Download WordPress Themes, Happy Birthday Wishes

মুশফিকের হাতেই বিপিএল ট্রফি !

ক্রীড়ালোক প্রতিবেদকঃ

চলমান বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ এখন চূড়ান্ত পরিনতির অপেক্ষায় । বাকী শুধু একটা ম্যাচ । সেটাও শিরোপা নির্ধারণী ফাইনাল । শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) চলতি বঙ্গবন্ধু বিপিএলের ফাইনালে মুখোমুখি হবে খুলনা টাইগার্স আর রাজশাহী রয়্যালস । মিরপুরের শের-এ-বাংলা স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাতটায় ।

এবারের বিপিএলের শুরু থেকেই ছিল ভিন্ন আমেজ । জাতীর জনক শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালন উপলক্ষে এবারের বিপিএলের নামে আসে পরিবর্তন । এছাড়াও চুক্তি শেষ হয়ে যাওয়ায় রাখা হয় নি কোন ফ্রেঞ্চাইজি ব্যবস্থা । শুধু স্পন্সরদের সহায়তায় সম্পূর্ণ বিসিবি’র (বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড) তত্ত্বাবধানে আয়োজিত হয়েছে এবারের বিপিএল । শুধ দর্শক কমতি ছাড়া মোটামুটি কোন বিতর্কহীন এই বিপিএলকে সফল বলা যায় অনেকাংশেই ।

নতুন আঙ্গিকের বিপিএলে এবার নিশ্চিতভাবেই পেতে চলেছে নতুন চ্যাম্পিয়ন । কারণ এবারেই প্রথম ফাইনালে খেলছে খুলনার কোন দল । অন্যদিকে রাজশাহী আগে একবার ফাইনাল খেলেছে ভিন্ন নামে । কিন্তু ঢাকার কাছে হেরে রানার আপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে ২০১৬-১৭ মৌসুমে ।

এবারত কে জিতবে , বিপিএলের শিরোপা ? এটা আগাম ধারণা করা এবার সত্যি মুশকিল । কারণ লড়াই হচ্ছে সেয়ানে-সেয়ানে । তবে ফাইনালে সবার দৃষ্টি আলাদাভাবে থাকবে রাজশাহীর বিশ্বতারকা আন্দ্রে রাসেলের দিকে । দ্বিতীয় কোয়ালিফাইয়ারে চট্টগ্রামের বিপক্ষে বিধ্বংসী হাফসেঞ্চুরি করে দলকে জিতিয়েছেন রাজশাহীর অধিনায়ক এই ক্যারিবিয়ান । এমনটা করে বরাবরই তিনি অভ্যস্ত । ফাইনালে আর একবার তিনি জ্বলে উঠলে খুলনার জন্য বিপদ আছে , সন্দেহ নেই ।

এবারের বিপিএলে রাসেল খুব ভাল করেছেন বলা যাবে না । মাত্র ২৪ ঘন্টা আগে কোয়ালিফায়ার টু‘তে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে ২৪ বলে আড়াইশোর ওপর স্ট্রাইকরেটে ৬০ রানের হার না মানা অতিমানবীয় ইনিংসে ম্যাচ জেতানো ছাড়া এবারের আসরে আহামরি কিছু খেলতেও পারেননি। তারপরও বঙ্গবন্ধু বিপিএলের এবারের আসরের ফাইনালে সব ‘ফোকাস’ আন্দ্রে রাসেলের দিকে। কারণ আগে যাই করুন আর যেমনই খেলুন না কেন, আন্দ্রে রাসেলই দুই দলের ২২ জনের মধ্যে একমাত্র ক্রিকেটার, যিনি একাই গড়ে দিতে পারেন ম্যাচের ভাগ্য।

অন্যদিকে খুলনার ভরসার কেন্দ্রে আছেন অধিনায়ক মুশফিক । তিনি এবারের আসরের অন্যতম সেরা পারফর্মার । পেতে পারেন টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার । ১৩ ইনিংসে ১৪৭.৩৩ স্ট্রাইক রেট ও ৭৮.৩৩ গড়ে ৪৭০ রান এসেছে খুলনা অধিনায়ক মুশফিকের ব্যাট থেকে। এই কিপার-ব্যাটসম্যান এবার দুইবার ভেঙেছেন নিজের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ। চট্টগ্রামে রাজশাহীর বিপক্ষে বড় রান তাড়ায় দলকে পথ দেখান ৯৬ রানের দারুণ ইনিংসে। পরে ঢাকায় কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সের বিপক্ষে খেলেন অপরাজিত ৯৮ রানের আরেকটি অসাধারণ ইনিংস।

মুশফিক বাংলাদেশের লিজেন্ড ক্রিকেটার । কিন্তু কখনও বিপিএলের শিরোপা পান নি । যেমন পেয়েছেন সাকিব আল হাসান আর মাশরাফিরা । এবার মুশফিক শিরোপা জিতলে হবেন মাশরাফি আর সাকিবের সাথে বিপিএল জয়ী অধিনায়কদের এলিট ক্লাবের সদস্য । এটা একজন বাংলাদেশী হিসেবে প্রত্যাশা করেন সবাই ।

এদিকে ফাইনালে মুশফিকের সবচেয়ে কাছে আছেন খুলনা টাইগার্সেরই আরেক ব্যাটসম্যান রাইলি রুশো। বিপিএলে এক আসরে একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে পাঁচশ ছাড়ানো রান করা রুশো এবার ৪৫.৮০ গড় ও ১৫৬.৩১ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ৪৫৮ রান। গত আসরে ৫৫৮ রান করা বিস্ফোরক এই ব্যাটসম্যানের সামনে টানা দুই আসরে পাঁচশ রান করার হাতছানি। মুশফিকের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানও এবারের আসরে করেছেন চার ফিফটি।

এবারের আসরে খুলনা আর রাজশাহীর একে অপরের বিপক্ষে ছিল সমানে সমান । ডাবল লিগ পর্বে দু’বার মুখোমুখি হয়েছিলো খুলনা ও রাজশাহী। প্রথম দেখায় ৫ উইকেটে জয় পায় খুলনা। দ্বিতীয় পর্বে প্রতিশোধ নেয় রাজশাহী। ৭ উইকেটে খুলনাকে হারায় তারা। তবে প্রথম কোয়ালিফাইয়ারে আবারও  দেখা হয় দু’দলের। সেখানে ২৭ রানে জয় পায় খুলনা। ঐ ম্যাচ জিতে সরাসরি ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করে খুলনা।

সব বিবেচনায় ফাইনাল জয়ের  সম্ভাবনায় খুলনার সুযোগ একটু  বেশী  । কারণ খুলনার প্রায় সবাই ফর্মে আছে । পুরো টুর্নামেন্টে নিষ্প্রভ থাকলেও সর্বশেষ দু’ম্যাচে ব্যাট হাতে জ্বলে উঠেছেন খুলনার ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত। দু’ইনিংসে যথাক্রমে ১১৫ ও ৭৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন তিনি। এবারের আসরে প্রথম ও এখন পর্যন্ত একমাত্র বাংলাদেশী হিসেবে সেঞ্চুরিয়ান হিসেবে নাম উঠেছে শান্তর। এছাড়া ওপেনিং-এ শান্তর সঙ্গী মেহেদি হাসান মিরাজও ব্যাট হাতে দলের জন্য সেরাটাই দিচ্ছেন। খুলনাকে দুর্দান্ত শুরু এনে দিতে পারদর্শীতা দেখাচ্ছেন শান্ত ও মিরাজ।

বোলিং বিভাগেও খুলনার বোলাররা দুর্দান্ত করছেন। ১৩ ইনিংসে ১৯ উইকেট নিয়ে বোলারদের তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার রবি ফ্রাইলিঙ্ক। ফাইনালে ২টি উইকেট নিতে পারলেই আসরের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হবেন তিনি। সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হবার দৌঁড়ে আছেন খুলনার আরও দু’খেলোয়াড় পাকিস্তানের মোহাম্মদ আমির ও শহিদুল ইসলাম। আমির ও শহিদুল উভয়েরই শিকার ১৮ উইকেট। প্রথম কোয়ালিফাইয়ারে বল হাতে আগুন ঝড়িয়েছেন আমির। ৪ ওভারে ১৭ রানে ৬ উইকেট নিয়েছেন আমির। যা বিপিএলের ইতিহাসে সেরা বোলিং ফিগার।

রাজশাহীর পাকিস্তানী অল রাউন্ডার শোয়েব মালিক আছেন ফর্মে । ইতোমধ্যে বিপিএলের পারফর্মেন্স দিয়ে ফিরেছেন বাংলাদেশের বিপক্ষেই টি-২০ সিরিজের স্কোয়াডে । এবারের আসরে শোয়েব মালিক সর্বোচ্চ রানের দৌঁড়ে তৃতীয়স্থানে রয়েছেন । ১৪ ইনিংসে ৩টি হাফ-সেঞ্চুরিতে ৪৪৬ রান করেছেন মালিক। এছাড়া বল হাতে ১২টি উইকেট নিয়ে রাজশাহীর পেস অ্যাটাকে বড় ভরসা পাকিস্তানের মোহাম্মদ ইরফান। তাই দুই পাকিস্তানের সাথে রাসেলের পারফরমেন্সে শিরোপা অন্যতম দাবীদার রাজশাহী।

তবে শেষ পর্যন্ত রাজশাহীর চেয়ে খুলনার প্রতি বাংলাদেশের মানুষের সমর্থন কিন্তু বেশী থাকার কথা । কারণ এই দলের দেশী ক্রিকেটাররাই মূল ভরসা । বিশেষ করে মুশফিকের জন্য এই ফাইনাল জয় হবে নতুন ইতিহাস । শুধুমাত্র প্রথমবারের মত ফাইনালই নয়, বিপিএল ইতিহাসে এই প্রথমবার দলের সবগুলো ম্যাচে নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছেন তিনি। আগের আসরগুলোতে অধিনায়ক হিসেবে টুর্নামেন্ট শুরু করলেও, কোন কারনে মাঝপথে ও শেষের দিকে অধিনায়কের দায়িত্ব থেকে সড়ে দাঁড়ান মুশফিক।

খুলনার টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন বলেন, ‘বিপিএলের টুর্নামেন্টে এটিই তার প্রথম ফাইনাল। মাঠের ভেতর ও বাইরে দারুণভাবে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মুশফিক। সে জানে, ট্রফি জয়ের এটিই তার সেরা সুযোগ এবং শিরোপা জয়ে মরিয়া হয়ে আছেন।’

শেষ পর্যন্ত মরিয়া মুশফিকের হাতেই উঠুক বিপিএল শিরোপা , এমন প্রত্যাশা বাংলাদেশী ক্রিকেট ভক্ত হিসেবে আমরা করতেই পারি ।

আহাস/ক্রী/০০১