Download WordPress Themes, Happy Birthday Wishes

ধর্ষক-নিপীড়ক ম্যারাডোনাকে শ্রদ্ধা জানায় নি নারী ফুটবলার

ক্রীড়ালোক প্রতিবেদকঃ

গত ২৫ নভেম্বর পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন দিয়াগো আর্মান্দো ম্যারাডোনা ।ইতিহাসে অন্যতম সেরা ফুটবলারের প্রয়াণ-শোকে কাতর এখন সারা বিশ্ব । নিজ দেশ আর্জেন্টিনা তো বটেই , পৃথিবীর প্রতিটি অংশে চলছে প্রয়াত ম্যারাডোনার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন । ফুটবল-ক্রিকেটসহ সব খেলার আগে দেয়া হচ্ছে এক মিনিটের নীরব-শ্রদ্ধাঞ্জলি ।

১৯৮৬ সালে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের নায়কের প্রতি মানুষের ভালবাসার প্রমাণ মিলছে সর্বত্র । সেলিব্রিটি থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের ভালবাসা প্রকাশ পাচ্ছে আর্জেন্টাইন ফুটবল ইশ্বরের জন্য । যদিও ফুটবল মাঠের অনন্য-সাধারণ নৈপুণ্যের সাথে নানা বিতর্কিত ঘটনায় বেঁচে থাকাকালীন ম্যারাডোনা ছিলেন দারুণ সমালোচিত । কিন্তু প্রয়াত ম্যারাডোনার প্রতি এখন , এই মুহূর্তে কারো কোন অভিযোগ নেই ।

আসলেই কি তাই ?

না , ম্যারাডোনার জীবনাবসানের সাথে সাথে সবাই কিন্তু ভুলে যান নি তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ড । যেমন- ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে ম্যারাডোনার ‘হ্যান্ড অফ গড’ খ্যাত গোলের কুকীর্তি ভুলে যান নি পিটার শিলটন । ইংলিশ এই কিপারের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে হাত দিয়ে গোল করেছিলেন ম্যারাডোনা । সেই ম্যাচে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে সেমি ফাইনালে ওঠে আর্জেন্টিনা , পরবর্তীতে জয় করে বিশ্বকাপ ।

ম্যারাডোনার মৃত্যুর পর ইংল্যান্ডের সাবেক গোলরক্ষক শিলটন জানিয়েছেন , ম্যারাডোনাকে তিনি ক্ষমা করেন নি । কারণ সেই অন্যায্য গোলের জন্য ম্যারাডোনা কখনও ক্ষমা চান নি , বরং গর্ব করেছেন আজীবন !

১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে ম্যারাডোনার দুই গোলেই আর্জেন্টিনা ২-১ ব্যবধানে হারিয়েছিল ইংল্যান্ডকে । দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই হাত দিয়ে প্রথম গোলটি করেন আর্জেন্টিনার প্রয়াত মহানায়ক । সেই সময় আজকের মত উন্নত প্রযুক্তি কিন্তু ভিডিও রেফারি সিস্টেম ছিল না । রেফারিও খালি চোখে সেদিন ম্যারাডোনার প্রতারণা ধরতে পারেন নি । যদিও ধরা পড়লে ম্যারাডোনার কপালে ‘লাল কার্ড’ জোটাও অস্বাভাবিক ছিল না ।

পিটার শিলটন মনে করেন , ম্যারাডোনার নিজেরই উচিত ছিল ম্যাচের পর অন্তত ‘হাত দিয়ে গোল’ করার বিষয়টি স্বীকার করা । এটাই ছিল স্পোর্টসম্যানশিপের দাবী । ‘

তিনি জানান , ‘ ‘কোনো সন্দেহ নেই, আমি যতো খেলোয়াড়ের বিপক্ষে খেলেছি, ম্যারাডোনা তাদের মধ্যে সেরা। কিন্তু এই একটি ব্যাপারেই ম্যারাডোনা চরম অখেলোয়াড়ী মনোভাবের পরিচয় দিয়েছেন।’

এদিকে পিটার শিলটন শুধু না , ম্যারাডোনার প্রতি নিজের রাগ প্রকাশ করেছেন পাউলা দাপেলা নামের এক নারী ফুটবলার । ম্যারাডোনা নারীদের প্রতি ছিলেন অশালীন – এমন দাবীতে অভিনব প্রতিবাদে সামিল হন পাউলা ।

পাউলা স্পেনের নারী ফুটবলার । খেলেন নিজ দেশের তৃতীয় বিভাগের দল ভিয়ারেস ইন্তেরিয়াসে । তার দলের খেলা ছিল ডেপোর্টিভো লা করুনার জুনিয়র দলের সাথে । ম্যাচটি অবশ্য পাউলার দল হেরেছে ০-১০ গোলের বিশাল ব্যবধানে ।

লা করুনায় অনুষ্ঠিত ম্যাচের শুরুতে ম্যারাডোনার স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন দুই দলের খেলোয়াড়রা । দুই দলের ২১ জন খেলোয়াড়ের সাথে মাঠে উপস্থিত অন্যরা সেই শ্রদ্ধা নিবেদনে শামিল হয়েছিলেন , কিন্তু ব্যতিক্রম ছিল পাউলা ।

অন্যরা যখন নীরব দাড়িয়ে ম্যারাডোনার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছিল , তখন পাউলা অন্যদিকে ঘুরে বসে পড়েন মাঠের সবুজ ঘাসে । এই কাণ্ডের জন্য অবশ্য ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন পাউলা ।

পরবর্তীতে সংবাদ-মাধ্যমে পাউলা জানান , ‘ আমার কাণ্ড দেখে অন্যরা হাসছিলো । তারা ভাবছিল, কাজটা আমি ঠিক করি নি । ‘

তিনি আরও বলেন , ‘ আমি একজন ধর্ষক-নিপীড়কের জন্য শ্রদ্ধা জানাতে পারি না । ‘

ম্যারাডোনা জীবনে অনেক কাণ্ড ঘটিয়েছেন । বান্ধবীকে মেরে সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন । আশির দশকে ইতালির নাপোলি ক্লাবে খেলার সময় ক্রিস্তিনা সিনাগ্রা নামে এক মডেলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল ম্যারাডোনার। সেই সম্পর্কের জেরে ১৯৮৬ সালের সেপ্টেম্বরে জন্ম হয়েছিল পুত্র সন্তানের । যাকে প্রথম থেকেই অস্বীকার করেছেন ম্যারাডোনা । কিন্তু ২০১৬ সালে দিয়াগো জুনিয়রকে ইটালির আদালতে স্বীকৃতি দেয়া হয় , ম্যারাডোনাও মেনে নেন । ম্যারাডোনার বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের মেয়ে জানার জন্য মা ভ্যালেরিনা সাবালাইনকেও স্বীকৃতি আদায়ে আদালতে যেতে হয়েছে ।

এসব ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়েই পাউলা নামের নারী ফুটবলারটি প্রতিবাদ করলেন ম্যারাডোনার জন্য নীরবতা পালনে অস্বীকৃতি জানিয়ে ।

আহাস/ক্রী/০০৪