ক্রীড়ালোক প্রতিবেদকঃ
এই গ্রহের সেরা ফুটবলার তিনি । জায়গা করে নিয়েছেন ইতিহাসের পাতায় । নিজেই দাবী করেন ইতিহাসের সেরা ফুটবলার হিসেবে । আর সেটা যৌক্তিক কারণেই । ফুটবল খেলে যা যা পাওয়া সম্ভব , সেই সম্মান আর যশ – সবই পেয়েছেন তিনি । সাথে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকাও । কিন্তু তাই বলে নিজের ফেলে আসা অতীত ভোলেন নি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো । ছোটবেলায় কাটিয়ে আসা দুঃসহ অভাবের দিনগুলো এখনও মনে করেন মহানুভব রোনালদো ।
ছোটবেলা থেকেই তীব্র অভাবের মধ্যে বড় হয়েছেন রোনালদো । বাবা ছিলেন মদ্যপ । সংসারের প্রতি কোন দায়িত্ব পালন করেন নি মাদকের গ্রাসে বুঁদ হয়ে থাকা বাবা । মানুষের বাসায় কাজ করে সন্তানদের নিয়ে সংসার চালাতেন মা । কিন্তু তাতে আর কতটুকু চলে ? ফলে নিত্য অভাব আর না খেয়ে থাকার মত দিন রোনালদোর জন্য ছিল রুটিন ঘটনা ।
ছোটবেলা থেকেই ফুটবলার হবার চেষ্টায় মগ্ন ছিলেন রোনালদো । ১০ বছর বয়সেই তিনি যোগ দেন স্পোর্টিং লিসবনের জুনিয়র দলে । সেখানে তার সাথে ছিল আরও অনেকেই । ক্লাবের পাশেই থাকা ‘ম্যাকডোনাল্ডস’ এর দামী খাবার তাদের দৃষ্টি কাড়ত । কিন্তু সাধ্য ছিল না কিনে খাওয়ার । সেই কারণে দাঁড়িয়ে থাকতেন ম্যাকডোনাল্ডসের সামনে । একদিন সাহস করে পেছনের দরোজায় গিয়ে সেলসগার্লদের কাছে খাবার চেয়েও বসেন !
লিসবনের সেই ম্যাকডোনাল্ডসে কাজ করত তিনজন নারী ; যাদের রোনালদো ‘দয়ালু আর মহীয়সী’ হিসেবে বর্ণনা দিয়েছেন কদিন আগে ব্রিটিশ উপস্থাপক পিয়ার্স মরগানের কাছে একটি সাক্ষাৎকারে । সেই অনুষ্ঠানে নিজের জীবনের অনেক অজানা অধ্যায়ের সাথে সেই তিন নারীর কাছ থেকে খাবার পাওয়ার ঘটনাও উল্লেখ করেন সিআর-সেভেন ।
রোনালদো স্মৃতিচারণ করে বলেছেন , ‘ ম্যাকডোনাল্ডসটা বন্ধ এখন আর নেই । বন্ধ হয়ে গেছে । তবে আশা করি, এই সাক্ষাৎকার ওই মেয়েদের খুঁজে পেতে সাহায্য করবে। ‘
রোনালদো জানান , সেই তিন নারীর দেখা পেলে তাদের সাথে ডিনার করতে চান তিনি । সেটা তুরিনে হোক কিংবা লিসবনে ।
৩৪ বছরের রোনালদো জানান , ‘ তারা আমাকে সেই সময়ে সাহায্য করেছে । এটা আমি ভুলব না । ঐ গুরুত্বপূর্ণ সময়ে করা তাদের সেই সাহায্য আমার জীবনে ছিল আশীর্বাদ । আমি কিছুটা হলেও তাদের ফিরিয়ে দিতে চাই । ‘
জুভেন্টাসে খেলার সুবাদে রোনালদো এখন ইটালির তুরিন শহরেই বসবাস করেন ।
রোনালদোর এই সাক্ষাৎকার প্রকাশের পর ঘটেছে নাটকীয় ঘটনা । অনুষ্ঠানটি দেখে সামনে এসেছেন সেই তিন নারীর একজন , পাউলা লেকা । পর্তুগালের একটি রেডিও স্টেশনের বরাতে ফক্স স্পোর্টস এশিয়া ও মিরর জানিয়েছে, লেকা রোনালদোর আমন্ত্রণ সাদরে গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘তারা রেস্টুরেন্টে আসত এবং যদি বার্গার বেঁচে থাকত, তবে আমাদের ম্যানেজার সেগুলো ওদের দেওয়ার অনুমতি দিতেন। শিশুদের মধ্যে একজন ছিল রোনালদো, যে সবচেয়ে লাজুক ছিল। প্রায় প্রতি রাতেই এটা ঘটত।’
লেকা আরও জানিয়েছেন, ‘আমার স্বামী এটা আগে থেকেই জানত। কারণ মাঝেমাঝে সে আমাকে রাতে রেস্টুরেন্ট থেকে নিয়ে আসতে যেত এবং সেও তাকে (রোনালদো) দেখেছে। অনেক দিন আগের এই ঘটনায় ফিরে যাওয়াটা বেশ মজার। এটা প্রমাণ করে, সে কতটা নম্র। আর লোকে অন্তত এখন এটা ভাবতে পারবে না যে, আমি বানিয়ে বানিয়ে বলেছি।’
মানুষ সাধারণত সাফল্য পেলে তার অন্ধকার অতীত ভুলে যান । কিন্তু মনে রাখেন সত্যিকার হৃদয়বানরা । নিজের অভাবের দিনে সাহায্য পাওয়া তিন নারীর কথা স্মরণ রোনালদো এবার বিশাল মনের মানুষ হিসেবেও নিজেকে প্রমাণ করলেন ।
আহাস/ক্রী/০০৪