এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাক নাম ছিল খোকা। এই খোকা তাঁর জীবদ্দশায় শুধুমাত্র অতি উচ্চতার রাজনৈতিক সত্তা হয়ে কেবল বিচরণ করেন নি। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি হয়ে তিনি জাতিগত সংস্কৃতিকে সংরক্ষণ করে একজন সত্যিকারের কিংবদন্তী হয়ে বলতে পেরেছিলেন, তোমরা তোমাদের কর্ম দিয়ে বাঙালি জাতিকে শ্রেষ্ঠ কর।
- খোকা, দেশিয় সংস্কৃতির বিকাশেও বাঙালি জাতির পথিকৃৎ চরিত্র ছিলেন। তিনি কবি, লেখক,সুরকার, গীতিকার, চিত্রশিল্পী, খেলোয়াড়দের কে অনুপ্রাণিত করে বলতেন, তোমরা বাংলার কৃষ্টির শেকড়কে ভুলে যেও না, সেরাটা দাও। তাই রাজনৈতিক পথের পথিক হয়ে কেবল তিনি জীবনকে অতিবাহিত করেন নি। সাংস্কৃতিক জীবনের সড়কেও তিনি যেয়ে তাঁর তনুমনকে বিলিয়ে বলতেন, ভালবাসি মানুষকে, তোমাদের কে।
খোকা তরুণ বয়সে নিজে ভাল ফুটবল খেলতেন। ঢাকার বনেদি ক্লাব ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে খেলতেন। ১৯৫২, ১৯৬২, ১৯৬৬,১৯৬৯ ও ১৯৭১ সালের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটগুলো জানিয়েই দেয়, খোকা বাঙালি জাতির অধিকারের প্রশ্নে সময় দিয়েই তো তথা জেলজুলুমের স্বাদ নিয়েই বঙ্গবন্ধু হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু, ফুটবলের প্রতি আসক্তি থেকেও খোকার পরিচয় হয়ে গেল, একটি জাতির জনক হিসাবে।
শেখ কামালের কথা আলাদা করেই বলতে হবে। একদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ে পড়তে থেকে যেমন থিয়েটার, নাটক, গান কিভাবে করতে হবে, তা নিয়ে তাঁর বেলা-অবেলায় অনেক সময় দিতে হত—অন্যদিকে খেলাধুলার প্রসারে ফুটবল, ক্রিকেট,হকি এমনকি ম্যারাথন দৌড়েও তিনি প্রতিভাধর এথলেট খুঁজতেন বলে চাউর আছে। তিনি ট্যালেন্ট খুঁজতেন। বাংলাদেশে বহুমুখী সাংস্কৃতিক পথচলায় মগ্ন থেকে কাউকে নিয়ে উদাহরণ দিতে চাইলে শেখ কামালের মত সংস্কৃতিবান্ধব চরিত্র আর আসেনি। আমাদেরকে ইতিহাসের সেই সাক্ষ্য দিতেই হবে। খুব আস্থা নিয়ে বলা যায় যে, ২০২২ সালের যে বিশ্বকাপ ফুটবল হতে যাচ্ছে, সেখানে অংশগ্রহণকারী দল হিসাবে বাংলাদেশের নাম থাকবে, এমন কল্পনাও কেহ করে না। প্রেক্ষিত তা জানায়। কিন্তু, শেখ কামাল বেঁচে থাকলে আমরা ২০০২ সালের আগেই বিশ্বকাপে খেলতাম। আমি তা ধারণ করেই বলছি। অর্থাৎ ২০ বছর আগেই আমরা বিশ্বকাপ ফুটবলে চলে যেতাম।
এদিকে সেই ফুটবলের জন্য কথা রেখেছিলেন প্রকৃতিগতভাবে তাঁর দুই সন্তান শেখ কামাল ও শেখ জামাল। দুইজনাই ফুটবল খেলতেন। এক পর্যায়ে শেখ কামাল তো বাংলাদেশের ফুটবল কে নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করলেন। ক্লাব ফুটবলে ঢাকা আবাহনী চলে এলো। তিনি, যথারীতি উদ্যোক্তা। ফলত খোকার পুত্র, কন্যা, পুত্রবধু—-সব্বাই ছিল ক্রীড়ামোদি ও খেলোয়াড় পর্যায়ের। ঘরের মধ্যে এতজন স্পোর্টিং চরিত্র, এটা নিয়ে বিশদ বর্ণনা করতে গেলেও মহাকাব্য রচনা করা যায়।
শেখ কামালের বড় বোন, আমাদের এই বিশ্বের মহান নেত্রী শেখ হাসিনার শারীরিক ভাষা কী বলে ? কখনো কী কেহ মন দিয়ে দেখতে চেয়েছেন ? যদি কেহ দেখত, তাহলে শেখ হাসিনার ক্রীড়াপ্রেম নিয়ে কেন শত শত কলাম রচনা হয়নি ? কেন বুড়ো বয়সে এসে এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনকে খুব কষ্ট করে সময় বের করে হালে লিখতে বসতে হচ্ছে? কারণ, আমরা ইতিহাসের প্রকৃত সুন্দর রুপের লিখিত ধারাভাষ্যে মন দিতে পারছি না। উপরন্ত, দুই চোখের পাশাপাশি যে আমাদের আরেকটি তৃতীয় নয়ন দিয়ে শ্রেষ্ঠ কাজগুলোর ওপর গবেষণা করার দরকার, লেখা দরকার, বলার দরকার—-তা যেন দেখতেই পারছি না !
খোকার পরিবারের জন্য হলেও ফুটবলে বিপ্লব অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়। বাঙালি জাতি তাঁদের প্রতি ঋণ কিভাবে শোধ করবে ? বিস্তারিত ব্যাখায় যাব না আজ। একটা অংশ নিয়েই চলুক। ফুটবলের জন্য কী করেনি বঙ্গবন্ধু ? তিনি ফুটবলের উন্নতি চাইতেন বলেই তো শেখ কামালকে বলতেন, এগিয়ে যাও। শেখ হাসিনা কেন শিশুর মত করে আমাকের ক্রিকেটারদের খেলা দেখতে স্টেডিয়ামে চলে যান? কেন তিনি বারবার করে যে ছেলেটাকে তাঁর ভাইয়ের সাথে খেলতে দেখেছে, ডাইনিং টেবিলে খেতে দেখেছে—সেই কাজী সালাহউদ্দীনকে কেন বাফুফের দায়িত্ব দিতে সমর্থন করেছেন ?
তিনি দেখতেন যে, কী দারুণ ফুটবল সালহউদ্দীন খেলতো ! তিনি ভেবেছিলেন যে, ফুটবলের জন্য সালাহউদ্দীনই হয়তো পারবেন। কিন্তু, আসলে কি পেরেছেন ? আমি দুই বার দায়িত্ব নিয়ে রাজশাহীকে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ নগর করতে পেরেছি কিনা ? সালাহউদ্দীন আমাদের জননেত্রী আমাদের বোনের আবেগ কে ধারণ করতে পারলে বাংলাদেশের ফুটবল কেন পিছিয়ে গেল ? কেন ফিফা র্যাংকিং-এ আমরা তলানিতে চলে গেলাম ? আমি খুবই স্পষ্ট করে বলতে চাই, খোকার পরিবারের দিকে তাকান। তাঁরা শুধু দেশ স্বাধীন করার জন্য মহাশ্রেষ্ঠ পর্যায়ের ছিলেন না, তাঁরা আমাদের সকল কিছুর সমাধানে বিপ্লবী সত্তাও ছিলেন। গভীর বাস্তবতায় এই পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক পরিবারের নামটি হল, খোকার সেই রয়্যাল ফ্যামিলি—– জোর করে এতিম বানিয়ে দেয়া আমাদের দুই সহোদরা শেখ হাসিনা-রেহানার পরিবার।
হ্যাঁ, আমাদের মেয়েরা সাফ ফুটবলের চ্যাম্পিয়নশীপ ঘরে তুলতে পেরেছে। আমি যতক্ষণে লিখছি, ততক্ষণে তাঁরা নেপালের আকাশ হয়ে বাংলাদেশে এসে পৌঁছিয়েছে। আমি তাঁদের খেলা দেখেছি। দলের স্কোয়াডে থাকা প্রত্যেকের মান প্রায় একই পর্যায়ের। পরিশ্রম, অনুশীলনের ফসলে বাংলাদেশের মেয়েরা এশিয়া জয় করার পর্যায়ে চলে যেতে পারবে বলে মত আমার। সাবেক ফুটবল গ্রেট আশরাফউদ্দিন চুন্নুও তাই বলেছে। আলাদা করে রক্ষণের আখি ও সাবিনার কথা বলতেই হবে। প্রায় প্রত্যেকের স্কিলস এতটা ভাল, অবাক হয়ে গিয়েছি। লং পাস দেয়ার সক্ষমতা দেখে আমার মনে হয়েছে যে, বিশ্বের অপরাপর নারী ফুটবলের শ্রেষ্ঠ দেশ হিসাবে জার্মানি, নরওয়ে, ব্রাজিল, সুইডেনদেরকেও এরা ছেড়ে কথা বলবে না। অসাধারণ !
সবার মত করে অভিনন্দন হয়তো আমি বাঘিনীদের জানিয়েছি। কিন্তু, সত্যি বলছি, এই দলটাকে আরো ছয় বছর ধরে রেখে এশিয়া ও বিশ্ব পর্যায়ে সেরা কিছু করা সম্ভব। আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। ওদেরকে এখন অতি আদর করে পুনরায় শক্ত সাংস্কৃতিক বেষ্টনী দ্বারা বন্দী করে বলতে হবে, তোমাদেরকে আরো কিছু দিয়ে যেতে হবে। অতঃপর যাদের বয়স আজ ১৩ কিংবা ১৪, তাঁরা এসে আবার হাল ধরবে বাংলাদেশ ফুটবলের। তোমাদের সাফল্যই নতুনদের জন্য প্রেরণার হবে।
বাংলাদেশের ফুটবলের সাথে থাকা সকল পুরুষ ও নারী খেলোয়াড়, কোচ, সংগঠকদের বলবো, রাজনৈতিকভাবে নেতিবাচক মনকে না জাগিয়ে অন্তত সাংস্কৃতিক চোখ দিয়ে দেখুন। শপথ নিন। ফুটবলে শ্রেষ্ঠত্ব আনতে হবে। পুরুষ ফুটবলে। মেয়েরা এগোচ্ছে, এগিয়ে যাক। সেই খোকার ফুটবল, শেখ কামালের স্বপ্ন পূরণে কিছু একটা করতে হবে।
শেখ হাসিনাকে তো কিছুই দিতে পারি নাই আমরা। আচ্ছা, কখনও কী ভেবেছেন আমরা তাঁর জন্য কি দিতে পেরেছি? কথায় কথায় শুধু মানুষই চায় তাঁর কাছে। ভাত দাও, বস্ত্র দাও, চিকিৎসা দাও, সঞ্চয় করব— অর্থ দাও—-হ্যাঁ, সামাজিক নিরাপত্তা প্রদানে কেহ মানুক আর না মানুক, শেখ হাসিনাই এই বাংলাদেশের সর্বযুগের শ্রেষ্ঠ শাসক। শ্রেষ্ঠ না হলে টানা তিন মেয়াদে রাষ্ট্রীয় সেবা প্রদানে তিনি থাকতে পারছেন কেন ? আমরা কার্যত শেখ হাসিনাকে ভালবেসে কিছুই করতে পারছি না। তাঁর জন্য বিশেষ কিছু আমরা দেখাতে পারছি না। বরং, রাজনৈতিক অপশক্তি ১৫ আগস্ট করেছিল, ২১ আগস্ট উপহার দিয়েছিল। বিশবারের মত চেষ্টা করা হয়েছে তাঁকে হত্যার। মাঝেমাঝে চিন্তা করলে লজ্জা পাই। আসুন, ফুটবলের মাধ্যমে ওই মানুষটির জন্য শ্রেষ্ঠ কিছু করি। প্রাণখুলে হেসে লাল সবুজের বেশভুষে শেখ হাসিনা পুরুষ ফুটবলের আধিপত্য দেখতে দেশ বিদেশের স্টেডিয়ামে যেতে পারবেন কবে ? কেহ কি আমার কথা শুনতে পারছেন ?
লেখকঃ সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ