Download WordPress Themes, Happy Birthday Wishes

বাংলাদেশ কি টি-টুয়েন্টি খেলতে পারে ?

ক্রীড়ালোক প্রতিবেদকঃ

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হোয়াইট ওয়াশ হয়েছে বাংলাদেশ । দুই ম্যাচেই বাংলাদেশের ব্যাটিং পড়েছে সমালোচনায় । তবে এই মুহূর্তে আর টেস্ট সিরিজ নিয়ে পোস্ট মর্টেম কিংবা বাড়তি ভাবনার সময় নেই । যেহেতু স্বাগতিকদের বিপক্ষে খেলতে হবে তিন ম্যাচের টি-টুয়েন্টি আর ওয়ানডে সিরিজ ।

আগামী শনিবার (২ জুলাই) থেকে শুরু হবে তিন ম্যাচের টি-টুয়েন্টি সিরিজ । ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের খেলা শুরুর আগেও কিন্তু ভাবতে হচ্ছে অনেক কিছু ।টেস্ট ম্যাচে বড় ইনিংস খেলার মত বাংলাদেশের যেমন ধৈর্যশীল ব্যাটার নেই , তেমনি নেই টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটের দাবী মিটিয়ে তেড়েফুঁড়ে ব্যাট করার মত কেউ । ক্রিস গেইল , আন্দ্রে রাসেল , ডেভিড মিলারদের মত ব্যাটার বাংলাদেশের জন্য স্বপ্ন , যারা মুহূর্তেই চার-ছক্কার ফুলঝুরিতে ম্যাচ নিয়ে আসতে পারেন নিজেদের দখলে । আসলে ‘পাওয়ার হিটার’ বলতে যা বোঝায় তেমন কাউকে কখনই পায় নি বাংলাদেশ ।

টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দেবেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ । এছাড়া দলে আছেন সাকিব আল হাসান ।ব্যাটারদের মধ্যে অভিজ্ঞ তারাই । রিয়াদ বর্তমান স্কোয়াডে সবচেয়ে বেশী ১১৫টি টি-টুয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন । করেছেন ১০৭ ইনিংসে ২০০১ রান । গড় ২৩.৮২ আর স্ট্রাইক রেট ১১৩ প্রায় । অন্যদিকে সাকিব খেলেছেন ৯৬ ম্যাচ । করেছেন ১১৯.৮৫ স্ট্রাইক রেটে ১৯০৮ রান । দুজনের সেরা ইনিংস যথাক্রমে ৬৪ আর ৮৪ রানের । সাকিবের অবশ্য আইপিএল , পিএসএল, বিগ ব্যাশসহ পৃথিবীর প্রায় সব ফ্রাঞ্চাইজি আসরে খেলার অভিজ্ঞতা আছে । আর সাকিবের টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটে আছে ১১৯ উইকেট । মাহমুদুল্লাহর শিকার সেখানে ৩৭ উইকেট ।

মাহমুদুল্লা রিয়াদ আর সাকিব , কখনই হার্ড হিটার নন । বরং অল রাউন্ড পারফর্মেন্সে তারা দলকে সহায়তা করেন । টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটে তারা দুজনেই বাংলাদেশের জন্য অপরিহার্য ।

দলে লিটন দাসের ভূমিকা উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান হিসেবে । দেশের হয়ে তিনি খেলেছেন ৪৮টি আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টি ম্যাচ । ৪৭ ইনিংসে ১২৩.৪২ স্ট্রাইক রেট আর ১৯.৯৩ গড়ে তিনি করেছেন ৯১৭ রান । সেরা স্কোর ৬১ রানের । ফিফটি আছে পাঁচটি ।

ডিপিএলে (ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ) লিস্ট এ ক্রিকেটে এক আসরে বিশ্বের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়া এনামুল হক বিজয় আছেন ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডে। তিনি খেলেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শেষ টেস্টে , কিন্তু আট বছর পর টেস্ট ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন একেবারেই ভাল হয় নি তার । দুই ইনিংসে করেছেন সাকুল্যে ২৭ রান (২৩ , ৪) । দেশের হয়ে ১৩ আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টি ম্যাচে তার রানের সংখ্যা ৩৫৫ । আছে একটি হাফসেঞ্চুরি আর স্ট্রাইক রেট ১১৭.৯৪ । তবে সমস্যা হচ্ছে , ২০১৫ সালের নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষবার দেশের হয়ে মাঠে নেমেছিলেন তিনি । ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দীর্ঘ সাত বছর পর একাদশে সুযোগ পেলে তিনি কি করেন , সেটা অনুমান করা যাচ্ছে না ।

বাংলাদেশের সিনিয়র খেলোয়াড়দের ক্যারিয়ার বিবেচনা করলে দেখা যায় , টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটের দাবী মিটিয়ে ব্যাট করার মত আসলে কেউ নেই । সাকিম আর মাহমুদুল্লাহর কথা আলাদা । তারা বল হাতে নিজেদের ভূমিকা রাখছেন । তাদের কাছ থেকে বিস্ফোরক ব্যাটিং কেউ আশা করেন না । কিন্তু  লিটন দাসরা সামর্থ্য থাকা স্বত্বেও টি-টুয়েন্টি ফরম্যাটে নিজেদের প্রমাণ করতে পারেন নি । দলের প্রয়োজনে বলের চেয়ে দ্বিগুন/তিনগুণ রান তাদের কাছ থেকে আশা করা যায় না ।

অন্যদিকে মাহমুদুল হাসান জয় আর নাজমুল হোসেন শান্তরা এখনও নতুন । আফিফ হোসেন ধ্রুব আগামীতে বড় ক্রিকেটার হওয়ার সম্ভাবনা দেখিয়েছেন । তবে তাদের অভিজ্ঞতার বড় অভাব আছে । তারা এখনও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নবীশ ।

তবে বাংলাদেশের টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটে আছে মোস্তাফিজের মত অভিজ্ঞ বোলার । যিনি কাটার দিয়ে বিভ্রান্ত করতে পারেন প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের । শুধু আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নয় , আইপিএল কিংবা বিপিএলের মত আসরেও নিজেকে প্রমাণ করেছেন ফিজ । খালেদ আহমেদ , এবাদত হোসেনরা ভাল করেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে । স্পিন এটাকে আছেন মেহেদি হাসান মিরাজ , যিনি কিছুটা ব্যাট করতেও পারেন ! একই কথা বলা মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের বেলায় ।

টি-টুয়েন্টি বাংলাদেশ যতটা না ব্যাটিং তারচেয়ে বেশী বোলিং নির্ভর দল । এই কারণেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজে নিজ দলের বোলিং আক্রমণের ওপর আস্থার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্স। তিনি জানেন , টি-টোয়েন্টিতে ধারাবাহিকভাবে খুব একটা বড় সংগ্রহ দাঁড় করানো হয় না বাংলাদেশের।

তবে বোলিং লাইন শক্তিশালী হওয়ায় মাঝারী পুঁজি নিয়েও বাংলাদেশ লড়াই করতে পারবে বলে বিশ্বাস সিডন্সের । মূলত দলে পাওয়ার হিটার না থাকার কারণেই এমন কথা বলেছেন সিডন্স। তবে পাওয়ার হিটিংয়ের ঘাটতি ঢাকতে বেশি বেশি চার ও সিঙ্গেলের দিকে মনোযোগ দেওয়ার বার্তা দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি পাওয়ার হিটিংকে ভুলে গেলেও যে চলবে না, সে কথাও বলেছেন সিডন্স।

বিসিবির ভিডিওবার্তায় সিডন্স বলেছেন, ‘জাতি হিসেবে আমার মনে হয় না আমাদের খুব দীর্ঘকায় গড়নের খেলোয়াড় রয়েছে। যেমন জস বাটলার, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মার্কাস স্টয়নিসদের মতো বড়সড় দৈহিক গড়ন আমাদের নেই… আমাদের অন্যভাবে উপায় খুঁজতে হবে। আমরা দৈহিক গড়নে অন্য দলগুলোকে পেছনে ফেলতে পারবো না।’

‘আমাদের বোলিং বিভাগ খুব ভালো। আমার মনে হয় না, আমাদের অনেক বেশি রান করতে হবে। বোর্ডে একটা ভালো সংগ্রহ দাঁড় করাতে হবে। এজন্য সিঙ্গেল অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। তবে পাওয়ার হিটিং অবশ্যই টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জেতায়। যত বেশি বাউন্ডারি, তত বেশি ম্যাচ জেতা যায়। আমাদের পাওয়ার হিটিংয়ে মনোযোগ দিতে হবে, ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে।’

সিডন্সের শেষ কথাতেই হতাশা ঘিরে ধরে । কারণ বাংলাদেশে যে সেই মানের পাওয়ার হিটার নেই । যে কারণে শুধু টেস্ট নয় , টি-টুয়েন্টি খেলাটাও বাংলাদেশের ব্যাটাররা ঠিকমতো খেলতে পারেন না – এমন বললে কি খুব অন্যায় বা ভুল হবে ?

ইতিহাস বলছে , এখন পর্যন্ত টি -টুয়েন্টি ক্রিকেটে ১২৩ ম্যাচ খেলে ৪৩ জয় পেয়েছে টাইগাররা । হেরেছে ৭৮ ম্যাচে আর দুইটি ম্যাচ হয়েছে পরিত্যক্ত । সাফল্যের হার ৩৪.৯৫ !

আহাস/ক্রী/০০২