
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাস। এই প্রসঙ্গে নানা ধরণের ধারভাষ্য রেখে পাঠকশ্রেণির মন জয় করা যাবে। যেমন, অতি প্রতিভাধর হয়েও বাংলাদেশ দলের জন্য সেরাটা দিতে পারেন নাই, সে রকম নাম আল শাহরিয়ার রোকন। একটা সময় রোকন এবং নাইমুর রহমান দুর্জয়কে নিয়ে ক্রিকেট ভক্তদের অন্য রকম একটা উচ্ছ্বাস ছিল। ধরে নেয়া হত, বিকেএসপি হতে আসা এই দু’জন থামবেন কোথায় ? রোকন এর ভাগ্য কিংবা রাশি ভাল না হলেও দুর্জয় ঠিকই সফল হয়েছিলেন।
দুর্জয়, অলরাউন্ডার বলেই হয়তো সফল। তারপরেও তাঁর ক্যারিয়ার দীর্ঘায়িত হয় নাই। চওড়া হয় নাই। কথিত আছে, তাঁর আরো কিছু বছর খেলার সামর্থ্য ছিল। তা সেটা উঁচু শ্রেণির ক্রিকেটেই। তবে তা হয় নাই। হয়তো রাজনৈতিক কারণে। তা নিয়েও কথা চাউর আছে। দুর্জয় তাই পরবর্তীতে রাজনৈতিকভাবেই জবাব দিতে পেরেছেন। এটিও নির্মম সত্য। কারণ, টিম বাংলাদেশ গঠনে তথা আজকের বাংলাদেশ ক্রিকেট দল তো একদিনে গড়ে ওঠেনি। সেখানে দুর্জয় সাধারণ দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট ছিলেন। এদিকে বন্ধু রোকন তাই হারিয়ে গেলেও দুর্জয়ের পথচলা ঠিকই ছিল। তিনি বঙ্গবন্ধুকে সামনে রেখে একজন শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতেই মাতৃভুমি মানিকগঞ্জকে ভুলতে পারেন নি। মন পড়ে ছিল মানিকগঞ্জেই।
এদিকে যে মানিকগঞ্জে একদিন সুফী দরবেশ মানিক শাহের অলৌকিক আবির্ভাব হয়েছিল, তাঁর বলয় ঘিরে কথিত আছে, তাঁর নামেই মানিকগঞ্জ জেলার নাম। আবার অনেকেই বলে থাকেন, সরদার মানিক ঢালীর নামেই এই এলাকার নাম মানিকগঞ্জ। আবার রাজনৈতিক ইতিহাসের আদ্যপান্ত তুলে ধরতে গেলে নবাব সিরাজ উদ-দৌলার শাসন বিলুপ্তির অন্যতম ঘাতক হিসাবে পরিচিত মানিক চাঁদের প্রতি ইংরেজদের কৃতজ্ঞতায় ‘মানিকগঞ্জ’ নাম প্রতিষ্ঠিত—– অনেকেই বলবেন। সঙ্গত কারণেই ইতিহাসের মধুর ও কদর্যের পাতায় চোখ বুলিয়ে স্বস্তিও যেমন ধরা দেয়, আবার কায়ক্লেশে বেড়ে উঠেও অশুভ অপশক্তির উপস্থিতিও ধরা দেবে। যৌক্তিক কারণে ভাল ও মন্দ উভয়ের বসতি গড়ে উঠবেই, আর তোমাকে যন্ত্র হয়ে সমাজকেও রুখতে হবে, আবার প্রকৃতির মানুষ হয়ে স্রষ্টার বন্দনায় যেতে হবে। গভীর বাস্তবতায় দুর্জয় যেমন আজ মানিকগঞ্জের আদৃত নাম, ঠিক একইভাবে আজো মানিক চাঁদেরাও তাঁর আশপাশেই আছে। এটিই প্রকৃতির বিচার।

করোনা সংক্রমণে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের মাঝে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক, বিসিবি পরিচালক ও মানিকগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য নাইমুর রহমান দুর্জয়
বাংলাদেশের একজন দার্শনিক বলেছেন, “সমাজ হল অনেকটা শয়তানের মত, তোমাকে হারাতে চায়, আবার তুমি জিতে গেলে, সেই সমাজই পথ খুঁজে পায়।” দেশের সাবেক ক্রিকেটার, অধিনায়ক, রাজনীতিক ও সংগঠক নাইমুর রহমান দুর্জয়কে এখন প্রমাণ করতে হবে, তিনি সঠিক কক্ষপথেই আছেন। এমনিতেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তারুণ্য নির্ভর রাজনীতির ছাউনিতে বেশ কয়েকজন উজ্জ্বল নাম ফুলের মত সুবাস ছড়ায়। সর্বশেষ নামটিও আরেকজন কালজয়ী ক্রিকেটার। নাম মাশরাফি বিন মোরতজা। দেশের অপর গ্রেট সাকিব আল হাসানও চান, একজন শেখ হাসিনার আদর্শে অনুরণিত হয়ে সঁপে দিয়ে দেশের জন্য কিছু করতে। এই ধারাবাহিকতায় ক্রিকেট থেকে আসা প্রথম নামটা হল নাইমুর রহমান দুর্জয়। মানিকগঞ্জের একটা রাজনৈতিক- সাংস্কৃতিক সমন্বয় আছে। এটি এক ধরণের ইতিহাস। জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল কে এই মানিকগঞ্জ থেকে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়ে সংসদে যেতে দিতে চেয়েছে। পল্লী মেঠো গানের সুর সম্রাজ্ঞী মমতাজকেও আওয়ামী লীগ সম্মান করে আসছে। মানিকগঞ্জ তাই যেন সাংস্কৃতিক আধিপত্যবাদকে পরিচিত করায়। এমন ঐতিহাসিকতায় নতুন সংস্কৃতির উদাহরণ, দেশে খুবই কম। দুর্জয়ের কাছে তাই অগণিত জনশ্রেণির প্রত্যাশ্যা রয়েছে। সেই প্রত্যাশায় মানিকগঞ্জের ক্রীড়া যেন সেরা পর্যায়ে থাকে, তেমন দাবীতে মুখরিত সকলেই। জ্যেষ্ঠ শ্রেণির ইচ্ছে, মানিকগঞ্জ যেন মাদকমুক্ত একটি শহর হিসাবে প্রজন্মকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। দুর্জয় তা অনুভব করেন। লড়ে যাচ্ছেন। তবে সমসাময়িক উদ্ভুত পরিস্থিতিকে পদ্মার জলে নিক্ষেপ করতে তাঁকে তাঁর সেরাটা দিতে হবে। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের সকল পর্যায়ের জেলা প্রতিনিধিবর্গ কোভিড-১৯ এর মহামারীকে উপেক্ষা করে দুর্জয়ের পাশে এসে বলতে চেয়েছে, তুমি তোমার মত করেই এগিয়ে যেতে থাকো, আমাদের নৈতিক সমর্থন তোমার উপরে আছে।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জয় মানিকগঞ্জ শ্লোগানে থেকে একজন নাইমুর রহমান দুর্জয়ের দায়িত্ব বাড়ছে। পথচলা বন্ধুর হবে। সেই পথের পথিক হয়েই তাঁকে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা, একজন বিশ্বনেত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগকে রঙ্গীন করতে সমাজের জীর্ণ ঘুণে ধরা দ্বারকে আঘাত করে নতুন এক প্রকৃতিকে খুঁজতে হবে। যেভাবে ক্রিকেটে রঙ্গীন পোশাকে আবৃত থেকে আমার সোনার বাংলা সঙ্গীতকে ধারণ করে গাইতে হত। আসলে তো ওই সুর ধরে কার্যত শপথ নিতে হত দুর্জয়দের। সেই শপথ সংসদীয় গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় যেয়ে মহান জাতীয় সংসদেও নেয়া হয়েছে। একজন দুর্জয়ও এই দেশের কিশোরদের ‘আদর্শ’ হয়েছিলেন। সেটি সাংস্কৃতিক বাস্তবতায়। ক্রিকেট খেলে। আর আজ ? জাতি বিনির্মাণে তাঁকে আদর্শ হতে হবে। কাদের জন্য ? প্রজন্মের জন্য। পূর্বসূরিকে ছাপিয়ে যেয়ে যেন নাইমুর রহমান দুর্জয়কে দেখে সব্বাই বলতে থাকেন, দুর্জয়ের বাবা অধ্যক্ষ সায়েদুর রহমান ছিলেন। এমন উদাহরণ সৃষ্টি করতে দুর্জয় তাই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সে কারণেই তাঁর পথচলা যাতে করে মসৃণ না হয়, বাঁধা আসছে, আসবে। সেটিকে মোকাবেলা করেই দুর্জয়কে আকাশ দেখতে হবে, দেখতে হবে দেশের হতদরিদ্র মানুষের চেহারাকে। প্রকৃতির এক অদম্য সত্তা হয়ে ক্রীড়া সংগঠক এর ভুমিকায় যেয়ে সফলতার সেরা নির্যাসটুকু তাঁর কাছ হতেই আসবে বলে বাজি ধরা যায়। বাংলার ঘরে ঘরে নান্নু, আকরাম, বুলবুল, দুর্জয় হয়ে আজকের সাকিব ও তামিমেরা বার বার করে চিনিয়ে যাক আমাদের ক্রিকেটের জাতকে। আর ঢাকার অদূরে সেই মানিকগঞ্জ যেন দুর্জয়ের হাত ধরে স্বর্ণময় এলাকা হিসাবে গড়তে পারে, সেই প্রত্যাশাটাই করে বাংলাদেশ।
চলবে…
আগামীকাল থাকছে তৃতীয় পর্ব