
আহসান হাবীব সুমন/ক্রীড়ালোকঃ
অপেক্ষার পালা প্রায় শেষ । আর মাত্র ৪৮ ঘণ্টার কম সময়ে শুরু হয়ে যাবে ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবলের ধুন্ধুমার যুদ্ধ । ৩২টি দল একটি ট্রফি জয়ের লক্ষ্যে উজাড় করে দেবে নিজেদের সর্বস্ব । যার শুরুটা হবে রবিবার (২০ নভেম্বর) কাতার বনাম ইকুয়েডরের ম্যাচ দিয়ে । আল খোর শহরের আল বায়েত স্টেডিয়ামে ম্যাচ শুরু বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় ।
বিশ্বকাপের উদ্বোধনী দিনে স্বাগতিকদের মাঠে নামা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে ২০০৬ সাল থেকে । যদিও শুরুর থেকে এমন কোন নিয়ম ছিল না । ১৯৩০ সালের প্রথম বিশ্বকাপের স্বাগতিক উরুগুয়ে হলেও প্রথম খেলা অনুষ্ঠিত হয় ফ্রান্স আর মেক্সিকোর মধ্যে । আবার ১৯৩৪ সালের দ্বিতীয় আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে স্বাগতিক ইটালি কিংবা চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ের কেউ খেলে নি । ১৯৫০ সালের বিশ্বকাপে প্রথমবার স্বাগতিক ব্রাজিল মাঠে নামে উদ্বোধনী ম্যাচে । তবে , ১৯৫৪ সালে পরবর্তী বিশ্বকাপেই সেই ধারা অব্যাহত থাকে নি । আবার ১৯৬৬ আর ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপে স্বাগতিক ইংল্যান্ড আর মেক্সিকো প্রথম ম্যাচেই মাঠে নামে ।আর ১৯৭৪ সাল থেকে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে চ্যাম্পিয়নদের মাঠে নামা অনেকটা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল । যা অব্যাহত ছিল ২০০২ সাল পর্যন্ত ।
যাই হোক, ২০০৬ সালে জার্মানি আয়োজিত বিশ্বকাপ থেকে স্বাগতিক দেশের উদ্বোধনী ম্যাচেই মাঠে নামা অলিখিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে । কিন্তু কাতার বিশ্বকাপে আবারও সেই ধারায় ছেদ পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল । ২১ নভেম্বর বিশ্বকাপের প্রথম দুইটি ম্যাচ হিসেবে সেনেগাল-নেদারল্যান্ডস ও ইংল্যান্ড-ইরানের মুখোমুখি হবার কথা ছিল । এতে কাতারে আয়োজকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ছিল।তবে স্বাগতিকদের আপত্তির কারণে ফিফা পরিবর্তন আনে বিশ্বকাপ সূচীতে । ২০ নভেম্বর নিয়ে আসা হয় কাতার বনাম ইকুয়েডর ম্যাচ ।
ইকুয়েডের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে স্বাগতিক কাতারের উপর থাকছে বাড়তি চাপ । কারণ উদ্বোধনী দিনে স্বাগতিকদের সাফল্য পাওয়া যে অবধারিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে । ১৯৫০ সালের বিশ্বকাপে সর্বপ্রথম স্বাগতিক হিসেবে উদ্বোধনী দিনে মাঠে নেমে ব্রাজিল ৪-০ গোলে হারায় মেক্সিকোকে । তবে ১৯৬৬ আর ১৯৭০ বিশ্বকাপের স্বাগতিক হিসেবে উদ্বোধনী ম্যাচে মাঠে নেমে গোলশূন্য ড্র করে ইংল্যান্ড আর মেক্সিকো ।
ইতিহাস বলছে , এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের স্বাগতিকরা আসরের উদ্বোধনী দিনে কখনও মাঠে নেমে হারেনি স্বাগতিক দেশ । এমনকি , দক্ষিণ আফ্রিকা ২০১০ সালে একমাত্র স্বাগতিক হিসেবে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয়ার রেকর্ড গড়েছিল । কিন্তু তারাও উদ্বোধনী দিনে মেক্সিকোর বিপক্ষে ম্যাচ ড্র করে ১-১ গোলে ।
পরিসংখ্যান বলছে , এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপ ফুটবলের উদ্বোধনী দিনে সাতবার মাঠে নেমেছে স্বাগতিকরা । জিতেছে চারবার । আর ড্র তিনটি ম্যাচ । ২০১৮ সালেও রাশিয়া উদ্বোধনী ম্যাচে ৫-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল সৌদি আরবকে ।
২০২২ সালে ইকুয়েডরের বিপক্ষে স্বাগতিকদের ‘অপরাজেয়’ সম্মান ধরে রাখার দায় এখন কাতারের । যদিও আগের সব বিশ্বকাপের স্বাগতিকদের সাথে কাতারের একটা বড় পার্থক্য রয়েছে । সেটা হচ্ছে , কাতার ছাড়া আগের সব স্বাগতিকদের বিশ্বকাপ ফুটবলের মুলমঞ্চে খেলার পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল । কিন্তু কাতারের বিশ্বকাপ খেলার কোন পূর্ব-অভিজ্ঞতা নেই । তাই ফুটবলের সবচেয়ে বড় মঞ্চে কাতারের খেলোয়াড়দের পারফর্মেন্স দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় সবাই ।
ইকুয়েডরের বিপক্ষে কাতারের ম্যাচটি সহজ হবে না । যদিও কাতার বর্তমান এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন । কিন্তু তারা এখনও বিশ্ব ফুটবলে লড়াই করার মতো শক্তি হয়ে ওঠে নি । তবে নিজ দেশের দর্শকদের সামনে যে কোন স্বাগতিক দেশ উজ্জীবিত থাকে । এটাই কাতারের শক্তি । এই মুহূর্তে বিশ্ব র্যাংকিংয়ে কাতারের অবস্থান ৫০তম আর ইকুয়েডরের ৪৪ । র্যাংকিং হিসেবে দুই দলের তেমন কোন পার্থক্য নেই । পার্থক্য আসলে মধ্যপ্রাচ্য আর ল্যাটিনের ফুটবল সংস্কৃতিতে । ২০১৯ সালে ব্রাজিলের মাটিতে কোপা আমেরিকায় খেলেছিল কাতার । অতিথি দল হিসেবেই প্রথম ম্যাচে প্যারাগুয়েকে রুখে দিয়ে চমকও দেখিয়েছিল । পরবর্তী দুই ম্যাচে অবশ্য কলম্বিয়া আর আর্জেন্টিনার কাছে হেরে বিদায় নেয় গ্রুপ পর্ব থেকেই ।
ইকুয়েডরের সাথে কাতারের অতীত পরিসংখ্যান উৎসাহ জাগানিয়া । সর্বশেষ ২০১৮ সালে প্রীতি ম্যাচে কাতার ৪-৩ গোলে হারিয়েছিল ইকুয়েডরকে । এছাড়া আরও দুইবারের দেখায় ইকুয়েডরের বিপক্ষে একটি ড্র আর একটি পরাজয় আছে কাতারের । অর্থাৎ ইতিহাসে দুই দলের পরিসংখ্যান সমানে-সমান। তাই ইকুয়েডরের বিপক্ষে কাতারকে পিছিয়ে রাখার উপায় নেই । আর ইকুয়েডরকে জিততে হলে উদ্বোধনী ম্যাচে স্বাগতিকদের না হারার ইতিহাস নতুন করে লিখতে হবে ।
বিশ্বকাপের ‘এ’ গ্রুপে কাতারের সঙ্গী হিসেবে ইকুয়েডর ছাড়াও রয়েছে হল্যান্ড আর সেনেগাল । কাতারকে নক আউট পর্বে যেতে হলে টার্গেট করতে হবে ইকুয়েডর আর সেনেগালকেই । কারণ , হল্যান্ড এই গ্রুপের সবচেয়ে শক্তিশালী দল । তবে বিশ্বকাপ ফুটবল যেহেতু অঘটনের আসর , তাই আসলে কেউ কারো বিপক্ষে নিরাপদ না ।
ইকুয়েডরের রক্ষণ ভাঙা খুব কঠিন । সর্বশেষ ছয় ম্যাচে তাদের বিপক্ষে গোল করতে পারেনি কেউ। এই সময়ে তারা মেক্সিকো , জাপান আর নাইজেরিয়ার বিপক্ষেও মাঠে নেমেছে । জিতেছে দুইটি ম্যাচ , ড্র চারটি । সর্বশেষ মার্চে তারা হেরেছিল প্যারাগুয়ের বিপক্ষে । এমনকি , পরের ম্যাচেই রুখে দিয়েছিল আর্জেন্টিনাকে ১-১ গোলে । তাই ইকুয়েডরকে হাল্কাভাবে নেয়ার সুযোগ নেই কোন দলের জন্যই ।
অন্যদিকে , কাতার সর্বশেষ ২৭ সেপ্টেম্বর ২-২ গোলে ড্র করেছে চিলির বিপক্ষে । কিন্তু হেরেছে আগের দুই ম্যাচ ক্যানাডা আর ক্রোয়েশিয়ার অনূর্ধ্ব-২৩ দলের বিপক্ষে ।
কাতার সম্ভাব্য একাদশঃ সাদ আল সাহেব (গোলরক্ষক) , বাসাম আল রাউই , তারেক সালমান , আবদেল করিম হাসান , হোম্মাম আহমেদ , করিম বউদিয়াফ , হাসান আল হায়দুস (অধিনায়ক) , আবদুল আজিজ হাতিম , পেদ্রো মিগুয়েল কারভালহো , আকরাম আফিফ , আলমোয়েজ আলী
ইকুয়েডর একাদশ- অ্যালেক্সান্ডার ডোমিঙ্গুয়েজ (গোলরক্ষক) , রবার্ট আলবোলেদা , ফেলিক্স টোরেস , পিয়েরো হিনক্যাপি, পারভিস এস্তুপিনান , জ্যাকসন মেন্ডেস , মোয়েসেস কাইকেডো , গঞ্জালো প্লাতা , হোসে কিফুয়েন্তেস , রোমারিও ইবরারা , ইনার ভ্যালেন্সিয়া
আহাস/ক্রী/০০২