায় আছে। দলে ক্যারেকার মত স্ট্রাইকারও আছে। কিন্তু পশ্চিম জার্মানি আর নেই। তাঁরা তখন লোথার ম্যাথুয়েসের জার্মানি হয়ে খেলছে। আছে রুডি ভয়েলার ও কিলন্সম্যানেরাও। আর চাপ আছে সেই এডিডাসের। কিন্তু তিনি অবাক বিস্ময়ে দেখলেন, পুনরায় একটি গড়পড়তা দল নিয়ে দিয়েগো তাঁর দেশকে পুনরায় ফাইনালে তুলে নিয়ে গেছেন। এমন কী আসরে ব্রাজিলকে তাঁরা হারিয়েছে। অন্য ম্যাচগুলোয় ফলাফল নিজের করে নিচ্ছে আর্জেন্টিনা। মাধ্যম, টাইব্রেকার !

হ্যাভেলাঞ্জ অবশ্য কঠোর হলেন। বললেন, জার্মানিকে জেতাও। কিভাবে, জানতে চাই না। সেই বিশ্বকাপের ফাইনালে পেনাল্টি গোলের মাধ্যমে বিদায় করা হল আর্জেন্টিনাকে। হ্যাঁ, দল হিসাবে দিয়েগোর দল তেমন ভাল ছিল না। কিন্তু তাঁদেরকে জোর করে হারানো হয়। যেন, কোনভাবে ম্যাচ টাইব্রেকারে না গড়ায় ! এক গায়কোচিয়া নামের গোলরক্ষক হিসাব বদলিয়ে দিচ্ছিলেন বার বার করে। তাই ফাইনালে পেনাল্টি দিয়ে জার্মানিকে জেতান হয়। হ্যাঁ, আর্জেন্টিনা তো সেই আসরে পেরে উঠছিল না । তখন যুগোশ্লাভিয়ার ড্রাগন স্টয়কোভিচ কে রুখা সম্ভব হচ্ছিল না। সে তো খেলেই বলছিল, আমি ম্যারাডোনার চেয়ে কম নই।

অন্যদিকে নবাগত ক্যামেরুনকেও জোর করে বিদায় দেয়া হয়। ইংল্যান্ডের লিনেকার সাহেবেরা ভালই বলতে পারবেন তা এখন। কিন্তু ফাইনালে কার্যত হারানো হয় ম্যারাডোনাকে। তাঁর নেতৃত্ব, মুহূর্তের মধ্যে খেলার সমীকরণ বদলে দেয়াটাও ছিল অনন্য পর্যায়ের। কেহ কি তা অস্বীকার করতে পারবে ?

১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপে হ্যাভেলাঞ্জ বলেই দিলেন, কাপ উঠতে হবে ব্রাজিলের ঘরে। সেই কাপ ওঠাতে যেয়ে দিয়েগো ম্যারাডোনাকে আসর চলাকালীন নিষিদ্ধ করা, কী সাক্ষ্য দেয় ?

১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপ দিয়েগোর মাধ্যমে বাতিস্তুতাদের হাতে উঠলে অবিসংবাদিতভাবে তথা আনুষ্ঠানিকভাবে ম্যারাডোনাকে সর্বকালের সেরা ফুটবলার বলতে হত খোদ ফিফাকে। কিন্তু হ্যাভেলাঞ্জ অন্ধকারের রাস্তায় পথিক হয়েই নেপথ্যে থেকে মোকাবেলা করেছিলেন সবকিছু। বরং, তিনি সবাইকে অবাক করে দিয়ে ফিফার আয়োজনে সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচন করা নিয়ে মেতে উঠলেন। একটু কৌশলী হয়ে নিজে ফিফা থেকে ১৯৯৮ সালে অব্যাহতি নিলেও ২০০০ সালে ফিফা জানান দিলেন, নামটা হল পেলে। কিন্তু তামাম বিশ্ব বললেন, নামটা আর কেহ নয়, তিনি দিয়েগো !

এদিকে ফ্রেঞ্চ ফুটবল ম্যাগাজিন তাঁদের বিশ্লেষণে দেখতে পেল, এক ঝাঁক বিশ্বমানের খেলোয়াড় তাঁরা তথা ফ্রান্স পেয়েছে। সেই মিশেল প্লাটিনি এতদিনে নিজেই ক্রীড়া সংগঠক হয়ে মাফিয়াও বনে গেছেন। ফরাসী বিপ্লব রাজনৈতিকভাবে হলেও এবার সাংস্কৃতিক পর্যায়ে এই শাখায় তথা ফুটবলে হোক। অনেক তো ছাড় হল। ফ্রান্স দলে তখন ডেসাইলি, বারথেজ, দেশ্যাম্প, ডিওরকায়েফ, পেটিট, ভিয়েরা, ম্যাকালেলে, অরি, লিজারাজু আর অসাধারন জিদানেরা খেলছে। নাইকি, পিউমাকে সাথে রেখে এডিডাস ও ফিফা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল। তাঁরা ভাবল, ফ্রান্স দল হিসাবেও ভাল, পরাশক্তি হিসাবে তাই আবির্ভূত হতে হবে। কিন্তু এক ক্ষ্যাপাটে রোনালদো নাজারিও হিসাব বদলিয়ে দিচ্ছিল। ব্রাজিল অদম্য হয়ে পড়ছিল। তাঁকে রুখা যখন প্রায় অসম্ভব, তখন বলা হল, তোমাকে ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপ ছেড়ে দিতে হবে। কাপটি ফ্রান্সের ঘরে উঠবে। ফুটবলের জন্য নতুন শক্তিকে উঠিয়ে নিয়ে আসতে হবে, তোমাকে থামতে হবে। তবে, তুমি ২০০২ সালের জন্য প্রস্তুত হও। কাপ পেয়ে যাবে !

ফ্রান্স-ব্রাজিল ফাইনাল ম্যাচের আগেই নাজারিও অসুস্থ হয়ে পড়লেন ! কেন পড়লেন, কি কারণে— এর জবাব তাঁর কাছেই আছে। তিনিও এখন ফুটবলের মাফিয়া। হয়তো, এই জন্যই মুখ খোলেন না। নাজারিও ১৯৯৮ সালে জানতে পেরেছিলেন, পেছনের সমাচার কত টা ধূসর , কত টা নোংরা ! এখানে সব কিছু নির্ধারণ করা থাকে। তবে সব সময় পরিকল্পনা মাফিক সফলতা আসে না মাফিয়াদের, তেমন উদাহরণ অযুত আছে ফুটবল বিশ্বে। ফুটবলের চূড়ান্ত নোংরামি ও প্রতিফলন নতুন সভাপতি স্রেফ ব্ল্যাটার, বহুজাতিক সংস্থাগুলোর আয়ত্বে আসে ২০০০ সাল থেকেই। নগ্ন উদ্যোগে তাঁরা যা খুশি করতে থাকে।

এদিকে ২০০২ সাল পর্যন্ত রোনালদো নাজারিও, রোনালদিনিওদের সাথে জিনেদিন জিদান ও পর্তুগালের লুইস ফিগো সেরার সেরা প্রশ্নে লড়াই করতে করতে ২০০৬ সালের বিশ্বকাপ চলে আসে। ফুটবলের পরাশক্তি হিসাবে জার্মানি, ব্রাজিল, , ইটালি , আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স কে রেখে কাপ না জিতেও হল্যান্ড ও নতুন করে পর্তুগালের চলে আসাটাকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হচ্ছিল। ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ আয়োজক মেক্সিকোকে নিয়ে ফিফার ব্র্যান্ডিং করার ইচ্ছে থাকলেও ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপে রাজনৈতিক কারণে তাঁদের অনুপস্থিতি তাঁদেরকে পিছিয়ে দেয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুগোশ্লাভিয়ার ভেঙ্গে যাওয়া, ফুটবলে তাঁদেরকেও পিছিয়ে দেয়। আফ্রিকানদের মধ্যে ক্যামেরুন ও নাইজেরিয়া এবং সেনেগাল ধারাবাহিক না হওয়ার কারণে তাঁদেরকেও আনপ্রেডিক্টেবল হিসাবে দেখা হচ্ছিল। অন্যদিকে স্পেন ওত পেতে অপেক্ষায় ছিল। তাঁরা ক্লাব ফুটবলে জনপ্রিয় হয়ে থাকলেও নিয়ন্ত্রন চাইছিল বিশ্বফুটবলে।

ফুটবলের সেরা কে এবং পেলেকে সর্বকালের সেরা হিসাবে বহাল রাখতে জিনেদিন জিদানের হাতে ২০০৬ সালের বিশ্বকাপ দেয়ার অপচেষ্টা ছিল। বিষয়টি প্রমাণিত সত্য হয়ে দাঁড়ায়, যখন ফ্রান্স সেমিফাইনালে বিতর্কিত এক পেনাল্টি গোলের মাধ্যমে লুইস ফিগো এবং তরুন ক্রিস্টিয়ানোদের পর্তুগালকে বিদায় করা সম্ভব হয়। প্রকৃতির কী বিচার ! ইটালি ফাইনালে জিতে গেল এবং জিদানকে ম্যাচের শেষের দিকে ফ্রান্স আর পেলই না। জিদান পুরো সময় ম্যাচে থাকলে ফল কি হতে পারত, তা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। কিন্তু, দল হিসাবে ওই বিশ্বকাপের আসল সেরা ছিল রুই কস্টা, নুনো গোমেজ, ফিগো কিংবা ক্রিস্টিয়ানোর পর্তুগাল। প্রশ্ন হল, এখানে পেলে নাম কেন আসল ? এলো। জিদানের হাতে দুইটা বিশ্বকাপ হাতে থাকলে খোদ পেলেই বলত, সেরার প্রশ্নে আমার পরে জিদান, ম্যারাডোনা নয় ! এই উদ্যোগটি ফিফা ও মাফিয়ারা নিতে চেয়েছিল।

সময় একটা আলাদা বিষয়। ভাল ফুটবলারেরা আসে সময় কে কেন্দ্র করে । পেলে কিংবা গারিঞ্চার যুগে তাঁদের মান অনুযায়ী সেরা তাঁরাই ছিল। স্টেফানোদের বেলাতেও তাই। এক প্রজন্মের খেলোয়াড়দের সাথে অন্য প্রজন্মের খেলোয়াড়দের তুলনাটা আসলেই হয় না। তবে, খেলার মান দেখে নিশ্চিত না হওয়ার সুযোগও থাকবে না, তা নয়।

ঠিক এভাবেই ফুটবলের বোদ্ধাশ্রেণি দেখতে পেল যে, ফুটবল বিশ্বে নতুন দুই তরুণ এসেছে। একজন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। অন্যজন, লিওনেল মেসি। কিন্তু ক্রিস্টিয়ানোকে আমলে নেয়নি তাঁরা। ভেবেছে, খেলুক কয়েক বছর, হয়তো ঝরে যাবে। আর সে তো ছোট রোনালদো ! ওই সেই জিকোর মত করে, সাদা পেলে বানিয়ে দিয়ে বলবার চেষ্টা যে, তোমাকে পেলের নীচে থেকে খেলে যেতে হবে। ক্রিস্টিয়ানো তাই নয়, চোখ পড়ল সকলের লিওনেল মেসির দিকে।

শৈশব থেকে বাম পায়ে যা করে দেখাচ্ছে , তা যেন এই বয়সেই সে ম্যারাডোনা ! ২০০৬ সালের বিশ্বকাপে মেসি খেললেও। তবে আর্জেন্টিনার জার্মানির কাছে ০-৪ গোলে ভূপাতিত হওয়ার মাধ্যমে জমল না ! কিন্তু অশ্রু ঝরিয়ে ক্রিস্টিয়ানো বলেছিল, পর্তুগাল এখন থেকে প্রতিটি বিশ্বকাপেই খেলবে আর আমি ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড় হব। তাঁর ক্যারিয়ারের শুরুতে হয়তো কেহই তাঁকে পাত্তা দেয় নি।

মেসি ক্লাব ফুটবলে ধীরে ধীরে জায়গা করে নিলেন। অসাধারণ ক্ষিপ্রতা, স্কিলস আর গোল করার ক্ষমতা জানান দিচ্ছিল, বার্সেলোনায় রোনালদিনিয়র অভাব পুষিয়ে দেবে এই ছেলে একদিন ! অসম্ভবকে সম্ভব করে লিও তাঁর সেরাটা দলের হয়ে দিয়েই যাচ্ছিলেন। এদিকে ফ্রান্সের পর স্পেন গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা করে বিশ্বফুটবলে সাফল্যের মালা পরতে ব্যকুল হল। ততদিনে তাঁরা কূট চালে ইটালির ক্লাব ফুটবলকে বিতর্কিত করার নেপথ্যে কাজ করে তাঁদের দিকে তাকাও, এমন অভিনব আয়োজনে চলে যায়।

অন্যদিকে ক্রিস্টিয়ানো নামের সেই পিচ্চি রোনালদো ইংলিশ লীগ মাতিয়ে, উয়েফা জিতে চলে এলেন স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়েল মাদ্রিদে। স্পেন সুযোগটা নিতে থাকল। ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা এর মধ্যে উয়েফা চ্যম্পিয়ন্স লীগ জিতে বলতে উদ্যত, কেন স্পেন বিশ্ব জয় করবে না? স্পেন ফুটবল ফেডারশন বিশ্বকাপ জিততে লিওনেল মেসিকে বলেছিল, তাঁদের দেশের হয়ে খেলতে। এমন কি রোনালদোকেও এই অফার করা হয়েছিল। তাঁরা ভেবেছিল, আমাদের শাভি, ইনিয়েস্তা দিয়ে গোল করার ক্ষেত্রপ্রস্তুত করা গেলেও একজন গোলদাতাও তো দরকার ! কিন্তু উভয়েই রাজী হলেন না। ততদিনে পিচ্চি রোনালদো ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো হয়ে গেছেন। এটা ফুটবল ইতিহাসের একমাত্র দৃষ্টান্ত। তুলনা করার মধ্য দিয়ে কাউকে ছোট করে রাখার এমন অহরহ অভিযাত্রার অনুশীলনকে রুখে দিতে সক্ষন হন রোনালদো। রোনালদো নাজারিওর মত গ্রেট কে ছাপিয়ে সারাবিশ্ব ২০০৮ থেকেই দেখতে পান ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে এবং তাঁর সাথে লিও মেসির লড়াই-ই আগামী দিনের লড়াই।

যে লড়াইয়ের গল্পে দুইটা উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। এক, ২০১০ সালের বিশ্বকাপের ফিকচার দেখার পর স্পেন সরকারের সাথে এক রাতে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর বৈঠক হয়। যে বৈঠকে পর্তুগালের তখনকার অর্থনৈতিক মন্দা কাটাতে স্পেন, সাহায্যের হাত বাড়ায়। শর্ত দেয়া হয়, বিশ্বকাপে তাঁদের বিরুদ্ধে খেলায় অনৈতিকভাবে সিদ্ধান্ত এলেও মেনে নিবে। তোমাদের হারতে হবে ! ক্রিস্টিয়ানো মাথা নাড়িয়ে চলে যায়। সেই বিশ্বকাপে ডেভিড ভিয়ার অফসাইডের গোলে স্পেন পর্তুগালকে নক আউট রাউন্ডে বিদায় করে !

দুই, স্পেন কাতালানদের স্বাধীনতা রুখতে ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনার সাফল্য কামনায় ছাড় দেয়া শুরু করে। তাঁদেরকে লীগ টাইটেল দেয়ার প্রতিশ্রতিতে চলে যায়। ২০০৮ সাল থেকে ২০১৫ সালের ৮ বছরে তাঁরা এই জন্যই মোট ৬ বার লা লীগা জিতে ফেলে। এই ছাড় নিশ্চিত করতেই বার্সেলোনার প্রতিবেশী ও সমর্থক দলের মোট ৭টি ক্লাবের সাথে লিওনেল মেসির হোম এন্ড এওয়ে ম্যাচে একাধিক গোল নিশ্চিত হতে থাকে। এতে করে তিনি প্রতি মওসুমে ১৪ ম্যাচে প্রায় অতিরিক্ত ২০টি গোলের মালিক হয়ে পড়েন। বাকী ২৬টি ম্যাচ থেকে যা নামের পাশে আসে, তা থাকত বোনাস গোল। এমন কি তাঁর খেলার রেকর্ড গুলো দেখলে বোঝা যায়, ওই সাত দলের রক্ষণভাগের খেলোয়াড়রা প্রায় তাঁর পা থেকে ৫/৬ ফিট দূরত্বে রয়েছেন ! তিনি রাইট উইং দিয়ে ঢুকে ডি বক্সের বায়ের দিকে ঘেষে যেয়ে ওই ৫/৬ ফিট দূরত্বে থাকা রক্ষণকে পাত্তা না দিয়ে বা পা দিয়ে গোল করছেন বা করাচ্ছেন। এমন দৃশ্য প্রায় ৩০০ বারের মত। আবার খুব সিরিয়াসলি খেলেও তিনি ওই একই পয়েন্টের মাধ্যমেও সত্যিকারের গোল ও এসিস্ট করছেন। মাঝেমাঝেই তিনি ডি বক্সের বাইরে পড়ে যান এবং ফ্রি কিক আদায় করতে থাকেন।

ব্রাজিলের নেইমার যখন তাঁর সাথে খেলা করতে জুটি গড়েন, তখন থেকেই নেইমারের মধ্যে অহেতুক পড়ে যাওয়ার অভিনয় রপ্ত হয়। এমন অনুশীলন মেসির থেকেই তিনি অনুপ্রাণিত হন বলে অনুমিত হয়। ঠিক একইভাবে লুইস সুয়ারেজকেও তিনি খেলা বাদ দিয়ে ডি বক্সে পড়ে যাবার জন্য ভুমিকা রাখেন বলে মনে করার সুযোগ আছে।

বার্সেলোনা রেফারি ও লাইনসম্যানদের সহায়তায় গেল ২০১০-২০১৫ পর্যন্ত ম্যাচ জিতেছে, সেই সংখ্যাটা কম হবে না। এভাবে লিওনেল মেসির ক্যারিয়ারে ফলত ২০১০ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত অনৈতিকভাবে ক্লাব গোল আদায়ের সংখ্যা হবে প্রায় ২০০ এর মত । যা নৈতিক পন্থায় আসেনি।

অসম্ভব পর্যায়ের প্রতিভা নিয়ে জন্ম নেয়া ক্ষুদে মেসি যখন আসল-নকল গোল নিয়ে এই গ্রহে নিজের জাত চেনাচ্ছিলেন, ফুটবলের দিনের আলোর মাফিয়া ফিফার সাবেক সভাপতি ব্ল্যাটার, মাফিয়া মিশেল প্লাটিনি, মাফিয়া রোনালদো নাজারিওরা বৈঠকে বসে এডিডাস এর সাথে চুক্তি করে বললেন, ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ আর্জেন্টিনার ঘরে উঠবে ! সায় মিলেছিল ফ্রান্স ফুটবল ম্যাগাজিনের। ততদিনে তাঁদের পক্ষ থেকে মেসিকে ৫ বার ব্যালন ডি’অর দেয়াও হয়ে গেছে। সেভাবেই ফিকচার তৈরি হয়েছিল।

আর্জেন্টিনার সামনে সেমি ফাইনালের আগে কোন শক্ত প্রতিপক্ষই এলো না। হল্যান্ড না হয়ে ওই বিশ্বকাপে মেক্সিকো এলেও তাঁদের ফাইনালে যাওয়া সহজ হত না। আরজেন রবেন এর অভিনয়ে তাঁরা সেমিতে যেতে পারলেও শেষ রক্ষা হয় নাই। কিন্তু, সেমি ফাইনাল ও ফাইনালে লিও মেসির হতাশ করা খেলা তাঁদেরকে জেতায় নি, জিতে যায় জার্মানি। ব্ল্যাটার পেয়েছিল এডিডাসের কাছ থেকে পয়সা, একটি পক্ষ চেয়েছিল, ডিয়েগোকে খোঁচা দিয়ে যেন বলা যায় , তোমার চেয়ে মেসিও ভাল কিংবা বড় ! প্রকৃতি হতে দেয় নি। অথচ ব্রাজিল বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার হাতে কাপ দেয়ার সব ব্যবস্থা রেখেছিল রাজাকার রোনাল্ডো নাজারিও এন্ড এসোসিয়েটস !

ফুটবল এখন ব্যবসা। কলকারখানার মালিক না হয়ে, প্রযুক্তি ব্যবসায় মন না দিয়ে ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, এই খাত দিয়েই নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন আনা যায়। ফুটবল ভক্তরা মনে করে, ক্লাব ফুটবলের মালিকেরা কেন এত টাকা লগ্নি করে ? মুনাফার জন্যই করে। সৌখিনতা নয়, পেশাদারী ব্যবসা হিসাবেই তাঁরা দেখছে। বিশ্বের অর্থনীতি যারা নিয়ন্ত্রন করে তাঁদের চোখও পড়েছে ফুটবলে। তাঁরাই এখন স্বার্থ ও অর্থের কারণে ফুটবলের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয়। কে বিশ্বকাপ জিতবে, কে ব্যালন ডি’অর জিতবে, কে ফিফা বেস্ট হবেন, সব কিছুই !

ছেলেবেলায় ক্ষুদে লিওনেল মেসির প্রতিভার ওপর চোখ পড়েছিল ফুটবল বোদ্ধাদের। পরবর্তীতে স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশন ফুটবল না খেলেও বড় বড় ক্লাবের হয়ে থাকা খেলোয়াড় ব্রাজিলিয়ান কাইজার যেন বানিয়ে দিয়েছে একজন লিওনেল মেসিকে। মেসি চেয়েছেন খ্যাতি ও সাফল্য। পেয়ে যাচ্ছেন। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে যাওয়াটা যখন দুরহ তাঁর ও আর্জেন্টিনার জন্য, ফিফার আর্থিক ক্ষতি হবে বিপুল অংকের, তখন ইকুয়েডোরকে বলা হল, তোমাদের ম্যাচ হারতে হবে। সংবাদমাধ্যম লিখল তখন কি উচ্ছ্বাসে ! মেসির হ্যাট্রিকে ইকুয়েডর কুপোকাত ! আসলে কী ঘটেছিল সেদিন ?

লিওনেল মেসি হেরে গেছেন। অনেক আগেই। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর কাছে। ফুটবলের সব বড় অর্জন ক্রিস্টিয়ানো নিজের করে নিয়েছেন। মেসি পিছিয়ে গেছেন। কিন্তু, ব্যক্তিগত পুরষ্কার তাঁর হাতে উঠছে, উঠতেই থাকবে। এখন ধরা হচ্ছে দেশের হয়ে ট্রফি ! এক ম্যাচের ট্রফিও এখন টার্গেট ! দেশের হয়ে গোল পেতে ভারতবর্ষেও মেসিদের বিশ্বকাপের আগে এলে মন্দ হয় না !

লিওনেল তাঁর নিজের অর্থ দিয়ে কোপা আমেরিকার ট্রফি ক্রয় করেছেন। এখানে তিনি ও তাঁর মাফিয়া এজেন্ট কনমেবল, ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশন কে কিনে ফেলেন। সেই ধারাবাহিকতায় ‘লা ফিনালিসিমা’  তকমায় চ্যাম্পিয়ন দল এখন তাঁরা ! এটিও পরিকল্পনার অংশ ! দুর্বল এস্তোনিয়ার সাথে আর্জেন্টিনার মুল একাদশের প্রায় সব্বাইকে বিশ্রাম দিলেও মেসিকে নয় কেন ? এখানেও কিছু তো আছেই। ২০২২ সালের বিশ্বকাপ ? প্রশ্নটা তো চলেই আসছে। যে লোকটি নিজ ক্লাবের হয়ে ৮ গোল খেয়ে বিধ্বস্ত হল, মুখ দেখানো দায়— সেই বছরেই তাঁকে ব্যালন ডি অর দেয়া হয়নি? হয়েছে তো ! ফ্রান্স ম্যাগাজিন তাহলে ল্যাটিনের ফুটবলকে কাউন্ট করে ? কোপার আসর তাঁদের কাছে বড় ? আচ্ছা, কোপা যদি ব্রাজিল জিতত, নেইমার কি পেত ব্যালন ? মেসির পেছনে মাফিয়া নয়, সে নিজেই এখন অন্ধকারের বাসিন্দা।।

২০১৭ সাল থেকে লিও কিছুই করতে পারছে না। কিন্তু ফাঁক দিয়ে ট্রফি ও ব্যালন আসছে তো ! দেশের হয়ে সেরাটা খেলছে দিনের পর দিন তাঁর সতীর্থ ডি মারিয়া ! কিন্তু, ম্যাচ সেরা লিওনেল মেসি !

মেসি এখন ফুটবলের পণ্য। যা দিয়ে অর্থ ধরা দেয় । এই কারণেই লিওর হাতে বিশ্বকাপ ওঠার মধ্য দিয়েও একটি পক্ষের ব্যবসা হবে। চেষ্টাটা তাই চলবে। কিন্তু প্রকৃতি অন্তরায় হয়ে বলতে পারে, যত আয়োজন করেই বলা হোক, পেলের চেয়ে ম্যারাডোনা বড় নয়—- একইভাবে সবার চেয়ে লিও বড় বলার অপচেষ্টাও রুখবে প্রকৃতি। প্রকৃতির আবার দুই রুপ। এক রুপ জিতিয়েছিল প্রতিবাদী হয়ে দিয়েগোকে। আরেক রুপ ক্রিস্টিয়ানোকে, সেই ফুটবলের মহাঈশ্বর। তাহলে লিও কি ? লিও হলেন, এই গ্রহে আসা ভয়ংকর প্রতিভা নিয়ে আসা ফুটবল চরিত্র, কিন্তু দিন শেষে প্লাটিনি ও রোনালদো নাজারিওর মত করে হয়ে গেছেন। তাই মেসি, মাফিয়াদের কেহ ? নিজেকেই প্রশ্ন করেন।

লেখকঃ কামরুল হাসান নাসিম, প্রধান সম্পাদক, ক্রীড়ালোক।