Download WordPress Themes, Happy Birthday Wishes

বিরাট কোহলির কারণেই ভারতের দুর্দশা !

ক্রীড়ালোক প্রতিবেদকঃ

সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলমান আইসিসি টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের শুরু থেকেই ফেভারিট ছিল ভারত । বিশ্বের সেরা ব্যাটিং লাইন আপের সাথে কার্যকরী বোলিং আক্রমণ – সব মিলিয়ে বিশ্বকাপ জয়ের সম্ভাবনায় ভারতকেই এগিয়ে রেখেছিল সবাই । কিন্তু সেই হিসেব-নিকেশ পাল্টে গেছে মাঠে খেলা গড়াতে না গড়াতেই ।

আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই ভারত ১০ উইকেটের লজ্জাজনক ব্যবধানে হেরেছে চির-প্রতিপক্ষ পাকিস্তানের কাছে । দ্বিতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে টিম ইন্ডিয়ার হার ৮ উইকেটে । টানা দুই ম্যাচ হেরে ভারত সুপার টুয়েলভ পর্ব থেকেই বিদায়ের অপেক্ষায় । ২০০৭ সালের বিশ্বকাপের পর এই প্রথমবার আইসিসি প্রতিযোগিতার গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেওয়ার মুখে ভারত।

ভারতের পক্ষে চলতি বিশ্বকাপের সেমি ফাইনালে খেলা সত্যিই কঠিন । কারণ ইতোমধ্যে টানা তিন ম্যাচের প্রত্যেকটি জিতে পাকিস্তান অনেকটাই নিশ্চিত করে ফেলেছে সেমি ফাইনাল । তিন ম্যাচের দুইটিতে জয় নিয়ে গ্রুপের দ্বিতীয় অবস্থানে আছে আফগানিস্তান । দুই ম্যাচে একটি করে জয় পেয়েছে নিউজিল্যান্ড আর নামিবিয়া । গ্রুপে ভারত আর স্কটল্যান্ড কোন জয় পায় নি ।

অবশ্য জটিল অঙ্কের হিসেবে ভারত এখনও সেমিফাইনালে যেতে পারে। তবে সেই অঙ্কের সমাধান অবশ্য কোহলিদের হাতে নেই। কারণ নিজেদের জয়ের পাশাপাশি ভারতকে এখন কেন উইলিয়ামসনের দলের পয়েন্ট নষ্টের দিকেও তাকিয়ে থাকতে হবে। ভারতের হাতে এখনও তিনটি ম্য়াচ রয়েছে। শেষ চারে যাওয়ার রাস্তা পরিষ্কার করতে হলে ভারতকে তিনটি ম্যাচ জিততেই হবে। একইসঙ্গে বাড়াতে হবে রানরেট। এর পাশাপাশি আফগানিস্তানের কাছে নিউজিল্যান্ডকে বড় ব্যবধানে হারতে হবে।

এদিকে কাগজে কলমে সম্ভাবনা থাকলেও ভারতীয়রা নিজেদের দলের ব্যর্থতার জন্য ইতোমধ্যেই দায়ী করতে শুরু করেছে অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে । ভারতীয় ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হলেও কোহলি যে অধিনায়ক হিসেবে ‘নবীশ’ , সেই কথাই বলছে তারা । বিশেষ করে পূর্বসূরি মহেন্দ্র সিং ধোনির মত ঠাণ্ডা মাথায় সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে কোহলি ।

কোহলির ক্ষেত্রে জাতীয় দলের চেয়ে আইপিএল’কে বেশী গুরুত্ব দেয়ার অভিযোগ উঠেছে । ভারতের অধিনায়ক কখনও আইপিএল জেতেন নি । সেই কারণে রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুকে আইপিএল জেতানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছিলেন তিনি । সেটাও অবশ্য তিনি পারেন নি ।

এছাড়া বিশ্বকাপের ঠিক আগে শেষ হয়েছে আইপিএল । ফলে ভারতীয় ক্রিকেটাররা টানা ম্যাচ খেলে ছিলেন ক্লান্ত । যার প্রভাব দেখা যাচ্ছে বিশ্বকাপে । এই আমিরাতেই কিছুদিন আগে আইপিএল প্রতিযোগিতায় দারুণ বোলিং করেছেন মোহাম্মদ শামিরা । কিন্তু বিশ্বকাপে তাদের সেই পারফর্মেন্স খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ।

নিউজিল্যান্ড ম্যাচের পর জাশপ্রিত বুমরাহ স্বীকারও করে নিয়েছেন নিজেদের ক্লান্তির কথা। অর্থাৎ, বিশ্বকাপের আগে আইপিএল খেলে আদতে ক্রিকেটারদের ক্ষতিই হয়েছে।

এছাড়া বিশ্বকাপের আগে হঠাৎ করেই ‘অধিনায়কত্ব’ ছাড়ার ঘোষণা দেন কোহলি । জানিয়েছেন , চলতি বিশ্বকাপের পর আর ভারতের টি-টুয়েন্টি অধিনায়ক থাকছেন না তিনি ।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন , কোহলির এই আচমকা ঘোষণা দলের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে । কোহলীকে সসম্মানে বিদায় জানানোর যে প্রত্যাশা তাঁদের উপর চেপে বসেছিল, সেই চাপই শেষ পর্যন্ত ডুবিয়েছে।

এছাড়া দলের মধ্যে রোহিত শর্মা আর কোহলির দ্বন্দ্ব চলছে বহুদিন ধরে । কোহলীর নেতৃত্ব নিয়ে দলের কিছু বর্ষীয়ান ক্রিকেটার বোর্ডকে অভিযোগ করেছিলেন। জানা গিয়েছিল, তার মধ্যে ছিলেন রোহিত, বুমরার মতো ক্রিকেটারও। দলের মধ্যে স্পষ্ট হয়ে গেছে দুইটি গ্রুপ । এই ‘অনৈক্য’ দলের সর্বনাশ করেছে ।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হারের পর কোহলি বলেন , ‘ আমরা প্রথম থেকেই কেঁপে গিয়েছিলাম। ব্যাটিং ও বোলিংয়ে আমাদের যতটা সাহসী হওয়ার প্রয়োজন ছিল আমরা হতে পারিনি। এটা খুবই দুঃখজনক । ‘

কোহলির এই মন্তব্যেও চটেছেন অনেকে । কপিল দেব তো সরাসরি বলেছেন , ‘ কোহলীর মতো এক জন বড় মাপের ক্রিকেটারের কাছে এই ধরনের মন্তব্য খুব দুর্বল। যদি এক জন অধিনায়কের এই ধরনের চিন্তাভাবনা থাকে এবং একটা দলের শরীরী ভাষা এতটা খারাপ হয় তা হলে সেই দলকে তুলে ধরা খুব কঠিন। কোহলীর কথা শুনে আমি খুব অবাক হয়েছি। ‘

সব মিলিয়ে বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের ব্যর্থতায় এখন কোহলিকে করা হচ্ছে ‘বলির পাঁঠা’ । অবশ্য অধিনায়ক হিসেবে কোহলি নিজেও দায় এড়াতে পারছেন না দলের ব্যর্থতার ।

আহসান/ক্রী/০০৭