Download WordPress Themes, Happy Birthday Wishes

ভাগ্যদেবীকে নিয়েই নিউজিল্যান্ডের যত চিন্তা !

আহসান হাবীব সুমন/ক্রীড়ালোকঃ

ক্রিকেটের জনক বলে ‘কথিত’ ইংল্যান্ড যে কোন আইসিসি বিশ্ব আসরে একটি শিরোপার জন্য হাহাকার করেছে বহুদিন । তিন তিনটি আইসিসি ওয়ানডে বিশ্ব আসরের ফাইনালে হারার পর মনে হচ্ছিল তাদের ভাগ্যেরেখায় বুঝি ‘বিশ্বকাপ শিরোপা’ লেখা নেই ! তবে ২০১০ সালে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতে সেই অপেক্ষার অবসান ঘটে ইংল্যান্ডের । পরবর্তীতে ২০১৯ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে ইংল্যান্ড ।

এর মধ্যে ২০১৬ সালের টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালেও উঠেছিল ইংল্যান্ড । কিন্তু কোলকাতায় অনুষ্ঠিত ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরে দ্বিতীয়বারের মত টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ শিরোপা জেতা হয় নি  ইংলিশদের ।

সেই ইংল্যান্ড আবারও টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটের ফাইনালে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে । সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলমান বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠার ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের সামনে এখন বাঁধা নিউজিল্যান্ড । আসরের প্রথম সেমি ফাইনালে বুধবার (১০ নভেম্বর) মুখোমুখি হবে নিউজিল্যান্ড আর ইংল্যান্ড । আবু ধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে ম্যাচ শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত আটটায় ।

বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের চেয়ে আরও হতভাগা দল নিউজিল্যান্ড । ইংল্যান্ড তবু একবার করে  ওয়ানডে আর টি-টুয়েন্টি  বিশ্বকাপে শিরোপার নাগাল পেয়েছে । কিন্তু কিউইরা সর্বশেষ দুইটি একদিনের বিশ্বকাপ ফাইনালে উঠেও হেরেছে অস্ট্রেলিয়া আর ইংল্যান্ডের কাছে । তবে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে কখনও ওঠে নি নিউজিল্যান্ড । এমনকি সেমিতেও খেলছে এই প্রথম ! 

চলতি বিশ্বকাপে দারুণ ফর্মে আছে ইংল্যান্ড । সুপার টুয়েলভ পর্বে টানা চার  ম্যাচ জিতে দলটি নাম লেখায় সেমি ফাইনালে । শেষ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হারলেও ইংল্যান্ড দলকেই ফেভারিট মানতে হচ্ছে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে । যদিও ইনজুরির কারণে দল থেকে ছিটকে পড়েছেন ওপেনার জেসন রয় আর স্পিড স্টার টাই মিলস । কিন্তু ইয়ান মরগান এন্ড কোং এখনও আসরের অন্যতম ব্যালেন্সড দল ।

অন্যদিকে চলতি বিশ্বকাপের শুরুটা ভাল হয় নি নিউজিল্যান্ডের । পাকিস্তানের সাথে হার দিয়ে শুরু কেইন উইলিয়ামসনদের বিশ্বকাপ মিশন । কিন্তু এরপর একে একে তারা জয় পায় ভারত , নামিবিয়া , স্কটল্যান্ড আর আফগানিস্তানের বিপক্ষে । টানা চার জয় নিয়ে সেমিতে পা রাখা নিউজিল্যান্ড আছে সঠিক পথেই ।

দুই দলের পারফর্মেন্স বিবেচনায় ইংল্যান্ডকে এগিয়ে রাখা ছাড়া উপায় নেই । ইয়ান মরগানের দল অনেক দিন ধরেই দারুণ ধারাবাহিক । দলের ওপেনার জশ বাটলার আছেন খুনে ফর্মে । আসরের একটিমাত্র সেঞ্চুরি এসেছে তার ব্যাট থেকেই । করেছেন চলতি টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৪০ রান। এই ক্ষেত্রে ২৬৪ রান নিয়ে সবার আগে আছেন বাবর আজম । নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সবচেয়ে বেশী ১৭৬ রান এসেছে মার্টিন গাপটিলের ব্যাট থেকে ।

নিউজিল্যান্ডের ট্রেন্ট বোল্ট পেয়েছেন পাঁচ ম্যাচে ১১ উইকেট । শীর্ষ বোলার তালিকায় তিনি আছেন চারে । শ্রীলঙ্কার হাসারাঙ্গা ১৬ উইকেট পেয়ে প্রথম আর বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান ১১ উইকেট নিয়ে আছেন দ্বিতীয় স্থানে । তবে কোয়ালিফাইং রাউন্ড খেলায় হাসারাঙ্গা পেয়েছেন আট আর সাকিব ছয় ম্যাচ খেলার সুযোগ । সুপার টুয়েলভে ১১ উইকেট পেয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার এডাম জাম্পা ।

বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের সবচেয়ে সফল বোলার আদিল রশিদ পেয়েছেন আটটি উইকেট । এছাড়া মইন আলী আর টাই মিলসের উইকেট সংখ্যা সাতটি করে । ইনজুরির কারণে মিলসের না থাকা অবশ্যই ইংলিশদের জন্য বড় ধাক্কা । ক্রিস জর্ডান ছয়টি আর ক্রিস ওকস পাঁচটি উইকেট নিয়েছেন । এদিকে কিউই বোলার টিম সাউথিও পেয়েছেন সাত উইকেট । স্পিনার ইশ সোধি নিয়েছেন আট উইকেট ।

চলতি বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা বেশী রান পেলেও বোলিং আর ফিল্ডিংয়ের ক্ষেত্রে নিউজিল্যান্ড কোনভাবেই কম যাচ্ছে না । অধিনায়কত্বের ক্ষেত্রেও উইলিয়ামসন আর মরগান ক্ষুরধার মস্তিকের অধিকারী । তবে বিশ্ব আসরে মরগানের ভাগ্য কিছুটা হলেও উইলিয়ামসনের চেয়ে প্রসন্ন । নইলে সর্বশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপের বিতর্কিত ফাইনালে জিততে পারত কিউইরাও । ২০১৯ সালের সেই ফাইনালে লর্ডসে মূল ম্যাচ এবং সুপার ওভার দুটিই টাই হলে বাউন্ডারি সংখ্যায় পিছিয়ে থাকায় ইংলিশদের কাছে হেরেছিল নিউজিল্যান্ড। যা ছিল চরম হতাশার ।

বুধবারের সেমির আগে অবশ্য সেই ফাইনালের স্মৃতি নিয়ে ভাবতে রাজী না কিউই কোচ গ্যারি স্টিড , ‘ লর্ডসের ফাইনাল নিয়ে কেউ কোন কথা বলছি না । আমি মনে করি ছেলেরা আবারও ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। আগে যেমনটা বলেছি, তারা ভাল দল এবং সেরা দলকে খেলার চ্যালেঞ্জ নিতে উন্মুখ। তাই আমি নিশ্চিত নই যে ২০১৯ সালের ওই ম্যাচ নিয়ে কোন চিন্তা তৈরি হবে, এমনকি সুপার ওভারে গড়ালেও।’

তবে নিউজিল্যান্ডের জন্য দুশ্চিন্তা বাড়বে ম্যাচ সুপার ওভারে গড়ালে । নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে এ পর্যন্ত আটবার সুপার ওভারে খেলে সাতটিতেই হেরে গেছে তারা। আবার টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ইতিহাসে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এগিয়ে ইংল্যান্ড। ২১ বার  মুখোমুখি হয়েছে দুই দল। এর মধ্যে ১২ বার জয় পেয়েছে ইংল্যান্ড। ৭ বার জয়ী নিউজিল্যান্ড। ১টি করে ম্যাচ টাই ও পরিত্যক্ত হয়। এখনও পর্যন্ত বিশ্বকাপের মঞ্চে পাঁচবার দেখা হয়ছে ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের। এতে তিনবার জয়ী ইংল্যান্ড, আর দু’বার জিতেছে নিউজিল্যান্ড।

সব হিসেব বলছে , চলতি টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম সেমিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে কিছুটা হলেও এগিয়ে ইংল্যান্ড । কিন্তু এটা শুধু অতীত পরিসংখ্যানের বিবেচনায় । মাঠের খেলায় একটু ভাগ্যের সহায়তা পেলে উইলিয়ামসনের দল হারাতে পারে যে কাউকে , ইংল্যান্ডকেও । সেই ভাগ্যের পরশটা তাই বড় দরকার নিউজিল্যান্ডের ।

নিউজিল্যান্ডের সম্ভাব্য একাদশঃ

মার্টিন গাপটিল , ড্যারিল মিচেল , কেইন উইলিয়ামসন (উইকেট রক্ষক) , ডেভন কনওয়ে , গ্লেন ফিলিপস , জেমস নিশান , মিচেল স্যান্টনার , এডাম মিলনে , টিম সাউথি , ইশ শোধি , ট্রেন্ট বোল্ট

ইংল্যান্ডের সম্ভাব্য একাদশঃ

জশ বাটলার , জনি বেয়ারস্টো , ডেভিড মালান , মইন আলী , ইয়ান মরগান , স্যাম বেলিংস , লিয়াম লিভিংস্টোন , ক্রিস ওক্স , ক্রিস জর্ডান , মার্ক উড , আদিল রশিদ

আহাস/ক্রী/০০৩