Download WordPress Themes, Happy Birthday Wishes

বাংলাদেশের সামনে এ কোন অস্ট্রেলিয়া ?

ক্রীড়ালোক প্রতিবেদকঃ

সময়ের ব্যবধান মাত্র তিন মাসের । চলতি বছরের অগাস্টেই বাংলাদেশে তিন ম্যাচের টি-টুয়েন্টি সিরিজ খেলে গেছে অস্ট্রেলিয়া । আবারও সেই দেশের বিপক্ষেই আইসিসি টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচ খেলতে নামছে বাংলাদেশ । যদিও বাংলাদেশে খেলে যাওয়া অজি স্কোয়াডের সাথে বিশ্বকাপে আসা অজিদের রয়েছে বিরাট ফারাক ।

গত আগস্টে বাংলাদেশে খেলতে আসা অস্ট্রেলিয়া দলে ছিলেন না নিয়মিত স্কোয়াডের কেউ । অজিদের সেই দ্বিতীয় সারির দলকে মিরপুর শের-এ-বাংলা স্টেডিয়ামের ‘বিতর্কিত’ পিচে নাকাল করেছিল টাইগাররা । সিরিজ জিতেছিল ৪-১ ম্যাচের অবাক করা ব্যবধানে । সর্বশেষ সিরিজের হিসেবে বিশ্বকাপ মঞ্চে বাংলাদেশেরই ফেভারিট হবার কথা ছিল অজিদের বিপক্ষে । কিন্তু কঠিন বাস্তবতায় এই ম্যাচে বাংলাদেশ এখন শুধু মুখরক্ষা করতে পারলেই যেন বর্তে যায় !

সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলমান বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে নিজেদের শেষ ম্যাচে বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বিকেল চারটায় ।

চলতি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভ পর্বে টানা চার ম্যাচ হেরে ইতোমধ্যেই বিদায় নিশ্চিত হয়েছে বাংলাদেশের । অন্যদিকে তিন ম্যাচের দুইটিতে জেতা অস্ট্রেলিয়া লড়ছে সেমি ফাইনালের টিকেট পাওয়ার আশায় । এই গ্রুপ থেকে ইতোমধ্যে চার ম্যাচে টানা জয় নিয়ে শেষ চারে উঠে গেছে ইংল্যান্ড । চার ম্যাচে তিন জয় নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে দক্ষিণ আফ্রিকা । বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় পেলে বেঁচে থাকবে অস্ট্রেলিয়ার সেমির সম্ভাবনা । সেই ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা হেরে গেলে আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নিজেরা জয় পেলে সেমিতে উঠে যাবে অজিরা ।

তবে শেষ হিসেব মেলাতে বাংলাদেশের বিপক্ষে জয়টা জরুরী অস্ট্রেলিয়ার জন্য । যে বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন মাস আগেই টি-টুয়েন্টি সিরিজ হেরেছে তারা । কিন্তু বাংলাদেশে খেলে যাওয়া সেই দলটি নামেই ছিল অস্ট্রেলিয়া ! বাংলাদেশে আসা স্কোয়াডে ছিলেন না মুল দলের কেউ । বাংলাদেশ সফরের স্কোয়াডে থাকা অলরাউন্ডার ড্যান ক্রিস্টিয়ান ও অভিষেক ম্যাচে হ্যাটট্রিক করা নাথান এলিস শুধু আছেন না থাকার মত , ‘রিজার্ভ’ হিসেবে । অর্থাৎ বিশ্বকাপে আসা অস্ট্রেলিয়ার ১৫ সদস্যের স্কোয়াডের কেউ ছিলেন না বাংলাদেশ সফরে ।

তাই আগস্টের সিরিজ জয়ের স্মৃতি নিয়ে উল্লসিত হবার সুযোগ নেই বাংলাদেশের , বরং ‘আসল’ অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হবার বাস্তব সত্য্যটা উপলব্ধি করা এখন জরুরী । তবে আগের ম্যাচেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৮৪ রানে গুটিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ কতটুকু কি করতে পারবে , সেই নিয়ে সংশয় আছে সবার । ব্যাটিং , বোলিং , ফিল্ডিং- ক্রিকেটের তিনটি বিভাগেই চলতি বিশ্বকাপে সমান ব্যর্থ বাংলাদেশের উপর ভরসা রাখার মত মানুষ এখন খুঁজে পাওয়া বড় দুষ্কর ।

যদিও বাংলাদেশের বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ যথারীতি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন , ‘ আমাদের আরেকটি ম্যাচ আছে। আমি নিশ্চিত, সেখানে ছেলেরা ভালো করবে। পেশাদার হিসেবে আমাদের দৃঢ়ভাবে ঘুরে দাঁড়ানো জরুরি। আগামীকাল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আমাদের আরেকটি ম্যাচ জেতার সুযোগ। ছেলেরা কী করেছে, এর বিশ্লেষণ ওরা করবে, এটা তাদের করতে হবে। আমি নিশ্চিত, আগামীকাল ওরা দৃঢ়ভাবে ঘুরে দাঁড়াবে। ‘

কিন্তু অস্ট্রেলিয়া যে আছে প্রতিশোধের অপেক্ষায় । অ্যারন ফিঞ্চ , ডেভিড ওয়ার্নার আর ম্যাক্সওয়েলরা নিজ দেশের মাটিতে বসে জেনেছেন বাংলাদেশে এসে তাদের দলের নাকাল হবার খবর । তাতে কি তারা তেঁতে নেই ?

যদিও অজি স্পিনার অ্যাস্টন অ্যাগার  জানিয়েছেন , ‘ বাংলাদেশের বিপক্ষে আমাদের হারটা একেবারে আলাদা উইকেটে। এখানে সব কিছু অন্যরকম হবে। আমাদের দলটাও আগের চেয়ে শক্তিশালী। বাংলাদেশ এখন খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তার মানে এই না যে তারা ফাইট ব্যাক করতে পারবে না। আমরা কাউকেই হাল্কাভাবে নিচ্ছি না। ‘

বাংলাদেশকে ‘হাল্কাভাবে’ না নেয়াই আসলে হুমকি । বোঝাই যাচ্ছে , অজিরা আগস্টের সিরিজের কথা ভোলে নি । সেটা বোঝা গেছে অ্যাগারের কথাতেও ,’ বাংলাদেশের মাটিতে কন্ডিশন ছিল একেবারেই ভিন্ন । বাংলাদেশের অমন কন্ডিশনে আমাদের অনেকেই হয়তো সেবারই প্রথম খেলেছিল। আমাদের জন্য সেটা ছিল চ্যালেঞ্জিং এবং সত্যি বলতে, ওই কন্ডিশনে বাংলাদেশ দারুণ খেলেছিল। ঘরের মাঠে তাদের অত ভালো পারফরম্যান্সে আমরা একটুও অবাক হইনি।  কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি আলাদা । ‘ 

দুই দলের ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায় , এখন পর্যন্ত টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটে নয়বার বাংলাদেশ আর অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি হয়েছে । যার মধ্যে পাঁচটি জিতেছে অস্ট্রেলিয়া । আর চার হারের সব কয়টি গেলো আগস্টে বাংলাদেশের মাটিতে । বিশ্বকাপের চার দেখায় বাংলাদেশের কাছে কখনও হারতে হয় নি অজিদের ।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নামতে পারছে না বাংলাদেশ পুরো শক্তি নিয়ে । সাকিব আল হাসান ছিটকে গেছেন আসর থেকে । ইনজুরিতে দলের সাথে থাকলেও নামা হচ্ছে না নুরুল হাসান সোহানের । এই দুইয়ের বদলী হিসেবেও কাউকে নিতে পারে নি বাংলাদেশ । টিম ম্যানেজমেন্টের ‘দুর্বুদ্ধিতায়’ আমিরাতে কোন রিজার্ভ খেলোয়াড় রাখে নি টাইগাররা । যার মাশুল এখন দিতে হচ্ছে ।

অজিদের বিপক্ষে দেখা যেতে পারে রুবেল হোসেনকে । আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে না খেলানো হলেও আজ ফেরানো হতে পারে মোস্তাফিজুর রহমানকেও। তবে যারাই থাকুক আজ একাদশে , অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শেষ ম্যাচটা লজ্জাজনক কিছু না হলেই হয় । হারতে হারতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া বাংলাদেশ দলের প্রতি এখন সবার একটাই প্রত্যাশা , হারলেও হারটা যেন একটু সম্মানজনক হয় !

আহাস/ক্রী/০০২