Download WordPress Themes, Happy Birthday Wishes

আর্জেন্টিনার সবচেয়ে বড় তারকা কে ?

ক্রীড়ালোক প্রতিবেদকঃ

সাফল্যের বিবেচনায় গত কয়েক দশকের মধ্যে বর্তমান আর্জেন্টিনা ফুটবল দল কাটাচ্ছে সেরা সময় । খেলার মাঠে প্রায় হারতে ভুলে যাওয়া দলটি জিততে শুরু করেছে শিরোপাও । ধারাবাহিক সাফল্যের কারণে আলবেসেলেস্তেরা উঠে এসেছে ফিফা র‍্যাংকিংয়ের তিনে । সব মিলিয়ে আর্জেন্টিনা ভক্তরা আসন্ন কাতার বিশ্বকাপে দেখছেন তৃতীয় বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন ।

আর্জেন্টিনা দল ২০২১ সালে জিতেছে কোপা আমেরিকা ট্রফি । যা ১৯৯৩ সালের পর আলবেসেলেস্তেদের প্রথম আন্তর্জাতিক শিরোপা । এছাড়া চলতি বছরেই আর্জেন্টিনা জিতেছে এক ম্যাচের প্রীতি ট্রফি ‘লে ফিনালিসিমা’ । ল্যাটিন আমেরিকার চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ফিনালিসিমায় আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ ছিল ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন ইটালি । লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ইটালিকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে ফিনালিসিমা জিতেছে আর্জেন্টিনা ।

হিসেব বলছে , আর্জেন্টিনা সর্বশেষ ৩৩ ম্যাচে অপরাজিত আছে । আন্তর্জাতিক ফুটবলে সবচেয়ে ৩৭ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড ইটালির । এছাড়া ব্রাজিল আর স্পেনের আছে ৩৫টি টানা ম্যাচে না হারার ইতিহাস । আর্জেন্টিনা সবশেষ ম্যাচ হেরেছিল ২০১৯ সালের ৩ জুলাই , কোপা আমেরিকার সেমি ফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষে ।

অথচ এই আর্জেন্টিনাই ২০১৯ সালের জুলাই পর্যন্ত ছিল নিতান্ত সাধারণ দল । যারা পরের ম্যাচ জিতবে কিনা সেই নিয়ে থাকতো সংশয় । প্রশ্ন হচ্ছে , সাধারণ মানের আর্জেন্টিনা কিভাবে জয়ের অভ্যেস গড়ে তুললো ? আর্জেন্টিনার বর্তমান স্কোয়াডে লিওনেল মেসি আর আনহেল ডি মারিয়া ছাড়া বড় তারকাও নেই । অন্য যারা আছে , ব্যক্তিগতভাবে তাদের চেয়ে অনেক বড় তারকারা আকাশী জার্সিতে খেলেছে গত তিন দশকে । হাভিয়ের মাশ্চেরানো , হার্নান ক্রেসপো , হুয়ান সেবাস্তিয়ান ভেরন , রিকুয়েলমে , সার্জিও আগুয়েরো আর গঞ্জালো হিগুইনরা আর্জেন্টিনা দলে খেলেছেন সুপারস্টার হিসেবেই । কিন্তু তাদের নিয়েও আর্জেন্টিনা ধারাবাহিক সাফল্য পায় নি । সেই তুলনায় জিওভান্নি লে সোলসো , ওতামান্দি , পাওলো দিবালা , লাউতেরো মার্টিনেজ , নিকোলাস তাগলিয়াফিকো আর রদ্রিগো ডি পলরা তারকা খ্যাতিতে অনেক পিছিয়ে ।

তাহলে ?

আসলে আর্জেন্টিনার মুল শক্তি কোন খেলোয়াড় না , আর্জেন্টিনার বর্তমান সাফল্যের পেছনে সবচেয়ে বেশী অবদান কোচ লিওনেল স্কোলানির । তিনিই আর্জেন্টিনার বর্তমান দলের খেলোয়াড়দের গাঁথতে পেরেছেন এক সুতোয় । বিশ্বকাপের আগে একমাত্র তিনিই বানাতে পেরেছেন একটি নিয়মিত আর নিশ্চিত একাদশ । নইলে বিশ্বকাপের কয়েকমাস আগে অন্যান্য দেশের কোচরা যখন স্কোয়াড নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন , সেখানে স্কোলানি মোটামুটি নিশ্চিত তার স্কোয়াড এমনকি প্রথম একাদশ নিয়েও ।

অথচ স্কোলানি যখন আর্জেন্টিনা মুল জাতীয় দলের দায়িত্ব নেন , তখনও অনেকের মনে সন্দেহ ছিল । ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে আর্জেন্টিনা বিদায় নেয় ফ্রান্সের কাছে হেরে । জর্জ সাম্পাওলিকে সরিয়ে দায়িত্ব দেয়া হয় স্কোলানির কাঁধে । অথচ এই দায়িত্ব নেয়ার আগে স্কোলানি কখনও মুল কোচের দায়িত্ব পান নি । ছিলেন সেভিয়া আর আর্জেন্টিনার সহকারী কোচ । দুই ক্ষেত্রেই তিনি সহায়তা করেছেন সাম্পাওলিকে । কিন্তু ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ ব্যর্থতা ভাগ্য খুলে দেয় স্কোলানির । প্রথমে অন্তর্বর্তী দায়িত্ব পালন করলেও ‘স্থায়ী’ হতে সময় লাগে নি তার ।

কোচ হিসেবে আর্জেন্টিনা দলকে সফলতার পথে ফিরিয়ে আনা সহজ ছিল না । তবে স্কোলানিকে প্রথমেই যা সহায়তা করেছিল , সেটা সম্ভবত দলে মেসির না থাকা ! রাশিয়া বিশ্বকাপের পর মেসি বেশ কয়েকমাস জাতীয় দল থেকে নির্বাসনে ছিলেন । বিশ্বকাপ শেষে জাতীয় দল থেকে নিজেদের সরিয়ে নেন মাশ্চেরানো আর আগুয়েরোর মত সিনিয়ররা । ফলে বাধ্য হয়েই হুয়ান ফয়েথ , ডি পলদের মত আনকোরা ফুটবলার নিয়ে যাত্রা শুরু করেন স্কোলানি । যা পরে শাপে বর হয়ে দেখা দেয় । গুয়েতেমালার মত দুর্বল দলের বিপক্ষে জাতীয় দলের মিশন শুরু করা স্কোলানি বুঝে যান , সাফল্য পেতে হলে কি করতে হবে । মেসিদের ছাড়াই প্রথম দিকে গুয়েতেমালা , ইরাক আর মেক্সিকোর বিপক্ষে জয় পান । ড্র করেন মেক্সিকোর সাথে । যদিও ব্রাজিলের সাথে প্রথম মোকাবেলায় হেরেছিলেন স্কোলানি । কিন্ত নতুন আর অপেক্ষাকৃত পুরনোদের মিশেলে গড়া আর্জেন্টিনা দলে উন্নতি পরিলক্ষিত হচ্ছিলো স্পষ্ট ।

এক সময় নির্বাসন কাটিয়ে দলে ফেরেন মেসি । ফিরিয়ে আনা হয় ডি মারিয়াকেও । কিন্তু তার আগেই স্কোলানি বুঝে গিয়েছিলেন , শুধু মেসি নির্ভর হয়ে খেলতে গেলে আর্জেন্টিনা রয়ে যাবে আগের মত অন্ধকার তিমিরে । তাই তিনি দলে মেসি নির্ভরতা কাটাতে উদ্যোগী হলেন । পূর্বসূরিদের মতো স্কালোনি কখনোই স্রেফ মেসিকে ঘিরে আর্জেন্টিনার একাদশ সাজান নি; বরং তার একাদশে মেসি শুধুই দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়মাত্র।

স্কোলানির আরেক গুণ , তিনি দলে কাউকে নেয়ার ক্ষেত্রে ‘তারকা খ্যাতি’ বিবেচনা করেন না । তাইতো তার হাত ধরেই ক্রিস্টিয়ান রোমেরো , লিয়েন্দ্রো পেরেদেসরা আর্জেন্টিনা দলের অন্যতম ভরসা । এছাড়া গোলরক্ষক পজিশনে আরমানি কিংবা রোমেইরোর মত তারকাকে উপেক্ষা করতে দ্বিধা করেন নি তিনি । বাজে পারফর্মেন্সের দায়ে তাদের বেঞ্চে বসিয়ে খেলিয়েছেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজকে । সর্বশেষ কোপা আমেরিকা জয়ে সেই মার্টিনেজই হয়ে যান দলের ‘নায়ক’ ।

স্কোলানি কখনও একই ফর্মেশনে দলকে খেলান না । মাঠের একাদশে তার কোন নির্দিষ্ট ফর্মেশন নেই । কখনও প্রথাগত ৪-৪-২ আবার কখনও ৪-৩-২-১ , কিংবা ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে দলকে খেলাচ্ছেন । আসলে তার খেলার কৌশল নির্ভর করছে প্রতিপক্ষ বিবেচনায় । উরুগুয়ে কিংবা ভেনেজুয়েলার সাথে যে কৌশলে দলকে খেলান তিনি , ব্রাজিল কিংবা ইটালির বিপক্ষে তার কৌশল থাকে ভিন্ন । বোঝা যায় , যে কোন ম্যাচের আগে ‘হোম ওয়ার্ক’ ভালভাবেই সারেন তিনি । আর সেটা কাজেও লাগছে । আর সেই কারণেই আর্জেন্টিনা পাচ্ছে সাফল্য । এখন আর্জেন্টিনা দলের এমন অবস্থা , লিওনেলে মেসির মত বড় তারকা ছাড়াও আর্জেন্টিনা খেলতে পারবে নির্ভার হয়ে । জয়-পরাজয় , সেটা ভিন্ন বিষয় ।

তাই বর্তমান আর্জেন্টিনা দলের সবচেয়ে বড় শক্তি হিসেবে নিঃসন্দেহে নেয়া যায় কোচ স্কোলানির নাম , কোন খেলোয়াড়ের নয় ।

আহাস/ক্রী/০০৩