Download WordPress Themes, Happy Birthday Wishes

ফুটবলের বিতর্কিত ‘রাজা’ পেলে !

আহসান হাবীব সুমন/ক্রীড়ালোকঃ

বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসে অন্যতম সৌভাগ্যবান খেলোয়াড় পেলে । বিশ্ব ফুটবলের শাসক সংস্থা ‘ফিফা’র বিবেচনায় প্লেয়ার অফ দা সেঞ্চুরিও তিনি । অনেকেই তার নামের সাথে যোগ করেন ‘ফুটবলের রাজা’ বিশেষণ । কিন্তু আসলেই কি ‘ফুটবলের রাজা ‘ পেলে ?

একটা সময় সর্বকালের সেরা ফুটবলার হিসেবে পেলের নাম ব্যাপকভাবে উচ্চারিত হলেও , দিন যত গড়াচ্ছে , এই নিয়ে বাড়ছে বিতর্ক । যার শুরুটা মুলত করেন আর্জেন্টিনার দিয়াগো ম্যারাডোনা । আর বর্তমান সময়ের দুই মহারথী ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো এবং লিওনেল মেসির তুলনায় পেলে যেন ক্রমশ ফিকে হয়ে আসছেন । যদিও ২০০০ সালে রোনালদো আর মেসি’র আগমনের আগেই বিশেষজ্ঞদের (সাংবাদিক ও কোচ ) ভোটে পেলেকে ‘ফুটবলার অফ দা সেঞ্চুরি’ ঘোষণা করে ফিফা । তবে দর্শক ভোটে আবার একই উপাধি পেয়েছেন আর্জেন্টিনার ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক ম্যারাডোনা । অর্থাৎ ফুটবলের ‘সর্বেসর্বা’ কে – এমন প্রশ্নের উত্তর মেলাতে পারে নি খোদ ফিফা । আর বর্তমানে রোনালদো এবং মেসিদের দাপট , সেই প্রশ্নের উত্তরকে করে তুলেছে আরও জটিল ।

বিশ্ব ফুটবলে পেলে দারুণ সৌভাগ্যবান , তাতে কোন সন্দেহ নেই । তিনিই বিশ্বের একমাত্র ফুটবলার , যার ভাণ্ডারে আছে তিন তিনটি ফিফা বিশ্বকাপ । আছে ক্লাব ক্যারিয়ারে হাজারের বেশী গোল ! যদিও এসব গোলের অনেকগুলো তিনি করেছেন অপেশাদার আর অনুল্লেখিত ,ম্যাচে , যার সঠিক খোঁজ পাওয়া মুশকিল । কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে , ক্যারিয়ারের ১৩৬৩ ম্যাচে ১২৮১ গোল করেছেন তিনি । এখানে ক্লাবের হয়ে প্রদর্শনী বা ফ্রেন্ডলি ম্যাচে তার করা গোলের হিসেব ধরা হয়েছে । এমনকি বাধ্যতামূলকভাবে ব্রাজিলিয়ান সেনাবাহিনীতে থাকার সময় করা গোলগুলো হিসেবে আনা হয়েছে । যা অন্যদের বেলায় হয় না । কিন্তু সৌভাগ্যবান পেলের বেলায় সেই হিসেব ধরা হয়েছে । আর ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বেশী গোল করার ক্ষেত্রে তার নাম উঠে গেছে ‘গিনিজ বুক’ এর তালিকায় ।

পেলের ফুটবল জীবনে সফল হওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অবদান ‘ বিশ্বকাপ’ আসরের । তিনি যে ব্রাজিলের তিনটি বিশ্বকাপজয়ী স্কোয়াডের প্রতিনিধি ! চারটি বিশ্বকাপে ১৪ ম্যাচ খেলে তার গোলের সংখ্যা ১২টি । বিশ্বকাপের সর্বকালের সেরা গোলদাতার তালিকায় তিনি আছেন পাঁচে । ২৪ ম্যাচে ১৬ গোল করে এই তালিকার শীর্ষে আছেন জার্মানির মিরোস্লাভ ক্লোজা । ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপে ছয় ম্যাচেই পেলের চেয়ে গোল বেশী করেছেন ফ্রান্সের জ্যাঁ ফন্টেইন (১৩টি) । এছাড়াও বিশ্বকাপ ফুটবলে তার চেয়ে বেশী গোল আছে আরেক ব্রাজিলিয়ান রোনালদো (১৫টি) আর জার্মানির গাড মুলারের (১৪টি) ।

বিশ্বকাপ ফুটবলে পেলের অভিষেক হয় ১৯৫৮ সালে । সুইডেনে অনুষ্ঠিত সেই বিশ্বকাপে ব্রাজিল প্রথমবারের মত জয় করে বিশ্বশিরোপা । বয়স ১৮ পেরুবার আগেই সেই আসরের কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল ও ফাইনাল ম্যাচের জয়ের নায়ক বনে যান তিনি। সেমিফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে করেন হ্যাট্রিক আর ফাইনালে সুইডেনের বিপক্ষে দুই গোল। সেবারের আসরের সেরা উদীয়মান ফুটবলারের পুরস্কার জেতেন পেলে । আর সেরা খেলোয়াড়ের গোল্ডেনবল জিতেছিলেন ব্রাজিলিয়ান ডিডি ।

তবে ১৯৬২ সালের বিশ্বকাপে পেলের কোন অবদানই নেই । চিলিতে অনুষ্ঠিত সেই বিশ্বকাপে ব্রাজিলের শিরোপা জয়ের মূল নায়ক ছিলেন গ্যারিঞ্চা , যিনি জিতেছিলেন আসরের ‘গোল্ডেন-বল’ । যদিও সেই আসর শুরুর আগে পেলের উপরেই ছিল সব আলোচনা । আগের বিশ্বকাপে তরুণ পেলে গারিঞ্চা আর ভাভাদের সাথে মিলিয়ে দেখিয়েছেন স্মরণীয় ফুটবল-শৈলী । ১৯৫৯ সালের কোপা আমেরিকায় আট গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতার সাথে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেছিলেন তিনি । ফলে অনেক বড় তারকার তকমা নিয়েই ১৯৬২ সালের চিলি বিশ্বকাপে খেলতে আসেন পেলে । প্রথম ম্যাচে মেক্সিকোর বিপক্ষে একটি গোল আর একটি এসিস্ট করে শুরুটাও করেছিলেন দারুণ । কিন্তু পরের ম্যাচেই চেকোস্লোভাকিয়ার বিপক্ষে খেলতে গিয়ে ইনজুরিতে পড়ে বিশ্বকাপ শেষ হয়ে যায় তার । পরে সেই আসরের চেকদেরই হারিয়ে শিরোপা জেতে সেলেকাওরা । আর দুইটি ম্যাচ না খেলেও পেলে হয়ে যান বিশ্বকাপজয়ী দলের গর্বিত সদস্য ।

এরপর ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই বুলগেরিয়ার বিপক্ষে গোল পেয়ে যান পেলে । হয়ে যান টানা তিনটি বিশ্বকাপে গোল করার নতুন রেকর্ডের মালিক । তবে বুলগেরিয়ার খেলোয়াড়দের কঠোর ট্যাকলে আহত পেলে পরের ম্যাচে হাঙ্গেরির বিপক্ষে খেলতে পারেন নি । শেষ গ্রুপ ম্যাচে পর্তুগালের বিপক্ষেও মারাত্মক ফাউলের শিকার হয়েছিলেন পেলে । অর্ধেক ম্যাচ খেলেছেন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে । খেলোয়াড় বদলের নিয়ম না থাকায় আহত পেলেকে মাঠ থেকে উঠিয়ে নিতে পারেন নি কোচ । ইউসেবিওর দাপটে সেই ম্যাচ জিতে ব্রাজিলকে প্রথম পর্ব থেকেই বিদায় করে দেয় পর্তুগাল । আগের ম্যাচেও হাঙ্গেরির কাছে হারা ব্রাজিল বিদায় নেয় খালি হাতে ।

১৯৭০ সালের বিশ্বকাপে আবারও শিরোপা জিতেছিল ব্রাজিল । মেক্সিকোয় সেবারের আসরে চার গোল করেছিলেন পেলে । আর ১০টি গোল করে সবার সেরা ছিলেন গাড মুলার । সেবারের আসরে ব্রাজিলের স্কোয়াড ছিল ইতিহাসের অন্যতম সেরা । পেলে ছাড়াও দলে ছিলেন রেভেলিনো , টোস্টাও , কার্লোস আলবার্তো আর জর্জিনিওর মত ক্ষণজন্মা ফুটবলার । আসরে সাতটি গোল করেছিলেন জর্জিনিও । আর তিনটি গোল রেভেলিনোর । দুই গোল টোস্টাওয়ের । একটি করে গোল করেছেন কার্লোস আলবার্তো , কোলাডালডো আর গারসন । অর্থাৎ ব্রাজিলের সেবারের বিশ্বকাপ ছিল দলীয় শক্তি আর সমঝোতার ফসল । তবে সেবার ফাইনালে ইটালির বিপক্ষে প্রথম গোলটি করেছিলেন পেলে ।

তবে ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপে পেলে ছিলেন অসাধারণ । সেবার বিশ্বকাপের ৫৩% গোলে ছিল পেলের অবদান । সেবারেই প্রথমবার বিশ্বকাপের গোল্ডেন-বল জিতেছিলেন পেলে । সেটাই ছিল পেলের শেষ বিশ্বকাপ ।

বিশ্বকাপ ফুটবলে ব্রাজিলের সাফল্যে পেলের অবদান খাটো করে দেখার কোন সুযোগ নেই । তার খেলা চারটি বিশ্বকাপের দুইটিতে অন্তত ব্রাজিলের সেরাদের কাতারে ছিলেন তিনি । নিজের খেলা প্রথম বিশ্বকাপেই সেমি ফাইনাল আর ফাইনালে সবচেয়ে কম বয়সে গোল করার রেকর্ড গড়েছিলেন । যার কাছাকাছি সর্বশেষ বিশ্বকাপে গিয়েছিলেন ফ্রান্সের কিলিয়ান এমবাপ্পে । অন্যদিকে একই বিশ্বকাপের সেমি ফাইনালে সবচেয়ে কম বয়সী ফুটবলার হিসেবে হ্যাট্রিক করেন তিনি । যে রেকর্ড এখনও অক্ষত আছে । ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপে দ্বিতীয় সেরা ‘সিলভার বল’ জিতেছিলেন পেলে । এছাড়া ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপে তো সেরা হিসেবেই স্বীকৃতি পেয়েছেন ।

কিন্তু সমস্যা বাঁধে পেলের ক্যারিয়ারের গোল সংখ্যা নিয়ে । তিনি কখনও ইউরোপে খেলেন নি । নিজ দেশের স্যান্টসেই কাটিয়েছেন প্রায় পুরো ক্যারিয়ার । ১৯৫৬-১৯৭৪ পর্যন্ত স্যান্টসের জার্সিতে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে তার গোলের সংখ্যা ৬৫৬ ম্যাচে ৬৪৩টি । আর শেষ তিন বছর আমেরিকার কসমস ক্লাবের হয়ে ১০৭ ম্যাচে আছে ৬৪ গোল । এখানে আবার ক্লাবের হয়ে প্রাক-মৌসুম আন অফিশিয়াল ম্যাচের গোল হিসেব করা আছে , যা অন্যদের বেলায় হয় না ।

জাতীয় দলের হয়ে ১৯৫৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত ৯২ ম্যাচে ৭৭ গোল করেছেন পেলে । যা ব্রাজিলের হয়ে সর্বোচ্চ । আর সর্বকালের সেরা আন্তর্জাতিক গোলদাতার তালিকায় অষ্টম ।

সার্বিক বিচারে পেলের ক্যারিয়ারে গোল সংখ্যা দেখা যাচ্ছে ৭৮৪টি । যেখানে আবার আমেরিকান কসমস ক্লাবের হয়ে অলিখিত ফ্রেন্ডলি ম্যাচের কিছু গোল আছে । কিন্তু পেলের ক্যারিয়ারে গোল দেখানো হচ্ছে বারোশ’র বেশী । তাহলে বাকী গোল এলো কোথা থেকে ? এখানেই হয়ত আছে শুভঙ্করের ফাঁকি ! পাড়া-মহল্লার ফুটবলে খেলা গোলগুলো হিসেব করা হয়েছে পেলের ক্ষেত্রে । ব্যাক্ষা হিসেবে বলা হচ্ছে , আন-অফিশিয়াল ফ্রেন্ডলি ম্যাচের কথা । যার সঠিক পরিসংখ্যান কোথাও নেই । সেই কারণেই পেলের গোলের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায় ।

একজন ফরোয়ার্ড হিসেবে পেলে পুরো ক্যারিয়ারে অনেক গোল করেছেন । কিন্তু নিজ দেশের বাইরে না খেলায় তার সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায় । এছাড়াও শেষ জীবনে আমেরিকার অপেশাদার ক্লাবে খেলা পেলের গোল নিয়েও আছে কটাক্ষ ।

স্যান্টসের হয়ে পেলে ব্রাজিলিয়ান শীর্ষ লীগ জিতেছেন ছয়বার । দক্ষিণ আমেরিকার সেরা ‘কোপা লিবারেটস’ জিতেছেন দুইবার । আর দুইবার জিতেছেন ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ । ১৯৬২ সালের ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপে পেলের স্যান্টসের প্রতিপক্ষ ছিল পর্তুগালের বেনফিকা । সেখানে দুই লেগের ম্যাচে পেলে করেন পাঁচ গোল । দ্বিতীয় লেগে ইউসেবিওর বেনফিকাকে ৫-২ গোলে হারায় স্যান্টস । লিসবনে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে হ্যাট্রিক করেন পেলে । যা ছিল তার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা পারফর্মেন্স । মুলত এই ম্যাচের পরেই ইউরোপে দর্শকদের কাছে সুপারস্টার বনে যান পেলে । পরের বছর একই আসরে ইটালির মিলানের বিপক্ষেও দুই লেগে চার গোল করেন পেলে । তখন এই আসরটি হত ল্যাটিন আর ইউরোপের সেরা দুইটি ক্লাবের মধ্যে । দুই লেগে মিলান আর স্যান্টস একে অপরকে হারিয়েছিল ৪-২ গোলে । ফলে প্লে-অফে সেবার নির্ধারিত হয় শিরোপা , সেই ম্যাচে স্যান্টস জিতেছিল ১-০ গোলে ।

ব্যক্তিগতভাবে ব্রাজিলিয়ান মূল সিরি ‘এ’ লীগে তিনবার সেরা গোলদাতা হয়েছেন পেলে । এছাড়াও সাও পাওলোর স্থানীয় লীগে সেরা গোলদাতা হয়েছেন টানা নয়বারসহ মোট ১১বার । এছাড়া ১৯৫৯ সালের সাউথ আমেরিকান চ্যাম্পিয়নশিপে (কোপা আমেরিকা) সেরা গোলদাতার সাথে সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন । তবে ব্রাজিলের হয়ে তিনি কখনও সাউথ আমেরিকান চ্যাম্পিয়নশিপ জিততে পারেন নি ।

পেলের ক্যারিয়ারের সার্বিক বিবেচনায় দেখা যাচ্ছে , তিনি ফুটবল ইতিহাসের অনেক বড় তারকা । কিন্তু সবার সেরা কিনা , এই নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাবেই । তিনটি বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য হিসেবে ক্যারিয়ারে তিনি পেয়েছেন ‘অনন্য মাত্রা’ । কিন্তু এক ম্যারাডোনা এসেই তো পেলের সব অর্জনকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছেন । ম্যারাডোনার মত একক হাতে পেলে নিজের দেশকে বিশ্বকাপ জেতাতে পারেন নি । একেবারে সাধারণ মানের দল নিয়ে টানা দুইটি বিশ্বকাপের ফাইনালে দলকে নিয়ে গেছেন আর্জেন্টিনার ম্যারাডোনা । তিন বিশ্বকাপে অধিনায়ক হিসেবে খেলেছেন ১৬টি ম্যাচ যে রেকর্ড আর কারও নেই।ম্যারাডোনার বেশিরভাগ সময় জাতীয় দলে খেলেছে প্লে-মেকার এর ভূমিকায়। আর্জেন্টাইন জার্সিতে ৯১ ম্যাচ খেলে ৩৪ গোল করেছেন ম্যারাডোনা। বিশ্বকাপের ম্যাচ খেলেছেন ২১টি। গোল ও অ্যাসিস্ট করেছেন ৮টি করে। এটাও একটি বিরল রেকর্ড ।

ইউরোপের কঠিন পেশাদার ফুটবলেও ম্যারাডোনা প্রবল প্রতাপে খেলেছেন । পেয়েছেন সাফল্য । যে কারণে পেলে নিজেও বহু আগে থেকে সন্দেহাতীতভাবে বলতে পারছেন না , তিনিই সেরা । আর রোনালদো এবং মেসিদের খেলা দেখার পর আধুনিক ফুটবলের দর্শকরা তো পেলেকে ক্রমেই ঠেলে তালিকার পেছন দিকে ।

আসলে পেলের সর্বকালের সেরা হয়ে ওঠার পেছনে ফিফা’র প্রত্যক্ষ মদদ থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না । সেই সময়ে বিশ্বজুড়ে ফুটবলের একটা ‘আইকন’ দরকার ছিল । ফেরেংক পুশকাস আর ইউসেবিওরা বিশ্বকাপ জিততে পারেন নি । পারেন নি ইউহান ক্রুয়েফ , মিশেল প্লাতিনি । বিশ্বকাপ আসরে ছিলেন না আলফ্রেডো ডি স্টেফানো আর জর্জ বেস্ট , নইলে তারা হতে পারতেন সেরা আইকন । ফ্রেঞ্জ বেকেনবাওয়ার ফুটবলের সবচেয়ে বড় তারকাদের মধ্যে একজন হিসেবে বিশ্বকাপ জিতেছেন , জিতিয়েছেন । কিন্তু বিশ্বকাপ সংখ্যায় এগিয়ে থাকায় পেলেকেই ফুটবলের সবচেয়ে বড় ‘বিজ্ঞাপন’ হিসেবে প্রচারণার নীতিতে চলে যায় ফিফা । এতে বিশ্বব্যাপী ফুটবলের একটা সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতাও চলে আসে । কারণ ইউরোপের ফুটবলের সাথে ল্যাটিনের যে যুদ্ধ , সেখানে ‘পেলে’কে দিয়েই ফিফা শুরু করেছিল নতুন খেলা । যা চলেছে বহুবছর , অন্তত ম্যারাডোনা আসার পর্যন্ত ।

কিন্তু পেলেকে নিয়ে ‘ফুটবলের রাজা ‘ নাটকে একটা সময় বাঁধ সাধেন খোদ ম্যারাডোনা । শুরু হয় সর্বকালের সেরা কে সেই বিতর্ক। যা নিয়ে বিব্রত ফিফা বিতর্ক থামাতে ২০০০ সালে ইন্টারনেট ভোটাভুটির আয়োজন করে ফিফা। সেখানে ভোট দেন উন্নত বিশ্বের ইন্টারনেট সুবিধাভোগী মানুষেরা। ওই জরিপে বিশাল ব্যাবধানে পেলেকে পিছনে ফেলেন ম্যারাডোনা। তবে সেই ইন্টারনেট ভোটাভুটি ছাড়াও আরও একটি ভোট হয়। বর্তমানে যেভাবে বর্ষসেরা নির্ধারণ করা হয় সেভাবে ২০০০ সালেও শতাব্দীর সেরা ফুটবলার বেছে নিতে সাংবাদিক ও কোচদের ভোট নিয়েছিল ফিফা।

যে কারণে ম্যারাডোনার সঙ্গে পেলেকেও যৌথ ভাবে প্লেয়ার অফ দ্যা সেঞ্চুরি ঘোষণা করে ফিফা। ফলে সর্বকালের সেরা ফুটবলার প্রসঙ্গটি এখন পর্যন্ত অমীমাংসিত।

কিন্তু আসলে সর্বকালের সেরা নয় , ফিফা সেবার ঘোষণা করেছিল শতাব্দীর সেরা দুই ফুটবলারের নাম । হালে রোনালদো , মেসি , জিনেদিন জিদান , আর রোনাল্ডো নাজারিওরা হাজির হয়েছেন সেরার মঞ্চে । খোদ পেলেকে ফরোয়ার্ড হিসেবে চ্যালেঞ্জ জানাবার জন্য আছেন ১৯৯৪ সালে ব্রাজিলের বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক রোমারিও , যিনি আন্তর্জাতিক আসরের মত ল্যাটিন আর ইউরোপের ক্লাবেও প্রবল সফল । তিনি সব মিলিয়ে করেছেন ৭৩৫ গোল ।

সব মিলিয়ে পেলের রাজা’র আসন অনেক আগেই টলে গেছে । রোনালদো আর মেসিদের অবসরের পর হয়ত নতুন করে নির্বাচিত হবে ‘ফুটবলের রাজা’ , সেই আলামত শুরু হয়ে গেছে এখনই ।

অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে , এক সময়ের ‘ফুটবলের রাজা’ খ্যাত পেলে ইতিহাসের অন্যতম বড় তারকা হিসেবে বিবেচিত রয়ে যাবেন । কিন্তু তাকে ছাপিয়ে আধুনিক ফুটবলের তালিকায় উপরের দিকে চলে আসবেন অনেকেই । হয়ত সেই সময় আসতে খুব বেশী দেরী নেই ।

আহসান/ক্রী/০০১