Download WordPress Themes, Happy Birthday Wishes

কেন সেরাদের কাতারে আসতে পারছেন না দিবালা ?

ক্রীড়ালোক প্রতিবেদকঃ

বিশ্ব ফুটবলের অনেক বড় বড় তারকার জন্ম দিয়েছে আর্জেন্টিনা । দিয়াগো ম্যারাডোনা আর আলফ্রেডো ডি স্টেফানো তো সর্বযুগের সেরা খেলোয়াড়দের মাঝে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছেন । আন্তর্জাতিক ফুটবলে সাফল্য না পাওয়া লিওনেল মেসিও নিজেকে নিয়ে গেছেন হিমালয়সমান উচ্চতায় । এছাড়া মারিও কেম্পেস , ক্লডিও ক্যানিজিয়া ,ড্যানিয়েল পাসারেল্লা , হাভিয়ের জেনেত্তি , হাভিয়ের মাশ্চেরানো , হুয়ান সেভাস্তিয়ান ভেরন , হার্নান ক্রেসপো আর গ্যাব্রিয়েল বাতিতুস্তার মত খেলোয়াড় বড় তারকা হয়েই গেছেন অবসরে । এখনও যাদের নাম উচ্চারিত হয় বিশ্ব ফুটবলে শ্রদ্ধার সাথে ।

হাল জমানায় আর্জেন্টিনার মাটিতে জন্ম নেয়া অনেকেই কাঁপাচ্ছেন ইউরোপের ক্লাব ফুটবল । লিওনেল মেসি ছাড়াও সার্জিও আগুয়েরো , গঞ্জালো হিগুইন , আনহেল ডি মারিয়ারা ক্লাব ফুটবলে অনেক বড় নাম । কিন্তু সমস্যা বেঁধে যায় জাতীয় দলে পারফর্মেন্স বিচার করলে । যে কারণে ১৯৯৩ সালের কোপা আমেরিকার পর আর্জেন্টিনার ঘরে আসে নি কোন আন্তর্জাতিক শিরোপা । আর আর্জেন্টিনা তাদের শেষ বিশ্বকাপ জিতেছিল ১৯৮৬ সালে ।

সত্যিকার দিয়াগো ম্যারাডোনার পর আর্জেন্টিনা পায় নি কোন নেতা । লিওনেল মেসির মধ্যে সম্ভাবনা থাকলেও শুধু সঠিক নেতৃত্বগুণ না না থাকা আর বড় ম্যাচে নিজেকে হারিয়ে ফেলার প্রবণতা , তাকে রেখেছে ট্রফিবিহীন । মেসির সময় অবশ্য এখনও শেষ হয়ে যায় নি । ৩২ বছরের মেসি অন্তত আরও একটি করে কোপা আমেরিকা আর বিশ্বকাপ খেলতে পারবেন । কে জানে , হয়ত এই দুইটি আসরেই মেসি আর্জেন্টিনাকে এনে দিতে পারেন বহুল কাঙ্ক্ষিত আন্তর্জাতিক শিরোপা ।

কোন আন্তর্জাতিক শিরোপা না জিতলেও মেসি ইতোমধ্যে নিয়ে গেছেন সেরাদের কাতারে । ছয়টি ব্যালন ডি অর’জয়ী এই ফুটবলার নিঃসন্দেহে আর্জেন্টিনার সর্বকালের সেরাদের একজন । বিশেষ করে আধুনিক ফুটবলের সম্রাট ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সঙ্গে গত এক যুগের বেশী সময় ধরে চলে আসা শ্রেষ্ঠত্বের যে দ্বৈরথ , সেটা ছিল অভাবিত । কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে , মেসির পর কে ধরবেন আর্জেন্টিনার হাল ?

এমন প্রশ্নের উত্তরে যে নামটা সবার আগে আসে , তিনি হলেন পাওলো দিবালা । ২৬ বছর বয়সী দিবালা নিঃসন্দেহে একজন প্রতিভাবান ফুটবলার । খেলছেন ইটালির সেরা ক্লাব জুভেন্টাসে । যেখান থেকে বিশ্বের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পুরো সুযোগ আছে তার । কিন্তু সেটা কি দিবালা পারছেন ?

এখানেই বিষয়টা জটলা পাকিয়ে যাচ্ছে । যেখানে রোনালদো আর মেসির পর কে – এমন প্রশ্নের অবতারনা হচ্ছে , সেখানে কেউ নিচ্ছে না দিবালার নাম । কিলিয়ান এমবাপ্পে , নেইমার জুনিয়রকে বলা হচ্ছে আগামীদিনের সেরা । নেয়া হচ্ছে ইডেন হ্যাজার্ড , কেভিন ডি ব্রুইনে , ট্রেন্ট আলেক্সান্ডার-আর্নল্ডদের নাম বলা হচ্ছে । এমনকি উঠতি খেলোয়াড়দের মধ্যে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের নরওয়েজিয়ান টিনএজ আর্লিং ব্রাউট হালান্ড , ইংলিশ ফরোয়ার্ড জাডোন সাঞ্চোর নাম নিচ্ছেন নিচ্ছেন অনেকেই । কিন্তু কোন হিসেবের মধ্যেই নেই দিবালা !

অথচ ‘লা জোয়া’ নামকরণ পাওয়া দিবালাকে অনেকেই মনে করেছিল মেসির যোগ্য উত্তরসুরি । সেই সম্ভাবনা তার মধ্যে আছে । ২০১১ সালে নিজ দেশের ইন্সটিটিউটো ক্লাবের হয়ে খেলা শুরু তার । ২০১২ সালেই চলে আসেন ইটালিয়ান ক্লাব পালেরমোতে । আর বর্তমান ক্লাব জুভেন্টাসে যোগ দেন ২০১৫ সালে । এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে জুভের জার্সিতে ১৫২ ম্যাচে করেছেন ৯১টি গোল । জিতেছেন চারটি ইটালিয়ান সিরি ‘এ’ , তিনটি কোপা ইটালিয়া আর দুইটি ইটালিয়ান সুপার কাপ ।

জুভেন্টাসে দিবালার শুরুটা হয়েছিল উল্কার গতিতে । ২০১৫ সালের কোপা ইটালিয়ায় ছয় গোল আর দুইটি এসিস্ট করেন তিনি । লীগের ৩৪ ম্যাচে করেন ১৯ গোল । আর ২০১৫-১৬ মৌসুমে সব মিলিয়ে ৪৬ ম্যাচে তার গোলের সংখ্যা ছিল ২৩টি । মাত্র ২১ বছরে পা দেয়া একজন ফুটবলারের জন্য যা ছিল অনন্য অর্জন ।

প্রথম মৌসুমেই জুভেন্টাসে নজরকাঁড়া সাফল্যের কারণে আলোচনায় চলে আসেন দিবালা । অনেকেই তাকে ভাবতে শুরু করেন আর্জেন্টিনার ফুটবলের পরবর্তী মহাতারকা । কিন্তু এখানেই বাঁধে গোল । কারণ মেসি ও দিবালার খেলার স্টাইল ও পজিশন একই রকম। আর্জেন্টিনার কোচরা এমন কোনো উপায় বের করতে পারেননি, যাতে মেসি ও দিবালাকে একইসঙ্গে একাদশে ঠিকঠাক খেলাতে পারেন। মেসির সঙ্গে খেলতে পারেন না, দিবালাকে এমন অভিযোগ মাথায় নিয়ে অনেকটা সময় বেঞ্চেই কাটাতে হয়। অথবা ক্লাবে যে পজিশনে খেলে থাকেন সেটার বাইরের পজিশনে খেলতে হয়।

ফলে আর্জেন্টিনার হয়ে এখন পর্যন্ত খুব বেশী সফলতা পান নি দিবালা । জাতীয় দলের হয়ে ২৯ ম্যাচ খেলে করেছেন মাত্র দুইটি গোল ! জুভেন্টাসের জার্সিতে তার পারফর্মেন্সের সাথে তুলনায় জাতীয় দলে বড়ই ম্লান দিবালা ।

এই নিয়ে মেসি নিজেও জানিয়েছেন , জুভেন্টাসে সে আমার মতো একই জায়গায় খেলে। কিন্তু জাতীয় দলে তাকে বাম সাইডে খেলতে হয়। হয়তো সে এটাতে অভ্যস্ত নয়।

যদিও মেসি মনে করেনে দিবালা তার পরবর্তি প্রজন্মের সেরা প্লেয়ার।

এটা ঠিক দিবালার প্রতিভার অভাব নেই । ২০১৯-২০ মৌসুমেও এখন পর্যন্ত সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৩৪ ম্যাচে করেছেন ১৩ গোল । তবে আগের মৌসুমটা জুভেন্টাসে একেবারেই ভাল যায় নি এই আর্জেন্টাইনের । বিশেষ ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো দলে আসার পর তিনি একাদশে হয়ে পড়েন অনিয়মিত । বেশীরভাগ সময় বদলী খেলোয়াড় হিসেবে নেমে ৪২ ম্যাচে করেন মাত্র ১০ গোল ।

অর্থাৎ শেষ দুইটা বছর জুভেন্টাসে সময়টা ভাল যাচ্ছে না দিবালার । বলা যায় , তার পারফর্মেন্স এখন নিম্নগামী । যে কারণে বর্তমান কোচ মৌরিসিও সারির দলের প্রথম একাদশে নিয়মিত জায়গা পাচ্ছেন না তিনি । এমনটা হয়েছিল আলিগ্রির বিদায়ের বছরেও ।

কিন্তু এমনটা কেন হচ্ছে দিবালার সাথে ? এই ক্ষেত্রে খানিকটা দোষ মেসির সাথে দেয়া যায় রোনালদোকেও ! জাতীয় দলে যেমন মেসির কারণে সুযোগ হয় না দিবালার । তেমনি জুভেন্টাসে রোনালদো আসার পরেই দিবালার খেলায় ভাঁটার টান । খুব সম্ভবত বড় তারকাদের পাশে দিবালা কিছুটা হলেও জড়তায় ভোগেন । যে কারণে রোনালদোর সাথে সুযোগ পেয়েও তেমন কার্যকর জুটি তিনি গড়ে তুলতে পারেন নি । পারেন নি কোচের আস্থাভাজন হয়ে উঠতে ।

সব মিলিয়ে নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে এই মুহূর্তে নিজেই বেশ হতাশ দিবালা । যে কারণে ভাবছেন জুভেন্টাস ছাড়ার কথা । হয়ত জুভেন্টাস ছেড়ে ইউরোপের অন্যকোন দলে প্রধান খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে মেলে ধরার পরিকল্পনা তার । এটাও এক হিসেবে খারাপ হবে না । স্পেন কিংবা ইংল্যান্ডের বড় কোন দলে যেখানে নিয়মিত খেলার সুযোগ আছে , তেমন কোন ক্লাবে দিবালা খেললে পাবেন বাড়তি সুযোগ । আর সেটা হয়ত তাকে ফের নিয়ে আসবে আলোচনায় ।

একটা সময় উঠতি সম্ভাবনায় খেলোয়াড় হিসেবে উচ্চারিত হত দিবালার নাম । জুভেন্টাস ছেড়ে অন্য কোথাও নিজেকে মেলে ধরতে পারলে আবারও আলোচনায় আসবেন তিনি । সেই প্রতিভা তো তার আছেই ।

আহাস/ক্রী/০০১