Download WordPress Themes, Happy Birthday Wishes

ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক ট্র্যাজেডি

ক্রীড়ালোক প্রতিবেদকঃ

ফুটবলে সহিংসতার ঘটনা দিনদিন বেড়েই চলেছে । মাঝেমাঝেই দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে ঘটছে সংঘর্ষের ঘটনা । ঘটছে প্রাণহানি । তবে মাত্র একদিন আগেই ইন্দোনেশিয়ায় ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে যা ঘটে গেল , সেটা যেন নজিরবিহীন । দেশটির ঘরোয়া ফুটবলের একটি ম্যাচে সমর্থকদের মধ্যে হাঙ্গামায় প্রাণ গেছে ১২৯ জনের । সাম্প্রতিক ইতিহাসে কোন খেলাকে কেন্দ্র করে এমন প্রাণহানি আর দেখেনি বিশ্বের মানুষ ।

শনিবার (১ অক্টোবর ) ইন্দোনেশিয়ার পূর্বাঞ্চলের মালাং শহরের কানজুরুহান ফুটবল স্টেডিয়ামে ঘটে যায় হৃদয়বিদারক ঘটনা । খেলা ছিল স্থানীয় আরেমা এফসি ও পেরসেবায়া সুরাবায়া নামের দুটি ফুটবল ক্লাবের মধ্যে । ম্যাচে আরেমাকে ৩-২ গোলে হারায় পেরসেবায়া।যা মেনে নিতে পারেনি পরাজিত দলের সমর্থকরা । কারণ গত দুই দশকে এই প্রথম প্রিয় দল আরেমা পরাজয়ের সম্মুখীন হয়েছে পেরসেবায়া ক্লাবের কাছে । এই বিষয়টি আরেমার সমর্থকদের আত্মসম্মানে ঘা দেয় । আর ম্যাচ শেষে জড়ায় হাঙ্গামায় ।

পরাজিত আরেমার সমর্থকরা খেলা শেষে গ্যালারীর কাঁটাতার ডিঙ্গিয়ে ঢুকে পড়েন মাঠে । এরপর মাঠেই দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ‌্যে সংঘর্ষ হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে। পরিস্থিতি হয়ে ওঠে ভয়াবহ । এমন অবস্থায় দ্রুত স্টেডিয়াম ছাড়তে গিয়ে পদদলিত আর মানুষের চাপায় দম হয়ে মারা যায় বেশিরভাগ দর্শক ।

পূর্ব জাভার পুলিশ প্রধান নিকো আফিন্তা জানিয়েছেন , ঘটনায় নিহতদের মধ্যে দুইজন পুলিশ সদস্য রয়েছেন । স্টেডিয়ামের ভেতরে পদদলিত হয়ে ও অক্সিজেনের অভাবে শ্বাসরোধে ঘটনাস্থলেই ৩৪ জন মারা যান। বাকিরা হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান।

জানা গেছে , স্টেডিয়াম থেকে বের হবার জন্য একটিমাত্র পথ খোলা ছিল । সবাই সেদিকে ছুটাছুটির কারণে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়েছে ।

আফিন্তা জানান , ‘ সবাই একটি স্থান দিয়েই বের হওয়ার চেষ্টা করছিলো। ফলে প্রচণ্ড ভিড়ের এক পর্যায়ে অক্সিজেনের অভাবে দমবদ্ধ হওয়ার মতো পরিস্থিতির তৈরি হয়।’

ইন্দোনেশিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (পিএসএসআই) বলেছে, এ ঘটনা ইন্দোনেশিয়ার ফুটবলকে কলঙ্কিত করেছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।

ফুটবল মাঠে সহিংসতা আর নিহতের ঘটনা নতুন কিছু না । বাংলাদেশের ফুটবলেও মোহামেডান-আবাহনী কিংবা অন্যান্য ম্যাচ ঘিরে সংঘর্ষে মৃত্যুর অনেক ঘটনা আছে । যদিও বর্তমানে ঘরোয়া ফুটবলের জনপ্রিয়তায় ভাঁটার টান চলায় বাংলাদেশে এমন ঘটনা এখন ঘটে না বললেই চলে । ফুটবল মাঠে হাঙ্গামার জন্য ইংল্যান্ডের হুলিগানরা তো বিখ্যাত । চলতি বছরের মে মাসেই প্যারিসে অনুষ্ঠিত হয় উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনাল । রিয়েল মাদ্রিদ আর লিভারপুলের মধ্যে প্যারিসের স্টেডিয়ামে ফাইনালের আগে সংঘর্ষে জড়ায় দুই পক্ষের সমর্থকরা ।

ফুটবলের দুই জনপ্রিয় দেশ ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার স্টেডিয়ামে দর্শক হাঙ্গামা নতুন কিছু না । চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসেই ক্লাব অ্যাটলেটিকো ডে সান মার্টিন ও বেলগ্রানো নামের দু’টি ফুটবল ক্লাবের মধ্যে দ্বিতীয় ডিভিশনের খেলা ছিল। সেই ম্যাচের সময় মাঠের বাইরে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন দু’দলের সমর্থকরা। সেই সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়েন সান মার্টিনের এক সমর্থক। ‘সালভেমস আল ফুটবল’ নামের একটি এনজিও জানিয়েছে, ১৯৩০ সালের পর থেকে আর্জেন্টিনায় ফুটবল সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ৩০০-র বেশি মৃত্যু হয়েছে। অনেক চেষ্টা করেও সংঘর্ষ আটকানো যাচ্ছে না।

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্যারাগুয়ের চির প্রতিদ্বন্দ্বি ক্লাব চেরো পোর্টেনো ও অলিম্পিয়ার ম্যাচে একজন নিহত হয় । ডিফেন্সোরেস ডেল চাকো স্টেডিয়ামে সেদিন দাঙ্গাবাজ দর্শকরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে প্রবেশ । ম্যাচের শুরুতেই গ্যালারিতে গুলি করে মারা হয় ১৮ বছর বয়সী এক দর্শককে । এই ঘটনার জের ধরে পুলিশ ৫৪ জনকে গ্রেফতার করে। তল্লাশি চালিয়ে তাদের কাছ থেকে পিস্তল ও ছুরি উদ্ধার করা হয়।

২০১৮ সালে আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়ায় ফুটবল খেলায় সংঘর্ষে বিপুল সংখ্যক দর্শকসহ আহত হয় ৩৮ পুলিশ সদস্য । এসপারেন্স অব তিউনিস এবং ইতয়লি স্পোর্টিভ শেলের মধ্যে একটি ম্যাচকে কেন্দ্র করে সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষ ঘটে। ম্যাচ চলাকালীন সময়ে দর্শকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে হাতে তৈরী বোমা, পাথর, চেয়ার, এমনকি ধাতব বস্তুও ছুঁড়ে মারে।

২০১২ সালে মিশরের পোর্ট সাইদ শহরে ফুটবল লিগের খেলার মাঠে সহিংসতায় ৭৪জন নিহত হয়। আসলে খেলার মাঠে সহিংসতা নতুন কিছু নয়। সহিংসতার কারণে ক্রিকেট মাঠে ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচ দর্শকশূন্য মাঠে অনুষ্ঠিত হওয়ার রেকর্ড আছে। গণভোটের দাবিতে অনড় থাকায় সহিংসতার আশঙ্কায় বার্সেলোনা-লাস পালমাসের ম্যাচও দর্শকশূন্য মাঠে গড়িয়েছিল। তবে ইন্দোনেশিয়া মতো বিপুল সংখ্যক মানুষের মৃত্যু একটি খেলাকে কেন্দ্র করে , এমন ঘটনা ইতিহাসে বিরল ।

আহাস/ক্রী/০০৪