Download WordPress Themes, Happy Birthday Wishes

ওয়েস্ট ইন্ডিজ হারিয়েছে স্বর্ণযুগ

ক্রীড়ালোক প্রতিবেদকঃ

এক সময় ক্রিকেটে মহাশক্তিধর দেশ হিসেবেই সবার কাছে পরিচিত ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ । সেই ক্রিকেটে টি-টুয়েন্টির আগমন হয় নি । তবে টেস্ট আর ওয়ানডে ক্রিকেটে ক্যারিবিয়ানদের সাথে পাল্লা দেয়ার মত দল ছিল না । আইসিসি আয়োজিত প্রথম ওয়ানডে শিরোপা যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ঘরে । তৃতীয় আসরের ফাইনালে ভারতের কাছে হার এখনও ক্রিকেটের বড় বিস্ময় ।

টেস্ট ক্রিকেটেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছিল সেরাদের সেরা । ক্লাইভ লয়েড , ভিভ রিচার্ডস , মাইকেল হোল্ডিং , ম্যালকম মার্শাল, কোর্টনি ওয়ালশসের ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে দাঁড়াতে সেই সময় বুক কেঁপেছে যে কোন দলের । পরবর্তীতে ব্রায়ান চার্লস লারা হয়ে উঠেছেন ক্রিকেটের বরপুত্র । ওয়ানডে আর টেস্ট ক্রিকেটের বনেদী আঙ্গিনায় যিনি গড়েছেন রেকর্ডের পর রেকর্ড ।

এরপরেই আসে টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটের যুগ । ধুন্ধুমার ক্রিকেটের আগ্রাসী জনপ্রিয়তায় ক্রিকেট হয়ে ওঠে বানিজ্যের উপকরণ ।ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটাররাও নিজেদের ভাসিয়ে দেন সময়ের স্রোতে । ওয়ানডে আর টেস্ট ক্রিকেট হতে থাকে অবহেলিত । ক্রিস গেইল , ডুয়াইন ব্রাভো , আন্দ্রে রাসেলরা শাসন করতে শুরু করে টি-টুয়েন্টি ক্রিকেট । যার ফলশ্রুতিতে ড্যারেন স্যামির নেতৃত্বে ২০১২ এবং ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতে ক্যারিবীয়রা।

সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২০২১ সালের টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপেও ছিল হট ফেভারিট । কারণ এই দলে গেইল , রাসেলরা আছেন । যাদের টি-টুয়েন্টি অভিজ্ঞতা আর সক্ষমতা অন্য যে কারুর চেয়ে বেশী । কিন্তু বিশ্বকাপ শুরু হতেই দেখা গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের করুণ চেহারা । একের পর এক হারে সুপার টুয়েলভ পর্ব থেকেই ছিটকে গেছে দলটি ।

বৃহস্পতিবার (৫ নভেম্বর) শ্রীলঙ্কার কাছে ২০ রানে হেরে আসর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ । আসরের চার ম্যাচে কেবল বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় পেয়েছে গতবারের চ্যাম্পিয়নরা । শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জিতলেও সেমি ফাইনালে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের ।

অথচ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে ছিল অভিজ্ঞতার ছড়াছড়ি । দলের ডুয়াইন ব্রাভোর একার ক্যারিয়ারেই আছে সব মিলিয়ে ২০টি টি-টুয়েন্টি শিরোপা । কিছুদিন আগে দুবাইয়েই জিতেছে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে আইপিএল ট্রফি । দলের আরেক তারকা কেইরন পোলার্ডের নামের পাশে আছে ১৫ শিরোপা । এই দুই ক্যারিবিয়ান তারকার আছে পাঁচশোর বেশী করে টি-টুয়েন্টি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা । অন্যদিকে গেইল ৪৫২ টি-টুয়েন্টি ।

সর্বশেষ যে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হেরেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ , সেই দলের গোটা স্কোয়াডের সদস্যদের টি-টুয়েন্টি ম্যাচের সংখ্যা তিনশোর কিছু বেশী । অথচ খেলার মাঠে সেই শ্রীলঙ্কার কাছে হেরেই বিদায় নিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ।

কিছুদিন আগেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক গ্রেট বোলার কোর্টলি অ্যাম্ব্রোস জানিয়েছিলেন , ‘ ক্রিকেটে আর কখনও স্বর্ণযুগ ফিরবে না ওয়েস্ট ইন্ডিজের । ‘

বর্তমান ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের তরুণদের নিয়ে মোটেও আশাবাদি নন অ্যাম্ব্রোস। বর্তমান প্রজন্মকে দিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের সেরা সময়টা আর ফেরানো যাবে না বলে জানান তিনি।

অ্যাম্ব্রোস বলেন, ‘আমি বর্তমান প্রজন্মের প্রতি অশ্রদ্ধা দেখাচ্ছি না। এখনকার দলে দু’তিন জন আছে, যারা সত্যিই দক্ষ। সেরা হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু আমাদের একটা জিনিস বুঝতে হবে। সেই স্বর্ণযুগের ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আমরা আর কখনওই হয়তো দেখতে পাবো না।’

চলতি টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রমাণ মিলেছে অ্যাম্ব্রোসের কথার । এই দলে নতুন খেলোয়াড়রা নিজেদের মেলে ধরতে পারেন নি । গেইল , রাসেল আর পোলার্ডদের বয়স হয়েছে । অথচ তাদের দিকেই তাকিয়ে বিশ্বকাপে গেছে ক্যারিবিয়ানরা । যারা বয়সকে হারিয়ে সেরাটা দিতে পারেন নি , আর ব্যর্থ হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল ।

এছাড়া পূর্বসূরি ড্যারেন স্যামির মত অধিনায়ক হিসেবে বিচক্ষনতা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন পোলার্ড । দলকে তিনি করতে পারেন নি অনুপ্রাণিত । শিমরন হেটমেয়ার , এভিন লুইস আর নিকোলাস পুরানদের মধ্যে ধারাবাহিকতার ভীষণ অভাব । তবে তাদের ক্ষমতা নিয়ে কারো সন্দেহ নেই ।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ খেলা নিয়ে মোটেও সিরিয়াস না হওয়া । এটা অবশ্য নতুন কিছু না । ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্রায়ান লারা আর ভিভ রিচার্ডসদের মধ্যেও একটা উদাসিন আভিজাত্য ছিল সব সময় । এটা বুঝি তাদের রক্তের মধ্যেই ।

শুধু অভিজ্ঞতা দিয়ে যে ম্যাচ জেতা যায় না , সেটার প্রমাণ দিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ । যে কারণে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হারের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক পোলার্ড জানিয়েছেন , ‘ আমরা ভেবেছিলাম , দলের খেলোয়াড়দের অভিজ্ঞতা আমাদের এগিয়ে নেবে । কিন্তু সেটা হয় নি । আমাদের সব কিছু নতুন করে ভাবতে হবে । ‘

আহাস/ক্রী/০০১