Download WordPress Themes, Happy Birthday Wishes

রেকর্ড গড়ে আলোচিত পর্তুগালের নতুন রোনালদো

আহসান হাবীব সুমন/ক্রীড়ালোকঃ

পর্তুগালের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল ফুটবলার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো । শুধু পর্তুগাল কেন , ফুটবল বিশ্বেই রোনালদো পরিচিত ‘সবার সেরা ‘ হিসেবে । বর্তমানকে ছাপিয়ে যিনি ইতোমধ্যেই ঠাই করে নিয়েছেন সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের সংক্ষিপ্ত তালিকায় ।

ক্লাব আর আন্তর্জাতিক ফুটবলে সমান সফল রোনালদো এখন ‘রাজা’র আসনে । যাকে ‘আইডল’ বানিয়ে হিমালয়ের চুড়া জয়ের স্বপ্ন দেখেন নবীন ফুটবলাররা । বিশেষ করে নিজ দেশ পর্তুগালে রোনালদো যে ফুটবল-বিপ্লব ঘটিয়েছেন , সেটা এক কথায় অনন্য । সেই দেশে সবাই এখন ‘রোনালদো’ হতে চায় । যার সুবাধে বেরিয়ে আসছে ঝাঁকে ঝাঁকে ফুটবলার । যে কারণে এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম ধারাবাহিক দল এখন পর্তুগাল । যারা রোনালদোকে ছাড়াও উড়িয়ে দিতে পারে যে কোন প্রতিপক্ষকে । দুই দিন আগেই রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলা ক্রোয়েশিয়াকে উয়েফা নেশন্স লীগে উড়িয়ে দিয়েছে পর্তুগাল । সেই ম্যাচে রোনালদো খেলেন নি । কিন্তু ব্রুনো ফার্নান্দেজ , হোয়াও ফেলিক্স আর আন্দ্রে সিলভারা ‘নেতা’র অভাব বুঝতে দেন নি মাঠে ।

ইতোমধ্যেই পর্তুগাল পেয়েছে ব্রুমা , দিয়াগো জোতা , গঞ্জালো গুয়েডেস , রুবেন নেভেস, হোয়াও মুতিনহো , ফেলিক্স , ব্রুনো আর রাফায়েল লিয়াওর মত তরুণ প্রতিভা । যাদের প্রায় সবাই ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক ফুটবলে খেলে ফেলেছেন । ২১ বছরের লিয়াও পর্তুগীজ-২১ দলে আলো ছড়াচ্ছেন । খেলছেন এসি মিলানের মত ক্লাবে । তার জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া শুধুই সময়ের ব্যাপার ।

পর্তুগালের পাইপ-লাইনে তরুণ ফুটবলার উঠে আসছে একের পর এক । সর্বশেষ সেই তালিকায় উঠে এসেছে ফাবিও সিলভার নাম ।পোর্তো আর বেনফিকার জুনিয়র দলের হয়ে শুরু তার । সর্বশেষ মৌসুমে পর্তুগীজ প্রিমিয়ার লীগে অভিষেক হয়েছে । খেলেছেন সব মিলিয়ে ২১ ম্যাচ , করেছেন তিনটি গোল । এছাড়া বয়সভিত্তিক ফুটবলে ধাপে ধাপে এগিয়ে চলা ফাবিও এখন প্রতিনিধিত্ব করছেন পর্তুগাল অনূর্ধ্ব-২১ দলের ।

সেই ফাবিওকে ক্লাব ইতিহাসে সবচেয়ে বেশী দামে দলে ভিড়িয়েছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের ক্লাব উলভারহ্যাম্পটন । পাঁচ বছরের চুক্তিতে প্রায় ৪০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে তাকে দলভুক্ত করেছে উলভস । বিশ্বের সবচেয়ে দামী টিন-এজ ফুটবলারদের মধ্যে ফাবিও এখন সপ্তম স্থানে ।

এই ক্ষেত্রে বিশ্বরেকর্ড কিলিয়ান এমবাপ্পের । ২০১৭ সালে মোনাকো থেকে মাত্র ১৮ বছর বয়সী এমবাপ্পেকে দলে টানতে ১৮০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করেছিল পিএসজি। কোনো টিনএজারের জন্য ফুটবল ইতিহাসে এর আগে এত অর্থ খরচ করেনি কোনো দল। দ্বিতীয় স্থানে আছেন ফেলিক্স । ক্লাব রেকর্ড ১২৬ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে তাকে বেনফিকা থেকে তাকে দলে ভেড়ায় স্পেনের এথলেটিকো মাদ্রিদ ।

এই তালিকায় ফ্যাবিওর আগে আছে হল্যান্ডের ম্যাথু ডি লিট , ইংল্যান্ডের এন্থনি মার্শাল, ব্রাজিলের রড্রিগো , আরেক ব্রাজিলিয়ান ভিনিসিয়াস জুনিয়র ।

২০১৯-২০ মৌসুমে পোর্টোর হয়ে রেকর্ড গড়ে অভিষেক হয় ফ্যাবিওর । তিনি পোর্টোর ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে খেলেছেন প্রিমিয়ার লীগ । ২০১৯ সালের আগস্টে গিল ভিসেন্তে ক্লাবের বিপক্ষে মাত্র ১৭ বছর ২২ দিনে সিনিয়র ফুটবলে অভিষেক হয় তার । একই বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর উয়েফা ইউরোপা লীগে অভিষেক হয় তার । সুইজারল্যান্ডের ইয়াং বয়েজের বিপক্ষে মাঠে নেমেই তিনি গড়েন পোর্টোর সবচেয়ে কমবয়সী খেলোয়াড় হিসেবে ইউরোপিয়ান আসরে খেলার রেকর্ড ।

এছাড়াও পোর্তোর ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা ফ্যাবিও । ২০১৯ সালের অক্টোবরে রুবেন নেভেসের রেকর্ড ভেঙ্গে তিনি হয়ে যান ক্লাবের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা ।

পোর্টোর যুব দলের হয়ে প্রথম নজর কাড়েন ফ্যাবিও । ২০১৮-১৯ মৌসুমে পোর্টোকে জেতান উয়েফা যুব লীগ । এই মৌসুমে পোর্টো যুব দলের হয়ে ২৬ ম্যাচে ২০ গোল করেছিলেন তিনি ।

ইতোমধ্যেই ফ্যাবিওকে ‘নতুন রোনালদো’ ডাকা শুরু করেছে সবাই । উইঙ্গার আর ফরোয়ার্ড হিসেবে খেলতে সমান দক্ষ ফ্যাবিওর খেলায় সবাই দেখতে পাচ্ছেন রোনালদোর ছায়া । ফ্যাবিওর রক্তেই আছে ফুটবল । তার বাবা জর্জ সিলভা খেলেছেন পর্তুগীজ প্রিমিয়ার লীগে । ২০০১ সালে বোয়াভিস্তার হয়ে জিতেছেন প্রিমিয়ার লীগ । খেলেছেন পর্তুগাল জাতীয় দলের হয়ে দুইটি ম্যাচ । যার মধ্যে একটি ছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ফ্রেন্ডলি ম্যাচে ।

উলভসদের কোচ হিসেবে ২০১৭ থেকে কাজ করছেন নুনো এস্পিরিতিো সান্তো । তিনি একজন পর্তুগীজ । উলভসদের হয়ে ইতোমধ্যেই খেলেছেন বা খেলছেন দিয়াগো জোতা , হোয়াও মুতিনহো , ড্যানিয়েল পডেঞ্চে, রোদেরিক মিরান্দা, পেদ্রো নেতো, ব্রুনো জোর্দাও, রুবেন ভিনাগ্রের মত পর্তুগীজ ফুটবলার । সেটা শুধু কোচ সান্তোর কারণেই নয় , বরং উলভসদের হয়ে পর্তুগীজ খেলোয়াড় সরবরাহের কাজ করেন জর্জ মেন্দেস । যিনি আবার রোনালদোর এজেন্ট । তাই ধারণা করা যায় , পর্তুগীজ খেলোয়াড়দের ইংল্যান্ডে খেলার সুযোগ করে দেয়ার পেছনে রোনালদোর ‘মস্তিস্ক’র অবদান আছে , যেমনটা আরেক তরুণ আন্দ্রে সিলভার এসি মিলানে যাওয়ায় অবদান রেখেছিলেন রোনালদো । আসলে পর্তুগালের ফুটবলারদের বড় আসরে খেলার সুযোগ করে দিয়ে গড়ে তোলার পেছনে রোনালদোর পরিকল্পনা অনেকদিনের । সেই কাজটাই সারছেন জর্জ মেন্দেজ ।

ফ্যাবিওকে পাওয়ার জন্য চেষ্টা করেছিল লিভারপুল আর রিয়েল মাদ্রিদ । কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাকিমাত করেছে উলভসরা । ফ্যাবিওকে ভিড়িয়ে ক্লাবের এক্সিকিউটিভ জেফ শাই জানিয়েছেন , ‘হ্যাঁ ফ্যাবিও এখন আমাদের । ‘

উলভস দলে একঝাঁক পর্তুগীজ থাকায় ফ্যাবিওর পক্ষে মানিয়ে নেয়া খুব কঠিন হবে না । তাছাড়া কোচ হিসেবে সান্তো তার পরিচিত । পোর্টোর কোচ থাকাবস্থায় কিশোর ফ্যাবিওর খেলা দেখেছেন সান্তো । সেই হিসেবেই এই তরুণের প্রতিভা সম্পর্কে তিনি ওয়াকিবহাল । উলভস কোচের আশা , উলভসেই বড় খেলোয়াড় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবেন ১৮ বছরের ফ্যাবিও ।

ফ্যাবিও সামনের দিনে কতটা আলো ছড়াবেন , সেটা সময়েই বলে দেবে । বিশেষ করে অল্প বয়সে রোনালদোর মত কিংবদন্তীর সাথে তুলনা তার জন্য হতে পারে বাড়তি চাপ । তবে সেই চাপ থেকে বেরিয়ে আসাই বড় তারকা হওয়ার লক্ষণ । ফ্যাবিও সেটা পারবেন , এই আশায় তাকিয়ে আছে গোটা পর্তুগাল । তাতে যে পর্তুগীজদের লাভ ।

আহাস/ক্রী/০০৪