Download WordPress Themes, Happy Birthday Wishes

আবারও ডিগবাজী খেলেন মেসি !

আহসান হাবীব সুমন/ক্রীড়ালোকঃ

ফুটবল বিশ্বে লিওনেল মেসিকে নিয়ে যত নাটক হয়েছে , সেটা বোধহয় ইতিহাসে আর কোন ফুটবলারকে নিয়ে হয় নি । জাতীয় দল থেকে একাধিকবার অবসরের নাটক করেছেন মেসি । সর্বশেষ সব নাটকীয়তা ছাড়ালেন বার্সেলোনা ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে । যদিও শেষ পর্যন্ত তাঁর কোন ঘোষণাই বাস্তব রুপ পায় নি । বরং দলের খারাপ সময়ে মেসির এমন নাটকে এখন বিরক্ত আর কৌতুকবোধ করছে সাধারণ ভক্তরা ।

ক্লাব ফুটবলে সফল ফুটবলারের তালিকা করলে মেসির জায়গা নিঃসন্দেহে হবে উপরের দিকে । শুধুমাত্র বার্সেলোনার সাফল্যকে পুঁজি করে মেসি আজ সেরাদের একজন । অথচ জাতীয় দলের হয়ে মেসির সাফল্যের ভাণ্ডার একেবারে শুন্য । নেই কোন আন্তর্জাতিক ট্রফি । যদিও মেসি তিনবার আর্জেন্টিনার হয়ে কোপা আমেরিকা এবং একবার খেলেছেন ফিফা বিশ্বকাপের ফাইনালে ।

২০১৬ সালে কোপা আমেরিকার ফাইনালে মেসির আর্জেন্টিনা হেরে যায় চিলির কাছে । টাইব্রেকারে মেসি মিস করেন পেনাল্টি শট । সেই হারের পর মেসি ঘোষণা দেন জাতীয় দল ছাড়ার । যদিও কিছুদিন পরেই আবারও জাতীয় দলের জার্সি গায়ে দেখা যায় এলএম-টেনকে ।

২০১৬ সালের ঘটনায় আর্জেন্টিনার সর্বকালের সেরা ফুটবলার ডিয়াগো ম্যারাডোনা বলেছিলেন , ‘ টানা তিনটি ফাইনালের দুঃখ ভুলতে আর দেশবাসীর  সমবেদনা পেতে মেসি অবসর নিয়ে  খানিকটা নাটক করলেন !’ 

মেসি একই ঘটনা ঘটিয়েছেন ২০১৮ সালের বিশ্বকাপের পর । নক আউট পর্বে মেসির অধিনায়কত্বে আর্জেন্টিনা হেরে যায় ফ্রান্সের কাছে । সেই হারের পর অবসরের আভাস দিয়ে অনেকদিন জাতীয় দলের বাইরে ছিলেন মেসি । যদিও পরবর্তী বছরে মেসি খেলেছেন কোপা আমেরিকায় । সেখানেও তৃতীয় হয়ে মেসি করেছেন নানা নাটক । দলের ব্যর্থতার দায় রেফারি আর আয়োজক ব্রাজিলিয়ানদের উপর চাপান তিনি । এমন ঘটনায় সাউথ আমেরিকার ফুটবল ফেডারেশনের (কনমেবল) দেয়া তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা ভোগ করেন মেসি ।

জাতীয় দলের বাইরে বার্সেলোনায় মেসি কম নাটক করেন নি । একাধিকবার তিনি দলের সাথে নতুন-চুক্তি ঝুলিয়ে রেখেছেন । আর সেটা শুধু বেতন বাড়াবার জন্যই ! তবে ২০১৯-২০ মৌসুম শেষে মেসি যা করলেন তাঁর কোন তুলনা নেই ।

সর্বশেষ মৌসুমে বার্সেলোনা থেকেছে শিরোপাহীন । বিশেষ করে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের কোয়ার্টার ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে বার্সার ২-৮ গোলের পরাজয় ছিল সমর্থকদের জন্য বড় ধাক্কা । অধিনায়ক আর সেরা খেলোয়াড় হিসেবে দলের এই দায় সিংহভাগ বর্তায় মেসির কাঁধে । কিন্তু তিনি যে মেসি ! দলের সাফল্যের পুরো দাবী নিজের কাঁধে নিতে তিনি সদা-তৎপর , কিন্তু ব্যর্থতা নয় । দলের ব্যর্থতা তিনি সব সময়ে অন্যদের কাঁধে চাপাতেই অভ্যস্ত । জাতীয় দলে যেমনটা বলির-পাঠা ছিলেন গঞ্জালো হিগুইন কিংবা সার্জিও আগুয়েরো । তেমনি মেসি বার্সেলোনায় এবার প্রতিপক্ষ  বানিয়েছেন টিম ম্যানেজমেন্টকে । প্রথমে স্পোর্টস ডিরেক্টর এরিক আবিদাল এবং পরে খোদ সভাপতি হোসে মারিয়া বার্তামিউকে দলের ব্যর্থতার জন্য দায়ী করেছেন তিনি । সাথে কোচ কুইকে স্যাতিয়েনের সাথে বিবাদ তো আছেই । পছন্দের কোচ আর্নেস্তো ভেলভার্দের প্রস্থানের পর স্যাতিয়েনকে ভালভাবে নেন নি মেসি । লুইস সুয়ারেজসহ আরও কিছু সিনিয়র খেলোয়াড় নিয়ে অসহযোগিতা করেছেন কোচকে । খেলার মাঠেও মেসির সাথে স্যাতিয়েনের দূরত্ব প্রকাশ্যে এসেছে একাধিকবার । যা বার্সার সাম্প্রতিক ব্যর্থতার অন্যতম কারণ ।

২০১৯-২০ মৌসুমে কোন শিরোপা না পাওয়া মেসি ফিরে এলেন পুরনো চেহারায় । দলের ব্যর্থতা থেকে নিজেকে আড়াল করতেই হয়ত ঘোষণা দিলেন বার্সা ছাড়ার । যদিও বার্সার সাথে চুক্তি আছে তাঁর আরও এক বছরের । এমনকি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী নির্ধারিত সময়েও বার্সাকে নোটিশ দেন নি দল ছাড়ার । তাই বার্সা স্বাভাবিকভাবেই দাবী করে বসে চুক্তির শর্তের ৭০০ মিলিয়ন রিলিজ ক্লজ । অন্যদিকে মেসি সেই রিলিজ-ক্লজ থেকে মুক্তি চাইলেও বার্সার কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন ।

নিজের সেরা সময় ফেলে আসা ৩৩ বছরের মেসি জানেন , ৭০০ মিলিয়ন ইউরো রিলিজ-ক্লজ দিয়ে তাকে এখন আর কেউ নেবে না । যদিও উড়ো খবর ছিল , মেসির জন্য এই টাকা খরচে রাজী ম্যানচেস্টার সিটি । কিন্তু ম্যান সিটি কখনই এমন ঘোষণা আনুষ্ঠানিকভাবে দেয় নি । তারা মেসির সাথে আলাপ করেছে এটা সত্যি , কিন্তু কত টাকায় আর্জেন্টাইনকে দলে নেবে সেটা প্রকাশ করে নি । তবে মূল্যটা যে ৭০০ মিলিয়ন নয় , এটা নিশ্চিত । তেমন হলে মেসি এতদিনে ম্যান সিটি শিবিরে থাকতেন । আবার তেমন হলে রিলিজ-ক্লজ কমাতে বার্সার সাথেও দেন-দরবার করতেন না মেসি স্বয়ং । 

সব মিলিয়ে ম্যান সিটির তরফ থেকে মেসিকে ৭০০ মিলিয়ন ইউরোর প্রস্তাবের কোন সত্যতা পাওয়া যায় নি । সমস্যা সমাধানে মেসির বাবা হোর্হে মেসি বৈঠকে বসেছিলেন বার্সেলোনার সভাপতির সাথে । সেখানে তিনি জানিয়ে দেন , মেসি বার্সেলোনায় থাকতে চান না । কিন্তু সভায় বার্সেলোনার অনড় মনোভাবে সুবিধা করতে পারে নি মেসি-পক্ষ ।

বার্সেলোনা সাফ জানিয়ে দিয়েছে , চুক্তি ভাংলে মেসির বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার কথা । এই ক্ষেত্রে বার্সার পক্ষে দাঁড়িয়েছে লা লীগা কর্তৃপক্ষ । অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে , বার্সেলোনা অভিযোগ করলে ফিফা’র নিষেধাজ্ঞার খাঁড়ায় পড়তে পারেন মেসি ।

এমন পরিস্থিতিতে মেসি নিজের বিপদ বুঝে আরেকবার ‘ডিগবাজী’ দিয়েছেন । স্প্যানিশ পত্রিকা ‘মার্কা’ জানিয়েছে , ২০২০-২১ পর্যন্ত বার্সেলোনা শিবিরে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মেসি । নিজের এজেন্ট অর্থাৎ বাবা হোর্হে মেসি আর আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করেই মেসি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছে তারা ।

মার্কা’র খবর , আগামী সপ্তাহের শুরুতেই বার্সার নতুন কোচ রোল্যান্ড কোম্যানের অধীনে অনুশীলনে ফিরছেন মেসি ।

আহসান/ক্রী/০০৬