Download WordPress Themes, Happy Birthday Wishes

বাছাইপর্ব বাদ দিয়ে বিশ্বকাপ ফুটবল !

ক্রীড়ালোক প্রতিবেদকঃ

বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের সর্ববৃহৎ আসর গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক । তবে জনপ্রিয়তার দিক থেকে ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবলকে টেক্কা দিতে পারবে না কেউ । ‘গ্রেটেস্ট শো অন দা আর্থ’ খ্যাত বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে মেতে ওঠে না , এমন দেশ খুঁজে পাওয়া অসম্ভব । চার বছর অন্তর আয়োজিত বিশ্বকাপ ফুটবলের মুল আসরের সময় সারা বিশ্ব জুড়েই বিরাজ করে এক উৎসবের আমেজ ।বিশ্বকাপের মুল মঞ্চে সুযোগ পাওয়া দেশগুলোর সাথে সাথে বাংলাদেশ , ভারত কিংবা উগান্ডার মত কখনও সুযোগ না পাওয়া দেশের ভক্তরাও বুঁদ হয়ে থাকে ফুটবল উত্তেজনায় । এখানেই বিশ্বকাপ ফুটবলের মাহাত্ম্য ।

কিন্তু বিশ্বকাপ ফুটবল আসরের চ্যাম্পিয়ন দল আসলেই কি বিশ্বসেরা ? সার্বিক বিশ্লেষণে এই কথা সব সময় সত্যি নাও হতে পারে । সেটা কিভাবে ?

বিশ্বকাপ ফুটবলের শিরোপা জেতা দলটি চার বছর পায় বিশ্বচ্যাম্পিয়নের সম্মান । একটি আসরের শিরোপা জয়ের পর আরেকটি আসর পর্যন্ত তারাই বিবেচিত হবে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হিসেবে । যেমন-২০১৮ সালের বিশ্বকাপজয়ী ফ্রান্স ২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপ অবধি স্বীকৃত হবে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হিসেবে । কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে , বিশ্ব ফুটবলের শাসক সংস্থা ‘ফিফা’র দেয়া র‍্যাংকিংয়েই ফ্রান্স নেই শীর্ষস্থানে । তাদের পেছনে ফেলে বিশ্বকাপের আগে থেকেই ফিফা র‍্যাংকিংয়ের এক নাম্বার স্থান দখল করে আছে বেলজিয়াম ।

অন্যদিকে সর্বশেষ বিশ্বকাপ আসরের ফাইনাল খেলায় ক্রোয়েশিয়া তো বিশ্বের দ্বিতীয় শক্তিধর ফুটবল দেশ । কিন্তু আসলেই কি তাই ? ক্রোয়েশিয়া তো এই মুহূর্তে ফিফা র‍্যাংকিংয়ে অবস্থান করছে ছয় নাম্বারে !

বোঝাই যাচ্ছে , বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন আর রানার্স-আপ দল হলেও ফ্রান্স এবং ক্রোয়েশিয়া ফিফা র‍্যাংকিংয়ে শীর্ষ দুটি স্থানে নেই ।

আসলে বিশ্বকাপ ফুটবলের মুল আয়োজনের নিয়মটাই গোলমেলে । ফিফার নীতি হচ্ছে , বিশ্বকাপের মুল মঞ্চে প্রতিটা মহাদেশের দল থাকবে । সেই লক্ষ্য পূরণ করতে গিয়েই আসলে বিশ্বকাপ হয়ে ওঠে নি সেরাদের আসর । কারণ ফুটবল শক্তির বিচারে পৃথিবীর সব অঞ্চল সমান নয় । ইউরোপ আর ল্যাটিন আমেরিকার চেয়ে অনেক পিছিয়ে আফ্রিকা , এশিয়া , উত্তর আমেরিকা আর ওশেনিয়া অঞ্চলের দেশগুলো । যে কারণে এই অঞ্চলের কোন দেশকে আজ পর্যন্ত বিশ্বকাপের ফাইনালে দেখা যায় নি । এইসব অঞ্চল থেকে নিজেদের মাটিতে ২০০২ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার সেমি ফাইনালে খেলাই সবচেয়ে বড় সাফল্য । নইলে বিশ্বকাপ ফুটবলের মুল মঞ্চে সেরা চারটি স্থান কিন্তু ইউরোপ আর ল্যাটিনের জন্য বরাদ্দ ।

বিশ্বকাপ ফুটবলের মুল মঞ্চে এখন স্বাগতিক ছাড়া প্রতিটা অঞ্চলকে পেরিয়ে আসতে হয় বাছাই পর্ব । সেটা আবার মহাদেশভিত্তিক অর্থাৎ এখানে রয়েছে নির্দিষ্ট কোটা পদ্ধতি । যে কোটার সুযোগে বিশ্বকাপে চলে আসে অনেক দুর্বল দেশ । সর্বশেষ রাশিয়া বিশ্বকাপেই র‍্যাংকিংয়ে অনেক পিছিয়ে থাকা সৌদি আরব আর প্যানামা সুযোগ পেয়ে গেছে মুল আসরে ।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে , প্যানামা আর সৌদি আরব কি সত্যি বিশ্বের সেরা দলগুলোর সাথে প্রতিযোগিতার যোগ্য ছিল ? অন্তত শক্তির বিচারে । সবাই এক কথায় এই প্রশ্নের উত্তর নেতিবাচকই দেবেন । বরং এসব দলের বদলে র‍্যাংকিং আর শক্তির বিচারে এগিয়ে থাকা ইটালি , হল্যান্ড কিংবা চিলি যদি বিশ্বকাপে সুযোগ পেত , তাহলে আসর হত অনেক বেশী আকর্ষণীয় আর প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ।

অনেকেই অবশ্য বলতে পারেন , ইটালি-হল্যান্ড আর চিলি বিশ্বকাপ বাছাই পেরুতে পারে নি এটা তাদেরই ব্যর্থতা । অবশ্যই এটা তাদের ব্যর্থতা । কিন্তু বুঝতে হবে , একই মানের শক্তিশালী আর বিশ্ব পর্যায়ের দল থাকায় তাদের বাদ পড়তে হয়েছে কঠিন সমীকরণে । অন্যদিকে নিজেদের অঞ্চলের শক্তির সাথে লড়াই করে বিশ্বমানের বিচারে অপেক্ষাকৃত দুর্বল দলের সাথে খেলেই বিশ্বকাপের মুল মঞ্চে সুযোগ পেয়েছে সৌদি আরব আর প্যানামার মত দল । যে সুযোগটা প্রতি আসরেই পায় একাধিক দল । অথচ এদের ম্যাচগুলো নিয়ে দর্শক আগ্রহ তেমন থাকেই না । দুই একটি অঘটন ছাড়া এসব কোটাভিত্তিক দল বিশ্বকাপে আসে শুধু ‘অংশ নেয়ার জন্য’ই ।

এই সমস্যা সমাধানে আর বিশ্বকাপের মুল আসরকে সত্যিকার সেরাদের লড়াই হিসেবে পরিনত করতে ফিফা কি করতে পারে ? করতে পারে অনেক কিছুই । হালে যেমনটা করছে ইউরোপের ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা ‘উইয়েফা’ । তারা সেরা শুরু করেছে উইয়েফা নেশন্স লীগ । ইউরোপের সেরা দলগুলোকে নিয়ে কয়েকটি ভাগে গেল বছর অনুষ্ঠিত হয়েছে নেশন্স লীগ । র‍্যাংকিংয়ের সেরা ১২ দলকে রেখেছে শিরোপা লড়াইয়ের জন্য । বাকীরা খেলেছে বিভিন্ন বিভাগে । তাতে সত্যিকার সেরাদের মধ্যেই হয়েছে শিরোপা লড়াই । আবার প্রতিটা বিভাগ থেকে আছে রেলিগেশনের নিয়ম । অর্থাৎ পারফর্মেন্স ধরে রাখতে না পারলে কেউ কেউ চলে নীচের দিকের লড়াইয়ে । আর ভাল করলে পুরস্কার হিসেবে উপরের দিকে উঠে আসার সুযোগ তো থাকছেই ।

ফিফাও তেমনটা করতে পারে । চার বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর যারা র‍্যাংকিংয়ের সেরা ৩২ পজিশনে থাকবে , তাদের নিয়েই অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বকাপের মুল প্রতিযোগিতা । সেই ক্ষেত্রে প্রতিটা দেশের মধ্যে বাড়বে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার প্রবণতা আর সৃষ্টি হবে প্রতিযোগিতার অন্যমাত্রা ।

এই ক্ষেত্রে র‍্যাংকিং বাড়াবার স্বার্থে অনেক দেশই হয়ত অপেক্ষাকৃত দুর্বল দেশের সাথে বেশী বেশী আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার ঝুঁকবে । এমনটা হলেও কিন্তু খারাপ হবে না । কারণ তাতে বড় দেশগুলোর সাথে খেলার সুযোগ পাবে দুর্বল দেশ । এতে পিছিয়ে থাকা দেশগুলো পাবে নিজেদের সমৃদ্ধ করার একটা প্ল্যাটফর্ম । যেমন- বাংলাদেশ কিংবা ভারতের মত দেশ সহজে সুযোগ পায় না ইউরোপ আর ল্যাটিনের সাথে খেলার । র‍্যাংকিং পদ্ধতিতে বিশ্বকাপ চালু হলে সেই সুযোগ এসে যেতে পারে অনেক সময় ।

র‍্যাংকিং পয়েন্ট বিশ্বকাপের মুল মঞ্চে খেলার যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হলে , ফিফাকেও করতে হবে কিছু বিশেষ নিয়ম । যেমন- চার বছরে প্রতিটা দেশের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যার ম্যাচ আর কোন অঞ্চলের সাথে কতটি , সেটা নির্ধারণ করে দিতে পারে ফিফা । সেই ক্ষেত্রে ইচ্ছেমাফিক শুধু দুর্বল দলের সাথে খেলার প্রবণতার পথ বন্ধ হবে ।

আর প্রতিটা মহাদেশের অংশ নেয়াই যদি হয় মুল উদ্দেশ্য , তাহলে স্বাগতিকদের সাথে সব মহাদেশীয় চ্যাম্পিয়নদের সরাসরি বিশ্বকাপের মুল মঞ্চে খেলার সুযোগ উন্মুক্ত করে দিতে পারে ফিফা । তাতেই প্রতিটা মহাদেশের কোটা পূরণ হবে । অর্থাৎ ছয় মহাদেশের ছয় সেরার সাথে স্বাগতিক দল মিলিয়ে মোট সাতটি দেশ পাবে বিশ্বকাপের মুল মঞ্চে খেলার সুযোগ । বাকী দেশগুলো সুযোগ পাবে র‍্যাংকিংভিত্তিতে । তাতেই বিশ্বকাপের মুল মঞ্চ হয়ে উঠবে অনেক বেশী শক্তিশালী আর আকর্ষণীয় ।

এতক্ষণ যা আলোচনা করা হল , তা স্রেফ আলোচনাই । অবশ্যই ফিফা’র পরিকল্পনা নয় । তবে এমন পথে হাঁটলে সত্যিকার অর্থেই সব মহাদেশের অংশগ্রহণে একটি শক্তিশালী বিশ্বকাপ আয়োজন সম্ভব , তাতে কোন সন্দেহ নেই ।

যদিও এমন পরিবর্তন ফিফা চাইলেও হুট করে করতে পারবে না । সেটার জন্য সময় প্রয়োজন । প্রয়োজন অন্যসব মহাদেশীয় ফেডারেশনের সম্মতি । যা সহজে মিলবে বলে মনে হয় না । কারণ দিনদিন প্রতিটা মহাদেশ থেকে বিশ্বকাপের মুল মঞ্চে নিজেদের সদস্য বাড়াবার দাবী প্রবল হচ্ছে । আর সেটা সেই কোটা পদ্ধতিতে । যে কারণে এক সময়ে ১৬ দলের বিশ্বকাপ ২৪ থেকে পরিনত হয়েছে ৩২ দলের আসরে । সেটাকে আবার চলছে ৪৮ দলের টুর্নামেন্টে পরিনত করার পায়তারা । এমন হলে বিশ্বকাপের মুল মঞ্চে প্রবেশ করবে আরও দুর্বল দল । ফলে গ্রুপ পর্বের খেলাগুলো হয়ে যাবে আরও বেশী পানসে । যা মোটেই কাম্য না ।

এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বকাপের মর্যাদা ধরে রাখতেই ফিফাকে সত্যিকারের শক্তিশালী দলগুলোর মুল আসরে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে । সেই ক্ষেত্রে অঞ্চলভিত্তিক বাছাইকে পরিহার করা ছাড়া আসলে কোন উপায় নেই ।

আহাস/ক্রী/০০১