
ক্রীড়ালোক প্রতিবেদকঃ
দরজায় কড়া নাড়ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মহাদেশের সর্ববৃহৎ ক্রীড়া-আসর এশিয়ান গেমস । আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর চীনের হ্যাংঝুতে আনুষ্ঠানিকভাবে পর্দা উঠছে ১৯তম এশিয়ান গেমসের । যা শেষ হবে ৮ অক্টোবর আনুষ্ঠানিক সমাপনী অনুষ্ঠানমালায় ।
এশিয়ান গেমসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পুরবে মাঠে গড়াচ্ছে ফুটবল । মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ মিয়ানমারের বিপক্ষে । বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বেলা দুইটায় ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে চীনের হ্যাংজু শহরের আওশান স্পোর্টস কমপ্লেক্স ফুটবল গ্রাউন্ডে।
এশিয়ান গেমসে ২০০২ সাল থেকে ফুটবলে জাতীয় দলের অংশগ্রহণ প্রথা তুলে দেয়া হয় । নিয়ম করা হয় অনূর্ধ্ব-২৩ অলিম্পিক দলের খেলার । ম্যাচগুলোও পায় না আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি । তবে গেমসের স্কোয়াডে তিনজন সিনিয়র খেলোয়াড় রাখার নিয়ম রয়েছে । সিনিয়র কোটায় বাংলাদেশ দলে রাখা হয়েছে সুমন রেজা আর মেহেদী মুরাদকে।
কোচ হাভিয়ের ক্যাবরেরার অধীনে এশিয়ান গেমসের স্কোয়াডে রাখা হয়েছিল জাতীয় দলের অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়াকে । কিন্তু তিনি বর্তমানে আর্জেন্টিনায় আছেন । সম্প্রতি জামাল যোগ দিয়েছেন আর্জেন্টিনার সোল দা মায়ো ক্লাবে । ইতোমধ্যে তৃতীয় বিভাগের আর্জেন্টাইন ক্লাবে অভিষেক হয়েছে তাঁর । গোলও করেছেন । সম্প্রতি দেশে ফিরেছিলেন আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজ খেলতে । যা শেষ করে ফিরে গেছেন । তাই তাঁকে পাচ্ছে না বাংলাদেশ ।
২০১৮ সালের ২০১৮ সালে জাকার্তা এশিয়ান গেমস ফুটবলে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছিল। ওই আসরের গ্রুপ পর্বে উজবেকিস্তান, কাতার ও থাইল্যান্ডের বিপক্ষে দুর্দান্ত খেলেছিল লাল-সবুজরা। অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার গোলে কাতারের মতো দলকে হারিয়েছিল তারা। ড্র করেছিল শক্তিশালী থাইল্যান্ডের বিপক্ষে। দ্বিতীয় রাউন্ডে উত্তর কোরিয়ার মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষেও লড়াইটা মন্দ করেনি বাংলাদেশ। যদিও তারা ম্যাচ হেরেছিল ৩-১ ব্যবধানে।
বাংলাদেশ স্বাভাবিকভাবেই চায় ২০১৮ সালের সাফল্যের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে । যদিও কাজটা কঠিন । কারণ আসন্ন এশিয়াডে ‘এ’ গ্রুপে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ মিয়ানমার , চিন আর ভারত । যারা প্রত্যেকেই শক্তি আর র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে । তাছাড়া , বাংলাদেশ দলটাও পূর্ণশক্তির না । দলে নেই মোরসালিন , আনিসুর রহমান জিকোর মত পরীক্ষিত তারকা । মোরসালিন খেলতে পারতেন অনূর্ধ্ব-২৩ দলের সদস্য হিসেবেই । আর ২৬ বছরের জিকোকে সিনিয়র কোটায় দলে নিতে চেয়েছিলেন কোচ । কিন্তু এএফসি এশিয়া কাপে বসুন্ধরা কিংসের খেলা থাকায় তাদের পাচ্ছে না বাংলাদেশ । তালিকায় মোহাম্মদ ইব্রাহিমকেও রাখা হয়েছিল । কিন্তু তিনিও বসুন্ধরার হয়ে এএফসি এশিয়া কাপে খেলবেন ।
এশিয়াডে বাংলাদেশ দলে অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের বড্ড অভাব । দলের আ৫ জন খেলোয়াড়ের নেই এশিয়ান গেমস ফুটবল কিংবা অলিম্পিক ফুটবল খেলার অভিজ্ঞতা । যা ভোগাতে পারে বাংলাদেশকে । জামালের অনুপস্থিতিতে ২৩ বছরের রহমত মিয়ার উপর দেয়া হয়েছে অধিনায়কের দায়িত্ব । রহমত মিয়া বাংলাদেশের ফুটবলে পরিচিত মুখ । খেলেছেন ২০১৮ সালের এশিয়াডে ।
রমহত মিয়া জানিয়েছেন , ‘ ‘আমাদের ২২ জনের মধ্যে ১৫ জনের জাতীয় দলে ক্যাম্প করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তারা হ্যাংজুতে নিজেদের সেরাটা দেয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করবে। আমার ধারণা হ্যাংজুতে ভালো খেলে জাতীয় দলে নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করতে চাইবেন তারা। আমরা ম্যাচ বাই ম্যাচ এগিয়ে যেতে চাই। আপাতত প্রথম প্রতিপক্ষ মিয়ানমারকে নিয়ে ভাবছি।’
বাংলাদেশের জন্য বড় কোন লক্ষ্য নির্ধারণ করেন নি কোচ ক্যাবরেরা , ‘ লক্ষ্য সম্পর্কে কিছু বলতে চাই না। আমরা ম্যাচ বাই ম্যাচ এগোতে চাই। আমাদের প্রথম ম্যাচ মিয়ানমারের বিপক্ষে। সেটা নিয়েই আগে ভাবছি।’
মিয়ানমারের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে চমকে দেওয়া একটা পারফরম্যান্স আশা করছেন সহকারী কোচ হাসান আল মামুন। তিনি বলেছেন , ‘আপনারা জানেন এই দলটার কিছু খেলোয়াড় ছিল থাইল্যান্ডে। এদের পেয়েছি এখানে আসার আগের দিন। সিনিয়র কোটায় আমরা দুজনকে যুক্ত করতে পেরেছি। কারণ বসুন্ধরা কিংসের খেলোয়াড় যারা ছিলেন এবং জামাল ভূঁইয়া তাদের ব্যস্ত ঘরোয়া সূচির কারণে আসেননি। একটা তারুণ্যনির্ভর দল নিয়ে এসেছি। আমরা চাচ্ছি তাদের আন্তর্জাতিক মঞ্চের অভিজ্ঞতা দিতে। কারণ গ্রুপে চীন, ভারত, মিয়ানমারের মতো দল আছে। আমরা দেখতে চাই, যে পরিকল্পনায় কোচ খেলাতে চান, সেটা তারা খেলতে পারে কি না।’
মিয়ানমারকে নিয়ে হোমওয়ার্কটা ভালো হয়েছে উল্লেখ করে হাসান আল মামুন বলেন, ‘আমরা টেকটিক্যালি মিয়ানমারকে নিয়ে অনেক স্টাডি করেছি। ওদের সেরা খেলোয়াড় কারা, কোন স্টাইলে তারা খেলে এসব জেনেছি। পুরো দলকে একসঙ্গে একটু আগেভাগে পেলে ভালো হতো। তারপরও ছেলেরা প্রস্তুত হচ্ছে। মিয়ানমারের সঙ্গে যদি আমরা কিছু করতে পারি, তবে গ্রুপটা উন্মুক্ত হয়ে যাবে। আপনারা জানেন যে চারটি সেরা তৃতীয়স্থান পাওয়া পরের ধাপে যাবে। মিয়ানমারের বিপক্ষে যদি চমকে দেওয়া কিছু করতে পারি তাহলে বড় ব্যাপার হবে।’
২০২৩ সালের এশিয়াড পুরুষ ফুটবলে ২১ দল ছয় গ্রুপে বিভক্ত হয়ে অংশ নিচ্ছে । প্রতি গ্রুপের শীর্ষ দুটি দল এবং চারটি সেরা তৃতীয় স্থান পাওয়া দল নাম লেখাবে দ্বিতীয় রাউন্ডে।
আহাস/ক্রী/০০৪