Download WordPress Themes, Happy Birthday Wishes

তারাই সম্ভাবনার আকাশে উজ্জ্বল তারকা

আহসান হাবীব সুমন/ক্রীড়ালোকঃ

গত এক যুগের বেশী সময় ধরে ফুটবল বিশ্বকে শাসন করেছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো আর লিওনেল মেসি । এই সময়ে বিশ্বসেরার প্রায় সব ব্যক্তিগত পুরস্কার ভাগাভাগি করে নিয়েছেন এই দুই মহান ফুটবলার । মাঝেমাঝে নেইমার জুনিয়র , ফ্রাংক রিবেরি , লুইস সুয়ারেজ কিংবা আরিয়েন রোবেনরা চেষ্টা করেছেন এই দুইয়ের প্রতিপক্ষ হতে । কিন্তু শেষ পর্যন্ত আসলে রোনালদো কিংবা মেসিকে হারাতে পারেন নি কেউই ।

তবে গত বছর তিনেক ধরে দেখা যাচ্ছে ব্যতিক্রম । ২০১৮ সাল থেকে রোনালদো আর মেসিকে শক্ত চ্যালেঞ্জ জানাতে শুরু করেছেন মোহাম্মদ সালাহ , লুকা মদ্রিচ , কিলিয়ান এমবাপ্পে , নেইমার জুনিয়র আর হালে রবার্ট লেভেন্ডস্কি । এর মধ্যে রোনালদো আর মেসির রাজত্বে হানা দিয়ে ২০১৮ আর ২০২০ সালের বিশ্বসেরা ফুটবলারের তকমা জিতেছেন মদ্রিচ এবং লেভেন্ডস্কি ।

সাম্প্রতিক বিশ্ব ফুটবলের চালচিত্র দেখে অনেকের মনেই প্রশ্ন , তাহলে কি দিন ফুরিয়ে আসছে রোনালদো আর মেসির ? শেষ হচ্ছে দুই মহারথীর যুগ । সেটা এখনও অবশ্য বলা যাচ্ছে না । কারণ ৩৬ বছর বয়সেও রোনালদো মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন টগবগে তরুণের মত । তিনি খেলতেও চান কমপক্ষে চল্লিশ পর্যন্ত । অন্যদিকে ৩৩ বসন্ত পেরিয়ে আসা মেসির খেলায় কিছুটা ভাটার টান দেখা যাচ্ছে । তবে তিনিও যে ঘুরে দাঁড়াবেন না , সেটা কে বলতে পারে !

অবশ্য রোনালদো আর মেসির বয়স এখন তাদের পক্ষে নেই । খুব বেশী হলে আর চার থেকে পাঁচ বছর হয়ত মাঠে দেখা যাবে তাদের , সাধারণ ধারণা এটাই বলে । তারপর কি হবে ? কে নেবে তাদের ফুটবল বিশ্বের রাজভার ? এই ক্ষেত্রে নেইমার , এমবাপ্পের সাথে সালাহ , লেভেন্ডস্কি ভাল করছেন । আর উঠে আসছেন একঝাঁক তরুণ ফুটবলার , যারা গত দুই বছরে নিজেদের প্রতিশ্রুতিশিল ফুটবলার হিসেবে ইতোমধ্যে জাত চিনিয়েছেন । অনেকেই এসব ফুটবলারের মধ্যে খুঁজে পাচ্ছেন আগামী দিনের বিশ্বসেরার ছায়া ।

আর্লিং হাল্যান্ডের কথাই ধরা যাক । নরওয়ের এই তরুণের বয়স মাত্র ২০ বছর । ২০১৯-২০ মৌসুম থেকেই তিনি বিশ্বের অন্যতম আলোচিত স্ট্রাইকার । বিগত উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে করেছেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১০ গোল । যার মধ্যে অস্ট্রিয়ার রেড বুলের হয়ে গ্রুপ পর্বে গোল করেছিলেন আটটি । আর জানুয়ারিতে বুরুশিয়া ডর্টমুণ্ডের হয়ে দুইটি । ডর্টমুণ্ড নক আউট পর্ব পেরুতে পারলে হাল্যান্ডের গোল আরও বেশী হত , সন্দেহ নেই । ২০১৯-২০ মৌসুমে রেড বুল আর বুরুশিয়ার হয়ে হাল্যান্ড গোল করেছেন ৪০ ম্যাচে ৪৪টি । চলতি মৌসুমেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ছয়টিসহ সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে হাল্যান্ডের গোলের সংখ্যা ইতোমধ্যে ১৪ ম্যাচে ১৭টি ।

২০২০ সালের জানুয়ারিতে মাত্র ২২ মিলিয়ন ইউরোতে রেড বুল থেকে হাল্যান্ডকে কিনেছিল ডর্টমুণ্ড । তার সাথে জার্মান ক্লাবের চুক্তি আছে ২০২৪ পর্যন্ত । যদিও এখনই তাকে পাওয়ার জন্য রিয়েল মাদ্রিদের মত বড় ক্লাব ধর্না দিচ্ছে । কিন্তু ‘ট্র্যান্সফারমার্কেট’ গবেষণা জানাচ্ছে , নরওয়ের তরুণ ফরোয়ার্ডকে নিতে এখন যে কোন দলকে খরচ করতে হবে কমপক্ষে ১০০ মিলিয়ন ইউরো । অর্থাৎ এক মৌসুমেই হাল্যান্ডের দাম বেড়েছে চারগুণ । আসলে নিজের পারফর্মেন্স দিয়ে সেটা নিজেই বাড়িয়েছেন হাল্যান্ড ।

আগামী বিশ্বের সেরা ফুটবলার হিসেবে উঠে আসছে আনসু ফাতির নাম । ইতোমধ্যেই বার্সেলোনার হয়ে ঝড় তুলেছেন তিনি । মাত্র ১৮ বছর বয়সের এই তরুণ উইঙ্গারের খেলায় মুগ্ধ হবার মত মানুষের অভাব নেই । আর হবে নাই বা কেন , ২০১৯-২০ মৌসুম থেকে যখনই মাঠে নামার সুযোগ পেয়েছেন ফাতি; গড়েছেন বিস্ময়কর কীর্তি । মাত্র ১৬ বছর ২৯৮ দিনের মাথায় বার্সেলোনায় দ্বিতীয় কনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে পেশাদার ফুটবলে অভিষেক হয় তার । ছয়দিন পরেই বার্সার জার্সিতে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে গড়েন গোল করার ইতিহাস । পরবর্তীতে বার্সার ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে একই ম্যাচে গোল আর এসিস্টের রেকর্ড গড়েন । ১৭ বছর ৪০ দিন বয়সে ইন্টার মিলানের বিপক্ষে গোল করে হয়ে যান চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ইতিহাসের সবচেয়ে কমবয়সী গোলদাতা ।

এখন পর্যন্ত বার্সার হয়ে ৪৩ ম্যাচে ১৩ গোল করা ফাতি আফ্রিকার গিনিতে জন্ম নেন । কিন্তু বেড়ে ওঠা তার স্পেনে । এমন একজন ‘সোনার-টুকরো’ হাতছাড়া করেন স্পেন । তাই তো লা রোজাদের হয়ে আন্তর্জাতিক চারটি ম্যাচ খেলেও ফেলেছেন তিনি ।

ইতোমধ্যেই বার্সেলোনা জানিয়ে দিয়েছে , আনসু ফাতি বিক্রির জন্য না । মজার ব্যাপার হচ্ছে , আগামী মৌসুমে মেসিকে ছাড়তে রাজি হলেও ফাতিকে কিছুতেই হাতছাড়া করবে না বার্সা । এতেই বোঝা যায় , বার্সার মত দলে এখন ফাতির প্রভাব কতটা । অনেকেই বার্সায় ভবিষ্যতে মেসির মত সফলতা দেখতে চান ফাতিকে ঘিরে ।

১৮ বছরের পেদ্রির মধ্যেও সম্ভাবনা দেখছেন অনেকে । এই এটাকিং মিডফিল্ডার খেলেন বার্সেলোনাতে । চলতি মৌসুমেই মাঠে নেমেছেন সব মিলিয়ে ১৯ ম্যাচে , করেছেন একটি গোল । ইতোমধ্যে কোচ রোনাল্ড কোম্যানের ভরসা অনেকটাই জিতে নিয়েছেন তিনি । বার্সেলোনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় পেদ্রি আছেন অনেকটা জায়গা জুড়ে ।

২০ বছরের আলফান্সো ডেভিস খেলছেন এই মুহূর্তে বিশ্বসেরা ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখে । ঘানায় জন্ম নেয়া এই ফুটবলার ক্যানাডার নাগরিক , খেলেন ক্যানাডার জাতীয় দলে । একাধারে লেফট-ব্যাক আর উইঙ্গার হিসেবে খেলায় পারদর্শী । রয়েছে সমানে উপরে-নীচে ওঠানামা করে খেলার সক্ষমতা । পারেন প্রতিপক্ষের আক্রমণ রুখতে , আবার নিজ দলের আক্রমণ গড়ে দিতে । ইতোমধ্যে তাকে বিশ্বের সবচেয়ে কার্যকরী লেফট-ব্যাক হিসেবে বিবেচনা করা শুরু হয়ে গেছে । সুযোগ পেয়েছেন বার্সেলোনার জর্দি আলবা আর লিভারপুলের এন্ড্রু রবার্টসনকে টপকে উয়েফার সর্বশেষ বর্ষসেরা একাদশে ।

বায়ার্নের মত বিশ্বসেরা দলের নিয়মিত সদস্য হিসেবে সব মিলিয়ে ৬০ ম্যাচে চারটি গোলও করেছেন ডেভিস । তাকেও আগামী দিনের বড় তারকা বা সেরাদের একজন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে । এক বছর আগে ডেভিসের ট্র্যান্সফার-মার্কেটে যা মুল্য ছিল , এখন সেটা দ্বিগুণ হয়ে ৮০ মিলিয়নে দাঁড়িয়েছে । তাতেও বায়ার্ন তাকে বেচবে কিনা সন্দেহ আছে ।

এইতো গেলো কয়েকজন তরুণ খেলোয়াড়দের কথা , যারা এখনও একুশ পেরুয় নি । তাদের হয়ত বিশ্বসেরা হতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে , টিকেও থাকতে হবে । তবে এদের বাইরে এমবাপ্পে আলাদা । মাত্র ২২ বছর বয়স হলেও তিনি এখনই গন্য হচ্ছেন বিশ্বসেরাদের একজন হিসেবে ।

এদের বাইরে তরুণদের মধ্যে জেডন সাঞ্চো , রদ্রিগো , হোয়াও ফেলিক্স ,ভিনিসিয়াস জুনিয়র , আর্থার মেলো , কিয়েসা ,  কাই হাভার্তজদের মধ্যে বিশ্বসেরা না হলেও বড় খেলোয়াড় হবার সব সম্ভাবনা আছে ।

আবার ২৫ পেরিয়ে যারা সেরাদের কাতারে উঠে আসার সম্ভাবনায় আছেন , তাদের মধ্যে অনেকেই এখনই সুপারস্টার । যেমন- বেলজিয়ামের কেভিন ডি ব্রুইন , ইংল্যান্ডের রাহিম স্টারলিং আর ট্রেন্ট অ্যালেক্সান্ডার আর্নল্ডরা উঠে আসতে পারেন সেরাদের কাতারে ।

এটা আসলে আনুমানিক একটা আলোচনা , আর অবশ্যই বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে । রোনালদো আর মেসিরা এত সহজে জায়গা ছাড়বেন , সেটাও বলার উপায় নেই । আবার ছাড়লেও তাদের মত টানা যুগ ধরে সেরা হিসেবে জায়গা ধরে রাখার সম্ভাবনাও অতীত সমর্থন করে না । ফর্মহীনতা আর ইনজুরি মিলিয়ে রোনালদিনিও , রোনাল্ডো নাজারিও , রবিনহো , মাইকেল ওয়েন , গ্যারেথ বেলদের সম্ভাবনা মাটি করে দিয়েছে । উল্লিখিত প্রথম তিনজন তবু দেশ,ক্লাব আর ব্যক্তিগতভাবে অল্প সময় হলেও ফুটবল বিশ্ব শাসন করেছেন । কিন্তু বাকীরা তো নিজেদের সেরা সময়েই বারবার পড়েছেন ইনজুরিতে । অধুনা নেইমার জুনিয়র আর ইডেন হ্যাজার্ড যেমন ভুগছেন । তাই আজ থেকে কয়েক বছর পর এদের মধ্যে কে বা কারা টিকে থাকবেন সেরাদের একজন হয়ে সেটা বলা মুশকিল । আবারও তাদের টপকে নতুন কেউ হয়ত ধুমকেতুর মত উদয় হবেন , এমন সম্ভাবনাও হিসেবের মধ্যে রেখে দিলাম ।

আহাস/ক্রী/০০১