Download WordPress Themes, Happy Birthday Wishes

‘ওপেনার’ নিয়ে নতুন পরিকল্পনার শুরুতেই বিতর্ক !

ক্রীড়ালোক প্রতিবেদকঃ

দীর্ঘদিন পর নিজেকে ফিরে পেয়েছেন বিরাট কোহলি । ব্যাট হাতে পেয়েছেন রান । যদিও ভারত ব্যর্থ হয়েছে এশিয়া কাপে , কিন্তু বিরাটের ফর্ম ফিরে পাওয়া টিম ইন্ডিয়ার জন্য ছিল স্বস্তির । অন্তত আগামী বিশ্বকাপে বিরাটের এশিয়া কাপের পারফর্মেন্স যে ভরসা দেবে ভারতীয় দলকে , তাতে কোন সন্দেহ নেই ।

সর্বশেষ এশিয়া কাপের পাঁচ ম্যাচে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৭৬ রান করেছেন বিরাট কোহলি । পেয়েছেন টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটে ক্যারিয়ারের প্রথম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি । আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২২২ রান করেছেন ভারতের সাবেক অধিনায়ক , যা টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটে ভারতের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের রেকর্ড । এছাড়া পাকিস্তানের বিপক্ষে ৪০ ম্যাচে ৬০ রান করেছেন ।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যে কোন ফরম্যাটে প্রায় তিন বছর পরে সেঞ্চুরির দেখা মিলেছে বিরাটের ব্যাটে । ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গোলাপী বলে টেস্ট সেঞ্চুরি করার পর, ফের এশিয়া কাপে নিজেদের শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে শতরান করেন কোহলি। আর সেটা তিনি করেছেন ওপেনার হিসেবে । রোহিত শর্মার অনুপস্থিতিতে লোকেশ রাহুলকে নিয়ে ১১৯ রানের জুটি গড়েন কোহলি । ম্যাচে ৪১ বলে ৬২ রান করেন রাহুল ।এছাড়া আসরের প্রথম ম্যাচে ০, দ্বিতীয় ম্যাচে ৩৬ , তৃতীয় ম্যাচে ২৮ আর চতুর্থ ম্যাচে ৬ রান করেছিলেন লোকেশ ।

লোকেশ রাহুলের ভুনিকা ভারতীয় দলে শুধু ওপেনার নয় , উইকেট কিপার হিসেবেও খেলেন তিনি । এছাড়া মিডল অর্ডারে ব্যাট করতে সমানদক্ষ তিনি । অন্যদিকে , আইপিএলসহ ঘরোয়া আসরে ওপেন করার অভিজ্ঞতা আছে বিরাটের । এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তার খুনে মেজাজ দেখে ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা তাই ভাবছেন , আসন্ন বিশ্বকাপ বিরাটকে দিয়ে ইনিংস সূচনা করার ।

বিশ্বকাপের আগে ২০ সেপ্টেম্বর থেকে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টুয়েন্টি সিরিজ খেলতে নামছে ভারত । এই সিরিজেই বিরাটকে ওপেন করতে দেখা যাবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে রোহিত জানিয়েছেন , ‘ বিশ্বকাপে আমরা তৃতীয় কোন ওপেনার দলে নেইনি । তাই বিরাট স্বাভাবিকভাবেই ওপেনার হিসেবে আমাদের বিকল্প । ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে আইপিএলে ওপেনার হিসেবে বিরাট সফল । তাই এটি অবশ্যই আমাদের জন্য একটি বিকল্প।’

রোহিত আরও জানান , ‘কেএল রাহুল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওপেন করবেন। ওর পারফরম্যান্স মাঝে মাঝে নজরে পড়ে না।’

এশিয়া কাপে লোকেশ রাহুল মোটামুটি রান পেলেও টি-টুয়েন্টি বিবেচনায় স্ট্রাইক রেট খুব বেশী ভাল ছিল না । ‘কেএল রাহুল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওপেন করবেন। ওর পারফরম্যান্স মাঝে মাঝে নজরে পড়ে না।’ সেই কারণেই অনেকে লোকেশের জায়গায় ওপেনার হিসেবে বিরাটকে দেখতে চাইছেন ।

তবে বিশ্বকাপে ‘ওপেনার’ নিয়ে বিকল্প ভাবনার বিরোধী গৌতম গম্ভীর । তিনি মনে করেন , এই বিষয় নিয়ে বেশী আলোচনা মানেই লোকেশের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করা । যা দলের জন্য ক্ষতির কারণ হবে ।

স্টার স্পোর্টসকে দেওয়া এক ভার্চুয়াল সাক্ষাৎকারে গম্ভীর বলেছেন, ‘আপনারা জানেন ভারতে কি হয়? যে মুহূর্তে কেউ একজন ভালো পারফরম্যান্স করতে শুরু করে … উদাহরণ হিসেবে যদি আমরা বিরাট কোহলি শতরানের কথা বলি, শেষ ম্যাচে (এশিয়া কাপে) ওপেন করতে নেমে কোহলি সেঞ্চুরি করেন, আমরা তখন ভুলেই গিয়েছিলাম রাহুল, রোহিতরাও ওপেনার হিসেবে ভারতের হয়ে কতটা ভালো খেলেছে। ওরা দীর্ঘ সময় ধরে ভারতের হয়ে খুব ভালো পারফরম্যান্স করেছে। একবার ভেবে দেখুন, যখন আপনি বলছেন, ভারতের হয়ে কোহলি ওপেন করবে কি না, তখন রাহুলের মনের অবস্থাটা ঠিক কি হয়? ভেবে দেখুন রাহুল নিজেকে কতটা অসুরক্ষিত ভাবে সেই সময়ে। প্রথম ম্যাচেই (টি-২০ বিশ্বকাপে) যদি ও একটা কম রানের ইনিংস খেলে, তা হলে কী হবে? পরের ম্যাচেই এটা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়ে যাবে, কে ইনিংস ওপেন করবে- বিরাট না রাহুল?’

ভারতের হয়ে বিশ্বকাপজয়ী ওপেনার গম্ভীর আরও বলেন, ‘আপনি কখনও-ই আপনার শীর্ষ খেলোয়াড়কে এই ধরনের পজিশনে চাইবেন না। বিশেষ করে রাহুলের মত এক জনকে। যার স্কিল রোহিত, বিরাটের থেকেও বেশি। ভেবে দেখুন, রাহুল বিশ্বকাপে যাচ্ছে এটা ভেবে যে, কী হবে যদি আমি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রান না পাই? কী হবে যদি আমার পরিবর্তে বিরাট ওপেন করে? আপনি কখনও-ই এই পরিস্থিতি চাইবেন না, তাই না। এই কারণেই আমাদের উচিত এই ধরনের প্রশ্নকে (বিরাট ওপেন করবে কিনা) পাত্তা না দেওয়া। রাহুল, রোহিতদের পরিপ্রেক্ষিতেও ভাবতে হবে আমাদের। রোহিত তো এখন অধিনায়ক। ভেবে দেখুন, ও যদি অধিনায়ক না থাকত, আর ওর সঙ্গে এই ঘটনা ঘটত, তাহলে কেমন হত। আমাদের ভাবা উচিত ভারতের উন্নতি কী করে হবে। তা না ভেবে কোনও ব্যক্তির উন্নতির বিষয় আমাদের মনোযোগ দেওয়া উচিত নয়।’

গম্ভীরের বক্তব্য উড়িয়ে দেয়ার উপায় নেই । দলে নিজের অবস্থান নিয়ে অনিশ্চয়তা যে কোন খেলোয়াড়কে মানসিক চাপে ফেলে দিতে যথেষ্ট । তাছাড়া টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটে লোকেশের রেকর্ড কিন্তু দারুণ । ৬১ ম্যাচের ৫৭ ইনিংসে প্রায় ১৪১ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ১৯৬৩ রান । সেঞ্চুরি আছে দুইটি । হাসেঞ্চুরি ১৭টি । তাই বিরাট কোহলি এক আসরে যত ভাল করুক , লোকেশকে সরিয়ে দেয়া খুব সহজ হবে না । বরং বিরাট নয় , লোকেশই দলের ওপেনার হিসেবে অটোম্যাটিক চয়েজ ।

আহাস/ক্রী/০০৪