Download WordPress Themes, Happy Birthday Wishes

যে কারণে পেলে ম্যারাডোনা কখনও ব্যালন জেতেন নি !

আহসান হাবীব সুমন/ক্রীড়ালোকঃ

ইতিহাসের সেরা ফুটবলারের নাম নিতে গেলে প্রথমেই চলে আসে ব্রাজিলের পেলে আর ডিয়াগো ম্যারাডোনার নাম । ফুটবলের বিশ্ব নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘ফিফা’র বিবেচনাতেও এই দুই ফুটবল কারিগর সর্বকালের সেরা । কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে , পেলে কিংবা ম্যারাডোনার কেউই কখনও জেতেন নি ফিফা’র ‘বেস্ট ফুটবলার এ্যাওয়ার্ড ‘ কিংবা তুমুল আলোচিত ‘ ব্যালন ডি অর’ । কিন্তু কেন ?

ফ্রেঞ্চ ম্যাগাজিনের দেয়া ব্যালন ডি অর’ ফুটবলের অন্যতম প্রাচীন পুরস্কার । যা দেয়া হচ্ছে ১৯৫৬ সাল থেকে । অন্যদিকে ফিফা বেস্ট ফুটবলার এ্যাওয়ার্ডের প্রচলন ১৯৯১ সাল থেকে । ফিফা’র বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার প্রচলনের অনেক আগেই ব্রাজিলের ‘কালো মানিক’ পেলের ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যায় । আর ম্যরাডোনাও তার সেরা সময় ফেলে আসেন ১৯৯০ সালের পর থেকে । যে কারণে দুইজনের ভাগ্যে জোটে নি ফিফার বর্ষসেরা পুরস্কার ।

কিন্তু ব্যালনের ক্ষেত্রে কি সমস্যা ছিল ?

আসলে এক অদ্ভুত নিয়মের কারণেই পেলে কিংবা ম্যারাডোনা কখনও জেতেন নি বিশ্বসেরা ফুটবলারের সম্মাননাসূচক ‘ব্যালন ডি অর’ । ১৯৫৬ সাল থেকে প্রচলিত ব্যালন ডি অর’ দেয়ার ক্ষেত্রে শুধু বিবেচিত হত ইউরোপিয়ান খেলোয়াড়রা । শর্ত ছিল – ব্যালন জেতার জন্য একজন ফুটবলারকে অবশ্যই ইউরোপিয়ান হবার সাথে সাথে ইউরোপের ক্লাবে খেলতে হবে । এই শর্ত পূরণ হলেই কেবল ব্যালন ডি অর’ দেয়া হত ।

পেলে কখনই ইউরোপের কোন দেশের নাগরিকত্ব নেন নি । খেলেন নি ইউরোপের কোন ক্লাবে । ফলে তিনটি বিশ্বকাপ জিতলেও তার ভাগ্যে জোটে নি ব্যালন ।

অন্যদিকে ‘আর্জেন্টাইন ফুটবল ইশ্বর’ দিয়াগো ম্যারাডোনা ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত খেলেছেন ইউরোপের তিনটি ক্লাব বার্সেলোনা , ন্যাপলি আর সেভিয়ায় । তিনটি ক্লাবেই তিনি ছিলেন তুমুল সফল । সেরাদের সেরা । কিন্তু তার যে ছিল ইউরোপিয়ান নাগরিকত্ব । যেমনটা হালের লিওনেল মেসি , লুইস সুয়ারেজসহ প্রায় সব খেলোয়াড়ের আছে । সেই কারণেই জাতীয় দলের হয়ে বিশ্বকাপ আর ন্যাপলির হয়ে উইয়েফা ক্লাব কাপ জয়ের পরেও ম্যারাডোনা বিবেচিত হন নি ব্যালন ডি অর’ খেতাবের জন্য ।

১৯৯৫ সাল থেকে ব্যালনের নিয়ম পরিবর্তন করা হয় । সেই থেকে ইউরোপে খেলা সকল মহাদেশের ফুটবলার বিবেচিত হন ব্যালনের জন্য । আর ২০০৭ সাল থেকে নিয়ম করা হয়, ইউরোপ এবং ইউরোপের বাইরের যে কোনো ক্লাবে খেলা ফুটবলারই মনোনীত হবেন এই পুরস্কারের জন্য। কিন্তু ততদিনে ম্যারাডোনা যুগ শেষ ।

১৯৯১ সাল থেকে চালু হওয়া ফিফা বেস্ট এ্যাওয়ার্ডের সেরা তিনেও কখনও জায়গা পান নি ম্যারাডোনা । এটা একটু অবাক করার মত । আসলে নব্বইয়ের পর থেকে ম্যারাডোনা আন্তর্জাতিক কিংবা ক্লাব ফুটবলে কোন শিরোপা জেতেন নি । ১৯৯১ আর ১৯৯৩ সালে আর্জেন্টিনা কোপা আমেরিকা শিরোপা জিতলেও সেই দুই স্কোয়াডে ম্যারাডোনা ছিলেন না । আসলে ম্যারাডোনা কখনই ল্যাটিন আমেরিকার সেরা আসরটি জয়ের স্বাদ পান নি ।

নিয়মের বেড়াজালে ব্যালন ডি অর’ পাওয়া হয় নি ম্যারাডোনাের । কিন্তু ১৯৯৬ সালে ফ্রেঞ্চ ম্যাগাজিন তাকে বিশেষ সম্মাননায় ভূষিত করে ‘ ব্যালন ফুটবল সার্ভিস এ্যাওয়ার্ড’ । যাকে বলা যায় আজীবন সম্মাননা ।

ব্যালন না পাওয়া নিয়ে একটা আক্ষেপ অবশ্যই আছেন । একবার কোন এক সাক্ষাৎকারে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক বলেছেন , ‘সুযোগ থাকলে আমি মেসি আর রোনালদোর চেয়ে বেশী ব্যালন জিততাম । ‘

এখন পর্যন্ত ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে বেশী ছয়বার ব্যালন জিতেছেন ম্যারাডোনার স্বদেশী লিওনেল মেসি । আর পাঁচবার জিতেছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো । ২০১০-২০১৫ পর্যন্ত ফিফা আর ব্যালন মিলিতভাবে দেয়া হত । আলাদাভাবে ফিফার বর্ষসেরা তিনবার জিতেছেন আধুনিক ফুটবলের সম্রাট রোনালদো আর একবার মেসি ।

তবে ব্যালন কিংবা ফিফা’র বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার না পাওয়ার পরেও কি ইতিহাসসেরা ফুটবলারদের তালিকা থেকে বাদ দেয়া যাবে পেলে আর ম্যারাডোনার নাম । প্রশ্নই আসে না । তারা ইতোমধ্যে ফুটবল ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছেন । ফুটবল ইতিহাস লিখতে পেলে আর ম্যারাডোনার নাম বাদ দিয়ে কিছু লেখার সুযোগ নেই । তারা ফুটবলের মহানায়ক ছিলেন , মহানায়ক হয়েই থাকবেন ।

আহাস/ক্রী/০০১