Download WordPress Themes, Happy Birthday Wishes

একটি ফুটবল ম্যাচ কেঁড়ে নিচ্ছে হাজার হাজার প্রাণ

ক্রীড়ালোক প্রতিবেদকঃ

বিশ্বব্যাপী আতংক ছড়ানো করোনা-ভাইরাসের উৎপত্তি হয়েছিল চীন থেকে । যদিও কয়েক হাজার মানুষের প্রাণ কেঁড়ে নিয়ে চীনে এখন করোনা পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক । কিন্তু প্রাণঘাতী এই ভাইরাস এখন তাণ্ডব চালাচ্ছে বিশ্বের প্রায় ১৯২টি দেশে । সবচেয়ে বেশী খারাপ অবস্থা ইউরোপের অন্যতম সমৃদ্ধ দেশ ইটালির ।

মৃত্যুর সংখ্যায় চীনকে ইতোমধ্যেই ছাড়িয়ে গেছে ইটালি । দেশটিতে মারা গেছে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ । এখনও প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছেন হাজার মানুষ । মারা যাচ্ছে শত শত । কিন্তু কিভাবে করোনার (কোভিড-১৯) মত প্রাণঘাতী ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ল ইটালিতে ?

ধারণা করা হচ্ছে , ইটালির সাধারণের মধ্যে করোনা ছড়িয়ে পড়ার মূল কারণ ফুটবল । ১৯ ফেব্রুয়ারি মিলানের বিখ্যাত সানসিরো স্টেডিয়ামে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নকআউট পর্বের প্রথম লেগে আটালান্টার মুখোমুখি হয়েছিল স্প্যানিশ ক্লাব ভ্যালেন্সিয়া। সেদিন সানসিরোর গ্যালারিতে হাজির ছিল প্রায় চল্লিশ হাজার দর্শক। ওই ম্যাচের পরই নাকি ইটালিতে করোনা ছড়িয়ে পড়ে ‘মহামারী’ আকারে ।

ইটালির লমবার্দি অঞ্চলের বার্গামোইতে সবচেয়ে বেশী করোনা-ভাইরাস সংক্রমণ দেখা দিয়েছে । এই অঞ্চলেই আটলান্টা ক্লাব । চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ম্যাচ দেখতে বার্গামোই অঞ্চল থেকে সবচেয়ে বেশী দর্শক এসেছে স্যান স্যারো স্টেডিয়ামে । ম্যাচ দেখতে স্টেডিয়ামে উপস্থিত ছিল প্রায় চল্লিশ হাজার দর্শক ।

১৯ ফেব্রুয়ারির আগে ইটালিতে করোনা রোগী ছিল হাতেগোনা মাত্র কয়েকজন । সেই ম্যাচের কয়েকদিন পরেই বার্গামোইতে একের পর এক ধরা পড়তে থাকে করোনা-ভাইরাস আক্রান্ত রোগী ।

শুধু তাই না , সেই ম্যাচ দেখতে ইটালির স্টেডিয়ামে উপস্থিত ছিল ভ্যালেন্সিয়ার বহু দর্শক । এখন দেখা যাচ্ছে , ভ্যালেন্সিয়ায় সবচেয়ে বেশী আঘাত হেনেছে করোনা । ক্লাবটির খেলোয়াড় আর কোচিং স্টাফদের মধ্যে প্রায় ৩৫ শতাংশ করোনা-ভাইরাস পজিটিভ হয়েছেন ।

স্পেনে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে করোনা-ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন ভ্যালেন্সিয়ার আর্জেন্টাইন ফুটবলার এজিকেল গারাই। পরে ক্লাব জানায় , পয়ত্রিশ শতাংশ আক্রান্তের কথা ।

অর্থাৎ দুই ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে , স্যান-সিরো স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচের পরেই ইটালি আর স্পেনে দেখা দিয়েছে করোনা-ভাইরাসের পাগলা-নাচন ।

সেই ম্যাচে উপস্থিত থাকা সাংবাদিক কিকে মাতেও নিজেও আক্রান্ত হয়েছেন করোনা-ভাইরাসে । ইটালির ডাক্তারদের সঙ্গে সাংবাদিক কিকে মাতেও বলছেন, ওই সময় স্যান সিরোয় এত বড় ফুটবল জমায়েত না হলে হয়তোবা ইটালি, স্পেনে এভাবে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পেতো না।

অর্থ্যাৎ, ইটালিয়ান ডাক্তাররা এখন করোনা ভাইরাস এভাবে ছড়িয়ে পড়ার পেছনে সেই ম্যাচটিকেই সবচেয়ে বেশি দায়ী করছেন।

ভ্যালেন্সিয়ার ম্যাচ কাভার করার জন্যই স্পেন থেকে
ইটালিতে গিয়েছিলেন কিকে মাতেও। তিনি সেখানে প্রেস কনফারেন্সে অংশ নেন। ম্যাচে তিনি ছিলেন অনেক মানুষের সঙ্গে। ম্যাচ শেষে মিক্সডজোনে কয়েকজন ফুটবলারের ইন্টারভিউও নিয়েছিলেন। ইটালিতে সেদিন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত ছিল মাত্র তিনজন।

নিজের রিপোর্ট শেষ করে মিলান থেকে ভাড়া করা গাড়ীতে করে পাশের এক ছোট শহরে গিয়ে রাত্রি যাপন করেন কিকে মাতেও। পরেরদিন চলে আসেন তিনি ভ্যালেন্সিয়ায়। এরপর সপ্তাহের শেষ দিন পর্যন্ত কোনো ঘটনার খবর আর পাননি তিনি।

পরের সোমবার সন্ধ্যার পর মাতেও বুঝতে পারেন তার শরীর খারাপ হতে শুরু করেছে। শরীরে জ্বর এসেছে, অবসাদ আর ক্লান্তির সঙ্গে শুকনো কাশিও ছিল তার। মঙ্গলবার সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর বুঝতে পারেন, তার শরীরের খুব বাজে অবস্থা। ওইদিন থেকেই উত্তর ইতালিতে প্রচুর করোনা আক্রান্ত রোগির খবর আসতে শুরু করে বিশ্ব মিডিয়ায়। মাতেও তখনই সিদ্ধান্ত নেন ডাক্তারী পরীক্ষা করে দেখানোর।

ডাক্তার প্রথমে সাধারণ রোগ বললেও একদিন আইসোলেশনে ছিলেন মাতেও । পরদিন অবস্থা আরও খারাপ হলে ভ্যালেন্সিয়া ইউনিভার্সিটি ক্লিনিকে পরীক্ষা করা হয় । প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর তিনি জানতে পারেন করোনায় আক্রান্ত হবার দুঃসংবাদ ।

এরপরই মাতেও পুরো আইসোলেশনে চলে যান এবং গত এক সপ্তাহে যাদের যাদের সঙ্গে মিশেছেন বলে মনে করতে পেরেছেন, সবাইকেই আইসোলেশনে যাওয়ার পরামর্শ দেন। নিজে পুরোপুরি আইসোলেশনে যাওয়ার পর মাতেও বহির্বিশ্বের সঙ্গে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। বাইরে কি হচ্ছে, সে সম্পর্কে তিনি আর কিছুই জানতে পারেননি। কেউ তাকে দেখতে আসতে পারেনি, তিনিও চাননি কারো সঙ্গে দেখা করতে।

১০ দিন কঠিন সময় পেরিয়ে আর ডাক্তারদের চিকিৎসায় অবশেষে সুস্থ হয়েছেন মাতেও ।

আহাস/ক্রী/০১২