Download WordPress Themes, Happy Birthday Wishes

ম্যান ইউতে আবার পর্তুগীজ বিপ্লব

ক্রীড়ালোক প্রতিবেদকঃ

ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ আর ইউরোপের সফল দল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সময়টা ভাল যাচ্ছিল না একেবারেই । ইংল্যান্ডের সর্বাধিক ২০বারের লীগ চ্যাম্পিয়নরা শেষবার শিরোপা জিতেছিল ২০১২-১৩ মৌসুমে । আর ইউরোপের সেরা ক্লাব আসর উইয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ঘরের তুলেছিল সর্বশেষ ২০০৮ সালে । পরবর্তী সময়ে দুইবার ফাইনালে উঠেও শিরোপা জয় করা হয় নি রেড ডেভিলদের ।

গত আট বছরে ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ফুটবল আর ইউরোপের সেরা আসরে ক্রমশ অবনতি হয়েছে ম্যান ইউর পারফর্মেন্সের । এই সময়ে কোন লীগ মৌসুমে সেরা তিনে থাকা হয় নি দলটির । একাধিকবার সুযোগ হয় নি চ্যাম্পিয়ন্স লীগের মুল পর্বে খেলার । গত আট বছরে সাফল্যের মধ্যে কেবল একবার করে এফএ কাপ , লীগ কাপ আর কমিউনিটি শিল্ডের সাথে দুই বছর আগে উইয়েফা ইউরোপা লীগের শিরোপা জয় । ম্যান ইউর মত দলের অতীত ইতিহাস বিবেচনায় যা একেবারেই বেমানান ।

অথচ সেই ম্যান ইউ আবার নতুন করে যেন অপরাজেয় হয়ে উঠেছে । এমন নয় যে , শিরোপা জিততে শুরু করেছে ম্যান ইউ । কিন্তু জানুয়ারির পর থেকে দলটির খেলার মধ্যে দেখা যাচ্ছে অন্যরকম ধার । এখনও দলটি ৩২ ম্যাচে ৫২ পয়েন্ট নিয়ে আছে প্রিমিয়ার লীগের পাঁচে । লড়ছে আগামী মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লীগে সরাসরি খেলার ছাড়পত্র আদায়ের জন্য । কিন্তু সাম্প্রতিক অবস্থায় মনে হচ্ছে , মৌসুম শেষে সেরা তিনের মধ্যেও থাকা সম্ভব ম্যান ইউর । কারণ লিভারপুলের শিরোপা নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর ৩২ রাউন্ড শেষে ৫৫ পয়েন্ট নিয়ে তিনে আছে লিয়েস্টার সিটি । এই তিন পয়েন্টের ব্যবধান শেষ ছয় ম্যাচে ঘোচানো খুবই সম্ভব ম্যান ইউর পক্ষে , অন্তত সাম্প্রতিক পারফর্মেন্স সেই আশা যোগাচ্ছে ম্যান ইউর ভক্তদের ।

গত ফেব্রুয়ারি থেকে ইউরোপের অন্যতম ধারাবাহিক দল কিন্তু ম্যান ইউ । এই সময়ে টানা ১৫ ম্যাচে অপরাজিত আছে দলটি । এই মুহুর্তে ইউরোপের শীর্ষ ৫ লিগে এমন একটানা অপরাজিত থাকার এর চেয়ে বড় রেকর্ড আছে কেবল বায়ার্ন মিউনিখের (২৫)।

কিভাবে এমন বদলে গেল ম্যান ইউ ?

আসলে ম্যান ইউকে বদলে দিয়েছেন ব্রুনো ফার্নান্দেজ নামের এক পর্তুগীজ । ইউনাইটেড শিবিরে একজন প্লে-মেকারের জন্য হাহাকার চলছিল বহুদিন । ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো দল ছাড়ার পর ম্যান ইউ দল থেকে হারিয়ে গিয়েছিল ‘এক্স-ফ্যাক্টর’ । যা যে কোন চ্যাম্পিয়ন দলের জন্য খুব জরুরী । সেই এক-ফ্যাক্টরের খোঁজেই গত কয়েক বছরে জ্লাটান ইনব্রাহিমোভিচ , এলেক্সিস সানচেজ আর রুমেলু লুকাকুদের শরনাপন্ন হয়েছিল ম্যান ইউ । কিন্তু তাদের কেউই ম্যান ইউকে ভরসা দিতে পারেন নি ।

শেষ পর্যন্ত ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ম্যান ইউ দলে ভেড়ায় ব্রুনো ফার্নান্দেজকে । শীতকালিন দলবদলের একদম শেষদিনে। রোনালদোর জাতীয় দলের সতীর্থকে দলে ভেড়াতে ৬৮ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ করে রেড ডেভিলরা । লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে , ব্রুনো এসেছেন রোনালদোর শৈশবের ক্লাব স্পোর্টিং সিপি থেকেই । যেখান থেকে এসে একদিন রোনালদো বিশ্বসেরা ক্লাব বানিয়েছিলেন ইংলিশ জায়ান্টদের ।

ফার্নান্দোকে দলে নিয়েই কোচ ওলে গানার সোলস্কায়ের বলেছিলেন , ‘ এতদিনে আমরা দলের জন্য ‘এক্স-ফ্যাক্টর’ খুঁজে পেলাম ‘ ।

সোলস্কায়েরের কথার প্রমাণ মিলেছে বিগত পাঁচ মাসে । ফেব্রুয়ারি থেকে ম্যান ইউর হয়ে মাঠে নামা ব্রুনো খেলেছেন আটটি লীগ ম্যাচ । করেছেন পাঁচটি গোল , করিয়েছেন তিনটি । ফার্নান্দেজ আসার পর বেড়ে গেছে ইউনাইটেডের গোল করার হারও। সব প্রতিযোগিতায় ফার্নান্দেজ যে ১২ ম্যাচে খেলেছেন, তাতে ইউনাইটেড গোল করেছে ২৮টি। আর হজম করেছে মাত্র একটি।

অর্থাৎ মধ্য-মাঠের ফার্নান্দেজ এখন সত্যিকারভাবেই ম্যান ইউর সবচেয়ে বড় ভরসা । একজন নিখুঁত প্লে-মেকার হিসেবে নিজে গোল করছেন , করাচ্ছেন সতীর্থদের দিয়ে । সর্বশেষ মঙ্গলবার (৩০ জুন) ব্রাইটনের বিপক্ষে প্রিমিয়ার লিগে জোড়া গোল করেছেন ফার্নান্দেজ।

২৫ বছরের ফার্নান্দেজকে পেয়ে মিডফিল্ড সমস্যার সমাধান অনেকটাই খুঁজে পেয়েছে ম্যান ইউ । ইদানিংকালে মধ্যমাঠে আন্দ্রেস পেরেরা আর জেসে লিঙ্গার্ড একেবারেই সুবিধা করতে পারছিলেন না । সেখানে ফার্নান্দেজ খেলতে নেমে নতুন প্রাণের সঞ্চার করেছেন। ফার্নান্দেজের সবচেয়ে বড় গুণ বোধ হয় বিটুইন দ্য লাইন নিখুঁত পাস দিতে পারা। এছাড়া বক্সের বাইরে থেকে শট নেয়ার ক্ষেত্রে তিনি আগ্রাসী । সব মিলিয়ে ব্রুনো এখন ম্যান ইউতে অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণা ।

ব্রুনোর মধ্যে রয়েছে বুনো এক চরিত্র । যা খুব ভালভাবে মিলে যায় রোনালদোর সাথে । ম্যানচেস্টার ডার্বিতে পেপ গার্দিওলার ওপর গরম দেখিয়ে বল ছিনিয়ে নেওয়া বা গোলের উদযাপনেও ‘রগচটা’ চরিত্র কিছুটা ফুটে উঠেছে ফার্নান্দেজের। এছাড়া রনের মত ব্রুনো হারতে চান না , এটাও তার বড় গুণ ।

ইতোমধ্যেই ম্যান ইউ ভক্তদের মন জয় করেছেন ব্রুনো । তারা আদর করে এই পর্তুগীজের নাম রেখেছে ‘দা মিল্ক ম্যান’ । সেটাও একটা মজার ঘটনার পর । ব্রাইটনের বিপক্ষে ম্যাচের পর অন্য ফুটবলাররা যেখানে ‘এনার্জি ড্রিংক’ পান করায় ব্যস্ত , সেখানে ব্রুনোকে দেখা গেছে দুধের বোতলে চুমুক দিতে । এই কারণেই তিনি ম্যান ইউ ভক্তদের কাছে হয়ে গেছেন ‘মিল্ক-ম্যান’ ।

ম্যান ইউ কোচ আপাতত দলের লক্ষ্য ঠিক করেছেন তিনে থাকা । তাতে আগামী বছর চ্যাম্পিয়ন্স লীগে সরাসরি খেলার ছাড়পত্র পাবে রেড ডেভিলরা । ম্যান ইউর সাবেক গ্রেট ফুটবলার মনে করছেন , ব্রুনো সেই লক্ষ্য পূরণে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন সফলভাবে ।

ব্রুনোকে নিয়ে শুধু ম্যান ইউ না , স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে পর্তুগালও । ইতোমধ্যেই দেশের হয়ে ১৯ ম্যাচে দুই গোল করেছেন তিনি । ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সাথে মিলে ব্রুনো আগামীতে জাতীয় দলে আরও অনেক কারিশমা দেখাবেন , এমনটাই আশা সকলের ।

ব্রুনো  ভবিষ্যতে ম্যান ইউ কিংবা পর্তুগাল দলের ভরসা হয়ে উঠতে পারবেন কিনা সেটা সময়েই বলে দেবে । বিশেষ করে , রোনালদোর দেশের খেলোয়াড় হওয়ায় এই মুহূর্তে তার উপর প্রত্যাশার চাপটা বেশী । ফুটবল জগতে রোনালদো যা করেছেন বা করছেন , সেটার পুনরাবৃত্তি করা প্রায় অসম্ভব । তবে রোনালদোর ছায়ায় জাতীয় দলে আর রোনালদোর কীর্তির  অনুপ্রেরণায়  ম্যান ইউতে ব্রুনোর রয়েছে উজ্জল সম্ভাবনা ।  সেই সম্ভাবনার অংক বাস্তবে কতটা মেলাতে পারেন ব্রুনো , সেই প্রশ্নের জবাব পেতে সবাই তাকিয়ে আছে ভবিষ্যতের দিকে । 

আহাস/ক্রী/০০২