Download WordPress Themes, Happy Birthday Wishes

রোনালদো আর মেসি সেরা নন !

আহসান হাবীব সুমন/ক্রীড়ালোকঃ

এক যুগের বেশী সময় ধরে ফুটবল-বিশ্বকে শাসন করে আসছেন  ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো আর লিওনেল । রোনালদো জিতেছেন বিশ্বের একমাত্র  ফুটবলার হিসেবে পাঁচটি ব্যালন ডি অর’ আর দুইটি ফিফা বেস্ট প্লেয়ার এ্যাওয়ার্ড এবং দুইটি ইউরোপিয়ান আন্তর্জাতিক শিরোপা  । অন্যদিকে মেসির শো-কেসে ছয়টি ব্যালনের সাথে একটি ফিফা’র বর্ষসেরা এ্যাওয়ার্ড । স্বীয় অর্জনেই  সময়ের সীমারেখা ছাড়িয়ে অনেক ফুটবল-বোদ্ধা আর ভক্ত রোনালদো এবং মেসিকে সর্বকালের সেরার মর্যাদা দিতে উন্মুখ । কিন্তু ব্রাজিলের বিশ্বকাপজয়ী তারকা রবার্টো কার্লোসের চোখে , রোনালদো আর মেসির চেয়ে সেরা রোনাল্ডো নাজারিও ডি লিমা ।

ব্রাজিলের হয়ে দুইটি বিশ্বকাপ জিতেছেন রোনাল্ডো । যদিও ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপে ব্রাজিলের স্কোয়াডে থাকলেও ম্যাচ খেলার সুযোগ হয় নি কম বয়সের কারণে । কিন্তু ১৯৯৮ সালে ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত পরের বিশ্বকাপেই নিজেকে মেলে ধরে ব্রাজিলকে নিয়ে যান ফাইনালে । ‘রহস্যজনক অসুস্থতা’র কারণে রোনাল্ডো অবশ্য ফাইনালে নিজেকে মেলে ধরতে পারেন নি । ব্রাজিলও হেরে যায় স্বাগতিক ফ্রান্সের কাছে । তবে আসরের সেরা খেলোয়াড়ের ‘গোল্ডেন বল’ ঠিকই জিতে নেন রোনাল্ডো ।

২০০২ সালে ব্রাজিলের বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক রোনাল্ডো । আগের হতাশা ভুলিয়ে জার্মানির বিরুদ্ধে ফাইনালে একাই দুই গোল করে ব্রাজিলকে এনে দেন বিশ্বকাপ । সর্বোচ্চ আট গোল করে জেতেন আসরের ‘গোল্ডেন বুট’ । সব মিলিয়ে ১৫ গোল করে বিশ্বকাপের ইতিহাসের দ্বিতীয় সেরা গোলদাতা রোনাল্ডো ।

ক্লাব ফুটবলেও তুমুল সফল রোনাল্ডো ।’ফেনোমেনন’ নামে পরিচিত ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপের পরেই যোগ দেন হল্যান্ডের ক্লাব পিএসভি আইন্দহোভেনে । প্রথম মৌসুমেই করেন ৩০ গোল , সেই সময়ে তার বয়স মাত্র ১৭ বছর । উইয়েফা কাপে বেয়ার লেভারকুসেনের বিপক্ষে হ্যাট্রিক করে সুপারস্টার বনে যান রোনাল্ডো ।

১৯৯৬ সালে ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলার নির্বাচিত হন রোনাল্ডো । ১৯৯৭ সালে একই সাথে জেতেন ব্যালন ডি অর’ আর ফিফা বর্ষসেরা । সবচেয়ে কম বয়সে একইসাথে এই দুইটি পুরস্কার জেতার নজির শুধু রোনাল্ডোর । ২০০২ সালেও বিশ্বসেরা ফুটবলারের এই পুরস্কার জেতেন রোনাল্ডো নাজারিও ।

বয়স ২৩ পেরুবার আগেই ক্লাব এবং দেশের হয়ে দুইশত গোলের সীমা ছাড়ান রোনাল্ডো । এই সময়ে তিনি পিএসভি ছাড়াও খেলেছেন বার্সেলোনায় । জেতেন ১৯৯৬-৯৭ মৌসুমের লা লীগার সেরা গোলদাতার স্বীকৃতি ‘পিচিচি’। ।

১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপের পর ভয়াবহ ইনজুরিতে পড়েন রোনাল্ডো । হারিয়ে যায় তার ক্যারিয়ার থেকে মুল্যবান তিনটি বছর । এই সময় তিনি ছিলেন ইটালির ইন্টার মিলানে । অনেকেই ভেবেছিল রোনাল্ডোর ক্যারিয়ার শেষ । কিন্তু রোনাল্ডো রাজসিকভাবে সব প্রতিকুলতা জয় করে ফেরেন ২০০২ সালের বিশ্বকাপে । হয়ে যান ব্রাজিলের পঞ্চম বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক ।

বিশ্বকাপের পরেই রোনাল্ডো চলে আসেন রিয়াল মাদ্রিদে । সেখানে পাঁচ মৌসুমে সব মিলিয়ে ১৭৭ ম্যাচে করেছেন ১০৪ গোল ।

এরপর ইটালিয়ান এসি মিলান হয়ে রোনাল্ডো ক্যারিয়ার শেষ করেন নিজ দেশের কোরেন্থিয়ান্সে । ২০১১ সালে পাকাপাকিভাবে নিজের বুট তুলে রাখেন রোনাল্ডো ।

অবসরে যাওয়া রোনাল্ডোকে স্মরণ করে কার্লোস বলেন , ‘ রোনাল্ডো সবার সেরা । আমি নিশ্চিত ফুটবল বিশ্বে আরেকজন ফেনোমেনন আসে নি । ‘

রোনাল্ডোর সাথে বিশ্বকাপজয়ী কার্লোস জানান , ‘ আমাদের সময় ফুটবলে গোল করা অনেক কঠিন ছিল । সেই সময়ে খেলা ছিল শরীর-নির্ভর । প্রতিপক্ষের কড়া ট্যাকল থেকে বাঁচার সুযোগ ছিল কম । কিন্তু রোনাল্ডো সব কিছু করতে পারত ‘ ।

রিয়েল মাদ্রিদে নিজের সতীর্থ রোনাল্ডো সম্পর্কে মুগ্ধতা ছড়িয়ে কার্লোস জানান , ‘ রোনালদো , মেসি কিংবা নেইমাররা খুব ভাল ফুটবলার । কিন্তু সেরাদের সেরা একজন , তিনি রোনাল্ডো নাজারিও । ‘

২০০৭ সালে রিয়ালের কোচ ছিলেন ফ্যাবিও ক্যাপোলো। সেই সময়ে রোনাল্ডোকে পেয়েছেন তিনি । এই নিয়ে কাপেলো জানান , ‘ আমি যাদের কোচিং করিয়েছি তাদের মধ্যে সেরা ছিল রোনাল্ডো।’

তবে রোনাল্ডো সম্পর্কে খানিকটা সমালোচনাও করেছেন কাপেলো ,’ রোনাল্ডো আমাকে কিন্তু সবচেয়ে বেশী ঝামেলাতেও ফেলেছে । সে পার্টি নিয়ে ব্যস্ত থাকত । সে আসলে নিয়ম মানতে চাইতো না । কিন্তু প্রতিভার কথা যদি বলেন, রোনাল্ডোই আমার চোখে সের। কোনো সন্দেহ নেই।’

রোনাল্ডো ক্লাব ক্যারিয়ারে ৫১৮ ম্যাচে ৩৫২ গোল করেছেন । দেশের হয়ে ৯৮ ম্যাচে আছে ৬২ গোল । তবে ক্যারিয়ারের মহামুল্যবান তিনটি বছর , যা হতে পারত তার সেরা ; সেই সময়েই রোনাল্ডো কাটিয়েছেন ইনজুরিতে । নইলে এই মহান ফুটবলারের ক্যারিয়ার আরও সমৃদ্ধ হত , তাতে কোন সন্দেহ নেই ।

আহাস/ক্রী/০০৯